Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, June 30, 2017

হিন্দু বিবাহ কোন চুক্তি নয়, এটি আত্মার সম্পর্ক

হিন্দু বিবাহ কোন চুক্তি নয়, এটি আত্মার সম্পর্ক। সেটা আমরা বিবাহের মন্ত্রের অর্থ দেখলেই বুঝতে পারি। তাই হিন্দু বিবাহে স্বামী, স্ত্রীকে তার হৃদয়ের একটি অংশ হিসেবে গ্রহন করে। হিন্দু বিবাহে কন্যা সম্প্রদান করা হয়। তার মানে স্বামীই তার সকল দায়িত্ব নিয়ে নেন। ভগবান বিষ্ণুকে যজ্ঞের মাধ্যমে সাক্ষী রেখে এই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাই হিন্দু আইনে/রীতিতে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ নেই।
কারন বিচ্ছেদ সেখানেই সম্ভব যেখানে চুক্তি সম্পাদিত হয়। তাই হিন্দু আইনে স্ত্রী সারা জীবন স্বামীর কাছ থেকে সকল অধিকার ভোগ করতে পারেন। স্বামীর সব কিছুই তার স্ত্রীর। তাই বিবাহের সময় নারীকে আলাদা করে কোন পৈতৃক সম্পত্তি দেবার প্রয়োজনীয়তা নেই। সংসারিক সকল সিদ্ধান্ত স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ- সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে।
Written by: তিলক ফোটা​
প্রনিপাত।।

বেদের পরিচয়- পর্ব ৬ -Introduced to Veda (কপি না করে শেয়ার করে সহায়তা করুন)

সে এক অতীত গৌরবের শান্তিময় কথা। জগতের সভ্যতা তখন স্নেহময়ী জননী-স্বরুপিনী পরমপূতভূমি আমাদের সমুজ্জল ভারতবর্ষে চরম সীমা লাভ করেছিল। গ্রীক্সভ্যতার সংবাদ তখনও লোক-সমাজে পৌঁছায় নি-জগৎ তখনও বিচলিত হয় নি কুহকিনীর কুটিলনাট্যসম জড়-সভ্যতার মনোমুগ্ধকর বাহ্যিক চাকচিক্যে। এমন কি, বর্ত্তমান সময়ের তথাকথিত বহু সভ্য জাতির অস্তিত্ব পর্য্যন্ত তখন ছিল কি না সন্দেহ। আর যদিও সেই সকল জাতির কোনও অস্তিত্বের সংবাদ পাওয়া যায়, তাদের আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা, শারীরিক ও মানসিক বৃত্তি বন্য পশু হতে বিশেষ শ্রেষ্ঠ ছিল বলে স্বীকার করা যায় না। ভারতের সেই গৌরব-রবি আজ পরমার্থ আকাশের পশ্চিমাচলে অস্তমিতপ্রায়। অনন্ত ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আবহমান কাল যে পারমার্থিক সভ্যতার জয়-পতাকা আজও পর্য্যন্ত কোনপ্রকারে উড্ডীয়ন রয়েছেন, তাকে চিরতরে ধূলিসাৎ করবার জন্য চতুর্দ্দিক হতে যে প্রবলা বাত্যা উঠছে, তাদের সর্ব্বগ্রাসিনী শক্তির হস্ত হতে ভারতের সেই সর্ব্ব-প্রাচীন পরমার্থ-জয়পতাকা আজ রক্ষা করে অভ্রভেদি-গিরিশৃঙ্গসম উন্নত রাখবার জন্য কি সেই গৌরবে গৌরবান্বিত শতসহস্র ঋষিসন্তান উন্নতমস্তকে স্ফীতবক্ষে উঠে দাঁড়াবেন না? নিভৃতে নির্ঝরিত বক্ষ-ভাসান চক্ষের তপ্তবারি মুছে ফেলে অতীত গৌরব অক্ষুন্ন রাখবার জন্য কি আর্য্য-পুত্রগণ প্রবলোৎসাহে বিপুলা চেষ্টার আবাহন করবেন না? সেই পারমার্থিক গৌরব কেবল মাত্র আর্য্যসন্তানগণেরই সম্পত্তি নয়; সমগ্র বিশ্ব-যাবতীয় চেতনাচেতন জগতের প্রাণীই অনাদিকাল হতে ভারতের ভাগ্যাকাশে উদিত পরমার্থ রবির কিরণে উদ্ভাসিত, জ্যোতিতে অনুপ্রাণিত ও আকর্ষণে নিত্য-শ্রেয়ের পথে পরিচালিত। এই আদি-আদিত্যেরই অতি ক্ষুদ্র কিরণচ্ছটায় পথ দেখেই পরবর্ত্তী কালের পথভ্রষ্ট দিশাহারা বহু জীবকে পথ প্রদর্শনের প্রয়াস পায়েছেন কতশত আচার্য্য, ধর্মগুরু ও ধর্মমত-প্রবর্ত্তক। নিরপেক্ষভাবে আলোচনা করলে ইহা সহজেই প্রমাণিত হয় যে, তাঁদের যাবতীয় শিক্ষা, ধর্মোপদেশ ও প্রচারপ্রচেষ্টার অশেষ যন্ত জ্ঞাতাজ্ঞাতভাবে এই পারমার্থিক ভারতেরই অফুরন্ত আদি রত্নভাণ্ডার হতে উৎপত্তি লাভ করেছিল। বর্ত্তমান সময়ে সেই অমূল্য রত্নরাজির সনাতনী বীর্য্যবতী কথার আলোচনাভাবে তাহা বিস্মৃতির অগাধ জলধিগর্ভে নিক্ষিপ্ত দেখে অনেক সদয়-হৃদয়, ধর্মপ্রাণ সজ্জনের শঙ্কার কারণ হয়েছে এবং এই জন্যই সেই অপ্রাপ্য রত্ন-ভাণ্ডারের গভীরতম তলদেশ হতে দুই একটি রত্ন আহরণ করে তাহার দিগদর্শন করবার জন্য বর্ত্তমান প্রয়াস। অতীত গৌরবের মূলভিত্তি হইল ঋষিসন্তানগণের হৃদয়-ধন বেদশাস্ত্র ও তাহার শিক্ষা। এ হেন বেদশাস্ত্র কি, ইহার উৎপত্তি কি প্রকারে হয়েছিল এবং এতে আছেই বা কোন্ রত্ন কি ভাবে নিহিত, তা উদ্ঘাটনের প্রযন্ত করব সকলের বোধগম্য সহজ-সরল বাংলা ভাষার মধ্য দিয়ে, যাতে বাঙ্গালার আর্য্যসন্তান বেদ-রত্নাভরণে সজ্জিত হয়ে দাঁড়াতে পারেন সহাস্যবদনে বেদপুরুষের সন্মুখে। পাঠ শেষে শেয়ার করে প্রচার করুন- ক্রমশঃ-
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্কুল।।

Thursday, June 29, 2017

অষ্টসিদ্ধি কি? অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ কি? - What is octahedy? What is the nature of octahedy?

অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ বর্ণনা...........
অষ্টসিদ্ধি হলো এমন এক শক্তি যা যোগীরা
কঠোর তপস্যার পরে অর্জন করতে সক্ষম হয়।
এই অষ্টসিদ্ধি অর্জনে প্রথমে সদগুরুর আশ্রিত
হতে হয় এবং নিজেকে শুদ্ধ, সূচী, একনিষ্ঠ,
তপপ্রকোর ও অনাহারী হিসেবে তৈরী করতে
হয়। যে যেই গুরুর আশ্রিত হয় তদ্বপর সেই শিষ্য
একটি শুভদিনে দীক্ষা গ্রহন করে নিজের স্থান
গুরুর কাছে পাকাপোক্ত বা শক্ত করে গুরুকে এই
বিশ্বাস দেখাতে হবে যে, হ্যা আমি পারবো আর
আমিই উক্ত তপের জন্য পারদর্শী। যখন পরমাধ্য
গুরুদেব বুঝতে পারবেন যে, তাঁর শিষ্য তপস্যার
জন্য প্রস্তুত; তখনই তিনি যোগাসন পদ্ধতি ও ধ্যান
প্রণালীর প্রস্তুতি সম্বন্ধে শিষ্যকে অভ্যাস শুরু
করাবে। তখন অভ্যাস যখন নীতি ও ভক্তিতে
রুপান্তর হয় তখন যোগী একটি নীরব স্থান সন্ধান
করে নিজের কার্যসিদ্ধি পূরণের লক্ষ্যে। অতঃপর
যোগী নিজের যোগ অভ্যাস শুরু করে, এই
যোগ তপস্যা অনেকের কাছে পাঁচবছর,
অনেকের কাছে সাতবছর, অনেকের কাছে
দশবছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। তপস্যা ধ্যান
পূর্ণ হয় যোগীর দৃঢ়তা, একনিষ্ঠতা, ধ্যানস্থ
সমাধীর তেজোদীপ্তের উপর নির্ভর করে।
যখন যোগী অষ্টসিদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়
তখন তিনি মহাযোগীর স্থান অর্জন করে। তখন ঐ
মহাযোগী নিজের চাহিদা অনুসারে নিজের
তপোবল বাড়াতে চাইলেও পারে এবং নিজেকে
সৃষ্টির মহা এক উচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
সৃষ্টির এই চৌদ্দ ভুবনের যেকোনো লোকে
তিনি নিজেকে স্থায়ী বাসিন্দা করতে সক্ষম হয়।
卐ঋগবেদ মতে আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন

১। সত্যলোক
২। তপোলোক
৩। জনলোক
৪। মহর্লোক
৫। সপ্তর্ষিলোক
৬। ধ্রুববোক
৭। স্বর্গলোক
০। ভূলোক(পৃথিবী)
৮। অতল
৯। বিতল
১০। সুতল
১১। তলাতল
১২। মহাতল
১৩। রসাতল
১৪। পাতাল
এখন মূল আলাপ হচ্ছে ধ্যানের প্রথম স্তর যাকে
অষ্টসিদ্ধি বলা হয়, সেই অষ্টসিদ্ধি কত প্রকার ও কি
কি?
অষ্টসিদ্ধি আট প্রকার যেমনঃ-
১) অণিমা
২) লঘিমা
৩) গরিমা
৪) প্রাপ্তি
৫) প্রাকাম্য
৬) মহিমা বা কামাবসায়িতা
৭) ঈশিত্ব বা ঈশিতা
৮) বশিত্ব বা বশিতা
এই আট প্রকার অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ গুলো হলোঃ-
১)অনিমা:- তারা ইচ্ছা করলে অনুর মত ক্ষুদ্র আকার
ধারন করতে পারেন অথবা নিজেকে শূণ্য রুপে
পরিণত করতে পারেন। এরকম সিদ্ধি অর্জনকে
বলে অনিমা।
২)লঘিমা:- ইচ্ছামতো হালকা জলের উপর হেঁটে
যেতে বা শূন্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এরকম
সিদ্ধি অর্জনকে বলে লঘিমা।
৩)গরিমা:- অত্যন্ত ভারী হতে পারেন, লঘুকরণ ধারণ
করা মুহুর্তের ব্যাপার মাত্র। এই সিদ্ধি অর্জনকে
বলে গরিমা।
৪)প্রাপ্তি:- যে কোনও স্থান থেকে যা ইচ্ছা! তাই
প্ৰাপ্ত হতে পারেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
জ্ঞান নিজের মুষ্টিবদ্ধ করা শক্তি অর্জন। এরকম
সিদ্ধি অর্জনকে বলে প্ৰাপ্তি।
৫)প্রাকাম্য:- কোনও বাসনা চরিতাৰ্থ করতে এবং
কখনও নিরাশ না হওয়ার জন্য যে সিদ্ধি অর্জন তাঁকে
বলে প্রাকাম্য।
৬)মহিমা বা কামাবসায়িতা:- ইচ্ছামতো বা খামখেয়ালী
ভাবে যে কোনও জড়রুপ ধারণ করতে পারেন।
নিজের ঐশ্বর্য শক্তি ও তেজ শক্তির প্রভাবকে
ক্ষমতাবদ্ধ করা, এই ধরনের সিদ্ধি অর্জনকে বলে
মহিমা বা কামাবসায়িতা।
৭)ঈশিতা:- কোনও স্থানে কিছু অদ্ভুত জিনিষ সৃষ্টি
করতে পারেন বা ইচ্ছানুসারে কোন জিনিস ধ্বংসও
করতে পারেন। সৃষ্টির নবকিছু আর্বিভাব ও ধ্বংস যাঁর
ক্ষমতার আওতায়, এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে
ঈশিতা।
৮)বশিতা:- জড় উপাদান গুলোকে কেবল ইচ্ছা
অনুসারে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পারেন। সৃষ্টির প্রতিটি
জীবকে নিজের বশীভূত করা যাঁর একটি দৃষ্টি
প্রক্ষেপ মাত্র, এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে
বশিতা।
আমাদের চৌদ্দ ভুবনের ব্রহ্মলোক ও তপলোক
গ্রহের বাদিন্দারা সকলেই অষ্টসিদ্ধি লাভ
করেছেন। কেননা উচ্চতর গ্রহের অধিবাসীরা
স্বাভাবিক ভাবেই এ সমস্ত সিদ্ধির অধিকারী। এজন্য
তাদের কোনও অনুশীলন বা কোনরকম অলৌকিক
পদ্ধতি শিখতে হয় না। তারা ইচ্ছা করলে এক গ্রহ
থেকে অন্য গ্ৰহে কোনরকম আকাশযান ছাড়াই
নিমেষের মধ্যে ভ্ৰমণ করতে পারেন। কিন্তু তারা
এই অষ্টসিদ্ধিকে ভুল ব্যবহার করেন না। মূলত এই
সিদ্ধি অর্জন করে একজন যোগী তা ধর্ম ও মানব
কল্যাণে ব্যয় করে। এতে ঐ যোগীর
অষ্টসিদ্ধি শক্তি আরো প্রকটতর হয় এবং ঐ
যোগীর পূর্ণগুণ সাধনা তীব্র আঁকার ধারণ করে।
তখন একজন যোগী অষ্টসিদ্ধির পরবর্তী
স্তরে নিজেকে রুপান্তর করে, তথা কথিত; শাস্ত্র
মতে সেই স্তরকে মহর্ষি বলা হয়। কিন্তু হাতের
পাঁচটি আঙ্গুল যেমন সমান নয়, ঠিক তেমনই পৃথিবীর
সকল মানুষ, ভক্ত, সেবক, জ্ঞানী ও যোগী
একরকম নয়। তাই কিছু অসাধু যোগী আছে যাঁরা, এই
পৃথিবীতে দৈবক্ৰমে এই সিদ্ধিগুলির মাত্ৰ একটিও
কিংবা একটু বা আধটুকুও যদি কেউ লাভ করতে পারে।
সে যোগী নিজের কিছু অবাস্তব বা অলৌকিক
কৃতকার্য প্রদর্শনী করে মানুষকে আকৃষ্ট করার
জন্য। যাতে করে ঐ যোগী ভবিষ্যতে ভালো
আয় করতে পারে এবং আমরণকাল পরের মাথায় লবণ
রেখে ফল খাইতে পারে। আর আমাদের মূর্খ
সমাজ ও সনাতনী জাতি তখন সেই ব্যক্তিকে ভগবান
বলেই মনে করে। যেহেতু পৃথিবীর
অধিবাসীদের কাছে এই সিদ্ধিগুলি স্বাভাবিক নয় । তাই
কেউ সিদ্ধি প্ৰদৰ্শন করলেই অত্যন্ত মহান
ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলে, লোকে তাকে মনে
করে থাকে। তখনই শুরু হয় অন্যায় ও অধর্ম। জন্ম
নেয় পাপ ও হিংসার। তাই প্রিয় ভক্তগণ, একটি কথা
চিরকাল স্মরণ রাখবেন; যে প্রকৃত ঋষি, যোগী বা
সন্ন্যাসী সে কোনদিন নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন
করে না এবং কোনও ভক্তদের থেকে কোনও
প্রকার অর্থদাবী করে না। যদি কেউ প্রকৃত ঋষি,
যোগী, সন্ন্যাসী বা ব্রহ্মচারী হয়, সে বিনা
লোভে বিনা স্বার্থে আপনার উপকার বা
সহযোগিতায় নিজেকে উজাড় করে দিবে। তখন
মনে করবেন যে, সে আপনার পরম শ্রদ্ধাবনত
ব্যক্তি।
হরে কৃষ্ণ।।

বেদের পরিচয়- পর্ব ৫ -Introduced to Veda (শেয়ার করে সহায়তা করুন)

