Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, May 6, 2017

বৈষ্ণব কারে কয়?

পারমার্থিক গুরু ও শিষ্য

মোহিনী একাদশী মাহাত্ম্য

কুর্মপুরাণে বৈশাখ শুক্লপক্ষের ‘মোহিনী’ একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- ‘হে জনার্দন! বৈশাখ শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর কি নাম, কি ফল, কি বিধি-এসকল কথা আমার নিকট বর্ণনা করুন।’
উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে ধর্মপুত্র! আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করেছেন পূর্বে শ্রীরামচন্দ্রও বশিষ্ঠের কাছে এই একই প্রশ্ন করেছিলেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হে মুনিবর! আমি জনকনন্দিনী সীতার বিরহজনীত কারণে বহু দু:খ পাচ্ছি। তাই একটি উত্তম ব্রতের কথা আমাকে বলুন। যার দ্বারা সর্বপাপ ক্ষয় হয় ও সর্বদু:খ বিনষ্ট হয়।
এই কথা শুনে বশিষ্ঠদেব বললেন-হে রামচন্দ্র! তুমি উত্তম প্রশ্ন করেছ। যদিও তোমার নামগ্রহণেই মানুষ পবিত্র হয়ে থাকে। তবুও লোকের মঙ্গলের জন্য তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম পবিত্র একটি ব্রতের কথা বলছি।
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশী ‘মোহিনী’ নামে প্রসিদ্ধা। এই ব্রত প্রভাবে মানুষের সকল পাপ, দু:খ ও মোহজাল অচিরেই বিনষ্ট হয়। তাই মানুষের উচিত সকল পাপক্ষয়কারী ও সর্বদু:খবিনাশী এই একাদশী ব্রত পালন করা। একাগ্রচিত্তে তার মহিমা তুমি শ্রবণ কর। এই কথা শ্রবণমাত্রেই সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়।
পবিত্র সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী নামে এক সুশোভনা নগরী ছিল। চন্দ্রবংশজাত ধৃতিমান নামে এক রাজা সেখানে রাজত্ব করতেন। সেই নগরীতেই ধনপাল নামে এক বৈশ্য বাস করতেন। তিনি ছিলেন পুণ্যকর্মা ও সমৃদ্ধশালী ব্যক্তি। তিনি নলকূপ, জলাশয়, উদ্যান, মঠ ও গৃহ ইত্যাদি নির্মাণ করে দিতেন। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সুমনা, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ও ধৃষ্টবুদ্ধি নামে তার পাঁচজন পুত্র ছিল। পঞ্চম পুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিল অতি দুরাচারী। সে সর্বদা পাপকার্যে লিপ্ত থাকত। পরস্ত্রী সঙ্গী, বেশ্যাসক্ত, লম্পট ও দ্যুতক্রীড়া প্রভৃতি পাপে সে অত্যন্ত আসক্ত ছিল। দেবতা, ব্রাহ্মণ ও পিতামাতার সেবায় তার একেবারেই মতি ছিল না। সে অন্যায়কার্যে রত, দুষ্টস্বভাব ও পিতৃধন ক্ষয়কারক ছিল। সবসময় সে অভক্ষ ভক্ষণ ও সুরাপানে মত্ত থাকত।
পিতা ধনপাল একদিন পথ চলছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন ধৃষ্টবুদ্ধি এক বেশ্যার গলায় হাত রেখে নি:সঙ্কোচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নির্লজ্জ পুত্রকে এভাবে চৌরাস্তায় ভ্রমণ করতে দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। এই কুস্বভাব দর্শনে ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি তাকে গৃহ থেকে বার করে দিলেন। তার আত্মীয়-স্বজনও তাকে পরিত্যাগ করল। সে তখন নিজের অলংকারাদি বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করত। কিছুদিন এইভাবে চলার পর অর্থাভাব দেখা দিল। ধনহীন দেখে সেই বেশ্যাগণও তাকে পরিত্যাগ করল।
অন্নবস্ত্রহীন ধৃষ্টবুদ্ধি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়ল। অবশেষে নিজের গ্রামে সে চুরি করতে শুরু করল। একদিন রাজপ্রহরী তাকে ধরে বন্দী করল। কিন্তু পিতার সন্মানার্থে তাকে মুক্ত করে দিল। এভাবে বারকয়েক সে ধরা পড়ল ও ছাড়া পেল। কিন্তু তবুও সে চুরি করা বন্ধ করল না। তখন রাজা তাকে কারাগারে বদ্ধ করে রাখলেন। বিচারে সে কষাঘাত দন্ডভোগ করল। কারাভোগের পর অনন্য উপায় ধৃষ্টবুদ্ধি বনে প্রবেশ করল। সেখানে সে পশুপাখি বধ করে তাদের মাংস ভক্ষণ করে অতি দু:খে পাপময় জীবন যাপন করতে লাগল।
দুষ্কর্মের ফলে কেউ কখনও সুখী হতে পারে না। তাই সেই ধৃষ্টবুদ্ধি দিবারাত্রি দু:খশোকে জর্জরিত হল। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হল। কোন পুণ্যফলে সহসা একদিন সে কৌন্ডিন্য ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হল। বৈশাখ মাসে ঋষিবর গঙ্গাস্নান করে আশ্রমের দিকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। শোককুল ধৃষ্টবুদ্ধি তার সম্মুখে উপস্থিত হল। ঘটনক্রমে ঋষির বস্ত্র হতে একবিন্দু জল তার গায়ে পড়ল। সেই জলস্পর্শে তার সমস্ত পাপ দূর হল। হঠাৎ তার শুভবুদ্ধির উদয় হল।
ঋষির সামনে সে কৃতাঞ্জলিপুটে প্রার্থণা করতে লাগল ‘হে ঋষিশ্রেষ্ঠ! যে পুণ্য প্রভাবে আমি এই ভীষণ দৃ:খযন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি, তা কৃপাকরে আমাকে বলুন।’
ঋষিবর বললেন-‘বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে মোহিনী নামে যে প্রসিদ্ধ একাদশী আছে, তুমি সেই ব্রত পালন কর। এই ব্রতের ফলে মানুষের বহু জন্মার্জিত পর্বত পরিমাণ পাপরাশিও ক্ষয় হয়ে থাকে।
মহামুনি বশিষ্ঠ বললেন-কৌন্ডিন্য ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে প্রসন্ন চিত্তে ধৃষ্টবুদ্ধি সেই ব্রত পালন করল।
হে মহারাজ রামচন্দ্র! এই ব্রত পালনে সে নিষ্পাপ হল। দিব্যদেহ লাভ করল। অবশেষে গরুড়ে আরোহন করে সকল প্রকার উপদ্রবহীন বৈকুন্ঠধামে গমন করল। হে রাজন, ত্রিলোকে মোহিনী ব্রত থেকে আর শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। যজ্ঞ, তীর্থস্থান, দান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্মই এই ব্রতের সমান নয়। এই ব্রত কথার শ্রবণ কীর্তনে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়।

