Friday, March 10, 2017
বৈষ্ণব লক্ষণ
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
অমৃত উপদেশ
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
পবিত্র বেদবাক্য
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Thursday, March 9, 2017
বৈষ্ণব কারে কয়?
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
যদি গৌর না হইত, তবে কি হইত !
আজ থেকে ৫৩২ বছর পূর্বে বাংলা ৮৯১ সনে, ইংরেজি ১৪৮৫ (মতান্তরে ১৪৮৬) খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যাবেলায় চন্দ্রগ্রহণ হওয়ায় সকল নবদ্বীপবাসী যখন হরিধ্বনি করতে করতে গঙ্গাস্নানে যাচ্ছে এমনই এক পবিত্র ক্ষণে রাত্রির প্রথম প্রহরে সিংহরাশিতে সিংহলগ্নে এক পবিত্র সন্ধ্যায় ভারতের নবদ্বীপে জন্মেছিলেন বাংলার রেঁনেসা পুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র এবং মায়ের নাম শচীদেবী। শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন বাংলায় প্রথম সার্থক আধুনিক গণতন্ত্রের উদ্বোধক। বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী তুর্কি শাসন-শোষণ এবং জাত-পাত সহ সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতি, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক জ্বাজল্যমান দ্রোহমূর্তি এবং যুগপৎ ছিলেন মানবপ্রেমের এক অমৃতময় পুরুষ। তাইতো বিংশ শতাব্দীর ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-
বাঙালির হিয়া
অমিয় মথিয়া
নিমাই ধরেছে কায়া।
অর্থাৎ বাঙালি হৃদয়ের সকল প্রকার অমৃতময় সত্ত্বাকে আত্মসাৎ করেই শ্রীচৈতন্যের মহাপ্রকাশ। গণতন্ত্রের একটি বিশিষ্ট দিক হল ব্যাপক গণসংযোগ এবং তার ফলে সৃষ্ট সামাজিক সচলতা (social mobility) এর মধ্য দিয়েই রচিত হয় সমাজের উচ্চবর্গের সাথে নিম্নবর্গের যোগাযোগ। অর্থাৎ সমাজে পশ্চাৎপদ শ্রেণি তাদের সাথে সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত মান্য তাদের এক গণসংযোগ। শ্রীচৈতন্যদেবের (১৫০৯-১০ খ্রিস্টাব্দে) নবদ্বীপ পরিভ্রমণ লীলার মধ্যে আমরা এর সার্থক প্রয়াস দেখি। নগর পরিভ্রমণের সময়ে তাঁতি (যে কিনা মুসলমানও হতে পারে), গোয়ালা, গোপ, গন্ধবণিক, মালাকার, পান ব্যবসায়ী, শাঁখারীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে তাঁর সহজাত স্বাভাবিক সম্পর্ক আমাদের বিমুগ্ধ করে তোলে। শ্রীচৈতন্যভাগবতের দশম অধ্যায়ের অত্যন্ত সুন্দর করে এ বিষয়ে বর্ণনা করা আছে। আমরা সেখান থেকে গোয়ালা গোপদের সাথে কথোপকথোন উল্লেখ করছি-
বসিলেন মহাপ্রভু গোপের দুয়ারে।
ব্রহ্মণ সম্বন্ধে প্রভু পরিহাস করে।।
প্রভু বোলে আরে বেটা দধি দুগ্ধ আন।
আজি তোর ঘরের লইব মহাদান।।
প্রভু সঙ্গে গোপগণ করে পরিহাস।
মামা মামা বলি সবে করয়ে সম্ভাষ।।
কেহ বলে চল মামা ভাত খাই গিয়া।
কোন গোপ স্কন্ধে করি যায় ঘরে লৈয়া।।
কেহ বলে আমার ঘরের যত ভাত।
পূর্বে যে খাইলে মনে নাহিক তোমাত।।
বৃন্দাবন দাসের লেখা উদ্ধৃত শ্লোকগুলোতে আমরা দেখি শ্রীচৈতন্যদেব গোয়ালা গোপদের গৃহে শুধুমাত্র যেতেন না; তাদের সাথে অনেক ঠাট্টা পরিহাসও এবং তাদের গৃহে আহারও করতেন। মানুষের ভালবাসার আনন্দ আস্বাদ করতে চেয়েছেন বলেই তিনি আমাদের হৃদয়ের এখনো এতো কাছাকাছি। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন তিনি আমাদের কাছে, ‘প্রেম-ঋণে বদ্ধ আমি শুধিতে না পারি।’ এ প্রেমের ঋণ শোধ করার জন্যই তিনি তাঁর দেহকে সমর্পন করে দিয়েছেন সাধারণ জনদের জন্যে। শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজের ভাষায়-
প্রভু কহে এই দেহ তোমা-সবাকার।
যে তুমি কহ সেই সম্মত আমার।।
(চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্যলীলা, দশম পরিচ্ছেদ)
শ্রীচৈতন্যের আধ্যাত্মিক গণতন্ত্রে ছিল না কোন নারী-পুরুষ, জাতি-বর্ণ এবং ধর্মের ভেদাভেদ সকলেই আশ্রয় দিয়ে এক অক্ষয় বটবৃক্ষ হয়েছিলেন তিনি। বৃন্দাবন দাসের ভাষায়-
নীচ জাতি নহে কৃষ্ণ ভজনে অযোগ্য।
সৎকুল বিপ্র নহে ভজনের যোগ্য।।
যেই ভজে সেই বড়, অভক্ত হীন ছাড়।
কৃষ্ণভজনে নাহি জাতিকুলাদি বিচার।।
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময়ে দূরাচারি ভট্টথারি সম্প্রদায় সহ অসংখ্য সম্প্রদায়ের মানুষকে শ্রীচৈতন্যদেব আপন করে নিয়েছেন এবং এ সময় কালেই দক্ষিণ ভারতের অনেক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভিক্ষুসহ সাধারণ মানুষেরা তাঁর কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্ত্রের দীক্ষা গ্রহণ করে। জন্মসূত্রে ইসলাম ধর্মালম্বী হরিদাস ঠাকুরের কথাতো আমরা সকলেই জানি। তিনি ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রধান পর্ষদ। শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং ভক্ত হরিদাসের দেহকে সমাধিস' করেন পুরীর সমুদ্রতীরে এবং বাজারে ভিক্ষা করে শ্রাদ্ধের আয়োজন করেন। হরিদাস ঠাকুর ছাড়াও অসংখ্য তুর্কি-পাঠানকেও তিনি শ্রীকৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত করেন। যাদের মধ্যে বিজলী খাঁ অন্যতম। অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যেদেবের ভালবাসার দ্বার ছিলো সবার জন্য উন্মুক্ত-অবারিত। অকৃপণভাবে তিনি প্রেম, ভক্তি, ভালবাসা বিলিয়ে গিয়েছেন এ ভূখণ্ডে। এ ভূখণ্ডের মাটি পবিত্র হয়ে উঠেছে শ্রীচৈতন্যের পদস্পর্শে। শ্রীচৈতন্যদেব আমাদের শিখিয়েছেন সকল জ্ঞান এবং শিক্ষা প্রথমে নিজেকে আচরণ করেই পরে সবার মাঝে প্রচার করতে হয় ; তবেই মানুষ তা গ্রহণ করে। নিচে আচরণ না করে যে শিক্ষা সে শিক্ষা কেউ গ্রহণ করে না।
