Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, June 24, 2017

মহাভারতে অভিশপ্ত দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামা এখনও বেঁচে আছেন..???

গবেষকদের অনুমাণ মহাভারত প্রায় ৫
হাজার বছরের পুরনো। সেই তত্ত্বকে
মাইলস্টোন করে চললে অশ্বত্থামা ৫
হাজার বছর ধরে বেঁচে রয়েছেন?
বিজ্ঞানী বা ‌যুক্তিবাদীরা এই
তত্ত্বকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেবেন।
কিন্তু স্থানীয়রা কী বলছেন? সবাই
কি একই ভ্রমের শিকার। ‌যে
জায়গায় অশ্বত্থামাকে প্রায়
দেখা ‌যায় সেই জায়গায় ‌যাব, তার
আগে একটু স্মৃতিচারণ করে নিই
অশ্বত্থামার অভিশাপ পর্বে।
কুরুক্ষেত্রের ‌যুদ্ধে কৌরবদের দলে
ছিলেন দ্রোণাচার্য পুত্র
অশ্বত্থামা। পাণ্ডবদের নির্মূল
করতে তিনি পণ নিয়েছিলেন।
পাণ্ডবদের হত্যা করতে না পেরে
তিনি প্রায় জ্ঞান শূন্য হয়ে
ব্রহ্মাস্ত্র তুলে নেন। তিনি
জানতেন অর্জুনও ব্রহ্মাস্ত্র
পেয়েছেন, কিন্তু অশ্বত্থামার
বিশ্বাস ছিল তিনি ব্রহ্মাস্ত্রেও
মারা ‌যাবেন না, কারণ তিনি
মহাদেবের বর পেয়েছিলেন।
অশ্বত্থামা ছিলেন অমর। তাঁকে
স্বয়ং মহাদেবতো বটেই স্বর্গ, মর্ত্য,
পাতাল কারও মারা ক্ষমতা নেই।
সেই অহং বলেই ব্রহ্মাস্ত্র তুলে নেন
পাণ্ডবদের সমূলে ধ্বংস করতে।
বাসুদেব কৃষ্ণ আন্দাজ করেছিলেন
অর্জুন এবং অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্রের
লড়াই হলে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হবে।
তাই অর্জুনকে ব্রহ্মাস্ত্র ফিরিয়ে
নেওয়ার অনুরোধ করেন। অর্জুন তাই
করেন। একই কথা বলা হয়েছিলেন
অশ্বত্থামাকে, কিন্তু তা
শোনেননি তিনি।
অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র গিয়ে পড়ে
গর্ভবতী উত্তরার গর্ভে। সেই সময় ভ্রুন
অবস্থায় ছিলেন অভিমন্যুর পুত্র
পরিক্ষীত। গর্ভেই মৃত্যু হয়
পরিক্ষীতের। এর পরেই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন
বাসুদেব কৃষ্ণ। তিনি অশ্বত্থামাকে
বলেন তুমি এমন বীরত্বের প্রমাণ
দিয়েছো ‌যা লজ্জাজনক। ‌যে শিশু
মায়ের গর্ভে রয়েছে তাকেও
হত্যা করতে ছাড়োনি। তোমার এই
ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য
তোমাকে ক্ষমা করা হবে না। তুমি
অমর হতে চেয়েছিলে তাই থাকবে।
এই সংসারের প্রত্যেকটি জীবন,
পদার্থ নশ্বর, সময়ের সঙ্গে
মিলিয়ে ‌যাবে কিন্তু তুমি
থাকবে। কারণ মহাদেবের বরপুত্র
তুমি। তাই মহাদেবকে অসম্মান করব
না। তুমি বেঁচে থাকবে। কিন্তু
তোমার বেঁচে থাকাটা
এতটা ‌যন্ত্রণাদায়ক হবে ‌যে, তুমি
মৃত্যু চাইবে প্রতি পদে, কিম্তু
তোমার মৃত্যু আসবে না। তোমার
সারা শরীর গলে পচে ‌যাবে,
নরকের কীট তোমায় কুরে কুরে
খাবে অথচ মৃত্যু আসবে না। ‌যে বর