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৭/১৪

দীক্ষা কি? দীক্ষা গ্রহণ করার আবশ্যকতা কোথায়?

দীক্ষা সর্বকার্যে শুদ্ধিকারক। অদীক্ষিত কোন ব্যক্তি যদি আধ্যাত্মিকতার যেকোন কার্য করুক না কেন? তৎসমুদয়ের কোন মূল নেই। তাই প্রত্যেকে দীক্ষা গ্রহণ করা অবশ্যই উচিত। দীক্ষা ব্যতীত কোন ভক্তকে ভগবান নিজেও দর্শন দেন না তা শাস্ত্রে বিধিত আছে।
দীক্ষা কি?
দীয়ন্তে জ্ঞানমত্যন্তং ক্ষীয়তে পাপসঞ্চয়ঃ।
তস্মাদ্ দীক্ষেতি সা প্রোক্তা মুনির্ভিস্তত্ত্বদর্শিভিঃ।।
দিব্যজ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কৃত্যা পাপস্য সংক্ষয়ম্।
তস্মাদীক্ষেতি সা প্রোক্তা মুনির্ভিস্তত্ত্ববেদিভিঃ।।
(রুদ্রযামল ও যোগিনী তন্ত্রে)
অনুবাদঃ যে কার্য পাপক্ষয় করিয়া দিব্য জ্ঞান প্রকাশ করে, তাহাই দীক্ষা। প্রকৃতপক্ষে দীক্ষার অর্থ বর্ণ বা শব্দ বিশেষ, শ্রবণ করা নহে। বর্ণ বা বর্ণগুলি শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম বলিয়া পরিকীর্তিত আছে। সেই শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্মই বর্ণ। সেই বর্ণই ভগবানের নাম। নাম এবং নামী অভেদ, কিছুই প্রভেদ নাই। এইভাবে যেই নাম বা মন্ত্র গ্রহণ করা হয় তাহাই দীক্ষা। যিনি নামে এবং মন্ত্র এ মন্ত্রের অভীষ্ট দেবতাকে এক ভাবেন, তিনি প্রকৃত দীক্ষিত। দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করিলে শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম অভীষ্ট দেবতার না হয় এবং হৃদয়ে নিজ ইষ্ট দেবতার ভাব উদ্দীপন না হয়, তবে সেইরূপে মন্ত্র বা দীক্ষা গ্রহণ করিয়া দীক্ষা বা মন্ত্র গ্রহণ শব্দ প্রয়োগ না করাই শ্রেয়ঃ। দৃঢ় বিশ্বাস বা ভক্তিই মূল।
দীক্ষা গ্রহণ করার আবশ্যকতাঃ
অদীক্ষিতাং লোকানাং দোষং শৃনু বরাননে।
অন্নং বিষ্ঠা সমং তস্য জলং মূত্র সমং স্মৃতম্।
যৎ কৃতৎ তস্য শ্রাদ্ধং সর্বং যাতিহ্যধোগতিম্।।১
(তথাহি মৎস্যর্সূক্তে)
অর্থঃ অদীক্ষিত ব্যক্তি অন্ন বিষ্ঠার সমান, জল মূত্রতুল্য। তাহারা শ্রাদ্ধাদি কার্য যাহা কিছু করে, তাহা সমস্তই বৃথা।
ন দীক্ষিতস্য কার্যং স্যাৎ তপোভির্নিয়মব্রতৈ।
ন তীর্থ গমনে নাপি চ শরীর যন্ত্রণৈঃ।।২
অদীক্ষিতা যো কুর্বন্তি তপো জপ পূজাদিকাঃ।
ন ভবতি ক্রিয়া তেষাং শিলায়ামুপ্ত বীজবৎ।।৩
অর্থঃ দীক্ষা গ্রহণ না করিলে কোন কার্য করিবার অধিকার জন্মে না। সেই জন্য জপ, তপ, নিয়ম, ব্রত, তীর্থ, ভ্রমণ উপবাসাদি শারীরিক কষ্ট দ্বারা কোন ফল দর্শিবে না।
অদীক্ষিতোহপি মরণে রৌরবং নরকং ব্রজেৎ।
অদীক্ষিতস্য মরণে পিশাচত্বং ন মুঞ্চতি।।
অদীক্ষিত ব্যক্তিগণ মৃত যদি হয়।
রৌরব নরকে বাস জানিবে নিশ্চয়।।
স্কন্ধ পুরাণেতে তার আছয়ে বর্ণন।
মৃত্যু পরে হবে তার পিশাচে জনম।।
দীক্ষা মূলং জপং সর্বং দীক্ষা মূলং পরং তপঃ।
দীক্ষামাশ্রিত্য নিবসেৎ কৃত্রশ্রমে বসদ্।।
জপ, তপ, তন্ত্র, মন্ত্র, দীক্ষা মূল হয়।
দীক্ষা ভিন্ন সর্বকার্য হইবেক ক্ষয়।।