আপনি আচরি ভক্তি শিখাইমু সবারে।।
আপনি না কৈলে ধর্ম্ম শিখান না যায়।
এই ত সিদ্ধান্ত গীতা-ভাগবতে গায়।। (চৈতন্যচরিতামৃত : আদি, তৃতীয় পরিচ্ছেদ)
এ ভারতবর্ষের পবিত্র ভূমিতে জাত হয়ে আমাদের সবারই লক্ষ হওয়া উচিত। প্রথমে যেন আমরা সবাই যার যার মনুষ্য জন্ম সার্থক করতে পারি। এর পরেই পর উপকার এই শিক্ষাটা বর্তমান যুগের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নিজ জন্ম সার্থক করার পরেই পরিবার এবং এর পরে পর্যায়ক্রমে বৃহৎপরিবার অর্থাৎ জাতির সেবার মাধ্যমে প্রত্যেকেরই জীবন সার্থক করতে হবে- এই মহৎ শিক্ষাটিও শ্রীচৈতন্যদেবের।
ভারতভূমিতে হৈল মনুষ্য-জন্ম যার।
জন্ম সার্থক করি পর-উপকার।। (চৈতন্যচরিতামৃত : আদি, নবম পরিচ্ছেদ)
অখিল ধর্মের মূল বেদই সনাতন ধর্মের মূল এবং বেদের উপরেই সনাতন ধর্ম ও সভ্যতা সংস'াপিত। তাই সকল প্রকার শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত নির্ণয়ে বেদবাণীই যে একমাত্র প্রমাণ- এ শিক্ষা শ্রীচৈতন্যদেবই আমাদের দিয়েছেন। এবং যুগপৎ দেখিয়েছেন ওঙ্কার (ওঁ) এ মহাবাক্যই ঈশ্বরের মূর্তিস্বরূপ। সেই ওঙ্কার হতেই সকল বৈদিক জ্ঞান এবং জগতের উৎপত্তি।
প্রমাণের মধ্যে শ্রুতি প্রমাণ প্রধান।
শ্রুতি যেই অর্থ কহে সেই সে প্রমাণ।।
প্রণব সে মহাবাক্য ঈশ্বরের মূর্ত্তি।
প্রণব হইতে সর্ব্ববেদ জগৎ উৎপত্তি।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)
ব্রাহ্মণ-শূদ্র নির্বেশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে তিনি গুরু হবার, আচার্য্য হবার, তত্ত্ববেত্তা হবার অধিকার দিয়েছেন-
কিবা বিপ্র কিবা ন্যাসী শূদ্র কেনে নয়।
যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, অষ্টম পরিচ্ছেদ)
প্রভু কহে ঈশ্বর হয় পরম স্বতন্ত্র।
ঈশ্বরের কৃপা নহে বেদপরতন্ত্র।।
ঈশ্বরের কৃপা জাতিকুলাদি না মানে।
বিদুরের ঘরে কৃষ্ণ করিলা ভোজনে।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, দশম পরিচ্ছেদ)
উড়িষ্যাতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার পূর্বে শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর সকল শিষ্যদের নিয়ে গুণ্ডিচামন্দির পরিষ্কার এবং ধৌত করতেন। একবার মন্দির পরিষ্কারের শেষে তার এক বাঙালি ভক্ত এক ঘটি জল নিয়ে তাঁর চরণে দিয়ে তা চরণামৃত বলে পান করে ফেলে। তাতে শ্রীচৈতন্যদেব প্রচণ্ড দুঃখ এবং রুষ্ট হয়ে যান এবং চরণামৃত পান করতে নিষেধ করেন স্বরূপ গোঁসাইর কাছে এই কর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
ঈশ্বর-মন্দিরে মোর পদ ধোয়াইল।
সেই জল লইয়া আপনে পান কৈল।।
এই অপরাধে মোর কাঁহা হবে গতি।
তোমার নৌড়িয়া করে এতেক ফৈজতি।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, দ্বাদশ পরিচ্ছেদ)
শ্রীচৈতন্যদেবের সকল শিক্ষার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হলো- মানুষকে অতিস্তুতি করে যেন ঈশ্বর বানিয়ে না ফেলা হয়। তিনি ছিলেন এর ঘোরতর বিরোধী। আজকে বাংলায় যে গত দেড়শো বছরে আমরা অবতারের হাইব্রীড ফসল দিয়ে ভরে ফেলেছি। তা হয়তো শ্রীচৈতন্যদেব আগেই বুঝতে পেরেছেন তার দূরদৃষ্টি দিয়ে। তাইতো তিনি বলেছেন-
প্রভু কহে বিষ্ণু বিষ্ণু ইহা না কহিহ।
জীবধামে কৃষ্ণজ্ঞান কভু না করিহ।।
জীব ঈশ্বর তত্ত্ব কভু নহে সম।
জলদগ্নি রাশি যৈছে স্ফুলিঙ্গের কণ।।
যেই মূঢ় কহে জীব ঈশ্বর হয় সম।
সেই ত পাষণ্ডী হয় দণ্ডে তবে যম।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ)
এভাবে সবার জন্যে যিনি নিজেকে অকৃপণভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পিছনে লোক না ছুটে পারে? না ভালবেসে পারে? হোসেন শাহ্ (১৪৯৪-১৫১৯) ছিলেন চৈতন্য সমসাময়িক বাংলার বিদেশী তুর্কি শাসনকর্তা। তার একটি উক্তিতেই আমরা এ কথার যথার্থ উত্তর পাই, তিনি বলেছেন- বিনা দানে, প্রলোভনে সকল লোক যাঁর পিছনে চলে সেই প্রকৃত গোঁসাঞি (সাধু)।
বিনা দানে এত লোক যার পাছে ধায়।
সেই ত গোসাঞি ইহা জানিহ নিশ্চয়।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, প্রথম পরিচ্ছেদ)
শ্রীচৈতন্যদেবই আমাদের দেখিয়ে দিলেন, কোন রকমের অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার না করেও শুধুমাত্র মানুষের ভালবাসাকে অবলম্বন করে যে বিপ্লব করা যায়। তাই তো তিনি ‘আধ্যাত্মিক গণতন্ত্রে’র পুরোধা পুরুষ। তাঁর রচিত গণতন্ত্রের ভিত্তিমূলে ছিল না কোন জাত-পাত, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। সবার সেখানে একটিই পরিচয় ‘কৃষ্ণের নিত্যদাস’। একটি মন্ত্রই সেখানে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হয়, তা হল ‘প্রেম’ ; মানবপ্রেম।
বাঙালির ভাষা, সাহিত্য এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের প্রাণপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর আগমনের সাথে সাথেই বাংলা সাহিত্য ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে বিভিন্ন রঙে বিকশিত হয়ে উঠে। বাংলা সাহিত্যের জীবনীগ্রনে'র প্রচলনও তাঁর মহাজীবনের উপরে তাঁর বিভিন্ন পার্ষদ এবং বৈষ্ণব মহাজনদের রচনার অমূল্য ভিত্তিসৌধের উপরেই গড়ে ওঠে। বৈষ্ণব মহাজনেরা শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন এবং দর্শনের উপরে অসংখ্য গ্রন' লিখে বাংলা ভাষাকে বহুবছরের বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তিদান করেন। বাংলাসাহিত্যে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান বিষয়ে প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের একটি উক্তি খুবই প্রাসঙ্গিক-
“চৈতন্যদেব এক অক্ষরও কবিতা লেখেন নি, তবু তিনি বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে অধিকার ক’রে আছেন বড়ো স্থান। বাঙলা সাহিত্যে তাঁর প্রভাব অসীম। তিনি মধ্যযুগের বাঙলাদেশে জাগিয়েছিলেন বিশাল আলোড়ন, তাতে অনেকখানি বদলে গিয়েছিলো বাঙলার সমাজ ও চিন্তা ও আবেগ। তিনি সাহিত্যে যে- আলোড়ন জাগান, তা তো তুলনাহীন। মধ্যযুগের সমাজ ছিলো সংস্কারের নিষ্ঠুর দেয়ালে আবদ্ধ, চৈতন্যদেব তার মধ্যে আনেন আকাশের মুক্ত বাতাস। তিনি প্রচার করেন ভালোবাসার ধর্ম, যাকে বলা হয় বৈষ্ণব ধর্ম এর ফলে মধ্যযুগের মানুষ লাভ করে কিছুটা মানুষের মর্যাদা; এবং মধ্যযুগের কবি বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ চৈতন্যদেবের আবির্ভাবে বাঙলার জীবনে, সমাজে এসেছিলো জাগরণ। এর ফলেই বাঙলা সাহিত্য ফুলেফুলে ভ’রে ওঠে।”
(হুমায়ুন আজাদ, লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, ঢাকা: ১৯৯৬, পৃ.-৫৮)
শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ এবং মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান পদাবলিকার শ্রীবাসুদেব ঘোষ অসাধারণ পদলালিত্যে শ্রীচৈতন্যদেবের মাহাত্ম্যকথা বর্ণনা করেছেন; তাই শ্রীবাসুদেব ঘোষের ভাষায় শ্রীচৈতন্যদেবের পাদপদ্মে জানাই অনন্ত শ্রদ্ধা-
(যদি) গৌর না হইত, তবে কি হইত,
কেমনে ধরিতাম দে’।
রাধার মহিমা, প্রেম-রসসীমা,
জগতে জানাত কে?
মধুর বৃন্দা- বিপিন-মাধুরী,
প্রবেশ চাতুরী সার।
বরজ-যুবতী- ভাবের ভকতি
শকতি হইত কা’র?
গাও গাও পুনঃ, গৌরাঙ্গের গুণ,
সরল করিয়া মন।
এ ভব-সাগরে, এমন দয়াল,
না দেখিয়ে একজন।।
(আমি) গৌরাঙ্গ বলিয়া, না গেনু গলিয়া,
কেমনে ধরিনু দে’।
বাসুর হিয়া, পাষাণ দিয়া,
(বিধি) কেমনে গড়িয়াছে।।
---------------------------------------------------------------
লেখক: কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
বর্ণবাদ ও হিন্দু ধর্ম
প্রচলিত বর্ণবাদ আমাদের হিন্দু সমাজের এক জটিল ব্যধি, এই দুষ্ট ব্যধি আমাদের হিন্দু সমাজকে কিরকম জড়বৎ করে তুলেছে, সেই বিষয়ে চিন্তাশীল হিন্দুরা যথেষ্ট অবগত।
যদিও প্রচলিত বর্ণবাদের উপদেষ্টারা এই বলেল যে, বর্ণবাদ বেদ উদ্ভূত এবং প্রাচীন ভারতের প্রচলিত পন্থা, এই বর্ণবাদ কে উপেক্ষা করবার উপায় নেই।
কিন্তু বাস্তব চিরন্তন সত্য এই'যে বেদোক্ত বর্ণবাদের সঙ্গে বর্তমানের বর্ণবাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, সমাজে চলতে থাকা বর্ণবাদ আদতে কিছু স্বার্থ সন্ধানী মানুষের কল্পনা প্রসূত বেদোক্ত বর্ণবাদের বিকৃতরূপ মাত্র।
বৈদিক বর্ণবাদ কর্মের দ্বারা বিভাজিত সমাঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থা, যে সমাজে জন্মগত কেউ ক্ষুদ্র বা বৃহৎ নয়, মানুষ তাঁর নিজের কর্মের দ্বারা মহান বা অধম হয়।
কিন্তু স্বার্থ সন্ধানী ক্ষমতাশীল মানুষরা বৈদিক যুগের শেষ সময়ে নিজেদের ক্ষমতা এবং সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বেদ নীতিকে বিকৃত করে অসাধু বর্ণবাদের প্রতিষ্ঠা করেন, কেবল স্বার্থ সিদ্ধির জন্য।
যেহেতু আমরা সারাজীবন ভুলের পিছনে ঘুরে চলেছি, সেই কারণে বেদ আমাদের কাছে অজ্ঞাত, এবং একটি কাল্পনিক বিভেদরেখা আমরা একে অপরের জন্য টেনে রেখেছি।
যদি বেদ মন্ত্র আমাদের জ্ঞাত থাকত, তবে অসাধু বর্ণবাদ কবেই অবলুপ্ত হয়ে যেত, আমাদের মধ্যেকার অনৈক্য, মতপার্থক্য পরিবেশ আর থাকতনা।
ঋগ্বেদের ৫/৫৯/৬ এবং ৫/৬০/৫ মন্ত্র গুলিতে সকলে সমান এবং সমত্বের কথা উল্লেখ আছে যা মানব সভ্যতাকে ঈশ্বরনিষ্ঠ একাত্মা হবার শিক্ষা দেয়, মন্ত্র গুলি এইরকম।
★সকলে সমান:- তে অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসো মহসা বি বাবৃধুঃ। সুজাতাসো জনুষা পৃশ্নি মাতরো দিবো মর্য্যা আ নো অচ্ছা জিগাতন।।