পেয়ে তোমার অহংকার চূড়ান্ত রূপ
ধারণ করেছে, সেই বরই তোমার
মুক্তির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
কৃষ্ণের এই অভিশাপের ফলে
লোকবিশ্বাসে অশ্বত্থামা এখনও
বেঁচে আছেন, থাকবেন অনাদি
অনন্তকাল ধরে। কিন্তু কোথায়
আছেন অশ্বত্থামা? কোনও পাতাল
লোকে? নাকি মর্ত্যেই আছেন
মুক্তির অপেক্ষায়?
অসিরগড় কেল্লা,
বুরহানপুর,মধ্যপ্রদেশ। এখানেই
রয়েছেন অশ্বত্থামা। না গল্প কথা
নয়, স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস নির্জন
পাহাড়ের পাশে প্রাচীন
কেল্লার আশে পাশে ‌যে
ছায়ামানব ঘুরে বেড়ায় তিনি
অশ্বত্থামা। বিজ্ঞান ও ‌যুক্তিবাদী
স্থানীয় কিছু ‌যুবকও চিরাচরিত এই
বিশ্বাসকে সমূলে উৎখাত করতে
গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরাও ‌যা
অনুভব করেছেন, তাতে তাঁদের ধ্যান
ধারণা বদলে গিয়েছে। পারতপক্ষে
ওই অঞ্চলটাকে এড়িয়েই চলেন
তাঁরা।
ঠিক কী দেখেছেন স্থানীয়রা?
লম্বা চওড়া বীরসেনার মতো এক
চেহারার মানুষ, সারা শরীর ক্ষত
বিক্ষত। চোখে মুখে ‌যন্ত্রণার ছাপ,
প্রত্যেকের কাছেই একটাই আর্তি
জানান তিনি, ওষুধ দেওয়ার সারা
শরীর তাঁর জ্বলে পুড়ে ‌যাচ্ছে,
কপালে দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।
অনেকটাই পুরানে বর্ণিত গল্পের
মতো। কিন্তু এখানেই কেন
অশ্বত্থামার বাস?
মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রে
অধুনা হরিয়ানায় রয়েছে। ‌যুদ্ধে পর,
অশ্বত্থামা চলে আসেন
মধ্যপ্রদেশের দিকে। সেই সময় এই
অঞ্চল আরও ঘন জঙ্গল ছিল, আরও একটা
কারণ ছিল এই জঙ্গলের মধ্যে ছিল
প্রাচীন ঋষিদের তপোভূমি। হয়তো
শাপমোচনের জন্যই অশ্বত্থামা এই পথ
ধরেছিলেন। লোককথায়
বলছে, ‌যেহেতু মহাদেব তাঁকে
অমরের বর দিয়েছিলেন তাই সেই
বর ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ফের
মহাদেব আরাধনা শুরু করেন।
মহাদেবের কৃপাদৃষ্টিতেই তাঁর
অভিশপ্ত জীবন মুক্তি পেতে পারে।
বুরহানপুরে এই অসিরগড় কেল্লার
কাছেই একটি প্রাচীন শিবমন্দির
আছে। সেখানেই প্রায় দেখা ‌যায়
এই ‌যুদ্ধবিধ্বস্ত ছায়া মানব
অশ্বত্থামাকে।
ওই ছায়ামানব কি কখনও কারও ক্ষতি
করেছে? স্থানীয়দের মত, না কোনও
ক্ষতি করেনি, কিন্তু ‌যাঁর জীবন
অভিশপ্ত, তাঁর সঙ্গে থাকাটা
উচিত নয়। পাহাড়ে ঘেরা এই
নিস্তব্ধ, নির্জন এলাকা
অশ্বত্থামার এলাকা বলে পরিচিত।
তাই স্থানীয়রা এড়িয়ে চলেন
এলাকাটিকে। আর ‌যাঁরা সহস্রাব্দ
ধরে চলা প্রাচীন বিশ্বাস
ভাঙতে ‌যান, তাঁদের আত্মবিশ্বাস
ভেঙে চুরমার হয়ে ‌যায় এক লহমায়।
আপনি বিশ্বাস করুন বা অবিশ্বাস,
কিন্তু অশ্বত্থামা ‌যে বিশ্বাসে
বেঁচে আছেন এবং থাকবেন তা
অবিশ্বাস করার কোনও উপায় নেই।
.
লিটন আচার্য্য
.
তথ্যসূত্র: Zee News.

শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মাহাত্ম্য

শাস্ত্রে আছে 'রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে'। রথের ওপর খর্বাকৃতি বামন শ্রী শ্রী জগন্নাথকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। এ বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে ভোর হতেই ভক্তরা প্রাণের টানে ছুটে আসেন প্রেমোরথের প্রাণের ঠাকুরকে নিয়ে স্নানযাত্রার উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ রথের রশি ধরে টানতে। রথটানা শুরু করতেই আশ্চর্যভাবে অনেকটা ভারাক্রান্ত ও বেদনাচ্ছন্ন হয়ে ঘন মেঘ দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে মাটির পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নেচেগেয়ে উচ্ছ্বাসের প্লাবনে মতোয়ারা হন সবাই। সেই সঙ্গে সমানতালে বাজতে থাকে ঘণ্টাবাদ্যি। একদিকে পুরুষেরা শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসা, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে পরিবেশ মুখর করে তোলেন অন্যদিকে নারীরা উলুধ্বনি ও মঙ্গলধ্বনির মাধ্যমে রথটানায় আনন্দচিত্তে শামিল হন। রথ থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দিকে ছুড়ে দেয়া হয় কলা আর ধানের খৈ।
প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। শ্রীকৃষ্ণের দ্বাপর যুগে লীলা সম্বরণের পরবর্তী সময়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভ্রদা-এ তিন রূপের পুনঃউদঘাটন এক আশ্চর্য সংবাদও বটে। শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় সমাগম হয় লাখ লাখ ভক্তের, যার ফলে সৃষ্টি হয় সমন্বয় ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সেই সঙ্গে রথ থেকে দেয়া হয় আশীর্বাদ ও প্রসাদ ভক্তবৃন্দ তা গ্রহণ করে হন কৃতার্থ। রথে থাকেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। ভক্তবৃন্দ ভক্তি সহকারে রথরজ্জুর মাধ্যমে রথকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যান। আর এ দৃশ্য দেখার জন্য আবেগপ্রবণভাবে ভক্তবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষ অবস্থান নেন। কারণ রথরজ্জু ধরে রথটানা মহাপুণ্য কর্ম বলে সনাতন ধর্মে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
কঠোপনিষদ বলেছেন, 'আত্মা হলো রথী, শরীর হলো রথ, বুদ্ধি হলো সারথি, মন হলো লাগাম। মনীষীরা ইন্দ্রিয়গুলোকে দেহরথের অশ্ব বিষয়গুলোকে ইন্দ্রিয়গুলোর বিচরণ ভূমি এবং দেহ-মন ও ইন্দ্রিয়যুক্ত আত্মাকে ভোক্তা বলেছেন। যে পুরুষের সারথি (বুদ্ধি) অসংযত মনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবিবেকী হয় তার ইন্দ্রিয় সব লৌকিক সারথির দুষ্টু অশ্বের মতো আপন বশে থাকে না। কিন্তু যার বুদ্ধি বিবেকবান, মন সংযত, যার অন্তঃকরণ সর্বদা পবিত্র, তিনি সেই পরম পদপ্রাপ্ত হন। তাকে আবার আর সংসারে জন্মগ্রহণ করতে হয় না। সে পরমপদ প্রাপ্তি অর্থাৎ অভীষ্ট লক্ষ্যের পথ অতি দুর্গম, এ জন্য উপযুক্ত 'যান' প্রয়োজন। 'রথ' পথযাত্রার একটি প্রকৃষ্ট যান। এ রথের সুযোগ্য চালক বা সারথি প্রয়োজন, তার সঙ্গে প্রয়োজন শক্তিশালী বশীভূত তথা বিশ্বস্ত অশ্ব ও সুদৃঢ় লাগাম। শাস্টত্রকাররা রূপক ছলে বলেছেন, অবিদ্যাবশে সংসারী জীবনের এ দেহটাই 'রথ' এবং রথের অধিষ্ঠাতা আত্মীয় 'রথী'। সুতরাং, প্রাণ থাকা পর্যন্ত দেহকে অবহেলা করতে নেই। তাই ঋষিরা বলেছেন, আত্মা নং বিদ্ধি আত্মাকে জানো, রথযাত্রায় চরম আধ্যাত্মিক রহস্যকে সূক্ষ্ম রূপে তুলে ধরা হয়েছে। প্রেমিবিগলিত জগন্নাথের দেহটির বর্ণনা গৌড়ীয় দর্শনের আচার্যরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকালীলায় ১৬ হাজার আটজন প্রধান মহিষীকে নিয়ে চরম বিলাস করেছেন। কিন্তু প্রায়ই রাতে 'রাধা' 'রাধা' বলে চিৎকার করে কাঁদা দেখে একদিন সত্যভামাসহ মহিষীরা কান্নার কারণ জানার জন্য মা রোহিনীর কাছে উপস্থিত হলেন এবং জানার প্রত্যাশা নিবেদন করলেন। বন্ধুদের ব্যাকুলতা দেখে অন্তঃপূরের দরজায় সুভদ্রা বোনকে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব প্রদান করে বৃন্দাবনের প্রেমলীলাতত্ত্বের ওপর বক্তব্য শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে বলরাম আকর্ষিত হয়ে দরজায় এসে হাজির হলেন। সুভদ্রা বললেন, মাতা রোহিনীর নিষেধ রয়েছে ভেতরে যেতে। এরপর কৃষ্ণ এসে হাজির। বোনের কথায় বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণ দাঁড়িয়ে রইলেন। সুভদ্রার ডান দিকে দাদা বলরাম, বাদিকে কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেসে আসা লীলাকথা শুনতে থাকলেন। এ মধুময় প্রেমতত্ত্বের আলোচনা শ্রবণ করে তিনজন প্রেম বিগলিত হয়ে বিকলাঙ্গ হয়ে গেলেন। এ অবস্থায় দেবর্ষী নারদ এসে উপস্থিত হলেন। এ প্রেম বিগলিত স্বরূপ দর্শন করে নারদ হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, বহুদিন পরে ব্রজলীলার কথা শুনতে পেলাম।
আজ বড় আনন্দের দিন, নারদ এ অবসরে তুমি কিছু বর প্রার্থনা কর। ভক্তপ্রবর দেবর্ষী নারদ বললেন, প্রভু এ প্রেম বিগলিত স্বরূপ যেন জগতবাসী জীবের নয়ন গোচর হয় এ প্রার্থনা। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, দারুব্রহ্মস্বরূপ জগদ্বাসী অবশ্যই দেখতে পাবে এবং তোমার, শিবপার্বতীর ইচ্ছায় আমার অন্ন ব্রহ্মরূপও প্রকাশ পাবে। নীলাচল ধামে তিনটি মন্দির-গম্ভীরা মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, গু-িচা মন্দির। শ্রীকৃষ্ণ রাধাভাবে শ্রীকৃষ্ণের জন্য কেঁদেছেন স্থান গম্ভীরা, রাধার বিরহে কৃষ্ণ কেঁদেছেন স্থান জগন্নাথ মন্দির, রাধা কৃষ্ণ বিরহে কেঁদেছেন স্থান গুন্ডিচা মন্দির। রথে আরোহণ করে যাত্রা বলেই রথযাত্রা রথীহীন রথে যাত্রা নেই। তেমনি জীবনদেহও রথী শূন্য নয়। আমাদের মানবদেহে রথী আছেন দেহ থেকে রথী বিচ্ছেদ ঘটলে পৃথিবীর ভাষায় মৃত্যু। এ সত্য শুদ্ধ সত্তা আছেন বলেই জীবের দেহরথ চলে। দেহের প্রাণ নামক সত্য সত্তাই জগন্নাথ। দ্বারকায় অবস্থানকালে বৃন্দাবনের প্রেমকথা শ্রবণ করে শ্রীকৃষ্ণের বাসনা জেগেছিল একবার বৃন্দাবনে যাওয়ার। জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথ বিগ্রহকে রথে চড়িয়ে গু-িচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া অর্থ জগন্নাথ শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনে যাত্রা। গু-িচা মন্দিরে জগন্নাথ বিগ্রহকে ৭ দিন রাখার পর পুনঃশ্রীমন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অর্থ আবার দ্বারকায় আসা- এটি ফিরতি রথ বা উল্টোরথ নামে খ্যাত। অন্তরে কৃষ্ণ বাইরে রাধা তিনি কলিকালে শ্রীকৃষ্ণের অবতার রূপে হলেন চৈতন্য মহাপ্রভু। আর অন্তরে রাধা বাইরে কৃষ্ণ হলেন জগন্নাথদেব। দু'জনের মিলন হলো লীলাচলে। ষোড়শ শতাব্দীতে মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গ সন্ন্যাস গ্রহণ করে নীলাচলে এলে জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রার উৎসব বৃহত্তর আঙ্গিকে শুরু হয়, যা আজ অবধি বিশ্বে পরিব্যাপ্ত।
অনেকে মনে করেন যে, জগন্নাথদেবের মূর্তি বুদ্ধদেবেরই রূপান্তর। আবার অনেকে মনে করেন যে, জগন্নাথদেব কোনো অনার্য জাতির দেবতা। বিবর্তনের ধারায় হিন্দুদেবতা বিষ্ণু এবং সব শেষে জগন্নাথদেব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এর পেছনে যুক্তিও আছে-স্কন্দপুরাণে উৎকলখ-ে এবং পুরষোত্তমখ-ে শবরপতি বিশ্বাসুর ছিলেন নীলগিরি পর্বতে নীলমাধবের পূজারী এবং উপাসক। পরে নীলমাধব এখান থেকে অন্তর্হিত হয়ে কাঠদ্বারা নির্মিত জগন্নাথদেবের মূর্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শবরপতি বিশ্বাসুর অনার্য জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলেই জগন্নাথদেবকে অনার্যদের দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ, বৌদ্ধ ত্রিরত্মের মধ্যে সংঘ নারীরূপে বুদ্ধের ও ধর্মের মাঝখানে অবস্থান করায় জগন্নাথদেবের মূর্তি ত্রিরত্মের রূপান্তর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