Friday, May 5, 2017

জেনে নিন মহাঋষি ব্যাসদেব সম্পর্কে কিছু তথ্য

মহাঋষি, শ্রী শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব ছিলেন মুনি পরাশরের পুত্র। পরাশর ছিলেন শক্তির পুত্র, শক্তি ছিলেন মুনি বশিষ্ঠের পুত্র।
সত্যবতী ছিলেন এক মৎস্যজীবীর মেয়ে, রূপ গুনের কারণে পরে যে হস্তিনাপুরের রাজা, শান্তনুকে বিয়ে ক’রে রাজ পরিবারে আসে, মৎস্যজীবীর মেয়ে হিসেবে সেই সত্যবতী শুধু মাছ ধরতেই পারতো না, নৌকাও চালাতে পারতো। তো একদিন পরাশর মুনি নদী পার হতে গিয়ে সত্যবতীকে দেখেন এবং তার নৌকা করে নদী পার হতে থাকেন। সেই সময় পরাশর মুনি তার দিব্যজ্ঞানে বুঝতে পারেন, একমাত্র সত্যবতী ই তাকে তার উপযুক্ত পুত্র দিতে পারে।
তাই পরাশর মুনি, সত্যবতীকে প্রস্তাব দেয়, তাকে একটি পুত্র দেওয়ার জন্য; শুনে সত্যবতী বলে, আমি তো কুমারী, আপনাকে পুত্র দিতে গিয়ে যদি আমার কুমারীত্ব নষ্ট হয়, তাহলে বাড়ি ফিরবো কিভাবে ? লোকে আমার নামে কটূ কথা বলবে। শুনে পরাশর মুনি বলে, আমাকে পুত্র দানের পর তুমি কুমারী ই থাকবে।
এরপর পরাশর মুনির কথাকে বিশ্বাস করে, তার ইচ্ছাকে পূরণ করতে সত্যবতী তার সাথে সেই নৌকায় বা নদী মধ্যবর্তী দ্বীপে মিলিত হয়, গর্ভবতী হয়ে সত্যবতী সেই দিনই একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে এবং সেই পুত্র প্রসব হওয়া মাত্রই বালকের মতো হাঁটতে শুরু করে। মহাভারতের অনেক ঘটনার মতো এটিও একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, যেখানে মাত্র একদিনের মধ্যে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব হয়ে বেদব্যাস হাঁটতে শুরু করে এবং মায়ের অনুমতি নিয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আশ্রমে চলে যায়।
দ্বীপে জন্ম হয়েছিলো বলেই তার প্রথম নাম হয় দ্বৈপায়ন। দ্বৈপায়ন এর গায়ের রং ছিলো কালো, তাই তার ডাক নাম হয় কৃষ্ণ এবং পুরো নাম হয় ‘কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন’।
জ্যামিতির ভাষায় বৃত্তকে যে রেখা ভাগ করে তাকে বলে ব্যাস। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন, বেদের মন্ত্রগুলোকে সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করার সময় বিষয় অনুযায়ী বেদকে চারটি ভাগে ভাগ করেন ব’লে তার আরেক নাম হয় বেদব্যাস যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ‘ব্যাসদেব’ এ। এভাবে এই মহাঋষির পূর্ণ নাম দাঁড়ায় ‘শ্রী কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস’ বা সংক্ষেপে ‘ব্যাসদেব’। ব্যাসদেব এর মাথায় জটা ছিলো, তার মুখে ছিলো পিঙ্গল বর্ণের দাড়ি। আগেই বলেছি, জন্মেই ইনি বালকে পরিণত হন এবং মায়ের অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করেন। তাঁর তপস্যার স্থান ছিলো বদরিকাশ্রম। একারণে তিনি বাদরায়ন নামেও পরিচিত ছিলেন, যা ব্যাসদেব নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।
ব্যাসদেব- চারটি বেদ, ১৮ টি পুরান, উপপুরান, বেদান্ত দর্শন, ভাগবত পুরান প্রভূতি সংগ্রহ করে সংকলন করেন এবং মহাভারত রচনা করেন। তিনি মহাভারতের আমলে সাত পুরুষ ধরে জীবিত ছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম ছিলো শুকদেব। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সত্যবতীর পুত্র বিচিত্রবীর্যের মৃত্যুর পর তার দুই স্ত্রী অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর এবং হস্তিনাপুরের এক দাসীর গর্ভে বিদুরের জন্ম দেন।
সনাতন ধর্মের পুস্তকগুলোর সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাসদেবের যে অবদান, তা আমরা খুব কমই অনুধাবন করি এবং তার জীবনাদর্শকে একদমই ফলো করি না।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