শব্দার্থ- তে- তাহারা/ অজ্যেষ্ঠা - বড় নয়/অকনিষ্ঠাস-ছোট নয়/
অমধ্যমাস-মধ্যম নয়/ উৎ ভিদ-উন্নত/ মহসা- উৎসাহের সঙ্গে/বি-বিশেষভাবে/ বাবৃধুঃ -ক্রমোন্নতি জন্য প্রযত্ন করে /জনুষা -জন্ম হইতেই/ সুজাতাস- উত্তম কুলীন/ পৃশ্নি মাতার- জন্মভূমির সন্তান/দিব-দিব্য/ মর্য্যা- দিব্য মনুষ্য/নঃ অচ্ছা- আমার নিকট ভালভাবে /আ জিগাতন -আসুক।
*অনুবাদ:- মানবের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় এবং কেহ মধ্যম নয়, তাহার সকলেই উন্নতি লাভ করিতেছে।উৎসাহের সঙ্গে বিশেষভাবে ক্রমোন্নতি প্রযত্ন করিতেছে।জন্ম হইতেই তাহারা কুলীন।তাহারা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাহারা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক।(ঋগ্বেদ ৫/৫৩/১১/)
★অজ্যেষ্ঠাস অকনিষ্ঠাস এতে সংভ্রাতরো বাবৃধুঃ সৌভগায়।যুবা পিতা স্বপা রুদ্র এষাং সুদুঘা পৃশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভ্যঃ।।
শব্দার্থ- অজ্যেষ্ঠা - যাহাদের মধ্যে কেহ বড় নাই এবং /অকনিষ্ঠ সঃ-যাহাদের মধ্যে কেহ ছোট নাই/এতে- ইহারা/ভ্রাতর -ভাইভাই /সৌভগায় -সৌভাগ্য লাভের জন্য/সংবাবৃধু- মিলিয়া প্রযত্ন করিতেছে (যুবা পিতা) তরুণ পিতা/ স্বপা রুদ্রঃ-শুভকর্মা ঈশ্বর /এষাম- ইহাদের জন্য /সু দুঘা- পয়স্বিনী মাতা/ পৃশ্নিঃ- প্রকৃতি / ম-রুদ্ভ্যঃ- ক্রন্দনহীন জীবের জন্য / সুদিনা- উত্তম দিন প্রদান করেন।
*অনুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় বা কেহ ছোট নয়।ইহারা ভাই ভাই।সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে।ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্মা ঈশ্বর এবং মাতা দুগ্ধবতী প্রকৃতি।প্রকৃতি মাতা ক্রন্দনহীন পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করেন।
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
শ্রীমদ্ভগবদগীতা আলোকে নারীর ঐশ্বর্যগুণ --
এই প্রশ্ন উত্তর পর্বটি আলোচনা হয়েছিল ভারতে পুনেতে এবং প্রশ্নের উত্তর প্রদান করছেন অখিলাত্মানন্দ দাস, যা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল ----
= প্রশ্নঃ – একথা কী সত্যি যে, গীতায় শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন, মানুষের চরিত্রে যতরকম দোষ থাকতে পারে, সবই নারী ও শূদ্রের চরিত্রে আছে এবং জন্মান্তরীয় পাপের ফলেই জীব নারী ও শূদ্ররূপে পাপযোনিতে জন্মগ্রহণ করে থাকে ?
উত্তরঃ – না একথা একদম সত্যি নয় । যারা এ ধরনের কথা প্রচার করে তারা কখনও একথা উল্লেখ করে না যে গীতার কোন শ্লোকে এরকম কথা স্পষ্টভাবে কিংবা আকারে ইঙ্গিতেও বলা হয়েছে । আসলে হয়েছে কি ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’ মহাগ্রন্থটি হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজে এতটায় আদরনীয় ও সন্মানীয় যে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সময়ে জড়জাগতিক জ্ঞানের নিরিখে ‘জ্ঞানী’ সন্মানে ভূষিত কেউ কেউ ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’র সঙ্গে নিজের নামটি জড়ানোর অভিপ্রায়ে শ্রীমদ্ভগবদগীতা শ্লোকেসমূহের নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে গ্রন্থ রচনা করছেন । এইসব তথাকথিত পন্ডিতদের অপব্যাখ্যাগুলিই সহজ সরল সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কারণ । উপরোক্ত প্রশ্নটিও তাই সেইরকম বিভ্রান্তি থেকে উঠে আসা একটি প্রশ্ন । শ্রীমদ্ভগবদগীতা
র কোন শ্লোকের কোথাও নারীদের প্রতি অবমাননার কোন কথা বলা হয় নি । বরং জেনে রাখা ভাল শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আত্মোপলব্ধির জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে । অর্থাৎ আমি এই দেহ নই, প্রকৃতপক্ষে আমি হচ্ছি চিন্ময় আত্মা । আর এই চিন্ময় আত্মার কোন লিঙ্গ ভেদ হয় না । আত্মা আত্মাই । আত্মার নারী বা পুরুষগত কোন ভেদ নেই । তাই শ্রীমদ্ভগবদগীতায় নারীদের নিয়ে কোন অবমাননাকর কথা যে হতে পারে না, সেটা বলা বাহুল্য । তাছাড়া পরম্পরাগত ভারতীয় সনাতন ধর্মে নারীদেরও সন্মানের সঙ্গে ‘গুরু’ বা আচার্যের আসনেও বসানো হয়েছে । এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন ‘যেই কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয় ।’ অর্থাৎ একজন নারীও যদি কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা হন তাহলে তিনিও গুরু হবার যোগ্যতা লাভ করবেন । সেক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের ভেদাভেদ বিবেচ্য নয় ।
=প্রশ্নঃ – তবে একথা তো ঠিক যে, গীতার প্রথম অধ্যায়ে ৪০ নং শ্লোকে মহামানব অর্জুন যুদ্ধভয়ে ভীত হয়ে বাস্তবিকই বলেন যে, অধর্মের দ্বারা অভিভূত হয়ে সমাজের কুলবধূরা ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং তারা অসৎচরিত্রা হলে দেশের মধ্যে বহু অবাঞ্চিত প্রজাতি উৎপন্ন হয় ?
