Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, June 29, 2017

অষ্টসিদ্ধি কি? অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ কি? - What is octahedy? What is the nature of octahedy?

অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ বর্ণনা...........
অষ্টসিদ্ধি হলো এমন এক শক্তি যা যোগীরা
কঠোর তপস্যার পরে অর্জন করতে সক্ষম হয়।
এই অষ্টসিদ্ধি অর্জনে প্রথমে সদগুরুর আশ্রিত
হতে হয় এবং নিজেকে শুদ্ধ, সূচী, একনিষ্ঠ,
তপপ্রকোর ও অনাহারী হিসেবে তৈরী করতে
হয়। যে যেই গুরুর আশ্রিত হয় তদ্বপর সেই শিষ্য
একটি শুভদিনে দীক্ষা গ্রহন করে নিজের স্থান
গুরুর কাছে পাকাপোক্ত বা শক্ত করে গুরুকে এই
বিশ্বাস দেখাতে হবে যে, হ্যা আমি পারবো আর
আমিই উক্ত তপের জন্য পারদর্শী। যখন পরমাধ্য
গুরুদেব বুঝতে পারবেন যে, তাঁর শিষ্য তপস্যার
জন্য প্রস্তুত; তখনই তিনি যোগাসন পদ্ধতি ও ধ্যান
প্রণালীর প্রস্তুতি সম্বন্ধে শিষ্যকে অভ্যাস শুরু
করাবে। তখন অভ্যাস যখন নীতি ও ভক্তিতে
রুপান্তর হয় তখন যোগী একটি নীরব স্থান সন্ধান
করে নিজের কার্যসিদ্ধি পূরণের লক্ষ্যে। অতঃপর
যোগী নিজের যোগ অভ্যাস শুরু করে, এই
যোগ তপস্যা অনেকের কাছে পাঁচবছর,
অনেকের কাছে সাতবছর, অনেকের কাছে
দশবছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। তপস্যা ধ্যান
পূর্ণ হয় যোগীর দৃঢ়তা, একনিষ্ঠতা, ধ্যানস্থ
সমাধীর তেজোদীপ্তের উপর নির্ভর করে।
যখন যোগী অষ্টসিদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়
তখন তিনি মহাযোগীর স্থান অর্জন করে। তখন ঐ
মহাযোগী নিজের চাহিদা অনুসারে নিজের
তপোবল বাড়াতে চাইলেও পারে এবং নিজেকে
সৃষ্টির মহা এক উচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
সৃষ্টির এই চৌদ্দ ভুবনের যেকোনো লোকে
তিনি নিজেকে স্থায়ী বাসিন্দা করতে সক্ষম হয়।
卐ঋগবেদ মতে আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি ভুবন

