পৃথিবীর ইতিহাসে বৈদিকগ্রন্থ মানব-সমাজের প্রাচীনতম গ্রন্থ বলে সর্ব্ববাদিসম্মত। ঐতিহাসিক গবেষণার ফলে মানব-সভ্যতার বহু প্রাচীন নিদর্শন মিসর ও মেসোপটেমিয়া হতে আবিষ্কৃত হয়েছে সত্য, কিন্তু সেখানেও বেদের ন্যায় জ্ঞানধর্ম্মের কোনও বিরাট্ সৌধের আবিষ্কার হয় নাই। চরম ও পরম সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এই বৈদিক ধর্ম্ম ও তন্নিঃসৃত এই বৈদিক সভ্যতা যে অদ্যবধি অবিচ্ছেদে প্রবাহিত হয়ে আসছে, ইহাই বেদের বিশেষত্ব। বেদের প্রাচীনত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকগণ বহু গবেষণা করেছেন ও নানারূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক যুক্তি-পদ্ধতি অভ্রান্ত নয় এবং একদিন হয়ত বেদের বয়স-নির্ণয়-প্রচেষ্টা সত্যই বাতুলতা বলে প্রমাণিত হবে। এই ভারতের হিন্দুগণ বহু সহস্র বৎসর পূর্ব্ব হতেই বেদকে অনাদি ও অপৌরুষেয় বলে আসছেন। পরাশর সংহিতায় দেখা যায়-
ঋষয়ঃ মন্ত্রদ্রষ্টারঃ ন তু বেদস্য কর্ত্তারঃ।
ন কশ্চিৎ বেদকর্ত্তা চ বেদস্মর্ত্তা চতুর্ম্মুখঃ।।
পূর্ব্বেই বলেছি বেদ আমাদের ধর্ম্মের মূলভিক্তিস্বরূপ। ভারতীয় সভ্যতায় ও ভারতীয় ধর্ম-জীবনে এমন কোনও স্তর বা পর্য্যায় নেই যেখানে বেদের প্রভাব লক্ষিত হয় না। বেদ প্রাচীন সভ্যতার শ্রেষ্ঠ ইতিহাস ও প্রাচীন সমাজের অপূর্ব্ব জ্ঞান-ভাণ্ডার। হিন্দুর যা কিছু বৈশিষ্ট্য, হিন্দুত্বের যা কিছু গরিমা ও ভারতের যা কিছু বৈচিত্র্য, তা এই বেদের পূত মন্দাকিনী-ধারার প্রতি অমৃত-বিন্দুতে দেদীপ্যমান। ভারতীয় সভ্যতা ও ধর্ম্ম-জীবনের মূল তথ্য জ্ঞাত হওয়া এই বেদের প্রকৃত অনুশীলন ব্যতীত কখনই সম্ভবপর নহে। পাশ্চাত্য জগতের সভ্যতাভিমানী জাতিসমূহ বিজ্ঞান ও দর্শনের গবেষণা দ্বারা জগৎবাসীকে যতই মুগ্ধ করুন না কেন, বেদের প্রতি অনুবাক ও মন্ত্র নিহিত সৃষ্টিতত্ত্বের মূল মর্ম্ম-কথা তাদের গবেষণা লব্ধ জ্ঞান হতে বহু উর্দ্ধে। ইথার তরঙ্গকে করায়ত্ত করে যতই কেন রেড়িয়ম্ চর্চ্চা হোক, বিজ্ঞানের বলে পঞ্চতত্ত্বের প্রকৃতিগত শক্তিকে যতই কেন উপেক্ষা করা হোক-বিজ্ঞান-গর্ব্বস্ফীত সভ্য জগৎ এখনও বহু পিছনে পড়ে আছে। ইথার-তরঙ্গ ভেদ করে দুইটি শব্দ প্রেরণ করলে কি হবে, বায়ু-তরঙ্গ ভেদ করে দুইটি শব্দ প্রেরণ করলে কি হবে, বায়ু-তরঙ্গ অতিক্রম করে গগনমার্গে মেঘ পুঞ্জের সাথে ক্রীড়া করতে পারলেই বা কি হতে পারে, শব্দ-গন্ধ-স্পর্শের একত্ব-প্রতিপাদনের দ্বারাই বা কি ফল উৎপাদন ঘটবে? অন্তঃসংজ্ঞাসমন্বিত জীবনিচয়ের সৃজনীশক্তি লাভ করেও মহর্ষি বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণত্ব লাভ আশায় যে মহর্ষি বশিষ্ঠের আশ্রম গ্রহণ করলেন, সেই বশিষ্ঠ প্রমুখ ঋষিগণও উর্দ্ধমুখে আকুল প্রার্থনা জানাইতেছেন-
অসতো মা সদ্গময়-
তমসা মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং গময়।
যাঁহারা সপ্তলোকে ইচ্ছামাত্র অভিলষিত বাণী প্রেরণ করেছেন, যাঁহারা সৌরমণ্ডলের অধিদেবকে এই বিরাট সৌরজগতের অসংখ্য গ্রহ ও নক্ষত্রনিচয়ের মধ্য হতে আবিষ্কার করেছেন, তাঁদেরও মুখে এই প্রার্থনা! কন্ঠ রোধ হয়ে যায়, বাক্য স্তব্ধ হয়ে আসে, বুদ্ধি তাহার বিচার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই প্রার্থনা তাঁহারা কোথায় প্রেরণ করেছেন? কার উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করেছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর বিংশ শতাব্দীর মানব দিতে অসমর্থ। কিন্তু এর উত্তর আছে, ভারতের এই নিত্য, সনাতন ও অপৌরুষেয় বেদ মধ্যে।
ক্রমশঃ-
Friday, May 5, 2017
বেদের পরিচয়- (২) (কপি না করে শেয়ার করে সহায়তা করুন)
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment