Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, October 7, 2017

প্রশ্ন: কলি যুগ শেষ হলে তারপর কি হবে? মহাপ্রলয়? আমাদের ধর্মে এ সম্পর্কে কি বলা আছে?

#কলিযুগ শেষ হলে কি হবে:
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর মহারাজ
পরীক্ষিতের
রাজত্বকালের মধ্যে কলিযুগ শুরু হয়েছে।
বর্তমানে পাঁচ হাজার বছর গত হয়েছে।
সুতরাং কলিযুগের আরও ৪ লক্ষ ২৭ হজার
বছর
বাকি রয়েছে। (১৪পৃ:)
কলিযুগের পর সত্যযুগ আসবে। (পৃ:২৫)
কলিযুগের শেষ সময়ে ভারতে সম্ভলগ্রাম
নামক
স্থানে শ্রীবিষ্ণুযশা নামে এক সৎ
ব্রাহ্মণের
পুত্ররূপে ভগবান শ্রীবিষ্ণু
কল্কি নামে আবির্ভূত
হয়ে কলি-কলুষিত অনাচারী জঘন্য
প্রকৃতির
সভ্যতাকে বিনাশ করবেন। তখন সমগ্র
জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে:
"অথাসৌ যুগসন্ধ্যায়াং দস্যুপ্রায়েষু
রাজসু।
জনিতা বিষ্ণুযশসো নাম্না কল্কির্জগৎপতি:।
।" (ভ: ১/৩/২৫)
অর্থাৎ, দ্বাবিংশ
অবতারে যুগসন্ধিকালে শাসক
সম্প্রদায় যখন দস্যুতে পরিণত হবে, তখন
ভগবান
কল্কি অবতার নামে বিষ্ণুযশ নামক
ব্রাহ্মণের
পুত্ররূপে অবতরণ করবেন।
শ্বেতঅশ্বপৃষ্ঠে আরূঢ় হয়ে অস্ত্র
দ্বারা কলিকে সম্পূর্ণরূপে কর্তন করবেন
সেই
কল্কি অবতার। তার পর নতুন যুগের (সত্যযুগ)
সূচনা হবে। (পৃ:৬৮১)

তবে সবাই মৃত্যুবরণ করবে না।
বলা হয়েছে, ‘দস্যূন্
কোটিশো নিহনিষ্যতি:’ -অসংখ্য
কোটি দস্যু
নিহত
হবে।তারা নিহত হলে অবশিষ্ট
নাগরিকেরা ভগবান কল্কির দিব্য অঙ্গ
থেকে বাতাসে প্রবাহিত সুগন্ধ অনুভব
করবে।
তৎক্ষণাৎ তারা দিব্য পবিত্র হয়ে উঠবে।
তারাই
পৃথিবীতে বিপুলভাবে প্রজা সৃষ্টি করবে।
তখন
মানব সমাজে সত্ত্বগুণ বিশিষ্ট
সন্তানদের জনম
হবে। এবং সত্যযুগ শুরু হবে। (পৃ:৬৭০)
মহাপ্রলয়:
সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চারি যুগ
এক
হাজার বার আর্তিত হলে মোট
সময়টাকে এক কল্প
বলে। তখন ব্রহ্মার এক দিন হয় অর্থাৎ ১২
ঘন্টা।
তেমনই ব্রহ্মার এক রাত্রির পরিধিও এরই
সমান।
এই রকম দিন ও রাত্রি সমন্বিত বর্ষ
অনুসারে ব্রহ্মা একশত বছর
বেঁচে থেকে তারপর
দেহত্যাগ করবেন। (পৃ:৩৩)
ব্রহ্মার মৃত্যু মানে কল্পের অবসান।
অর্থাৎ
মহাপ্রলয়।
এই বিষয়ে ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে:
সর্বভূতানি কৌন্তেয়
প্রকৃতিং যান্তি মামিকাম্।
কল্পক্ষয়ে পুস্তানি কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্।।
(অধ্যায় ৯, শ্লোক ৭)
অনুবাদ: হে কৌন্তেয়! কল্পান্তে সমস্ত
জড়
সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ
করে এবং পুনরায়
কল্পারম্ভে প্রকৃতির
দ্বারা আমি তাদের
সৃষ্টি করি।
তিনি নিজেকে এই
মায়াশক্তিতে বিস্তার করেন
এবং তার ফলে সমস্ত জড় জগৎ পুনরায় প্রকট
হয়।
উপসংহার: কলিযুগ শেষ হলে সত্যযুগ
আসবে অথবা মহাপ্রলয় হবে।
তবে আমরা জানিনা যে ব্রহ্মার এখন
কত বৎসর
জীবন অতিবাহিত হয়েছে। আমরা শুধু
জানি যে এই
কলিযুগের আগে দ্বাপর, ত্রেতা ও সত্যযুগ
অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ এক কল্প
এখনও শেষ
হয়নি। প্রকৃতপক্ষে কত কল্প অতিবাহিত
হয়েছে তা আমাদের অজানা।
সুতরাং এই
কলিযুগের
পর সত্যযুগ আসবে অথবা মহাপ্রলয়
হবে তা শুধুমাত্র
এবং সম্পূর্ণভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণই অবগত।