বেদের পরিচয় (৫) বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-সমাজে বেদশাস্ত্রের আলোচনার অভাব বহুদিন যাবৎ। প্রচার প্রভাবেই সাধারণের মধ্যে বেদ-শাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধা আনয়ন করা সম্ভব। কিন্তু বেদের পণ্ডিতগণ, তথা বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক প্রচারকগণ, এই বিষয়ে এক প্রকার উদাসীন। কোন কোন ধর্মনিষ্ঠ হিন্দু সন্তান বেদ অধ্যয়নের ইচ্ছা পোষণ করলেও বেদের ভাষা ও বিপুলত্ব নিবন্ধন সহজ প্রাথমিক গ্রন্থের অভাবে তাঁহার সেই ইচ্ছা হৃদয়েই বিলীন হয়ে যায়। সহজ ও সুখবোধ্য পাঠের মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষিত বাংলার হিন্দু নরনারী যাতে সংস্কৃত ভাষার জ্ঞানা অভাবেও বেদের প্রতি অনুরাগ পরায়ণ হতে পারেন, তজ্জন্য এই প্রাথমিক 'বেদের পরিচয়' নামে এই ধারাবাহিক আমাদের সর্ব্ব সম্প্রদায়ের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রতি আমাদের নম্র নিবেদন এই যে, তাঁহারা বেদের প্রতি দৃঢ় শ্রদ্ধাবিশিষ্ট হোন-বেদের সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করুন-বেদের মহিমা প্রচার করুন এবং বেদপুরুষের সবানিরত হয়ে হিন্দুর মর্য্যাদা অক্ষুন্ন রাখুন। "বেদের পরিচয়" নামক গ্রন্থ থেকে আমি পূর্ব্বাচার্য্যগণের সনাতন শ্রৌতশাস্ত্র-পরম্পরাই অনুধাবন করছি। সায়ণাচার্য্যের 'উপোদ্ঘাত', উবটভাষ্য, মহীধরভাষ্য, মিশ্রভাষ্য, শতপথব্রহ্মণ, গোপথব্রাহ্মণ, কাত্যায়নসূত্র, চরণব্যূহ, যাজ্ঞবল্ক্যশিক্ষা, জৈমিনীর মীমাংসাসূত্র, চরণব্যূহ, যাজ্ঞবল্ক্যশিক্ষা, জৈমিনীর মীমাংসাসূত্র প্রভৃতি গ্রন্থ হতে তথ্য সংগ্রহ করে এবং বেদশাস্ত্রের মদীয় শদ্ধাস্পদ শিক্ষক বেদাচার্য্য শ্রীযুক্ত বিষ্ণুপাঠক কাবলে মহোদয়ের সাহায্যে বেদের পরিচয় আপনাদের পাঠ সুবিধার্থে তুলে ধরার সমর্থ হয়েছি। এই ধারাবাহিক হতে বেদের ন্যুনাধিক সংবাদ জ্ঞাত হয়ে যদি কিঞ্চিন্মাত্রও বেদের প্রতি আকৃষ্ট হন, তাহলে তাঁহারা সমগ্র যজুর্বেদ যথাবিধি অধ্যয়ন করে বৈদিক যজ্ঞে বঙ্গের গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে যত্নশীল হবেন, এই আশাবন্ধ নিয়ে হিন্দুর হৃদয় আনন্দাবেগে জাগিয়া উঠবে। সুত্র- "বেদের পরিচয়" ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীমদ্ভক্তিহৃদয় বন ক্রমশঃ- শেয়ার করুন-
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্কুল

মৃত্যুর সময়ে ভগবানকে স্মরন করুন -Recall God at the time of Death

# মানব জীবনের উদ্দেশ্য হল আত্মতত্ত্বজ্ঞান লাভ করা কিন্তু এক মুহূৰ্তও যদি জড় জগতের সুখ ভোগের পরিকল্পনায় নষ্ট করা হয় , তাহলে কোটি কোটি স্বৰ্ণমুদ্রার বিনিময়েও তা ফিরে পাওয়া যাবে না ।
# তাই মায়ার বন্ধন থেকে বা জীবনের মোহময়ী কাৰ্যকলাপ থেকে মুক্ত হতে ইচ্ছুক ব্যাক্তি বা অধ্যাত্মবাদীকে বৈদিক শাস্ত্র দ্বারা সৰ্তক করে দিয়ে বলা হয়েছে যে , তিনি যেন সকাম কৰ্মের বাহ্যিক রুপে মোহিত না হন । ইন্দ্ৰিয়ের তৃপ্তিসাধন করা কখনই মানব জীবনের উদ্দেশ্য নয় ; মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মতত্ত্বজ্ঞান লাভ করা । যেন মৃত্যুর সময়ে তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম রুপ গুন লীলা স্মরন করতে পারেন।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
''অন্তকালে চ মামেব স্মরনমুক্তা কলেবরম,
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ''।। ৮/৫ ''অর্থাৎ হে অর্জুন ! মৃত্যুর সময়ে যিনি আমাকে স্মরন করে দেহত্যাগ করেন তিনি তৎক্ষণাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই''।
# শ্ৰীমদ্ভাগবতম গ্রন্থে প্রথম স্কন্দ থেকে শেষ স্কন্দ পৰ্যন্ত সেই উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আত্ম - উপলব্ধি করাই হচ্ছে মানব জীবনের একমাত্ৰ উদ্দেশ্য । যে সভ্যতা এই পরম সিদ্ধিকে লক্ষ্যরুপে গ্ৰহণ করে তা কখনো , অৰ্থহীন বস্তু তৈরির কাজে লিপ্ত হয় না এবং সেই প্রকার সর্বাঙ্গসুন্দর সভ্যতা মানুষকে কেবল জীবনের নৃত্যুনতম আবশ্যকতাগুলি গ্ৰহণ করতে শেখায় বা খারাপ সওদার সৰ্বোত্তম উপযোগ করার সিদ্ধান্ত পালন করার ব্যাপারে প্রস্তুত করে ।
# আমাদের জড় দেহ এবং সেই দেহের সঙ্গে সম্পৰ্কিত আমাদের জীবন হচ্ছে একটি খারাপ সওদা , কেননা প্ৰকৃতপক্ষে জীব হচ্ছে চিন্ময় আত্মা এবং পারমাৰ্থিক প্ৰগতি হচ্ছে জীবের পরম প্ৰয়োজন । মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূৰ্ণ বিষয়টি উপলব্ধি করা এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অন্য উদ্দেশ্যে শক্তির অপচয় না করে ও জড় সুখভোগের প্রতি উন্মত্ত না হয়ে ভগবানের দানের উপর নিৰ্ভরশীল থেকে জীবন ধরণের জন্য যতটুকু প্ৰয়োজন ঠিক ততটুকুই গ্ৰহণ করা ।
# জড় সভ্যতার প্রগতিকে বলা হয় আসুরিক সভ্যতা , যা পরিণামে যুদ্ধ এবং অভাবে পৰ্যবসিত হয় । শ্রীমদ্ভাগবত দ্বারা পরমাৰ্থবাদীদের বিশেষভাবে সতৰ্ক করা হয়েছে যে , তারা যেন তাদের মনকে স্থির করেন যাতে উচ্চতর চিন্তাধারা সমন্বিত সরল জীবন যাপনেও যদি প্রতিকূলতা আসে , তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হোন।।

Wednesday, June 28, 2017

বেদের পরিচয়- পর্ব ৪ -Introduced to Veda (কপি না করে শেয়ার করে সহায়তা করুন)