উত্তরঃ – ঠিক তাই । গীতার ঐ শ্লোকের পরবর্তী শ্লোকটিতে (১/৪১) অর্জুনের বক্তব্য যা বলা আছে, তার অর্থ এই যে, বর্ণসঙ্কর অর্থাৎ বিভিন্ন বর্ণ ও জাতির অবাধ মিশ্রণে অবাঞ্চিত সন্তানিদের সৃষ্টি বৃদ্ধি পেলে বংশধারায় ঐতিহ্য অধঃপতিত হতে থাকে । আবার তার পরের শ্লোকটিতে (১/৪২) অর্জুনের ভাবদারায় বলা হয়েছে – যে সব নারী বংশের ঐতিহ্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাঞ্চিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে, তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতিধর্ম ও কুলধর্ম উৎসন্নে যায় । ফলে, চিরন্তনী জাতিধর্ম তথা কুলধর্ম বিনষ্ট হয় । দায়িত্বজ্ঞানহীন সমাজনেতাদের প্রশ্রয়ে এবং পরিচালনাতেই এইভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ।
অবশ্যই, গীতার প্রথম অধ্যায়ে এই শ্লোকগুলি তো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উক্তি নয় – এগুলি অর্জুন বলেছিলেন যুদ্ধবিগ্রহে তাঁর ঐকান্তিক অনীহা প্রকাশের কারণস্বরূপ । অর্জুন তখনও শ্রীকৃষ্ণের কাছে যথার্থ জ্ঞান আহরনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি, তাই তিনি নিতান্তই সাধুসন্তদের কাছে শোনা-কথার ভিত্তিতে এই সমস্ত যুক্তির অবতারনা করেন । ‘শ্রীমদ্ভগবদগীত
া যথাযথ’ অতুলনীয় মহাগ্রন্থের মধ্যে জগদগুরু শ্রীল অভয়চরণাবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১/৪৩ শ্লোকের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে তাই লিখেছেন, ‘অর্জুন সমস্ত যুক্তিতর্ক তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং তিনি সাধুসন্ত ইত্যাদি মহাজনদের কাছ থেকে আহরণ করা জ্ঞানের ভিত্তিতে এই সমস্ত যুক্তির অবতারণা করেছিলেন ।’ যথার্থ পরমগুরু পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের কাছে জ্ঞান লাভ করবার আগেই অর্জুন নারীজাতি সম্পর্কে এই ধরনের হতাশাব্যঞ্জক উক্তি করেছিলেন ।
=প্রশ্নঃ – তা হলে নারীজাতির কুকর্মজনিত দোষাদির ফলে জাতিকুল কলুষিত হওয়ার সম্ভবনা থেকে সমাজকে রক্ষা করবার উপায় কি ?
উত্তরঃ – অবশ্যই, নারী বা পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ণ কাজের কুফল থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে নানা প্রকার সংশোধনী তথা প্রায়শ্চিত্তমূলক ক্রিয়াকর্মের বিধান সনাতন (চিরন্তন) ভারতীয় ধর্মাচারের অঙ্গ হিসেবে ব্যাপকভাবে সুস্বীকৃত হয়ে রয়েছে । আধুনিক মনোভাবাপন্ন উন্নাসিক মানুষেরা অবশ্য প্রায়শ্চিত্ত কিংবা আত্মিক সংশোধনের তোয়াক্কা করে না, সেটা তাদের অহমিকা মাত্র । ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ভুল কাজ করা হলে, সংশোধনের মনোবৃত্তির মাধ্যমে আবার সৎপথে জীবন যাপন করবার বিধি ভারতীয় সমাজশাস্ত্রে নানাভাবে দেওয়া রয়েছে এবং সেগুলির সম্যক্ যথার্থতাও রয়েছে ।
নারীজাতি সম্পর্কে অর্জুনের অজ্ঞানতাজনিত উক্তির প্রাথমিক প্রতিফলন শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রথমাংশে থাকলেও এই মহান্ গ্রন্থখানির পরবর্তী অংশে ‘বিভূতিযোগ’ অধ্যায়ে যখন অর্জুনের অনুসন্ধিৎসা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিজের বিভিন্ন বিভূতি অর্থাৎ ঐশ্বর্যগুণের বর্ণনা দিয়েছেন, তখন দ্বিধাহীন ভাষাতেই তিনি জগৎবাসীকে জানিয়েছেন যে, নারীদের মধ্যে কীর্তি, শ্রী, বাণী, স্মৃতি, মেধা, ধৃতি এবং ক্ষমা – এই সমস্ত গুণাবলী তিনি পরম কৃপাভরে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই অর্পণ করে রেখেছেন । আর, তিনি ঐ সমস্ত গুণাবলীর মাধ্যমেই নারীর মধ্যে বিরাজ করে থাকেন । (গীতা ১০/৩৫) কোনও নারী যখন এই সমস্ত ঐশ্বর্য তথা গুণাবলীতে নিজেকে বিভূষিতা করে রাখতে পারেন, তখন তিনি বাস্তবিকই জনসমাজে মহিমান্বিতা হয়ে উঠেন ।
=প্রশ্নঃ তাই যদি হয়, তা হলে এদেশে-বিদেশে নারীজাতির এত অবমাননা কেন হচ্ছে ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষের সনাতন (চিরকালীন) জ্ঞানভান্ডার সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানের অভাবেই বহু মানুষ এভাবে নারী সম্প্রদায়ের অযথা অবমাননা করতে শেখে । গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১০/৩৫ নং শ্লোকটিতে নারীর মধ্যে ঐশ্বরিক গুণাবলীর ঐশ্বর্য নিহিত রয়েছে বলে যে ঘোষনা করেছেন, তার প্রতি নারী সমাজের সযত্ন মনোযোগ আকর্ষনের মাধ্যমে তাঁদের হীনমন্যতা দূর করাই আমাদের অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করি । আমাদের সমূহ আশঙ্কা হয় যে, গীতার নবম অধ্যায়ের ‘রাজগুহ্য যোগ’ থেকে ৩২ নং শ্লোকটির ভুল অনুবাদ এবং বিকৃত ব্যাখ্যা কোনও কোনও প্রচলিত বিতর্কিত গীতা-ব্যাখ্যায় নারীর মর্যাদা সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে অনেকেই বিভ্রান্তিবোধ করে থাকেন । শ্লোকটি এরকম –
মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাংগতিম্ ।। (গীতা ৯/৩২)
শ্লোকটির যথার্থ অন্বয় হওয়া উচিত এইরকম –
“হে পার্থ (পৃথাপুত্র অর্জুন), যে কেউ পাপযোনিতে (নীচ বংশে) জন্মগ্রহন করে, (নীচকুলজাত) শূদ্র, চন্ডালেরা, স্ত্রীলোকেরা এবং বৈশ্য (ব্যবসায়ীরা), তারা যখনই একাগ্রমনে আমার প্রতি (শ্রীভগবানের প্রতি) আশ্রয়গ্রহন করে, তখন তারাও পরম গতি লাভ করে থাকে ।”
=প্রশ্নঃ – তবে কি নীচবংশে জাত শূদ্র এবং চন্ডালের সাথে একই স্তরে স্ত্রীলোক এবং বৈশ্য-ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বিবেচনা করতে গীতায় বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ -- শূদ্র, চন্ডালেরা, স্ত্রীলোক এবং ব্যবসায়ীদের একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে বলেই তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না । যেহেতু সমাজে অনেকে স্ত্রীলোকদের পক্ষে পূজা-অর্চনাদি করার যোগ্যতা সম্পর্কে কুসংস্কারমূলক দ্বিধা-দ্বন্ধ পোষণ করে থাকে, সেই কারনেই এই শ্লোকটিতে সুস্পষ্টভাবে অভিব্যক্ত হয়েছে যে, শ্রীভগবানের শ্রীচরণে যে কোনও মানুষ, স্ত্রীলোকেরাও বিশেষভাবে আশ্রয় (ব্যপাশ্রিতা) গ্রহণ করবার যোগ্যতা এবং অধিকার আছে ।
এই শ্লোকটিতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টভাবেই ঘোষনা করেছেন যে, ভক্তিযোগে সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে – এতে কোন জাতিকুল বা লিঙ্গ ভেদাভেদ নেই । ভগবদ্-ভক্তি এবং শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের সঙ্গলাভ এমনই শক্তিসম্পন্ন এবং এমনই উন্নত যে, তাতে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ থাকে না । যে কোনও জীব ভক্তিমার্গ গ্রহণ করতে পারে । সর্বতোভাবে নগণ্য মানুষটিও যদি শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের আশ্রয় গ্রহণ করে, তা হলেই সে অচিরে যথাযথ পথনির্দেশের মাধ্যমে শুচিতা অর্জন করতে পারে । এমনই উদারমনোভাবাপন্ন গীতার বানী !
=প্রশ্নঃ – নারী এবং পুরুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, তা না হয় বুঝলাম – কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র – এমন সব জাতিভেদ প্রথা থাকবে কেন ?
উত্তরঃ – গীতার যথাযথ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, প্রকৃতিজাত কর্মগুণ অনুসারে মানুষকে সর্বকালে সর্বদেশেই চারভাগে ভাগ করা হয়েই আসছে – (১) সত্ত্বগুণবিশিষ্ট মানুষ (ব্রাহ্মণ)—অবশ্যই জন্মসূত্রে নয়—কর্মগুণের বিচারে, ব্রহ্মজ্ঞান লাভের মাপকাঠিতে; (২) রজোগুণবিশিষ্ট ক্ষত্রিয় (শাসক সম্প্রদায়—সর্বদেশেই আছে এবং থাকবে); (৩) রজঃ ও তমোগুণবিশিষ্ট বৈশ্য (বণিক সম্প্রদায়—সারা জগতেই চিরকাল রয়েছে); এবং (৪) তমোগুণবিশিষ্ট শূদ্র (নিতান্ত কর্মজীবী স্বল্পমেধার মানুষ, যারা কেবল গতরে খাটতেই পারে) ।
এটা কেবলমাত্র ভারতবর্ষের শাস্ত্রীয় বিধানমতে হয়েছে, তা তো নয় – মানব-সভ্যতার আদিকাল থেকেই সম্পূর্ণ সমাজবিজ্ঞানসম্ম
তভাবেই মানব সমাজে জগতের সর্বত্রই বিদ্যমান রয়েছে এই বর্ণবিভাগ, যা খুবই স্বাভাবিক ।
=প্রশ্নঃ -- অস্পৃশ্য, অশুচি – এমন সব বাছবিচার এসেছে কেন ?
উত্তরঃ -- যদি কোনও মানুষ গতরে খাটা মানুষের চেয়েও অধম কাজে প্রবৃত্ত হয়, তখন তাকে পাপযোনি চন্ডাল বলা হয় – এই ধরনের মানুষেরা যত সব নোংরা অকাজ কুকাজ করতে পারে – তাই তারা শূদ্রেরও অধম । আদিকাল থেকেই পৃথিবীর সব সভ্য দেশে এমন নিম্নরুচির মানুষ তো অনেক দেখা গেছে – তাই এটা ভারতবর্ষের পন্ডিতদের মনগড়া অলীক জাতিভেদ প্রথা নয় – এটাও চিরকালের সমাজবিজ্ঞানসম্মত প্রাকৃতিক সমাজব্যবস্থা ।
সাধারনত উচ্চবংশজাত কিছু মানুষ এই সমস্ত পাপযোনিতে (অর্থাৎ পাপময় জন্মজীবনে) দুষ্ট মানুষদের অস্পৃশ্য করে ঠেলে রাখেন, যাতে তাদের সংস্পর্শে সমাজ কলুষিত না হতে পারে এবং তারাও সৎ পথে উত্তরণে আগ্রহী হতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে ।
কিন্তু ভগবদ্ভক্তিযোগ এবং শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের কল্যাণময় সঙ্গশক্তি এমনই প্রভাবশালী যে, তার স্পর্শে নীচযোনির মানুষেরাও মানবজীবনের পরম সার্থকতা এবং উৎকর্ষ লাভ করতে পারে এবং সেই উত্তরণ সম্ভব হয়ে ওঠে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপালাভের আশ্রয় গ্রহণে আগ্রহী হলে ।
=প্রশ্নঃ – সমাজে যেমন, কিছু মানুষকে অস্পৃশ্য, অশুচি করে রাখা হয়েছে, তেমনই কিছু স্ত্রীলোককে দুষ্টা প্রকৃতির বলা হয়ে থাকে কেন ?
উত্তরঃ -- দোষে-গুণে মিলিয়েই মানুষ হয় । বাস্তবিকই, অর্জুন তাঁর সাংসারিক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ কথা কয়টি উচ্চারণ করে পরম সখা শ্রীকৃষ্ণের কাছে আন্তরিকভাবেই অনুযোগ উত্থাপন করেছিলেন (গীতা ১/৪০) । তাঁর মানে এই নয় যে, সব স্ত্রীলোকেরাই দুষ্টা প্রকৃতির হয় । গীতার ১/৪২ নং শ্লোকটিতে অর্জুন তাঁর যথার্থ সামাজিক অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ বলেছেন –
দোষৈরেতৈঃ কুলঘ্নানাং বর্ণসংকরকারকৈঃ ।
উৎসাদ্যন্তে জাতিধর্মাঃ কুলধর্মাশ্চ শাশ্বতাঃ ।।
স্ত্রীলোকদের যত গুণাবলীই থাকুক, তাদের মধ্যে কতগুলি দোষের ফলে সমাজে অবাঞ্ছিত সন্তানাদি সৃষ্টি হয় এবং তাদের কুকর্মের ফলে সর্বপ্রকার সামাজিক উন্নতি ব্যাহত হয়, যার পরিনামে কল্যাণ ধর্ম একেবারে উচ্ছেন্নে যায় – বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে থাকে । সেই ৬ টি দোষ হল – ব্যভিবিচার, অবাধ মেলামেশা, অসন্তোষ, বাচালতা, নির্বুদ্ধিতা এবং ক্রোধ । লক্ষ করে দেখবেন – আজকের দিনেও নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসার হয়েছে বলে সকলে একবাক্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকলেও, যে কোনও নারীর মধ্যে এই ৬ টি দোষের কিছুমাত্র লক্ষণ দেখা গেলে সেখানে সামাজিক অশান্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে । তখন তো কিছু স্ত্রীলোককে দুষ্টা প্রকৃতির মানুষ বলতে মানুষ বাধ্য হবেই ।
=প্রশ্নঃ – তবে কি নারীদের পক্ষে কখনই অবাধ মেলামেশা, অসন্তোষ প্রকাশ, বাচালতা, ক্রোধের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা চলবে না ?
উত্তরঃ – আধুনিক যুগের নারী স্বাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন তো স্বাভাবিক, তবে লক্ষ করলে দেখা যায় – যে সমস্ত নারী এই সমস্ত আচরণগত দোষগুলি স্বভাবগুণে অতিক্রম করতে পারে, তাদের নিয়ে সমাজে সংঘর্ষমূলক সমস্যা তেমন হয় না, -- পুরুষের দোষে তেমন সমস্যার সম্ভাবনা ঘটলেও নারীর সংযতগুণে সমাজে শান্তিরক্ষা হয়ে থাকে । গীতায় ‘বিষাদযোগ’ (সংসার-যুদ্ধে বিষন্নতার বিশ্লেষণ সম্পর্কিত) অধ্যায়ে গৃহী-সংসারী অর্জুন বুঝি সংসারচক্রে বীতশ্রদ্ধ হয়েই তাঁর পরমসখা শ্রীকৃষ্ণের কাছে অনুযোগ করে তাই বলে উঠেছিলেন –
অধর্মাভিভবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রিয়ঃ ।
স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্কর ।। (গীতা ১/৪০)
“হে কৃষ্ণ, অধর্মের দ্বারা অভিভূত হলে কুলবধূগণ ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বার্ষ্ণেয় (বৃষ্ণিবংশজাত শ্রীকৃষ্ণ), কুলস্ত্রীগণ অসৎচরিত্রা হলে অবাঞ্ছিত প্রজাতি উৎপন্ন হয় ।”
কুরু-পান্ডবদের বৃহৎ পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে নানাপ্রকার প্রত্যক্ষ সাংসারিক অভিজ্ঞতায় জর্জরিত অর্জুন যথার্থই বলতে চেয়েছিলেন যে, সমাজের স্ত্রীলোকেরা সৎ চরিত্রবতী এবং সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাকতে পারলে তবেই সৎজনগণ উৎপন্ন হতে পারে – এই মতবাদে আজও কোনও অভিজ্ঞ মানুষ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন না ।
=প্রশ্নঃ -- গীতায় এইভাবে ‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ (১/৪০) বলে স্ত্রীলোকদের দুষ্টা প্রকৃতির মানুষের মতো হেয়জ্ঞান করা হয়েছে মনে করে অনেকেই বিব্রতবোধ করে থাকতে পারেন তো ?