স্বামী অভেদানন্দ তিব্বতের লাদাখ অঞ্চল ভ্রমণকালে 'বৌধখুর্ব' গ্রামে ত্রিরত্মের যে মূর্তি দেখেছিলেন, সেই মূর্তিগুলোকে তিনি জগন্নাথদেবের মূর্তির প্রতিরূপ বলে গণ্য করেছেন। স্বামীজীর বর্ণনা অনুসারে লামাদের একটি ত্রিরত্ম বা 'পরমেশ্বরা' রহিয়াছে। আমাদের দেশের ইট দিয়ে গাঁথা তুলসী মন্দিরের মতো ইহারা তিনটি ক্ষুদ্র নিরেট মন্দির নির্মাণ করিয়া প্রথমটিতে কালো, দ্বিতীয়টিতে হলদে ও তৃতীয়টিতে সাদা রঙ লাগাইয়া বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের প্রতীক নির্মাণ করিয়া তাহাদের পূজারতি করেন। ইঁহারা এইগুলিকে 'পরমেশ্বরা' বলেন। 'পরমেশ্বরা' শব্দ পরমেশ্বর শব্দের অপভ্রংশ। এইগুলোতে চোখ অাঁকিয়া দিলে প্রথম কালোটিকে হস্তপদহীন জগন্নাথ, দ্বিতীয় হলদেটিকে সুভদ্রা ও তৃতীয় সাদাটিকে বলরাম মনে হয়।
উড়িষ্যার অনেক বৈষ্ণব ভক্তকবি জগন্নাথদেবকে বুদ্ধের মূর্তি বা অবতার বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস শ্রীকৃষ্ণই বুদ্ধরূপে জগন্নাথ নামে অধিষ্ঠিত। জগন্নাথ দাসের 'দারুব্রহ্ম' ও অচ্যুতানন্দ দাসের রূপান্তর 'শূন্য সংহিতা'য় এই তত্ত্ব স্থান পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ঈশ্বর দাস ও অচ্যুতানন্দ জগন্নাথদেবকে বুদ্ধের এবং শ্রীচৈতন্যদেবকেও বুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।
উৎকলখ-ের বর্ণনা অনুসারে জগন্নাথদেব শঙ্খচক্রধারী, সুতরাং দ্বিভূজ। কিন্তু প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে বিশ্বকর্মা জগন্নাথদেবের মূর্তি তৈরি করার সময় কারো প্রবেশ ছিল নিষেধ, এমনকি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নেরও না। বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরি করার আগেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন অধৈর্য হয়ে বন্ধ দরজা খোলার জন্য মূর্তি অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়। আমরা যে রথযাত্রা উৎসব পালন করে থাকি তা জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা এবং রথযাত্রা সূর্যের অয়নপথ পরিক্রমার সাথে সংশ্লিষ্ট। সূর্যের দক্ষিণায়ন যাত্রার সঙ্গে সর্ষাগমনের সম্পর্ক স্বতঃসিদ্ধ। আর বর্ষা শুরুর উৎসব জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। জগন্নাথদেব সূর্য-সপ্তাশ্ব বাহিত রথে আকাশলোক পরিক্রমণ করেন। তারপর রথে অরোহণ করে গু-িচা যাত্রা করেন। অয়নপথে সূর্যের দক্ষিণ দিকে যাত্রা ও উত্তরে প্রত্যাবর্তন জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ইতিবৃত্ত।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রার উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে। রথযাত্রা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য মিলন মেলা। এই দিনে এখানে নানা ধর্মের-বর্ণের লোক জগন্নাথদেবের মূর্তি এক নজর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে সমবেত হয়। জগন্নাথদেবও তার জগৎকল্যাণময় মূর্তি নিয়ে মন্দিরের পূজাবেদী হতে বেরিয়ে এসে রথারোহণে যাত্রা শুরু করেন। বছরে একবার দর্শন দিয়েও তিনি অসংখ্য ভক্তের চিত্তবিহারী হয়ে ভক্তহৃদয়ে অবস্থান করেন।
তারাপদ আচার্য্য: সাধারণ সম্পাদক, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম, দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ।