এক হতে বহু এবং বহু হতে এক, ইহাই হল মূলতত্ত্ব। একক ব্রহ্মের বহু হবার সঙ্কল্প হয়েছিল, তাই ‘সর্ব্ব’ শব্দের সহিত ‘ব্রহ্ম’ এর অপূর্ব্ব সমন্বয় ঘটেছে এই হিন্দুধর্মে। পরম ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধির নিমিত্ত এই বিশ্বদেবের ধ্যান ও ধারণা ব্যতীত জীবের আত্যন্তিক মঙ্গলের আর অন্য কোনও উপায় নাই। বৈদিক ধর্ম দর্শনে ও উপনিষদে এরই প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। যে সনাতন বেদের মধ্যে, আমাদের এই পবিত্র জন্মভূমির পূণ্য-যজ্ঞশালা প্রসূত যে অমৃতের মধ্যে, মানবের চরম ও পরম কল্যাণ সুন্দর ভাবে নিহিত রয়েছে সেই বেদের পরিচয় আমরা রাখি না, ইহা অপেক্ষা পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে?
আর একটি কথা, একথা এখন সর্ব্ববাদিসম্মত যে, বেদ অধ্যয়ন করতে হলে শুধু অর্থ হৃদয়ঙ্গম করলে হয় না, বিধিমত পাঠ করাও বিশেষ আবশ্যক। নিয়মিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিচালনা সহ পাঠ করলে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি প্রকৃষ্টরূপে সাধিত হয়ে থাকে। পণ্ডিতপ্রবর সত্যব্রত সামশ্রমী মহাশয় বলেছিলেন যে, তিনি যখন বারাণসী ধামে বেদ অধ্যয়ন করছিলেন তখন তাঁহাকে দুই গুরুর আশ্রয় নিতে হয়েছিল- একজনের নিকট অর্থের জন্য অধ্যয়ন করতেন, ও অপরের নিকট পাঠ শিক্ষা করতেন।
বেদের সম্যক্ পরিচয় বেদের ঐতিহাসিকতা তাহার সাহিত্য ও কাব্যরূপ, তাহার বিজ্ঞান ও ধর্ম্মসম্বন্ধীয় সকল তথ্যই নানা মহাত্মা কর্ত্তৃক বেদ বিষয়ক আলোচনায় নানা গ্রন্থে সুষ্ঠভাবে বিচার বিশ্লেষণ-পূর্ব্বক আলোচনা করেছেন। বৈদিক পাঠ এবং পুরুষসূক্তের ও ঈশোপনিষদের বন-ব্যাখ্যাগুলির এই সুন্দর ও প্রাঞ্জল সমাবেশ বড়ই উপাদেয় হয়েছে। বেদের বহুল প্রচার কল্পে এই সাধু ও মহতী প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রয়াস। বৈদিক সনাতন ধর্মাবলম্বী তাহার এই নিজ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সমগ্র বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হোক, ইহাই আমার অন্তরের প্রার্থনা।
ক্রমশঃ