স্বামীজীর কথা-অমৃত

ভক্তিযোগ ভগবৎপ্রাপ্তির বিভিন্ন পথগুলির একটিকেও ঘৃণা বা অস্বীকার করতে নিষেধ করেন। তথাপি গাছ যতদিন ছোট থাকে, ততদিন বেড়া দিয়ে রাখতে হয়। অপরিণত অবস্থায় নানাপ্রকার ভাব ও আদর্শ সম্মুখে রাখলে ধর্মরূপ কোমল লতিকা মরে যাবে। অনেক লোক উদার ধর্মভাবের নামে অনবরত ভাবাদর্শ পরিবর্তন করে নিজেদের বৃথা কৌতূহল মাত্র চরিতার্থ করে। নূতন নূতন বিষয় শোনা তাদের যেন একরূপ ব্যারাম—একরূপ নেশার ঝোঁকের মত। তাহারা খানিকটা সাময়িক স্নায়বীয় উত্তেজনা চায়, সেটি চলে গেলেই তাহারা আর একটির জন্য প্রস্তুত হয়। ধর্ম তাদের নিকট যেন আফিমের নেশার মত হয়ে দাঁড়ায়, আর ঐ পর্যন্তই তাদের দৌড়। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেনঃ আর এক প্রকার মানুষ আছে, তাহারা মুক্তা-ঝিনুকের মত। মুক্তা-ঝিনুক সমুদ্রতল ছাড়িয়া স্বাতীনক্ষত্রে পতিত বৃষ্টি-জলের জন্য উপরে আসে। যতদিন না ঐ জলের একটি বিন্দু পায়, ততদিন সে মুখ খুলিয়া উপরে ভাসতে থাকে, তারপর গভীর সমুদ্রতলে ডুব দেয় এবং যে পর্যন্ত না বৃষ্টিবিন্দুটি মুক্তায় পরিণত হয়, সে পর্যন্ত সেইখানেই বিশ্রাম করে।
এই উদাহরণে ইষ্টনিষ্ঠা-ভাবট
ি যেরূপ হৃদয়স্পর্শী কবিত্বের ভাষায় ফুটে উঠেছে আর কোথাও সেরূপ হয় নাই। ভক্তিপথে প্রবর্তকের এই একনিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন। হনুমানের ন্যায় তাঁহার বলা উচিত,
শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদঃ পরমাত্মনি।
তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ।।
‘যদিও লক্ষ্মীপতি ও সীতাপতি পরমাত্মস্বরূপে অভেদ, তথাপি কমললোচন রামই আমার সর্বস্ব।’
অথবা সাধু তুলসীদাস যেমন বলিতেন,
সব্সে বসিয়া সব্সে রসিয়ে সব্কা লীজিয়ে নাম।
হাঁ জী হাঁ জী কর্তে রহিয়ে বৈঠিয়ে আপনা ঠাম।।—দোঁহা, তুলসীদাস
‘সকলের সঙ্গে বসো, সকলের সঙ্গে আনন্দ কর, সকলের নাম গ্রহণ কর; যে যাহাই বলুক না কেন সকলকেই হাঁ হাঁ বলো, কিন্তু নিজের ভাব দৃঢ় রাখিও’৩৯, ভক্তিযোগীরও সেই প্রকার আচার অবলম্বন করা উচিত। ভক্তসাধক যদি অকপট হন, তবে গুরুদত্ত ঐ বীজমন্ত্র হইতেই আধ্যাত্মিক ভাবের সুবৃহৎ বটবৃক্ষ উৎপন্ন হইয়া শাখার পর শাখা ও মূলের পর মূল বিস্তার করিয়া ধর্মজীবনের সমগ্র ক্ষেত্র ছাইয়া ফেলিবে। পরিশেষে প্রকৃত ভক্ত দেখিবেন—যিনি সারা জীবন তাঁহার নিজের ইষ্টদেবতা, তিনিই বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রূপে উপাসিত। -স্বামী বিবেকানন্দ।

বেদের পরিচয়- (৩) (কপি না করে শেয়ার করে সহায়তা করুন)