১। সত্যলোক
২। তপোলোক
৩। জনলোক
৪। মহর্লোক
৫। সপ্তর্ষিলোক
৬। ধ্রুববোক
৭। স্বর্গলোক
০। ভূলোক(পৃথিবী)
৮। অতল
৯। বিতল
১০। সুতল
১১। তলাতল
১২। মহাতল
১৩। রসাতল
১৪। পাতাল
এখন মূল আলাপ হচ্ছে ধ্যানের প্রথম স্তর যাকে
অষ্টসিদ্ধি বলা হয়, সেই অষ্টসিদ্ধি কত প্রকার ও কি
কি?
অষ্টসিদ্ধি আট প্রকার যেমনঃ-
১) অণিমা
২) লঘিমা
৩) গরিমা
৪) প্রাপ্তি
৫) প্রাকাম্য
৬) মহিমা বা কামাবসায়িতা
৭) ঈশিত্ব বা ঈশিতা
৮) বশিত্ব বা বশিতা
এই আট প্রকার অষ্টসিদ্ধির প্রকাশ গুলো হলোঃ-
১)অনিমা:- তারা ইচ্ছা করলে অনুর মত ক্ষুদ্র আকার
ধারন করতে পারেন অথবা নিজেকে শূণ্য রুপে
পরিণত করতে পারেন। এরকম সিদ্ধি অর্জনকে
বলে অনিমা।
২)লঘিমা:- ইচ্ছামতো হালকা জলের উপর হেঁটে
যেতে বা শূন্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এরকম
সিদ্ধি অর্জনকে বলে লঘিমা।
৩)গরিমা:- অত্যন্ত ভারী হতে পারেন, লঘুকরণ ধারণ
করা মুহুর্তের ব্যাপার মাত্র। এই সিদ্ধি অর্জনকে
বলে গরিমা।
৪)প্রাপ্তি:- যে কোনও স্থান থেকে যা ইচ্ছা! তাই
প্ৰাপ্ত হতে পারেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
জ্ঞান নিজের মুষ্টিবদ্ধ করা শক্তি অর্জন। এরকম
সিদ্ধি অর্জনকে বলে প্ৰাপ্তি।
৫)প্রাকাম্য:- কোনও বাসনা চরিতাৰ্থ করতে এবং
কখনও নিরাশ না হওয়ার জন্য যে সিদ্ধি অর্জন তাঁকে
বলে প্রাকাম্য।
৬)মহিমা বা কামাবসায়িতা:- ইচ্ছামতো বা খামখেয়ালী
ভাবে যে কোনও জড়রুপ ধারণ করতে পারেন।
নিজের ঐশ্বর্য শক্তি ও তেজ শক্তির প্রভাবকে
ক্ষমতাবদ্ধ করা, এই ধরনের সিদ্ধি অর্জনকে বলে
মহিমা বা কামাবসায়িতা।
৭)ঈশিতা:- কোনও স্থানে কিছু অদ্ভুত জিনিষ সৃষ্টি
করতে পারেন বা ইচ্ছানুসারে কোন জিনিস ধ্বংসও
করতে পারেন। সৃষ্টির নবকিছু আর্বিভাব ও ধ্বংস যাঁর
ক্ষমতার আওতায়, এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে
ঈশিতা।
৮)বশিতা:- জড় উপাদান গুলোকে কেবল ইচ্ছা
অনুসারে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পারেন। সৃষ্টির প্রতিটি
জীবকে নিজের বশীভূত করা যাঁর একটি দৃষ্টি
প্রক্ষেপ মাত্র, এরকম সিদ্ধি অর্জনকে বলে
বশিতা।
আমাদের চৌদ্দ ভুবনের ব্রহ্মলোক ও তপলোক
গ্রহের বাদিন্দারা সকলেই অষ্টসিদ্ধি লাভ
করেছেন। কেননা উচ্চতর গ্রহের অধিবাসীরা
স্বাভাবিক ভাবেই এ সমস্ত সিদ্ধির অধিকারী। এজন্য
তাদের কোনও অনুশীলন বা কোনরকম অলৌকিক
পদ্ধতি শিখতে হয় না। তারা ইচ্ছা করলে এক গ্রহ
থেকে অন্য গ্ৰহে কোনরকম আকাশযান ছাড়াই
নিমেষের মধ্যে ভ্ৰমণ করতে পারেন। কিন্তু তারা
এই অষ্টসিদ্ধিকে ভুল ব্যবহার করেন না। মূলত এই
সিদ্ধি অর্জন করে একজন যোগী তা ধর্ম ও মানব
কল্যাণে ব্যয় করে। এতে ঐ যোগীর
অষ্টসিদ্ধি শক্তি আরো প্রকটতর হয় এবং ঐ
যোগীর পূর্ণগুণ সাধনা তীব্র আঁকার ধারণ করে।
তখন একজন যোগী অষ্টসিদ্ধির পরবর্তী
স্তরে নিজেকে রুপান্তর করে, তথা কথিত; শাস্ত্র
মতে সেই স্তরকে মহর্ষি বলা হয়। কিন্তু হাতের
পাঁচটি আঙ্গুল যেমন সমান নয়, ঠিক তেমনই পৃথিবীর
সকল মানুষ, ভক্ত, সেবক, জ্ঞানী ও যোগী
একরকম নয়। তাই কিছু অসাধু যোগী আছে যাঁরা, এই
পৃথিবীতে দৈবক্ৰমে এই সিদ্ধিগুলির মাত্ৰ একটিও
কিংবা একটু বা আধটুকুও যদি কেউ লাভ করতে পারে।
সে যোগী নিজের কিছু অবাস্তব বা অলৌকিক
কৃতকার্য প্রদর্শনী করে মানুষকে আকৃষ্ট করার
জন্য। যাতে করে ঐ যোগী ভবিষ্যতে ভালো
আয় করতে পারে এবং আমরণকাল পরের মাথায় লবণ
রেখে ফল খাইতে পারে। আর আমাদের মূর্খ
সমাজ ও সনাতনী জাতি তখন সেই ব্যক্তিকে ভগবান
বলেই মনে করে। যেহেতু পৃথিবীর
অধিবাসীদের কাছে এই সিদ্ধিগুলি স্বাভাবিক নয় । তাই
কেউ সিদ্ধি প্ৰদৰ্শন করলেই অত্যন্ত মহান
ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলে, লোকে তাকে মনে
করে থাকে। তখনই শুরু হয় অন্যায় ও অধর্ম। জন্ম
নেয় পাপ ও হিংসার। তাই প্রিয় ভক্তগণ, একটি কথা
চিরকাল স্মরণ রাখবেন; যে প্রকৃত ঋষি, যোগী বা
সন্ন্যাসী সে কোনদিন নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন
করে না এবং কোনও ভক্তদের থেকে কোনও
প্রকার অর্থদাবী করে না। যদি কেউ প্রকৃত ঋষি,
যোগী, সন্ন্যাসী বা ব্রহ্মচারী হয়, সে বিনা
লোভে বিনা স্বার্থে আপনার উপকার বা
সহযোগিতায় নিজেকে উজাড় করে দিবে। তখন
মনে করবেন যে, সে আপনার পরম শ্রদ্ধাবনত
ব্যক্তি।
হরে কৃষ্ণ।।

No comments:

Post a Comment