নিবেদনে: শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল

Tuesday, June 27, 2017

নীলমাধব ও জগন্নাথ দেবের আখ্যান- The history of Nill-Madhava and Jagannath deva

মালবরাজ ইন্দ্রদুম্ন্য ছিলেন পরম বিষ্ণু ভক্ত। একদিন এক তেজস্বী সন্ন্যাসী তাঁর রাজবাড়ীতে পদার্পণ করলেন। দেব দ্বিজে ভক্তিপরায়ন রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য পরম যত্নে সন্ন্যাসীর সেবা যত্ন করলেন। সন্ন্যাসী ভারতবর্ষের সমস্ত তীর্থের কথা বলে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের নীল পর্বতে ভগবান বিষ্ণুর পূজার কথা জানালেন। এখানে ভগবান বিষ্ণু গুপ্তভাবে শবর দের দ্বারা নীলমাধব রূপে পূজিত হচ্ছেন, নীলমাধব সাক্ষাৎ মুক্তিপ্রদায়ক, তিনি মোক্ষ প্রদান করেন।
সন্ন্যাসীর কথা শুনে ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য ভগবানের রূপ দর্শনে আকুল হলেন। রাজা তাঁর পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে শবর দের রাজ্যে গিয়ে নীলমাধবের সন্ধান করে আনতে বললেন। এরপর শবর দের দেশে এসে বিদ্যাপতি শবর দের রাজা বিশ্বাবসুর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। শবর রাজা বিদ্যাপতিকে স্বাদর অভ্যর্থনা করে অতিথি চর্চার জন্য কন্যা ললিতাকে দায়িত্ব দেন। কিছুদিন থাকার পর বিদ্যাপতি শবর রাজা বিশ্বাবসুর কন্যা ললিতার প্রেমে পড়েন। উভয়ে উভয়কে ভালোবেসে ফেলেন। ললিতা এ কথা বিদ্যাপতিকে জানান এবং তাঁকে বিবাহ করতে বলেন। বিদ্যাপতি ললিতাকে এর বিনিময়ে নীলমাধব দর্শনের অভিপ্রায় জানান। ললিতা সে কথা শুনে বিচলিত হয় কিন্তু সে বলে এক সর্তে সে নীলমাধবকে দেখাতে পারে - বিদ্যাপতি যে পথে যাবেন সেই সময় তাঁর দুই চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে অর্থাৎ কাপড়ের পট্টি বাঁধা হবে যাতে তিনি রাস্তা না দেখতে পারেন কিম্বা চিনতে পারেন। বিদ্যাপতি রাজি হয়ে যান। কিন্তু বিদ্যাপতি একটি বুদ্ধি করেন, উনি সঙ্গে করে সরষে নিয়ে যান। হাতে এক মুঠো এক মুঠো করে সরষে নিয়ে সারা রাস্তা ফেলতে ফেলতে যান। এ' সব কাজ ললিতার অগোচরেই সম্পন্ন হয়। বিদ্যাপতির উদ্দেশ্য ছিল নীলমাধবকে পুরীতে নিয়ে যাওয়া। সেই পথ চেনার জন্য উনি সরসের গাছ দেখতে দেখতে নীলমাধবের মন্দিরে পৌঁছন কিন্তু প্রভু নীলমাধব অন্তর্যামী বিদ্যাপতির হাতের নাগাল থেকে অন্তর্ধান হ'ন।
.
বিশ্ববসু কন্যা ললিতার মারফৎ বিদ্যাপতি নীলমাধব কে দর্শন লাভ করলেন বিশ্ববসুর অগোচরে। তারপর বিদ্যাপতি গিয়ে রাজাকে সব জানালেন। রাজা খবর পেয়ে সৈন্য সামন্ত নিয়ে নীলমাধবের দর্শনে আসলেন।
ইন্দ্রদুম্ন্য পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে এসে নীলমাধব দর্শন করতে গেলে শুনলেন নীলমাধব অন্তর্ধান হয়েছেন। মতান্তরে শবর রাজ বিশ্বাবসু সেটিকে লুকিয়ে রাখেন। রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য এতে খুব দুঃখ পেয়ে ভাবলেন প্রভুর যখন দর্শন পেলাম না তখন এই জীবন রেখে কি লাভ? অনশনে প্রান ত্যাগ করাই শ্রেয় । এই ভেবে রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য কুশ শয্যায় শয়ন করলেন। সে' সময় দেবর্ষি নারদ মুনি জানালেন --- “হে রাজন তোমার প্রাণত্যাগের প্রয়োজন নাই। এই স্থানে তোমার মাধ্যমে ভগবান জগন্নাথ দেব দারুব্রহ্ম রূপে পূজা পাবেন। স্বয়ং পিতা ব্রহ্মা একথা জানিয়েছেন।”
রাজা শুনে শান্তি পেলেন। এক রাতের কথা রাজা শয়নে ভগবান বিষ্ণুর স্বপ্ন পেলেন।
স্বপ্নে ভগবান শ্রীহরি বললেন --- “হে রাজন । তুমি আমার প্রিয় ভক্ত। ভক্তদের থেকে আমি কদাপি দূর হই না। আমি সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে তোমার নিকট আসছি। পুরীর বাঙ্কিমুহান নামক স্থানে তুমি আমাকে দারুব্রহ্ম রূপে পাবে।”
রাজা সেই স্থানে গিয়ে দারুব্রহ্মের সন্ধান পেলেন। কিন্তু তাকে একচুল ও নড়াতে পারলেন না । রাজা আদেশ দিলেন হাতী দিয়ে টানতে। সহস্র হাতী টেনেও সেই দারুব্রহ্ম কে এক চুলও নড়াতে পারলো না। রাজা আবার হতাশ হলেন।
সেই সময় ভগবান বিষ্ণু স্বপ্নে জানালেন --- “হে রাজন। তুমি হতাশ হইও না। শবর রাজ বিশ্বাবসু আমার পরম ভক্ত। তুমি তাকে সসম্মানে এইস্থানে নিয়ে আসো। আর একটি স্বর্ণ রথ আনয়ন করো।”
রাজা সেই মতো কাজ করলেন। ভক্ত বিশ্বাবসু আসলেন। বিশ্বাবসু, বিদ্যাপতি আর রাজা তিনজনে মিলে দারুব্রহ্ম তুললেন। সেসময় চতুর্দিকে ভক্তেরা কীর্তন করতে লাগলো। তারপর দারুব্রহ্ম কে রথে বসিয়ে তিনজন নিয়ে এলেন।
প্রকাশ থাকে পুরীর দৈতাপতিরা ওই ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতি এবং শবর কন্যা ললিতার বংশধর। তাই ওরা কেবল রথের সময় ভগবান জগন্নাথের সেবা করার অধিকার পান। রথে উপবিষ্ট প্রভু জগন্নাথ বলভদ্র মা সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। এই বছরও নব-কলেবর যাত্রায় দৈতাপতিরা দারু অন্বেষণ এবং ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজ সমাপন করেছেন। এ ছাড়া ওনারা পুর্ব বিগ্রহদের পাতালিকরন কাজ সমাপন করেন 'কোইলি বৈকুন্ঠে' ।
রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য সমুদ্রে প্রাপ্ত দারুব্রহ্ম প্রাপ্তির পর গুণ্ডিচা মন্দিরে মহাবেদী নির্মাণ করে যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ সমাপ্তে দেবর্ষি নারদ মুনির পরামর্শে রাজা সেই দারুব্রহ্ম বৃক্ষ কাটিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ তৈরীতে মনোনিবেশ করলেন। এর জন্য অনেক ছুতোর কারিগর কে ডেকে পাঠানো হোলো। কিন্তু বৃক্ষের গায়ে হাতুড়ী, ছেনি ইত্যাদি ঠেকানো মাত্রই যন্ত্র গুলি চূর্ণ হতে লাগলো। রাজা তো মহা সমস্যায় পড়লেন। সেসময় ছদ্দবেশে বিশ্বকর্মা মতান্তরে ভগবান বিষ্ণু এক ছুতোরের বেশে এসে মূর্তি তৈরীতে সম্মত হলেন।
তিনি এসে বললেন- “হে রাজন। আমার নাম অনন্ত মহারাণা। আমি মূর্তি গড়তে পারবো। আমাকে একটি বড় ঘর ও ২১ দিন সময় দিন। আমি তৈরী করবো একটি শর্তে। আমি ২১ দিন দরজা বন্ধ করে কাজ করবো। সেসময় এই ঘরে যেন কেউ না আসে। কেউ যেন দরজা না খোলে।”
অপর দিকে মোটা পারিশ্রামিকের লোভে যে ছুতোররা এসেছিলো তাদের নিরাশ করলেন না অনন্ত মহারাণা।
তিনি বললেন- “হে রাজন । আপনি ইতিপূর্বে যে সকল কারিগর কে এনেছেন, তাদের বলুন তিনটি রথ তৈরী করতে।”
ছদ্দবেশী বিশ্বকর্মা ঘরে ঢুকলে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সেখানে কড়া প্রহরা বসানো হোলো যাতে কাক-পক্ষীও ভেতরে না যেতে পারে। ভেতরে কাজ চলতে লাগলো। কিন্তু রানী গুণ্ডিচার মন মানে না। স্বভাবে নারীজাতির মন চঞ্চলা হয়। রানী গুন্ডিচা ভাবলেন -- “আহা কেমনই বা কারিগর বদ্ধ ঘরে মূর্তি গড়ছেন। কেমন বা নির্মিত হচ্ছে শ্রীবিষ্ণুর বিগ্রহ। একবার দেখেই আসি না। একবার দেখলে বোধ হয় কারিগর অসন্তুষ্ট হবেন না।”
এই ভেবে মহারানী ১৪ দিনের মাথায় মতান্তরে ৯ দিনের মাথায় দরজা খুলে দিলেন। কারিগর ক্রুদ্ধ হয়ে অদৃশ্য হোলো। অসম্পূর্ণ জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি দেখে রানী ভিরমি খেলেন। একি মূর্তি!
নীল নবঘন শ্যামল শ্রীবিষ্ণুর এমন
গোলাকৃতি নয়ন, হস্ত পদ হীন, কালো মেঘের মতো
গাত্র বর্ণ দেখে মহারানীর মাথা ঘুরতে লাগলো।
রাজার কানে খবর গেলো। রাজা এসে রানীকে খুব
তিরস্কার করলেন। বদ্ধ ঘরের মধ্য থেকে এক
কারিগরের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বিচক্ষণ মন্ত্রী
জানালেন তিনি সাধারন মানব না কোনো দেবতা
হবেন। বিষ্ণু ভক্ত রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য তাঁর আরাধ্য হরির
এই রূপ দেখে দুঃখিত হলেন। রাজাকে সেই রাত্রে
ভগবান বিষ্ণু আবার স্বপ্ন দিলেন।
বললেন --- “আমার ইচ্ছায় দেবশিল্পী মূর্তি নির্মাণ
করতে এসেছিলেন। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ হওয়াতে এই রূপ
মূর্তি গঠিত হয়েছে। হে রাজন, তুমি আমার পরম ভক্ত,
আমি এই অসম্পূর্ণ মূর্তিতেই তোমার পূজা নেবো।
আমি দারুব্রহ্ম রূপে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে নিত্য
অবস্থান করবো। আমি প্রাকৃত হস্তপদ রহিত, কিন্তু
অপ্রাকৃত হস্তপদাদির দ্বারা ভক্তের সেবাপূজা
শ্রদ্ধা গ্রহণ করবো। আমি ত্রিভুবনে সর্বত্র বিচরণ
করি। লীলা মাধুর্য প্রকাশের জন্য আমি এখানে
এইরূপে অধিষ্ঠান করবো। শোনো নরেশ -- ভক্তেরা
আমার এই রূপেই মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণ রূপের দর্শন পাবেন।
যদি তুমি ইচ্ছা করো তবে ঐশ্বর্য দ্বারা সোনা রূপার
হস্ত পদাদি নির্মিত করে আমার সেবা করতে পারো।
” সেইথেকে উল্টো রথের পর একাদশীর দিন তিন
ঠাকুরের সুবর্ণ-বেশ রথের ওপর হয়। সেই বেশ দেখলে
সাত জন্মের পাপ ক্ষয় হয় যা দেখতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত
পুরী আসেন প্রত্যেক বৎসর।
.
আমরা দেখলাম যে ভগবান বিষ্ণু তাঁর পরম ভক্ত
রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য কে স্বপ্নে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই
বলে যে তিনি সেই হস্তপদ রহিত বিকট মূর্তিতেই
পূজা নেবেন। সেই স্বপ্ন পর্ব তখনো চলছে। ভক্ত ও
ভগবানের মধ্যে যে ভক্তির সম্বন্ধ তা একে একে
উঠে আসছে। নিদ্রিত অবস্থায় স্বপ্নে রাজা তখনও
সেই ছদ্দবেশী অনন্ত মহারানার জন্য প্রার্থনা
জানিয়ে বলছেন --- “হে প্রভু জনার্দন, যে বৃদ্ধ
কারিগরকে দিয়ে তুমি তোমার এই মূর্তি নির্মিত
করিয়াছ – আমার অভিলাষ এই যে সেই কারিগরের
বংশধরেরাই যেনো তোমার সেবায় রথ যুগ যুগ ধরে
প্রস্তুত করিতে পারে।” ভগবান নারায়ন তাঁর ভক্তদের
খুবুই স্নেহ করেন। তাই ভগবান একে একে রাজার
ইচ্ছা পূর্ণ করতে লাগলেন। এরপর ভগবান বিষ্ণু বললেন
--- “হে রাজন। আমার আর এক পরম ভক্ত শবর রাজ
বিশ্বাবসু আমাকে নীলমাধব রূপে পূজা করতো- তাঁরই
বংশধরেরা আমার সেবক রূপে যুগ যুগ ধরে সেবা
করবে । বিদ্যাপতির প্রথম স্ত্রীর সন্তান গন আমার