উত্তরঃ -- ভারতবর্ষের সুমহান সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সংস্কৃত ভাষাটির প্রতি বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে শিক্ষাবিদমহলে অবহেলা আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ফলেই সংস্কৃত ভাষায় রচিত “গীতা” শাস্ত্রের এমন কদর্থ হচ্ছে ।
‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ মানে সব স্ত্রীলোকেরাই দুষ্টা প্রকৃতির নয় – যথার্থ তাৎপর্য এই যে, স্ত্রীলোকেরা দুষ্টা প্রকৃতির হলে – অশান্ত, দুরন্ত, অসৎ বা মন্দ প্রকৃতির হলে – কি হয়ে থাকে, সে কথাই বলা হয়েছে । যে ভালো বাংলা অভিধানেও ‘দুষ্ট’ কথাটির মূল সংস্কৃত তাৎপর্য দেখে বুঝে নিলেও শ্লোকটির অপব্যাখ্যার অবকাশ থাকে না । গার্হস্থ্য জীবনে অভিজ্ঞ, শিক্ষিতা বা অশিক্ষিতা যে কোনও আধুনিক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেও, তিনি এই চিরন্তন সামাজিক সত্যটি স্বীকার করে নিবেন । ‘দুষ্টা’ মানে দোষযুক্তা ।
বাস্তবিকই এই দোষের ফলেই শিশুদের মধ্যে যেমন অতি সহজেই বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, স্ত্রীলোকদের সরলতার মধ্যেও তেমনই অতি সহজেই অধঃপতিত হওয়ার প্রবণতা থাকে । তাই, শিশু এবং স্ত্রীলোক উভয়েরই পরিবারগোষ্ঠির মধ্যে প্রবীণদের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং তত্ত্বাবধানের একান্ত প্রয়োজন চিরকালই আছে, চিরকালই থাকবে, থাকা উচিত । এই মতবাদে কেউ যদি ‘পুরুষপ্রধান সমাজ’ ব্যবস্থাকে অযথা দোষারোপ করতে উদ্যত হন এবং নারী স্বাধীনতার প্রবক্তা হয়ে উঠতে চান, তাহলে তিনি সামাজিক প্রতিরক্ষা এবং তত্ত্বাবধানের নিরাপত্তা থেকে স্ত্রীলোকদের বঞ্চিত করবার অশুভ মানসিকতাই অভিব্যক্ত করবেন মাত্র ।
=প্রশ্নঃ – চাণক্য পন্ডিত বলেছিলেন, স্ত্রীলোকেরা সাধারণত অল্পবুদ্ধিসম্পন্না, তাই তারা নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত হতে পারে না – একথা কি আজও প্রযোজ্য ?
উত্তরঃ – প্রবীণ মানুষেরা আজও বলে থাকেন, ‘স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম্ দেবা ন জানন্তি’ । কথাটি শুনে আধুনিক নারীসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতেই পারে, কারন এখন মহিলারা আধুনিক কেতাবী শিক্ষাচর্চায় অগ্রসর হয়ে আত্মসন্মান বোধ অর্জন করেছেন—তাঁরা এই ধরনের মন্তব্যে প্রতক্ষ্যভাবে প্রতিবাদ জানাতেই পারেন । তবে গীতার অভিব্যক্তিকে মর্যাদা দিয়ে নারীর ৬ টি ভয়াবহ দোষের কথা প্রবীন নারী-পুরুষ সকলেই স্বীকার করে থাকেন – এই দোষগুলি প্রশ্রয় দিলে যে কোনও নারীর চরিত্র দুর্বোধ্য হয়ে উঠতে বাধ্য । তাই গীতার দশম অধ্যায়ে ‘বিভূতিযোগ’ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নারীর সাতটি গুণমর্যাদা বিকাশের শুভ পরামর্শও দিয়েছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যাতে প্রত্যেক নারীর মধ্যেই শ্রীভগবানের ঐশ্বর্যগুণ বিকশিত হয়ে সকল প্রকার দোষের সম্ভাব্য প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যেতে পারে ।
=প্রশ্নঃ – গীতায় নারীর ঐশ্বর্যগুণ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ কি বলেছেন ?
উত্তরঃ – গীতার ১০ম অধ্যায়ে ‘বিভূতিযোগ’ আলোচনা প্রসঙ্গে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিজের ঐশ্বর্যগুণাবলীর বিশদ বর্ণনা প্রসঙ্গে ৩৪ নং শ্লোকে স্পষ্টই বলেছেন –
কীর্তি শ্রীর্বাক্ চ নারীণাং স্মৃতির্মেধা ধৃতিঃ ক্ষমা ।
অর্থাৎ, ‘নারীদের মধ্যে আমি কীর্তি, শ্রী, কাম, স্মৃতি, মেধা, ধৃতি এবং ক্ষমা – এই সকল গুণাবলীর মাধ্যমে আমার ঐশ্বরিক মর্যাদা নিহিত রেখেছি ।’ তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে, সমাজে যে কোনও সময়ে যখনই কোনও মহিলা যশস্বিনী হয়ে ওঠেন, তাঁর মধ্যে এই সব ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যগুণ ফুটে ওঠে ।
=প্রশ্নঃ – নারীর মধ্যে যে ৬ টি দোষের কথা নিয়ে অর্জুন আমাদের চিন্তান্বিত করেছেন, সেই দুশ্চিন্তা দূর করবার জন্যেই কি শ্রীকৃষ্ণ নারীর ৭ টি গুণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ?
উত্তরঃ – শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাই ন – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় ঘোষনা করেছেন যে, ঐ ৭ টি গুণ তাঁর নিজেরই ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রতিফলন । গুণগুলি সবই স্ত্রীলিঙ্গবাচক । কোনও স্ত্রীলোক যখন এই ঐশ্বর্যমন্ডিত গুণাবলীর সবগুলি কিংবা কয়েকটির অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে বিভূষিতা করে তুলতে উদ্যোগী হন, তখনই তিনি সমাজে মহিমান্বিতা হয়ে উঠেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।
প্রথম ঐশ্বর্যগুণটি হল ‘কীর্তি’ – কৃতিত্বের পরিচায়ক কার্যকলাপ;
দ্বিতীয় গুণটি ‘শ্রী’ – সৌন্দর্য, শোভনীয় আচরণভঙ্গী;
তৃতীয় গুণ – সংযত কথাবার্তা;
চতুর্থ গুণ ‘স্মৃতি’ – স্মরণশক্তি;
পঞ্চম গুণ ‘মেধা’ – পরিশীলিত বুদ্ধি;
ষষ্ঠ গুণ ‘ধৃতি’ – ধৈর্য, সন্তুষ্টি আর অধ্যবসায়; এবং
সপ্তম গুণ ‘ক্ষমা’ – সহিষ্ণুতা, অপরাধমার্জনা ।
এবার, বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলেই বোঝা যাবে যে, সমাজে যে সব নারী সকলের কাছে মর্যাদা অর্জন করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই এই সমস্ত ঐশ্বর্যগুণই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিকশিত হয়ে উঠেছে । সুতরাং, নারীজাতি সম্পর্কে অর্জুন যে সমস্ত ভীতিপ্রদ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন, পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে এইভাবে নারীর ঐশ্বরিক গুনাবলীর সম্ভবনা বিকশিত করে তোলার পরামর্শ দিয়ে আমাদের সকলকেই আশ্বস্ত করেছেন । এই বিষয়ে অবশ্যই আরও বিশদ আলোচনা পর্যালোচনার অবকাশ আছে । তাতে নারীসমাজ উপকৃত হবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস।
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.