Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, April 15, 2017

☼☼☼"কৃষ্ণ"☼☼☼

কৃষিভূর্ব্বাচকঃ শব্দোনশ্চনিবৃতি
বাচকঃ ।
তয়োরৈক্যং পরব্রক্ষ কৃষ্ণিত্যভিধীয়তে ।।
অর্থাৎ কৃষ ধাতুর অর্থ হওয়া ও ণ শব্দের অর্থ পরমানন্দ। সুতরাং কৃষ্ণ শব্দের অর্থ পরমানন্দ স্বরুপ পরমেশ্বর। যশোদা তনয় কৃষ্ণের অনেক পূর্ব্বেও কৃষ্ণ নাম বিদ্যমান ছিল। সত্যযুগে প্রহলাদ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে কেঁদে ছিল। তাহার পিতা হিরণ্যকশিপু কৃষ্ণ কোথায় আছে বলে জিজ্ঞাসা করলে, প্রহলাদ উত্তরে বলেছিল যে তিনি সকল স্থানেই আছেন; সুতরাং কৃষ্ণ সর্ব্বব্যাপী ব্রক্ষ বলে নন্দনন্দনের জন্মপূর্ব্বেও অবধারিত ছিলেন । এখনও লোকে যেমন পরমেশ্বরের নামে স্বপুত্র প্রভৃতির নাম নারায়ণ আদি রাখেন; কৃষ্ণের নাম-করণ-সময়েও সেরূপ ঈশ্বরের নামে তাদের নাম রাখা হয়েছিল, তবে একমাত্র বিশেষ যে তাঁহাকে ঈশ্বরের অবতার জেনেই গর্গমুনি তাঁহাকে ঐ নাম দিয়েছিল। বিশেষতঃ ব্রক্ষবৈবর্ত্ত পুরাণ আদিতে স্পষ্ট বর্ণনাই আছে যে, রাধাকৃষ্ণ প্রথমে নিত্যধাম গোলোকে বিরাজিত ছিলেন, পরে শ্রীদামের শাপে মনুষ্য যোনীতে জন্মগ্রহণ করে গোকুল ধামে আবির্ভুত হয়েছিলেন। শূন্যের নাম অন্তদেব ও বলরাম; এক্ষন প্রদর্শিত হয়েছে যে, শূন্যই কৃষ্ণের পীতাম্বর স্বরুপ; যথা বাংলায় অনুবাদিত চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটকে "আমার বিচ্ছেদ ভাই নাহি ক্ষণমাত্র। পীতাম্বর রূপে মোর বেড়ি রহে গাত্র।" বাস্তবিক বিশ্বরূপ ঈশ্বরবিগ্রহ শূন্যরূপ বসন দ্বারাই আবৃত। মুরলীধ্বনির অর্থ বেদগান, যথা- পূর্ব্বোক্ত চৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটকে "শব্দরূপে কৃষ্ণমুখে মুরলীতে গান।" গোপী শব্দের অর্থ প্রকৃতি, সুতরাং রাধা প্রভৃতিকে গোপী বলা হয়েছে।

ভাগবত ৭/৫/৩২

ভাগবত ১১/৫/৩২

অশ্লীল কথা বলা ও শোন বা অশ্লীল দৃশ্য দেখা উচিত নয় সকলে জানি কিন্তু সনাতন ধর্ম এসম্পর্কে কি ধরনের কথা বলেছে ?

অথর্ববেদের শান্তিপাঠে এসম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে-
হে দেবগণ, আমরা যেন আমাদের কর্ণের দ্বারা কল্যাণ বচন শ্রবণ করি। হে পূজনীয় দেবগণ, আমরা যেন আমাদের চক্ষু দ্বারা সুন্দর বস্তু দর্শন করি। দৃঢ় অঙ্গপ্রতঙ্গ যুক্ত হইয়া আমরা যেন তোমাদের স্তবগান পূর্বক দেবকর্মে নিয়োজিত আয়ুষ্কাল প্রাপ্ত হই।।

বেদে বৈষ্ণবনিন্দা মহাপাপ!

