Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, June 24, 2017

মহাভারতে অভিশপ্ত দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামা এখনও বেঁচে আছেন..???

গবেষকদের অনুমাণ মহাভারত প্রায় ৫
হাজার বছরের পুরনো। সেই তত্ত্বকে
মাইলস্টোন করে চললে অশ্বত্থামা ৫
হাজার বছর ধরে বেঁচে রয়েছেন?
বিজ্ঞানী বা ‌যুক্তিবাদীরা এই
তত্ত্বকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেবেন।
কিন্তু স্থানীয়রা কী বলছেন? সবাই
কি একই ভ্রমের শিকার। ‌যে
জায়গায় অশ্বত্থামাকে প্রায়
দেখা ‌যায় সেই জায়গায় ‌যাব, তার
আগে একটু স্মৃতিচারণ করে নিই
অশ্বত্থামার অভিশাপ পর্বে।
কুরুক্ষেত্রের ‌যুদ্ধে কৌরবদের দলে
ছিলেন দ্রোণাচার্য পুত্র
অশ্বত্থামা। পাণ্ডবদের নির্মূল
করতে তিনি পণ নিয়েছিলেন।
পাণ্ডবদের হত্যা করতে না পেরে
তিনি প্রায় জ্ঞান শূন্য হয়ে
ব্রহ্মাস্ত্র তুলে নেন। তিনি
জানতেন অর্জুনও ব্রহ্মাস্ত্র
পেয়েছেন, কিন্তু অশ্বত্থামার
বিশ্বাস ছিল তিনি ব্রহ্মাস্ত্রেও
মারা ‌যাবেন না, কারণ তিনি
মহাদেবের বর পেয়েছিলেন।
অশ্বত্থামা ছিলেন অমর। তাঁকে
স্বয়ং মহাদেবতো বটেই স্বর্গ, মর্ত্য,
পাতাল কারও মারা ক্ষমতা নেই।
সেই অহং বলেই ব্রহ্মাস্ত্র তুলে নেন
পাণ্ডবদের সমূলে ধ্বংস করতে।
বাসুদেব কৃষ্ণ আন্দাজ করেছিলেন
অর্জুন এবং অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্রের
লড়াই হলে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হবে।
তাই অর্জুনকে ব্রহ্মাস্ত্র ফিরিয়ে
নেওয়ার অনুরোধ করেন। অর্জুন তাই
করেন। একই কথা বলা হয়েছিলেন
অশ্বত্থামাকে, কিন্তু তা
শোনেননি তিনি।
অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র গিয়ে পড়ে
গর্ভবতী উত্তরার গর্ভে। সেই সময় ভ্রুন
অবস্থায় ছিলেন অভিমন্যুর পুত্র
পরিক্ষীত। গর্ভেই মৃত্যু হয়
পরিক্ষীতের। এর পরেই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন
বাসুদেব কৃষ্ণ। তিনি অশ্বত্থামাকে
বলেন তুমি এমন বীরত্বের প্রমাণ
দিয়েছো ‌যা লজ্জাজনক। ‌যে শিশু
মায়ের গর্ভে রয়েছে তাকেও
হত্যা করতে ছাড়োনি। তোমার এই
ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য
তোমাকে ক্ষমা করা হবে না। তুমি
অমর হতে চেয়েছিলে তাই থাকবে।
এই সংসারের প্রত্যেকটি জীবন,
পদার্থ নশ্বর, সময়ের সঙ্গে
মিলিয়ে ‌যাবে কিন্তু তুমি
থাকবে। কারণ মহাদেবের বরপুত্র
তুমি। তাই মহাদেবকে অসম্মান করব
না। তুমি বেঁচে থাকবে। কিন্তু
তোমার বেঁচে থাকাটা
এতটা ‌যন্ত্রণাদায়ক হবে ‌যে, তুমি
মৃত্যু চাইবে প্রতি পদে, কিম্তু
তোমার মৃত্যু আসবে না। তোমার
সারা শরীর গলে পচে ‌যাবে,
নরকের কীট তোমায় কুরে কুরে
খাবে অথচ মৃত্যু আসবে না। ‌যে বর
পেয়ে তোমার অহংকার চূড়ান্ত রূপ