পূজারী হবে। আর বিদ্যাপতির দ্বিতীয়া স্ত্রী তথা
বিশ্বাবসুর পুত্রী ললিতার সন্তান এর বংশধরেরা
আমার ভোগ রান্নার দায়িত্ব নেবে। আমি তাদের
হাতেই সেবা নেবো।”
বিদ্যাপতি প্রথম রাজার আদেশে নীলমাধব সন্ধান
করতে গেছিলেন শবর দের দেশে, শবর বা সাঁওতাল
যাদের আমরা ছোটো জাত বলে দূর দূর করি ---
শ্রীভগবান বিষ্ণু প্রথম তাঁদের দ্বারাই পূজা নিলেন।
অপরদিকে তিনি তাঁদের হাতে সেবার আদেশ
দিলেন। ব্রাহ্মণ ও শূদ্র জাতির একত্র মেলবন্ধন
ঘটালেন স্বয়ং ভগবান। সেজন্যই বলে পুরীতে জাতি
বিচার নেই। জগতের নাথ জগন্নাথ সবার। বিদ্যাপতি
শবর দেশে নীলমাধবের সন্ধান করতে গিয়ে
বিশ্বাবসুর দুহিতা ললিতার সাথে ভালোবাসা ও
বিবাহ করেছিলেন। আর বিদ্যাপতিকে শবর দেশে
পৌছানোর জন্য এক রাখাল বালক বারবার পথ
প্রদর্শন করেছিলেন। সেই রাখাল বালক আর কেউ নয়
স্বয়ং বৃন্দাবনের 'রাখালরাজা নন্দদুলাল'। ইন্দ্রদুম্ন্য
স্বপ্নে ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রতিশ্রুতি দিলেন ---
“হে মধূসুদন, প্রতিদিন মাত্র এক প্রহর অর্থাৎ তিন
ঘণ্টার জন্য মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকবে, বাকী সময়
মন্দিরের দ্বার অবারিত থাকবে, যাতে তোমার
সন্তান ভক্তেরা তোমার দর্শন লাভ করে। সারাদিন
আপনার ভোজোন চলবে। আপনার হাত কদাপি শুস্ক
থাকবে না।”
ভগবান বিষ্ণু রাজাকে তাই বর দিলেন। এবার ভগবান
ভক্তের পরীক্ষা নিলেন --- তিনি বললেন --- “এবার
নিজের জন্য কিছু প্রার্থনা করো, তুমি আমার ভক্ত।”
প্রকৃত ভক্তেরা নিস্কাম, তাই কোনো প্রকার সুখ
ঐশ্বর্য তারা চান না।
রাজা একটি ভয়ানক বর চেয়ে বললেন -- “প্রভু
আমাকে এই বর দিন আমি যেন নির্বংশ হই, যাতে
আমার বংশধরের কেউ যেন আপনার দেবালয়কে নিজ
সম্পত্তি দাবী না করতে পারে।”
ভগবান হরি তাই বর দিলেন। জগন্নাথ মন্দিরে প্রান
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা।
.
পদ্মপুরাণে লিখিত আছে ভগবান রামচন্দ্রের কনিষ্ঠ
ভ্রাতা শত্রুঘ্ন এই স্থানে এসেছিলেন। ব্রহ্ম পুরাণ ও
বৃহৎ নারদীয় পুরানে এই স্থানের নাম পাওয়া যায় ।
জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে
বলা হয় ব্রহ্মা ব্রহ্মলোক থেকে মর্তে এসেছিলেন।
তিনিই হয়েছিলেন পুরোহিত। জগন্নাথ দেব রাজা
ইন্দ্রদুম্ন্য কে স্বপ্নে নিত্য পূজোর নিয়মকানুন
বলেছিলেন ইন্দ্রদুম্ন্য সেই মতো সব ব্যবস্থা করেন।
স্কন্দপুরান মতে শবর জাতির লোকেরা পূর্বে
নীলমাধব রূপে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করতো। ব্রহ্ম পুরাণ
ও বৃহৎ নারদীয় পুরান মতে শবর-গণ নীলমাধব রূপী
নারায়নের পূজা করতেন ঠিকই কিন্তু তাঁর পূর্বে
স্বর্গের দেবতাগণ গুপ্ত রূপে নীলমাধবের পূজা
করতেন। পরে শবর গণ সেই খোঁজ পান।
জগন্নাথ দেবের সৃষ্টি সম্বন্ধে ওড়িয়া মহাভারতে
এক অদ্ভুত আখ্যান আছে। লীলা সংবরণের আগে
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৈকুণ্ঠে গমনের চিন্তা করতে
লাগলেন। যদু বংশ গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হয়েছে। বলরাম
ভ্রাতা যোগবলে দেহ রেখেছেন। তিনি এই ভেবে
বনে গিয়ে একটি বৃক্ষে আরোহণ করে মহাভারতের
কথা চিন্তা করতে লাগলেন। সেসময় তাঁর চরণ কে
পক্ষী ভেবে জরা নামক এক ব্যাধ শর বিদ্ধ করলেন।
বলা হয় এই ব্যাধ পূর্ব জন্মে বালী পুত্র অঙ্গদ
ছিলেন। ভগবান রাম বালীকে বধ করে অঙ্গদ কে বর
দিয়েছিলেন, পর জন্মে শ্রীকৃষ্ণ রূপে তিনি অঙ্গদের
শরে দেহ রাখবেন। পরে শ্রীকৃষ্ণ দেহ রাখলে তাঁর
দেহকে দ্বারকায় সমুদ্র তটে চন্দন কাষ্ঠে, খাঁটি গো
ঘৃতে দাহ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ৬ দিন হলেও
ভগবানের শরীর একটুকুও পুড়লো না।
তখন দৈববাণী হোল --- “ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই নশ্বর
দেহ আগুনে দাহ করা যাবে না। এই পবিত্র দেহ
সমুদ্রে বিসর্জন দাও।” ঠিক সেই মতো সমুদ্রে
বিসর্জিত করা হলে সেই দেহ কাষ্ঠে রূপান্তরিত
হয়ে ভাসতে ভাসতে এলো। সেই কাষ্ঠ
রোহিনীকুণ্ডে পাওয়া যায়। সেই কাষ্ঠ দিয়েই
জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ তৈরী হোলো।
ওড়িশা ভারতের এক প্রাচীন রাজ্য। এখানকার
সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনেক পুরানো। জগন্নাথ যেমন
বৈষ্ণবদের নিকট বিষ্ণু তেমনি শাক্ত ও শৈবদের
নিকট ভৈরব শিব। যে যেমন ভাবে দেখতে চায় ---
জগন্নাথ তাঁর কাছে সেরূপেই প্রকাশিত হন। হরিহর
অভেদ তত্ত্ব এই শ্রীক্ষেত্রে দেখা যায় । ওড়িশার
নানা অঞ্চল জুড়ে বহু প্রাচীন মন্দির আছে। এগুলোর
সবকটি সম্বন্ধে লেখা অসম্ভব। কি শিব মন্দির, কি
শক্তিপীঠ, কি গোপাল মন্দির এমনকি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের নিদর্শন ওড়িশা রাজ্য জুড়ে দেখা যায়।
জয় জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথ গামী ............
জগন্নাথ ক্ষেত্র বা ওড়িশা বা ঔড্র দেশ বা
নীলাচল ধাম অপূর্ব সুন্দর ক্ষেত্র .....
জয় জগন্নাথ।।