সূচনাঃ
শুক্লযর্জবেদ ০৫/২১
বিষ্ণো ররাটমসি বিষ্ণোঃ শ্মপ্তে স্হো বিষ্ণোঃ স্যূরসি বিষ্ণোর্ধ্রুবোহসি। বৈষ্ণবমসি বিষ্ণবে ত্বা।
অনুবাদঃ হে ভক্তিদেবী (শুদ্ধসত্ত্বও বলা হয়) তুমি বিষ্ণুর ললাট স্থানীয়। হে জ্ঞান ও ভক্তি তোমারা বিষ্ণুর সাথে আমার ভগবতকর্মের সংযোজক(connector) হও।
এখানে স্পষ্টতই বলছে বৈষ্ণবরা ভগবানের ললাট (কপাল) হতে জাত।
শুক্লযর্জুবেদ ৩১/১১ঃ
ব্রাহ্মণোহস্য মুখমাসীদ্বাহু রাজন্যঃ কৃতঃ।উরু তদস্য যদ্ বৈশ্যঃ পদ্ভ্যাং শূদ্রো অজায়ত।
অনুবাদঃ বিষ্ণুর মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় হাত থেকে, বৈশ্য উরু থেকে এবং শূদ্র পা থেকে জাত হন।
অর্থ্যাৎ যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত তারা হন 'ব্রাহ্মণ। যারা প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ-বিগ্রহ পছন্দ করেন, তারা হন ক্ষত্রিয়। যারা অর্থনীতি ও পশুপালনাদি করেন তারা হন বৈশ্য এবং যারা নিয়োজিত আছেন অন্যান্য সেবামূলক কাজ-কর্মে যুক্ত, তারা হন শূদ্র।
*********************************
তাৎপর্যঃ বৈষ্ণবের নিন্দা করিবেক যার গণ। তার রক্ষা সামর্থ্য নাহিক কোনজন।।
শূলপাণি সম যদি বৈষ্ণবেরে নিন্দে। তথাপি নাশ যায় কহে শাস্ত্রবৃন্দে।।
ইহা না মানিয়া যে সুজন নিন্দা করে। জন্মে জন্মে সে পাপিষ্ঠ দৈবদোষে মরে।
(শ্রী চৈতন্যভাগবত মধ্য -২২)
তাই বেদ বলছে বৈষ্ণবরা ভগবানের ললাটস্বরুপ তাই বৈষ্ণব নিন্দা করলে সমস্ত পূণ্য নষ্ট হবে, বৈষ্ণবভক্ত তাকে ক্ষমা না করলে ভগবানও তাকে রক্ষা করবেন না, সেই নিন্দুক বারবার জন্ম মৃত্যু চক্রে আর্বতিত হবেন, এমনকি জড়জগতেও সুখ লাভ করতে পারবেন না। তাই স্কন্দ পুরানও বলছে-
অশ্বত্থ তুলসী ধাত্রী গো ভূমি সুরবৈষ্ণবাঃ
পূজিতাঃ প্রণতাঃ ধ্যাতাঃ ক্ষপয়ন্তি নৃণামঘম।।
অনুবাদঃ অশ্বত্থ,তুলসী,ম
াতা,গাভী,সাধু বৈষ্ণব কে পূজা,প্রনাম,শ্রদ্ধা, প্রশংসা করলে সাধারন মানুষের সর্ব প্রকার পাপ বিনষ্ট হয়।
*******************************
উপসংহারঃ যেহেতু আমরা গর্ভধারিণী মাকে ও নিত্যপূজ্য তুলসীদেবীকে পূজা করি, শ্রদ্ধা করি, সেবা করি, তাকে প্রণাম আদি করি।।
গর্ভধারীণি মাতাকে ও তুলসীদেবীকে নিন্দা করলে সবাই তাদের কলঙ্কিত, পাপিষ্ঠ বলে।
সে হিসেবে সাধু বৈষ্ণবরাদের সমানহারে পূজা, শ্রদ্ধা,সেবা, প্রণাম করার যোগ্য,তাদের অবশ্যই পূজা, শ্রদ্ধা,সেবা,প্রণাম করতে হবে।আর তাঁদের নিন্দা করলে তাহলে সে মহাপাপী হবে কারন সেটা হবে নিজ মাতা, গোমাতা, তুলসী মাতার নিন্দার সমান কথা!!চিন্তা করুন, সচেতন হন,মহাপাপ থেকে উদ্ধার হন।।
লিখেছেন- সজীব তালুকদার