ধারণ করেছে, সেই বরই তোমার
মুক্তির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
কৃষ্ণের এই অভিশাপের ফলে
লোকবিশ্বাসে অশ্বত্থামা এখনও
বেঁচে আছেন, থাকবেন অনাদি
অনন্তকাল ধরে। কিন্তু কোথায়
আছেন অশ্বত্থামা? কোনও পাতাল
লোকে? নাকি মর্ত্যেই আছেন
মুক্তির অপেক্ষায়?
অসিরগড় কেল্লা,
বুরহানপুর,মধ্যপ্রদেশ। এখানেই
রয়েছেন অশ্বত্থামা। না গল্প কথা
নয়, স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস নির্জন
পাহাড়ের পাশে প্রাচীন
কেল্লার আশে পাশে ‌যে
ছায়ামানব ঘুরে বেড়ায় তিনি
অশ্বত্থামা। বিজ্ঞান ও ‌যুক্তিবাদী
স্থানীয় কিছু ‌যুবকও চিরাচরিত এই
বিশ্বাসকে সমূলে উৎখাত করতে
গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরাও ‌যা
অনুভব করেছেন, তাতে তাঁদের ধ্যান
ধারণা বদলে গিয়েছে। পারতপক্ষে
ওই অঞ্চলটাকে এড়িয়েই চলেন
তাঁরা।
ঠিক কী দেখেছেন স্থানীয়রা?
লম্বা চওড়া বীরসেনার মতো এক
চেহারার মানুষ, সারা শরীর ক্ষত
বিক্ষত। চোখে মুখে ‌যন্ত্রণার ছাপ,
প্রত্যেকের কাছেই একটাই আর্তি
জানান তিনি, ওষুধ দেওয়ার সারা
শরীর তাঁর জ্বলে পুড়ে ‌যাচ্ছে,
কপালে দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।
অনেকটাই পুরানে বর্ণিত গল্পের
মতো। কিন্তু এখানেই কেন
অশ্বত্থামার বাস?
মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রে
অধুনা হরিয়ানায় রয়েছে। ‌যুদ্ধে পর,
অশ্বত্থামা চলে আসেন
মধ্যপ্রদেশের দিকে। সেই সময় এই
অঞ্চল আরও ঘন জঙ্গল ছিল, আরও একটা
কারণ ছিল এই জঙ্গলের মধ্যে ছিল
প্রাচীন ঋষিদের তপোভূমি। হয়তো
শাপমোচনের জন্যই অশ্বত্থামা এই পথ
ধরেছিলেন। লোককথায়
বলছে, ‌যেহেতু মহাদেব তাঁকে
অমরের বর দিয়েছিলেন তাই সেই
বর ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ফের
মহাদেব আরাধনা শুরু করেন।
মহাদেবের কৃপাদৃষ্টিতেই তাঁর
অভিশপ্ত জীবন মুক্তি পেতে পারে।
বুরহানপুরে এই অসিরগড় কেল্লার
কাছেই একটি প্রাচীন শিবমন্দির
আছে। সেখানেই প্রায় দেখা ‌যায়
এই ‌যুদ্ধবিধ্বস্ত ছায়া মানব
অশ্বত্থামাকে।
ওই ছায়ামানব কি কখনও কারও ক্ষতি
করেছে? স্থানীয়দের মত, না কোনও
ক্ষতি করেনি, কিন্তু ‌যাঁর জীবন
অভিশপ্ত, তাঁর সঙ্গে থাকাটা
উচিত নয়। পাহাড়ে ঘেরা এই
নিস্তব্ধ, নির্জন এলাকা
অশ্বত্থামার এলাকা বলে পরিচিত।
তাই স্থানীয়রা এড়িয়ে চলেন
এলাকাটিকে। আর ‌যাঁরা সহস্রাব্দ
ধরে চলা প্রাচীন বিশ্বাস
ভাঙতে ‌যান, তাঁদের আত্মবিশ্বাস
ভেঙে চুরমার হয়ে ‌যায় এক লহমায়।
আপনি বিশ্বাস করুন বা অবিশ্বাস,
কিন্তু অশ্বত্থামা ‌যে বিশ্বাসে
বেঁচে আছেন এবং থাকবেন তা
অবিশ্বাস করার কোনও উপায় নেই।
.
লিটন আচার্য্য
.
তথ্যসূত্র: Zee News.

No comments:

Post a Comment