সহস্র সহস্র বৎসর পূর্ব্বে ভারতের বক্ষঃভেদ করে হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি প্রমূখ্যাৎ পূতমন্ত্র-নিঃসৃত ত্রিষ্টুপ্ছন্দে স্থাবর জঙ্গম দুলে উঠিল-
য আত্মদা বলদা যস্য বিশ্ব
উপাসতে প্রশিষং যস্য দেবাঃ
যস্য ছাউয়ামৃতং যস্য মৃত্যুঃ!
অর্থাৎ- আত্মা যে দেয়, শক্তি যে দেয়, বিশ্বধ্যেয়, সকল দেবতা যে করে শাসন সবার শ্রেয়, অমৃত-মৃত্যু যাঁহার দুইটি ছায়া ও ছবি সেই সে দেবতা পূজিব আমরা প্রদানি হবি!
আত্মার পরেও যে চিন্তা করবার আরো কিছু আছে বা থাকতে পারে, এ কথা শুনলে পাশ্চাত্যদার্শনিকগণ হয়ত স্তম্ভিত হয়ে যাবেন; কিন্তু হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতির মুখ হতে যে মন্ত্র উচ্চারিত হোল, তাহার সর্ব্বপ্রথম শব্দ- যঃ। য আত্মদা। কে সে, যে সৃষ্টির সারভূত এই আত্মাকেও দান করে বিশ্বধ্যেয় হয়েছেন? যিনি দেবতাকেও শাসন করেন, তিনি কে? ইহার উত্তরও সমগ্র পৃথিবী-মধ্যে একমাত্র বেদ-ই দিয়েছেন। বৈবস্বত মনুর মন্ত্রে বাণী শুনলাম-যিনি বিশ্বদেব।
এই বিশ্বদেববাদ সম্বন্ধে অজ্ঞতা বশতঃই অনেক আমাদেরকে পৌত্তলিক বলে অবজ্ঞা করে থাকেন।
এস্থলে এই বিশ্বদেববাদ-সম্বন্ধে স্বর্গীয় উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয় যা বলেছিলেন, তার কিঞ্চিৎ উল্লেখ করলেই আমাদের সাকারবাদ ও পৌত্তলিকতার প্রকৃত মর্ম্ম সম্যক উপলব্ধি হবে। এতৎ সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন যে, হিন্দুর দেবতারা অসংখ্য, অথচ মিলিত। তাঁদের মন সমান, হৃদয় সমান, অভিপ্রায় সমান, কার্য্য সমান। তাঁদের 'মহৎ অসুরত্ব' অর্থাৎ সমবেত দেবশক্তি এক। ঋগ্বেদ প্রধানতঃ দেবতাদের এই সমবেত মহতী ঐশী শক্তিকেই পূজা করে। কেননা যদিও ঋগ্বেদী ঋষিদের বিবেচনায় প্রকৃতপক্ষে দেবতার সংখ্যা করা যায় না, তথাপি ঋগ্বেদে উপাস্য বলে যে সকল দেবতার নাম পাওয়া যায়, তাঁহারা এই সমবেত ঐশী শক্তিরই জ্ঞানের বৈচিত্র্য-বশতঃ ভিন্ন রকমের বিচিত্রতা মাত্র। মূল কথা, বেদে দেবতা শব্দ দুই অর্থে ব্যবহৃত এবং এই দুই অর্থের ভেদ সম্যক্ না বুঝলে ভ্রম জন্মে। প্রথম অর্থে দেবতা সিদ্ধ-পুরুষ এবং তাঁহারা অসংখ্য। দ্বিতীয় অর্থে দেবতা সিদ্ধপুরুষগণের মিলিত ঐশী শক্তি, তাহা এক। এই মিলিত দেব-শক্তির নামান্তর ব্রহ্ম; সমগ্র বেদ সেই ব্রহ্মেরই মহিমা প্রকাশ করে। এই কথাটি বিশেষ প্রণিধানের যোগ্য এবং তারজন্যই দ্বিতীয় অর্থে এক এক দেবতা অন্যান্য সর্ব্বদেবতার সমুতুল্য।
এই বাদ সম্বন্ধে বেদ-প্রবেশিকায় দেখা যায়- "আমাদের ঋগ্বেদের নাম বিশ্বদেব-বাদ, অর্থাৎ অসংখ্য দেবতার সমবেত ঐশী শক্তির নাম 'বিশ্বদেবাঃ' বা বিশ্বদেব ব্রহ্ম; এবং অগ্নি, বিষ্ণু প্রভৃতি উপাস্য দেবতারা সেই মহাশক্তিরই নাম।
ক্রমশঃ-
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্কুল