নিবেদনে: শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।

রথযাত্রার মেলা ও তার মাহাত্ম্য

প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে রথযাত্রা একটি মহৎ উৎসব। শ্রী বিষ্ণুকে ভক্তিভরে রথারোহণ সময়ে বা গমনে দর্শন করলে তাদের বিষ্ণুলোকে বাস হয়ে থাকে, এমন একটি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই রথযাত্রা উদযাপিত হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকে। শ্রী বিষ্ণুর এই উৎসব থেকে পরম মঙ্গলপ্রদ আর কিছুই ইহ জগতে নেই। যদিও পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে এই উৎসব সাড়ম্বরে উৎযাপন করা হয় কিন্তু উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী শহরের রথযাত্রা বিশ্ব বিখ্যাত। এখানে জগন্নাথদেবের মন্দির ঐতিহাসিক এবং রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া রামেশ্বরম, দ্বারকা এবং বদরীনাথের রথযাত্রা বিখ্যাত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র রথযাত্রার উৎসব পালিত হয়। তবে ধামরাই এর যশোমাধবের রথ, কুমিল্লার ত্রিপুরার মহারাজের রথ, ঢাকার স্বামীবাগে ইসকন মন্দিরের রথযাত্রা, ফরিদপুরের ওড়াকান্দি, নোয়াখালীর জমিদার হাট ইত্যাদি রথের মেলার জন্য বিখ্যাত।
রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে কঠোপনিষদে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয় যে মানুষের দেহ হচ্ছে একটি রথ, ঈশ্বর হচ্ছেন তার সারথী, যিনি এই ভবসাগর পরিভ্রমণ পরিচালনা করেন। আত্মা হচ্ছে পরিভ্রমণকারী এবং দেহ তা ধারণ করে জন্ম থেকে জন্মান্তরে বিচরণ করছে। প্রাণশক্তি, পরধর্মসহিষ্ণুতা, আত্মসংযম, দয়া, দাক্ষিণ্য, সমতা, প্রশান্তিকে ধারণ করে যেই দেহধারী সঠিক পথ ধরে পরিক্রমা করতে পারে সেই রথ ঈশ্বরের নির্ধারিত আবাসস্থলে পৌঁছতে পারে এবং তার আর পুনর্জন্ম হয় না, বিষ্ণুলোকে বা নিত্যধামে গমন করেন।
জীবন হচ্ছে এক যাত্রা, পরমাত্মা সাথে মিলনের পথে পরিভ্রমণ করছে অহর্নিশি। জীবনরথে উপবেশনকারী সকল জীবের প্রতি মুনি ঋষিগণ তাই উপদেশ দিয়েছেন সকল অহঙ্কার ও সম্পদ সমর্পণ করো পরমাত্মার কাছে, তার নিদের্শনাই হচ্ছে তোমার জীবনের পাথেয়। তবেই মহামিলনের মাধুরী আস্বাধন করতে পারবে, জীবন হবে ধন্য। এমন একটি আধ্যাত্মিক ভাবনা লালন করে রথযাত্রা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ প্রভু জগন্নাথকে রথে আসীন অবস্থায় দর্শন করতে বা রথের রসি ধরতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জনও দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। তাদের বিশ্বাস রথে আসীন জগন্নাথ প্রভুকে দর্শন বড় প্রাপ্তি। শাস্ত্রে বলা হয়েছে রথারোহী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীজগন্নাথকে দর্শন করলে এই জড় জগতের জন্ম মৃত্যুর আবদ্ধতা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি লাভ করা সম্ভব। এই জাতীয় বিশ্বাস সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে রথের মহৎ উৎসব পালন করা এবং রথের উপর ঈশ্বরকে দর্শন লাভে অনুপাণিত করে আসছে। রথযাত্রার এমন উৎসব চলে আসছে ৫ হাজারেরও বেশি সময় ধরে।
প্রভু জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের অধিপতি। তিনিই হচ্ছেন পরমাত্মা পরমব্রহ্ম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরেক রূপ। তিনিই হচ্ছেন পরমপ্রভু যার উদ্দেশ্যে নিবেদিত জীব জগতে সব কিছু। তারই উদ্দেশ্যে সকল আয়োজন এবং সকল নিবেদন। তবে যে কাহিনীকে রথযাত্রার ইতিহাস হিসাবে প্রধানত বিশ্বাস করা হয় তা হচ্ছে মূলত শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীবলরাম ও শ্রীমতি সুভদ্রা দেবী সূর্য গ্রহণ উপলক্ষে কুরুক্ষেত্রে স্যমন্ত পঞ্চক তীর্থে অবগাহন করতে যান। কুরুক্ষেত্রে সূর্য গ্রহণকালে পুণ্যস্নানে এখনো লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। তেমনি এক রীতি অনুসরণ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৫ হাজার বছর আগে দ্বারকা থেকে কুরুক্ষেত্রে গমন করেন।
এই পুণ্যস্নানে বৃন্দাবন থেকে ব্রজবাসীরাও অংশগ্রহণ করেন। স্নান সমাপন্তে ব্রজবাসীরা খবর পেলেন শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে এসেছেন এবং তারা দলে-বলে শ্রীকৃষ্ণের দর্শন লাভে হাজির হলেন। ব্রজবাসীরা বলতে শুরু করলেন ব্রজের রাখাল প্রেমময় শক্তির আধার শ্রীকৃষ্ণকে আমরা নিয়ে যাবো আমাদের মাঝে ব্রজধামে। সবাই ঠিক করলো রথের রসি ধরে তারা টানতে শুরু করবে এবং সেই রসি ধরে টানতে টানতে তারা রথে আসীন শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম আর সুভদ্রাকে নিয়ে চলে এলো ব্রজধামে। সেই সময়কে স্মরণ করেই রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। এভাবেই শুরু হয়েছে রথযাত্রার উৎসব।
প্রকৃতপক্ষে রথযাত্রা অনুষ্ঠানের ঐশ্বর্যপর ভগবদ্ভক্তিকে অতিক্রম করে মাধুর্যপর ভক্তিকে প্রদর্শন সুযোগ লাভ করে ভক্তবৃন্দ। তাই রথযাত্রার সাথে হিন্দু ধর্মীয় অন্যসব অনুষ্ঠানের কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম ধর্মী ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য করা যায়। আবার রথের ৭ দিন পর আসে ফিরতি রথ বা উল্টো রথ। অর্থাৎ অনুষ্ঠানটি একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না এবং সপ্তাহব্যাপী চলে ধর্মীয় আলোচনা, গান ও কীর্তন এবং আনন্দ উৎসবের মাঝে মহাসমারোহ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগতে দুর্দশাগ্রস্ত এবং অবহেলিত জীবদের উদ্ধার করতে লীলাময় মাধুর্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু দীর্ঘ ৪০ বছর নীলাচলে অবস্থান করে কৃষ্ণভক্তির জোয়ারে জগত্বাসীকে বিমোহিত করেছিলেন। জগন্নাথদেব হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভক্তদের ভাষায় 'যে গৌর সেই কৃষ্ণ সেই প্রভু জগন্নাথ'। জগন্নাথের নিকট প্রার্থনা করে অনেক বিপদগ্রস্ত মানুষ স্বর্গীয় শান্তির সন্ধান পেয়েছেন, দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন।
বাংলাদেশে রথযাত্রা উপলক্ষে রথের মেলা বসে প্রায় সর্বত্র। রথের দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাতে যোগদান করে রথের মিছিল এবং রথ টানাকে সফল করতে সাহায্য করেন। রথের মেলা বর্তমানে একটি সার্বজনীন রূপ নিয়েছে এবং ধর্মীয় ভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন রথের উৎসবকে অর্থবহ করতে সার্বিক সহযোগিতা  প্রদান করেন।

গীতা পাঠ করলে কি হয়.?

"য ইদং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেষু অভিধাসতি।
ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যসংশয়ঃ।।(গীতা ১৮/৬৮)
অনুবাদ: আমাকে পরা ভক্তি করে,যিনি এই পরম গুহ্যশাত্র(গীতা গ্রন্থ) আমার ভক্তদের কাছে ব্যাক্ষ্যা করবেন, তিনি আমাকেই পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।।
অন্তরের গভীরতা সহ যদি কেহ 'গীতা' পাঠ অধ্যয়ন করেন,পাঠ করেন,বা শোনেন, তবে তিনি তার অর্থ ও ভাব না বুঝলেও ভগবান ও ভক্তের অর্থ ও ভাব বুঝে নিতে সক্ষম হন। তাই ভগবান বলছেন যে, আমি তার পাঠরুপ,অধ্যায়নরুপ জ্ঞানযজ্ঞের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকি, ঠিক যেভাবে প্রেমিক ভক্তকে যদি কেউ ভগবানের কথা শোনায়,তার কথা স্মরন করায়, তবে ভক্তও অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে থাকে, ঠিক সেভাবেই যদি কেউ 'গীতা' পাঠ করেন ও অন্যন্যদের শোনায়,সেই পাঠক ও শ্রোতারাও ভক্তিযোগে ভগবানের পরমভক্ত হয়ে ওঠেন, ভগবান তাদের উপর প্রসন্ন হয়ে তাদের শুভলোক প্রদান করেন।
যার পঠন এবং বচনে পূজ্যভাব থাকে,সন্মানভাব থাকে, যিনি
শ্রদ্ধাবিশ্বাস ও ভক্তিরসে অবগাহিত হয়ে এই গীতা গ্রন্থ পাঠ করে ভক্তগনকে, তার ব্যাক্ষা শোনাবেন কোন সন্দেহ নেই তিনি পরমাত্মায় বিলীন হবেন।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশে এক ভক্ত বিধিবদ্ধভাবে প্রত্যহ আশ্রমে আগত ভক্তদের গীতা পাঠ করে তার ব্যাখা শোনাতেন। শুদ্ধভাবে, সঠিক উচ্চারনসহ তিনি গীতা পাঠ করতে পারতেন না। কিন্তু, প্রত্যহ গীতা পাঠ করার সময় তিনি অনন্যমনাবশত ভাবের ঘোরে নয়নাসিক্ত হয়ে গীতাপাঠের ভুল ব্যাক্ষা শোনাতেন।
সঠিকভাবে গীতা পাঠ না করার জন্য, পরশ্রীকাতর অপর কোন এক ভক্ত, শ্রীচৈতন্যদেব-এর কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে বলে, প্রভু আপনি যাকে গীতাপাঠের দায়িত্ব দিয়েছেন, সে অত্যন্ত পাষন্ড,একে তো শুদ্ধভাবে গীতা পাঠ করতে পারে না,তার উপর কান্নাকাটিসহ নানারকম ভন্ডামিও করে।
শ্রীচৈতন্যদেব ওই ভক্তকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন------'তুমি গীতা পাঠ করে ভক্তদের ব্যাক্ষা শোনাও,তার অর্থ তুমি নিজে বুঝতে পারতো?
সবিনয়ে সেই ভক্ত বললেন---------'না প্রভু ! তখন মহাপ্রভু আবার জিজ্ঞাসা করলেন------'তাহলে কাঁদ কেন?'
তিনি উত্তর দিলেন--------প্রভু, আমি যখন অর্জুন উবাচ পড়ি, তখন আমি সরাসরি প্রত্যক্ষ করি অর্জুন ভগবানকে জিজ্ঞাসা করছেন,আবার যখন শ্রীভগবানুবাচ পড়ি, তখন ভগবান স্বয়ং অর্জুনকে উত্তর দিচ্ছেন,সেই দৃশ্য সরসরি প্রত্যক্ষ করি'------এই ভাবে অর্জুন ও ভগবানকে সরাসরি প্রত্যক্ষীভূত হয়ে থাকি। তাদের কথাপোকন বুঝতে না পারলেও, এই নয়নাভিরাম দৃশ্যে অর্জুন ও ভগবানকে একত্রে প্রত্যক্ষ করে সুন্তুষ্ট হয়ে চোখের জলে প্লাবিত হয়ে থাকি।
শ্রীচৈতন্যদেব ভক্তের এই শ্রদ্ধা-ভক্তি, অন্তরের ঐকান্তিকতার সারার্থ উপলব্ধি করে মহাপ্রভু প্রসন্ন হয়েছিলেন। এই ভাবে শ্রদ্ধা-ভাবে বিভোর হয়ে যিনি গীতা পাঠ করেন, তার মুক্তিতে কোন সন্দেহ থাকেনা, তিনি সমস্ত পাপমুক্ত হয়ে পুন্যবানদের কাঙ্ক্ষিত পুন্যলোক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন।
'জয় শ্রীকৃষ্ণ'

Tuesday, June 20, 2017

দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু প্রনাম মন্ত্রঃ

১. গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র।

ॐ ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ॥

২. শ্রীগৌরাঙ্গ প্রণাম মন্ত্র।

নমো মহাবাদান্যা কৃষ্ণপ্রেম-প্রদায় তে ।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য-নাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ ॥

৩. প্রভু শিবের প্রনাম মন্ত্র।

ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হে তবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।।

৪. শ্রী কৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র।

হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে ।। ১ॐ

ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নমঃ ।। ২

৫. শ্রী রাধারানী প্রণাম মন্ত্র।

তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানু সূতে দেবী তাং প্রণমামি হরি প্রিয়ে।।

৬. শ্রীশ্রীসীতা-রাম-প্রনামমন্ত্র ।

রামায় রাম-ভদ্রায় রামচন্দ্রায় মেধষে ।
রঘুনাথায় নাথায় সীতায়ৈ পতয়ে নমঃ ॥

৭. দেবীদূর্গার প্রণাম মন্ত্র।

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:

৮. সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্র।

ॐ জয় জয় দেবী চরাচরসারে।
কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণাপুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতি ভারতী দেবী নমস্তে ।
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে ।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্ত্ত তে ॥

৯. শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র

ॐ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।

গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

১০. লক্ষ্মী দেবীর প্রনাম মন্ত্র।

ॐ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।

১১. মা কালীর প্রনাম মন্ত্র।

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রা কালী কপালিনী দূর্গা শিবা সমাধ্যার্তী সাহা সুধা নমস্তুতে

১২. দেহ শুচীর মন্ত্র।

ॐ অপবিত্র পবিত্রোবা সর্বাবস্থান গতহ্বপিবা।
যৎ সরেত পুন্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি।। ১

পাপোহং পাপ কর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভাবান্ ।
ত্রাহি মাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব পাপো হরো হরি।। ২

১৩. গুরু প্রণাম মন্ত্র।

অখন্ড মন্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম।
তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ১

অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ২

গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর।
গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।। ৩

১৪. শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র।

পঞ্চতত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্ ।
ভক্ত অবতারং ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্ ।।

১৫. তুলসী প্রণাম মন্ত্র

বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ ।
কৃষ্ণ ভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈঃ নমঃ নমঃ ।।

১৬. সূর্য প্রণাম মন্ত্র।

ॐ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।

১৭. বিশ্বকর্মা প্রনাম মন্ত্র।

দেবশিল্পিন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টফলপ্রদ॥

১৮. শনিদেবের প্রণাম মন্ত্র।

ॐ নীলাঞ্জন দলশ্যামো ভিন্নাঞ্জন সমদ্যুতিঃ ।
শনৈশ্চরগ্রহঃ পুংসাং সদা শান্তিং প্রযচ্ছতু ।

নীলাঞ্জন চয়প্রখ্যং রবিসূনুং মহাগ্রহম্ ।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভুতম্ বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্ ॥

১৯. শ্রীবলরাম-প্রণামমন্ত্র

নমস্তে তু হলগ্রাম ! নমস্তে মুষলায়ুধ ! নমস্তে রেবতীকান্ত ! নমস্তে ভক্ত-বৎসল ! নমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ ! নমস্তে ধরণীধর ! প্রলম্বারে ! নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ-পূর্বজ ॥

২০. শ্রীশ্রীগৌর-নিত্যানন্দ-প্রণামমন্ত্র

বন্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-নিত্যানন্দৌ সহোদিতৌ ।
গৌড়োদয়ে পুস্পবন্তৌ চিত্রৌ শন্দৌ তমোনুদৌ ॥

আজানুলম্বিত-ভুজৌ কনকাবদাতৌ
সঙ্কীর্ত্তনৈক-পিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম-পালৌ
বন্দে জগৎ-প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ ॥

২১. পিতা প্রনাম মন্ত্র।

পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম,
পিতাহি পরমং তপ।
পিতোরি প্রিতিমা পন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতাঃ।।

২২. মাতা প্রনাম মন্ত্র।

মাতা জননী ধরিত্রী, দয়াদ্র
হৃদয়া সতী।
দেবীভ্যো রমণী শ্রেষ্ঠা নির্দ্দোশা সর্ব দুঃখ হারা।।

২৩. গায়ত্রী মন্ত্র।

ॐ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং ভর্গদেবস্য
ধীমহি ধিয়ো ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ॐ।

২৪. তুলসী প্রণামঃ
বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ ।
কৃষ্ণ ভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈঃ নমঃ নমঃ ।। ১

২৫. সূর্য প্রণামঃ
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।

জয় রাধেশ্যাম।।

দৈবী তথা সদগুণযুক্তের লক্ষণসমূহ

উত্তর:
১. নির্ভীকতা
২. চিত্তশুদ্ধি
৩. আত্মজ্ঞনিষ্ঠা
৪. কর্মে তৎপর
৫. দান
৬. ইন্দ্রিয় সংযম
৭. যজ্ঞ
৮. অধ্যয়ন
৯. তপস্যা
১০. সরলতা
১১. অহিংসা
১২. সত্য
১৩. অক্রোধ
১৪. ত্যাগ
১৫. শান্তি
১৬. পরনিন্দা বর্জন
১৭. জীবে দয়া
১৮. লোভহীনতা
১৯. মৃদুতা
২০. কুকর্মে লজ্জা
২১. অচাঞ্চল্য
২২. তেজস্বিতা
২৩. ক্ষমা
২৪. ধৃতি
২৫. শৌচ
২৬. অনভিমান

অসুর স্বভাবীর বৈশিষ্ট্য-

১. দম্ভ
২. দর্প
৩. অভিমান
৪. ক্রোধ
৫. নিষ্ঠুরতা
৬. অজ্ঞান
৭. আত্মশ্লাঘা
৮. অবিনয়নী
৯. ধনগর্ব
১০. ক্রূর
১১. কাম
১২. ক্রোধ
১৩. লোভ
১৪. হিংসা

সূত্র: গীতা, দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ।।