Tuesday, October 3, 2017

প্রশ্নঃ সকল দেবদেবী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ রাম-অবতারে রাবণ-বধের জন্য কেন দুর্গাদেবীর আরাধনা করলেন?

হরে কৃষ্ণ....
☞উত্তরঃ মূল গ্রন্থ বাল্মীকি রামায়ণে কোথাও ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের দুুর্গাপূজার কথার উল্লেখই নেই। পঞ্চদশ শতাব্দীতে রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণের সভাকবি ছিলেন কৃত্তিবাস ওঝা। তিনিই বাংলা পয়ারে রামায়ণের অল্পকিছু বর্ণনা দিয়েই তাতে দুুর্গাপূজা বিষয়টিও যুক্ত করে দিয়েছেন।

ব্রহ্মসংহিতার বর্ণনা অনুসারে দুর্গা হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অধীনস্থ সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় সাধনকারিণী এক শক্তি। ভোগাসক্ত মানুষ জড় কামনা নিয়ে দুর্গা পূজা করে থাকে। তারা দুর্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা করে বলে---"ধনং দেহী, জনং দেহী, রূপবতী ভার্যাং দেহি....."।
কিন্তু কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু শেখালেন, "ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং....."
---'হে ভগবান, ইন্দ্রিয় লালসা চরিতার্থ করতে আমি এই জড়জাগতিক ধনবল, জনবল এবং রূপবতী ভার্যা---এসব কিছুই চাই না, কেবল জন্ম-জন্মান্তর ধরে আপনার শ্রীচরণে আমার অহৈতুকী ভক্তি হোক।"

অবশ্য ভগবান অনেক সময় আপন ভগবত্তা লুকিয়ে রেখে লীলার খাতিরে তাঁর ভক্তের পূজা করে জীবশিক্ষা দেন। যেমন, গার্হস্থ্য লীলায় দ্বারকাপুরীতে শ্রীকৃষ্ণ অতিথি নারদ মুনিকে দেখে নিজ হাতে শ্রীনারদের চরণ ধুয়ে মুছে দিয়ে তাঁকে প্রণতি জানিয়ে ছিলেন। কারণ গৃহস্থদের কর্তব্য হচ্ছে সাধুসেবা, সন্ন্যাসীর যথাযথ মর্যাদা দেওয়া। এই শিক্ষাই ভগবান স্বয়ং শেখালেন। যদিও নারদ মুনি কৃষ্ণের ভক্ত মাত্র। কিন্তু এতে ভগবানের ভগবত্তা কখনই ক্ষুণ্ণ হয় না।

তাই প্রশ্নানুসারে, রামচন্দ্র যদি দুর্গা পূজা করেও থাকেন, তাতে তাঁর ভগবত্তা কখনই ক্ষুণ্ণ হবে না। এছাড়া, ভগবান যখন তাঁর ভক্তের পূজা করেন, তার মাধ্যমে তিনি জীবকে জড় কামনা থেকে মুক্ত হওয়ার পন্থাই শিক্ষা দেন। ব্রজগোপীরা দেবী কাত্যায়ণীর পূজা করেছিলেন ভোগাসক্তি চরিতার্থ করার জন্য নয়। শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করার জন্যই তাঁরা কাত্যায়ণী ব্রত করেছিলেন।

কিন্তু, কলিযুগের পতিত ব্যক্তিরা ভোগবাসনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই দুর্গা পূজা করে থাকে। তাই, তারা যতই দুর্গা পূজা করুক না কেন, মহামায়া দুর্গা তাদের সমস্ত শুভ জ্ঞান-বুদ্ধিকে শুধু হরণ করতে থাকেন। তারা কখনও পরমেশ্বর ভগবানের ভক্তও হয় না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এদেরকে 'মায়য়া অপহৃত জ্ঞানাঃ'
অর্থাৎ 'মহামায়া কর্তৃক তাদের জ্ঞানবুদ্ধি অপহৃত হয়েছে'---এই রকম বর্ণনা করেছেন।