হিন্দুধর্মে পারমার্থিক লাভের পথ/ মার্গ

পারমার্থিক লাভের পথঃ
হিন্দুধর্মে পারমার্থিক লাভের বিভিন্ন পথ নির্দেশিত হয়েছে। পারমার্থিক লাভের বিভিন্ন মার্গ/পথের মধ্যে প্রধানত: তিনটি পথ/মার্গ বিশেষ ভাবে বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ যোগ্য বলে বিবেচিত। আমরা এ পারমার্থিক পথ/মার্গ গুলোর যেকোন একটি পথ অনুসরণ করে সাধন পথে অগ্রসর হলে ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ সম্ভব। এ পথ/মার্গ তিনটি হলঃ (ক) জ্ঞানমার্গ (খ) ভক্তিমার্গ এবং (গ) কর্মমার্গ
এ তিনটি মার্গ সম্পর্কে কিছুকথা নিম্নরূপঃ
(ক) জ্ঞানমার্গঃ জ্ঞানবাদীরা মনে করেন যে, জ্ঞানের পথই পরমার্থ বা মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ পথ, কর্মের পথ নয়। নামরূপাত্মক দৃশ্য প্রপঞ্চের অতীত যে নিত্য, শাশ্বত, অক্ষয়, অব্যয়, অনাদিতত্ত্ব, তাই পরমতত্ত্ব, তাই ব্রহ্ম। জ্ঞান যোগে তাকেই জানতে হবে। আত্মতত্ত্ব ও ব্রহ্মতত্ত্ব এক। জীব মায়ামুক্ত হলে এই একত্ব জ্ঞান লাভ করে। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের তিনটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। শ্রবণ ব্রহ্মজ্ঞানের প্রথম সোপান। এর অর্থ গুরুর কাছ থেকে উপনিষদের বাণী শ্রবণ। দ্বিতীয় সোপান মনন এর অর্থ যৌক্তিক বিশ্লেষণের সাহায্যে এই উপদেশের তাৎপর্য উপলদ্ধি। তৃতীয় ও চরম সোপান নিদিধ্যাসন এর অর্থ বুদ্ধি অনুমোদিত তত্ত্বের বিরবচ্ছিন্ন ধ্যান। এরই মাধ্যমে পরমজ্ঞান লাভ হয়। এরই নাম প্রজ্ঞা। এরই মাধ্যমে তত্ত্বের প্রত্যক্ষ দর্শন ও সাক্ষাৎ উপলদ্ধি হয়।
(খ) ভক্তিমার্গঃ জ্ঞানমার্গ খুবই কঠিন। সে কারণে এই পথ সকলের জন্য নয়, সীমিত কয়েক জনের জন্য। নির্গুণ, নির্বিশেষ ব্রহ্ম, যাকে জগৎস্রষ্টা, প্রভু বা ঈশ্বর কোন ভাবেই বর্ণনা করা যায় না, তাকে ধারণা করা মানুষের পক্ষে কঠিন এবং তার সঙ্গে ভাবভক্তির সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ পরমতত্ত্বকে যতখানি হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করতে চায় ততখানি বৃদ্ধি দিয়ে অনুভব করতে চায় না। তাই এসে পড়ে সগুণ ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কল্পনা এবং ভক্তির মাধ্যমে ভক্তের ঈশ্বর এর সাক্ষাৎকারের কথা। উপাসনা ভক্তিমার্গের সাধনা, ভক্তিমার্গের প্রাণ। অনুরাগই ভক্তির স্বরূপ। ভক্তিশাস্ত্রে- নয় প্রকার ভক্তির সাধন উল্লিখিত আছে। যেমন- শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পদসেবা, অর্চনা, বন্দনা, দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন। ভগবানই একমাত্র আশ্রয়- একমাত্র অগ্রতির গতি- এই ভাব অবলম্বন করে ভগবানে আত্মসমর্পণই ভক্তিমার্গের একটি প্রধান ভাব।
(গ) কর্মমার্গঃ কর্মমার্গ পরমার্থ লাভের জন্য নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাগ, দ্বেষ ও মোহ মুক্ত হয়ে যে কর্ম সম্পাদন করা হয় তাই হল নিষ্কাম কর্ম। গীতায় নিষ্কাম কর্ম সাধনের কথা বলা হয়েছে। জীব অনাসক্তভাবে, কর্মের ফলাফলে উদাসীন হয়ে, নিঃদ্বন্দ্ব ও সমত্ববুদ্ধিযুক্ত হয়ে এবং ঈশ্বরে সর্ব-কর্মফল সমর্পণ করে যদি কর্ম করে তবে সেই কর্মে কোন বন্ধন হয় না এবং আর পুনর্জন্ম হয় না। এই নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে সাক্ষাৎ ঈশ্বর দর্শন হয়।
এই তিনটি মার্গের মধ্যে যেকোন একটি মার্গ অনুসরণ করলেই ঈশ্বর দর্শন সম্ভব এবং আমাদের মানব উদ্দেশ্যের সার্থকতা এখানেই।

বেদের পরিচয়- (২) (কপি না করে শেয়ার করে সহায়তা করুন)

পৃথিবীর ইতিহাসে বৈদিকগ্রন্থ মানব-সমাজের প্রাচীনতম গ্রন্থ বলে সর্ব্ববাদিসম্মত। ঐতিহাসিক গবেষণার ফলে মানব-সভ্যতার বহু প্রাচীন নিদর্শন মিসর ও মেসোপটেমিয়া হতে আবিষ্কৃত হয়েছে সত্য, কিন্তু সেখানেও বেদের ন্যায় জ্ঞানধর্ম্মের কোনও বিরাট্ সৌধের আবিষ্কার হয় নাই। চরম ও পরম সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এই বৈদিক ধর্ম্ম ও তন্নিঃসৃত এই বৈদিক সভ্যতা যে অদ্যবধি অবিচ্ছেদে প্রবাহিত হয়ে আসছে, ইহাই বেদের বিশেষত্ব। বেদের প্রাচীনত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকগণ বহু গবেষণা করেছেন ও নানারূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক যুক্তি-পদ্ধতি অভ্রান্ত নয় এবং একদিন হয়ত বেদের বয়স-নির্ণয়-প্রচেষ্টা সত্যই বাতুলতা বলে প্রমাণিত হবে। এই ভারতের হিন্দুগণ বহু সহস্র বৎসর পূর্ব্ব হতেই বেদকে অনাদি ও অপৌরুষেয় বলে আসছেন। পরাশর সংহিতায় দেখা যায়-
ঋষয়ঃ মন্ত্রদ্রষ্টারঃ ন তু বেদস্য কর্ত্তারঃ।
ন কশ্চিৎ বেদকর্ত্তা চ বেদস্মর্ত্তা চতুর্ম্মুখঃ।।
পূর্ব্বেই বলেছি বেদ আমাদের ধর্ম্মের মূলভিক্তিস্বরূপ। ভারতীয় সভ্যতায় ও ভারতীয় ধর্ম-জীবনে এমন কোনও স্তর বা পর্য্যায় নেই যেখানে বেদের প্রভাব লক্ষিত হয় না। বেদ প্রাচীন সভ্যতার শ্রেষ্ঠ ইতিহাস ও প্রাচীন সমাজের অপূর্ব্ব জ্ঞান-ভাণ্ডার। হিন্দুর যা কিছু বৈশিষ্ট্য, হিন্দুত্বের যা কিছু গরিমা ও ভারতের যা কিছু বৈচিত্র্য, তা এই বেদের পূত মন্দাকিনী-ধারার প্রতি অমৃত-বিন্দুতে দেদীপ্যমান। ভারতীয় সভ্যতা ও ধর্ম্ম-জীবনের মূল তথ্য জ্ঞাত হওয়া এই বেদের প্রকৃত অনুশীলন ব্যতীত কখনই সম্ভবপর নহে। পাশ্চাত্য জগতের সভ্যতাভিমানী জাতিসমূহ বিজ্ঞান ও দর্শনের গবেষণা দ্বারা জগৎবাসীকে যতই মুগ্ধ করুন না কেন, বেদের প্রতি অনুবাক ও মন্ত্র নিহিত সৃষ্টিতত্ত্বের মূল মর্ম্ম-কথা তাদের গবেষণা লব্ধ জ্ঞান হতে বহু উর্দ্ধে। ইথার তরঙ্গকে করায়ত্ত করে যতই কেন রেড়িয়ম্ চর্চ্চা হোক, বিজ্ঞানের বলে পঞ্চতত্ত্বের প্রকৃতিগত শক্তিকে যতই কেন উপেক্ষা করা হোক-বিজ্ঞান-গর্ব্বস্ফীত সভ্য জগৎ এখনও বহু পিছনে পড়ে আছে। ইথার-তরঙ্গ ভেদ করে দুইটি শব্দ প্রেরণ করলে কি হবে, বায়ু-তরঙ্গ ভেদ করে দুইটি শব্দ প্রেরণ করলে কি হবে, বায়ু-তরঙ্গ অতিক্রম করে গগনমার্গে মেঘ পুঞ্জের সাথে ক্রীড়া করতে পারলেই বা কি হতে পারে, শব্দ-গন্ধ-স্পর্শের একত্ব-প্রতিপাদনের দ্বারাই বা কি ফল উৎপাদন ঘটবে? অন্তঃসংজ্ঞাসমন্বিত জীবনিচয়ের সৃজনীশক্তি লাভ করেও মহর্ষি বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণত্ব লাভ আশায় যে মহর্ষি বশিষ্ঠের আশ্রম গ্রহণ করলেন, সেই বশিষ্ঠ প্রমুখ ঋষিগণও উর্দ্ধমুখে আকুল প্রার্থনা জানাইতেছেন-
অসতো মা সদ্গময়-
তমসা মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং গময়।
যাঁহারা সপ্তলোকে ইচ্ছামাত্র অভিলষিত বাণী প্রেরণ করেছেন, যাঁহারা সৌরমণ্ডলের অধিদেবকে এই বিরাট সৌরজগতের অসংখ্য গ্রহ ও নক্ষত্রনিচয়ের মধ্য হতে আবিষ্কার করেছেন, তাঁদেরও মুখে এই প্রার্থনা! কন্ঠ রোধ হয়ে যায়, বাক্য স্তব্ধ হয়ে আসে, বুদ্ধি তাহার বিচার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই প্রার্থনা তাঁহারা কোথায় প্রেরণ করেছেন? কার উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করেছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর বিংশ শতাব্দীর মানব দিতে অসমর্থ। কিন্তু এর উত্তর আছে, ভারতের এই নিত্য, সনাতন ও অপৌরুষেয় বেদ মধ্যে।
ক্রমশঃ-