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৩/১৪-১৫

অন্নাদ্ভবন্তি ভূতানি পর্জ্জন্যাদন্নসম্ভবঃ ।
যজ্ঞাদ্ভবতি পর্জ্জন্যো যজ্ঞঃ কর্ম্মসমুদ্ভবঃ ॥
কর্ম্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মোক্ষরসমুদ্ভবম্ ।
তস্মাৎ সর্ব্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্ ॥(গীতা ৩/১৪-১৫)॥
অনুবাদঃ সমস্ত প্রাণী অন্ন থেকে উৎপন্ন হয়, অন্ন উৎপন্ন হয় মেঘ(জল) থেকে, মেঘ জন্মায় যজ্ঞ থেকে, যজ্ঞ নিষ্পন্ন হয় কর্ম থেকে। বেদ থেকে কর্ম উৎপন্ন হয় এবং বেদ পরব্রহ্ম থেকে প্রকটিত বলে জানবে। সেইহেতু এই সর্বব্যাপী পরমাত্মা যজ্ঞে(কর্তব্যকর্মে) নিত্য প্রতিষ্ঠিত।। ১৪-১৫

পবিত্র বেদবাক্য

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২/২০

শ্রীশ্রীকামদা একাদশীর মাহাত্ন্য

চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কামদা একাদশী। বরাহপুরানে এই একাদশী ব্রত মাহাত্ন্য বর্ণিত হয়েছে।
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসিলেন- হে বাসুদেব! আপনি কৃপা করে আমায় কামদা একাদশীর মাহাত্ন্য কি বলুন ?
উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন- হে মহারাজ এই একাদশী ব্রত সম্পর্কে এক বিচিত্র কাহিনি বর্ণনা করছি। আপনি তাহা এক মনে শ্রবণ করুন। বহু কাল পূর্বে মহর্ষি বশিষ্ঠ মহারাজ দিলিপ কুমারের কৌতূহল নিবারনের জন্য এই ব্রতকথা কীর্তন হয়েছিলেন। যেমন কৌতূহল আপনার মধ্যে, তদ্রুপ ঐ দিলিপ কুমারের ছিল।
ঋষি বশিষ্ঠ বললেন- হে মহারাজ! কামদা একাদশী তিথি পাপনাশক ও পুণ্যদায়িনী। পূর্ব কালে মনোরম নাগপুরে স্বর্ণনির্মিত গৃহে বিষধর নাগেরা বসবাস করত। তাহাদের রাজার নাম ছিল পুণ্ডরীক। গন্ধর্ব, কিন্নর ও অস্পরাদের দ্বারা তিনি সেবিত ছিলেন। সেই পুরিমধ্যে অস্পরা শ্রেষ্ঠ ললিতা ও ললিত নামে গন্ধর্ব স্বামী – স্ত্রী রূপে ঐশ্বর্য্যপূর্ণ এক গৃহে পরম সুখে দিন যাপন করত। একদিন রাজার রাজসভায় ললিত একা একা জ্ঞান করছিলেন, এমন সময় ললিতার কথা তাহার মনে পড়ে যায়। সঙ্গীতে তাহার স্বর-লয়-তাল-মানে বিপর্যয় ঘটল। কর্কট নামে এক নাগ ললিতের মনের কথা বুঝতে পারল। গানের ছন্দভঙ্গের ব্যাপারটি সে পুণ্ডরীক রাজার কাছে জানাল। তা শুনে সর্পরাজ ক্রোধভরে কামাতুর ললিতকে – রে দুর্মতী! তুমি রাক্ষস হও বলে অভিশাপ দান করল। সঙ্গে সঙ্গে সেই ললিত ভয়ঙ্কর এক রাক্ষসমূর্তি ধারন করল। তাহার হাত দশ যোজন বিস্তৃত , মুখ পর্বত গুহাতুল্য, চোখ দুতি প্রজ্বলিত আগুনের মতো, উর্ধেব আঁট যোজন বিস্তৃত প্রকাণ্ড এক শরীর লাভ করল। তাহার এই ভয়ঙ্কর রাক্ষস শরীর দেখে তাহার স্ত্রী ললিতা মহাদুক্ষে চিন্তায় ব্যাকুল হলেন। স্বেচ্ছাচারী রাক্ষস ললিত দুর্গম বনে ভ্রমন করতে লাগল। ললিতা তাহার স্বামির সঙ্গ ত্যাগ করলনা। ললিত নির্দয়ভাবে মানুষ ভক্ষন করতে লাগল। এই পাপের ফলে তার মনে বিন্দু মাত্র শান্তি ছিল না। স্বামীর এই দুরাবস্থা দেখে ব্যথিত চিত্তে রোদন করতে করতে গভীর বনে প্রবেশ করল।
একদিন ললিতা বিন্ধ্যপর্বতে উপস্থিত হলেন। সেখানে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির আশ্রম দর্শন করে মুনির নিকট উপস্থিত হলেন। তার চরনে প্রনাম করে সেখানে দাঁড়িয়ে রহিলেন। মুনিবর তাঁহয় জিজ্ঞাসিলেন- হে সুন্দরী! তুমি কে, কাহার কন্যা, কি কারনেইবা এই গভীর বনে এসেছ? আমায় সকলি সত্য করে বল। তদুউত্তরে ললিতা বলিলেন- হে প্রভু! আমি বিরধন্যা গন্ধর্বের কন্যা। আমার নাম ললিতা। আমার পতির পিশাচত্ব দূর হয় এমন কোন উপায় জানবার জন্য এখানে এসেছি। কৃপা করে আমায় সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাবার কোন উপায় বলোন।
ঋষি বলিলেন- চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে যেই একাদশী ব্রত পালন করা হয় তাহার নাম কামদা একাদশী। যদি তুমি সেই ব্রত যথাবিধি পালন কর, এই ব্রতের পূর্ণফল তোমার স্বামীকে অর্পণ কর এবং তৎক্ষণাৎ তাহার পাপ বিনষ্ট হবে। মুনির কথা শুনে ললিতা আনন্দের সহকারে কমদা একাদশী পালন করল। ব্রম্মন ও বাসুদেবের সামনে পতির উদ্ধারের জন্য-আমি যে কামদা একাদশীর ব্রত পালন করছি, তাহার সমস্ত ফল আমার পতির উদ্দেশ্যে অর্পণ করলাম। এই পূর্ণের প্রভাবে তাহার পিশাচত্ব দূর হোক। এই কথা উচ্চারন মাত্রই ললিত তাহার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য দেহ প্রাপ্ত হলে পুনরায় ললিতার নিকট ফিরে আসলেন। তাহারা বিমানে করে গন্ধর্বলোক গমন করলেন।

হিন্দু ধর্ম কি গ্রহণ করা যায়? গ্রহণ করা গেলে গ্রহণের পদ্ধতি কি?

পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন ধর্ম সনাতন ধর্ম। সকল ধর্ম, মত, পথ ও উপাসনা পদ্ধতি এসব কিছুরই উৎসমুখ হচ্ছে এই হিন্দুধর্ম।
যেহেতু একসময় পুরো পৃথিবীতে হিন্দুধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মই ছিল না তাই সেসময়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত করার প্রথাও ছিল না, কেননা সেসময় ভিন্ন ধর্ম বলতে কিছু ছিল না।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে শুধু ভিন্ন ধর্মের উদ্ভবই ঘটেনি এমনকি হিন্দুধর্মকে সংহার করতে বহু ধর্মেরই উদ্ভব ঘটেছে আর এদের দ্বারা হিন্দুরা বিপথে চালিতও কম হয়নি।
মহামানবরা যেমন সমাজ সংস্কারের জন্য কাজ করেন তেমনি সময়ের প্রয়োজনে কিছু পদ্ধতিও সম্প্রদায় ও সমাজের জন্য নির্দেশ করেন। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীর দিকে তেমনি একজন ঋষির আবির্ভাব ঘটে।
যদিও ১২০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আনুষ্ঠানিক ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক বিস্তার শুরু হয় কিন্তু মূল কাজটি শুরু হয়েছিল বেশ পূর্বে। আর ভিন্ন ধর্মে চলে যাওয়া হিন্দুদের নিজ ধর্মে ফিরিয়ে আনতে এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষকে হিন্দুধর্ম গ্রহণের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেন এই মহান ঋষি দেবল। তাঁর রচিত 'দেবল স্মৃতি'তে হিন্দুধর্ম গ্রহণের পূর্ণাঙ্গ বিধান দেয়া আছে।
ভারতীয় আর্য সমাজ, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, স্বামী নারায়ণ সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে কনভার্ট হওয়া হিন্দুদের নিজ ধর্মে ফিরিয়ে আনা ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর হিন্দুধর্ম গ্রহণের 'শুদ্ধি যজ্ঞ' নামক আনুষ্ঠানিকতাটি মূলত এই দেবল স্মৃতির অনুসরণ। চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীর দিকে ঋষি দেবলের ডাকে সমসাময়িক ভারতে ঋষিদের নিয়ে সিন্ধু তীরবর্তী (বর্তমান পাকিস্তান অংশে) এক সম্মেলন হয়।
এই সম্মেলনে ঋষি দেবল ও অন্যান্য ঋষিগণ হিন্দুদের রক্ষা ও হিন্দুধর্ম প্রসারের লক্ষ্যে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই সিদ্ধান্তের ফলাফল হচ্ছে 'দেবল স্মৃতি' নামক গ্রন্থ। ভারতের দেরাদুন আর্য সমাজের গ্রন্থাগারে আজও 'দেবল স্মৃতি' সংরক্ষিত আছে।
এই গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ যত শীঘ্র হবে ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। এছাড়াও বেদের সেই বিখ্যাত মন্ত্রও আমাদের নির্দেশ করে যে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করা যায়- 'হে মনুষ্যগণ তোমরা ঈশ্বরের মহিমাকে বৃদ্ধি কর, সমগ্র বিশ্বকে আর্যধর্মে দীক্ষিত কর' । ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/৫ বাংলাদেশের সকল উকিলই এই তত্ত্ব দিয়ে থাকেন যে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করা যায় না।
আর সেকারণে অনেকে প্রেম বা ধর্মবোধ যেকারণেই হোক হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে গ্রহণ করার পথ খুঁজে পায় না। এই মিথ্যা আইনের চর্চা এক অর্থে প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতার চর্চা।
সূত্র: Hindu-Muslim Relations in British India: A Study of Controversy, Conflict ... Leiden Netherlands; BY: Gene R. Thursby

হরে কৃষ্ণ

বেদকথা

বেদ যেমন কর্ম পদ্ধতি জ্ঞাপক,তেমনি বেদ জ্ঞানের পরিপোষক।একাগ্রচিত্তে কেউ যদি বেদের মন্ত্রে প্রবেশ করে তবে তার মন কর্ম-জ্ঞান-ভক্তি এই ত্রিতত্ত্বের সাধনায় অনুপ্রাণিত হবে।
বেদ পড়তে শুরু করলে বেদের প্রথম অংশ কিছুটা দুর্বোধ্য মনে হবে। কিন্তু যতই এগিয়ে যাওয়া যায়,ততই সহজ হয়ে বেদ ধরা দিবে।বিষয়টা অনেকটা যষ্ঠি মধু চিবানোর মত ব্যাপার। যষ্ঠি মধু মুখে নিয়ে চিবানো শুরু করলে প্রথমে তিতা লাগে,কিন্তু চিবানো বন্ধ না করে চিবাতে থাকলে ক্রমশ তা মিঠাই লাগবে।
এজন্যই সব কাজের আগে শুরু করতে হয় আচমন মন্ত্র-"তদ্বিষ্ণো: পরমং পদং"।
অর্থাৎ হে ভগবান,আমার জ্ঞান পথের বাধা অপসারন করিয়া দাও,আমি যেন অবাধে সত্য দর্শনে সমর্থ হই।

সনাতন হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান কোথায় ?

হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান অনেক উঁচু ।চণ্ডীতে স্তব মন্ত্রে বলা হয়েছে
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” ।
আর সন্তান এর কাছে মায়ের স্থান কোথায় হবে সে বিষয়ে হিন্দু শাস্ত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে । সে বিষয়ে জানতে আমরা মনু সংহিতা্র একটি শ্লোক দেখব-
উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচার্য্যণাং শতং পিতা ।
সহস্রন্ত্ত পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে ।। মনুসংহিতা, ২/১৪৫
অনুবাদঃ
দশজন উপাধ্যায় থেকে একজন আচার্যের গৌরব বেশি । একশত আচার্যের থেকে পিতার গৌরব বেশি এবং সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হা ।
পিতা মাতার ঋণ সন্তান শত সহস্র জন্মেও শোধ করতে পারে না ।
যংমাতাপিতরৌ ক্লেশং সহতে সম্ভবে নৃণাম্ ।
ন তস্য নিষ্কৃতিঃ শক্যা কর্তুং বর্ষশতৈরপি ।। মনুসংহিতা, ২/২২৭
অনুবাদঃ
সন্তান জননে পিতামাতা যে ক্লেশ সহ্য করেন পুত্র শত শত বৎসরে, শত শত জন্মেও সেই ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ নয় । এ ছাড়া শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে মাতৃভক্তি দ্বারা এই ভূলোক জয় করা সম্ভব ।
ইমং লোকং মাতৃভক্ত্যা … মনুসংহিতা, ২/২৩৩
অনুবাদ :
মানুষ মাতৃভক্তি দ্বারা এই ভূলোক জয় করতে পারে ।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্র বলেছিলেন-
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী।
এই সকল শাস্ত্র বাক্য দ্বারা আমরা সহজেই বুঝতে পারলাম সনাতন ধর্মে মায়ের স্থান কোথায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য নিজের জন্মদাত্রী মাকে যথাযথ সন্মান প্রর্শন করা।।

শ্রীচৈতন্য বন্ধনা

রামায়নের শিক্ষা

আমরা কম বেশি রামায়ন সম্পর্কে জানি কিন্তু এর থেকে কি শিক্ষা পাচ্ছি তা আমরা অনেকেই জানি না । নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল –
১) কিভাবে অসৎ সঙ্গ আমাদের ক্ষতি/প্রভাবিত করেঃ – কৈকেয়ী ভগবান রামকে স্নেহ করত কিন্তু মন্থরার সঙ্গ প্রভাবে সে অসৎ হয়ে গেল । তাই আমাদের অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে আর বেশি করে সাধু সঙ্গ করতে হবে ।
২) আমাদের হৃদয়ে অসৎ প্রবৃত্তিগুলো দমন করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিতঃ – ভগবান রামচন্দ্র বনে গিয়ে সমস্ত অসুরদের বধ করে তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছিল । আমাদের হৃদয়ে সুর আর অসুর দুটোই আছে, তাই ভগবান রামের কাছে প্রার্থনা করতে হবে যে, ভগবান রাম যেন আমার হৃদয়ের অসুরকে বধ করে । তাই ভগবানের আরেক নাম অরিসূদন অর্থাৎ যিনি আমাদের হৃদয়ের অসুরদের বধ করে ।
৩) কখনো কখনো ভাল মানুষেরা অন্যদের যন্ত্রনা দেয় কিন্তু তিনি কাউকে কষ্ট দেন না, তিনি তাকে ভাল বা সাহায্য করার জন্যে তাকে যন্ত্রনা দেয়ঃ – ভরত তার মাতা কৈকেয়ীকে ত্যাগ করেছিল, প্রহ্লাদ মহারাজ তার বাবা হিরণ্যকশিপুকে উপেক্ষা করেছিল । একজন ডাক্তার রোগীর শুশ্রুষা (অপারেশন) করার সময় রোগীর যন্ত্রনার কারন হয় কিন্তু তা রোগীর ভালর জন্যেই করে ।
৪) ধূর্ততাঃ – রাবন ছলচাতুরি করে সীতাদেবীকে পেতে চেয়েছিলেন পরিনামে সর্বশেষে তাঁকে কুকর্মের জন্যে ফলভোগ করতে হয়েছিল । লোভ এবং কাম আমাদেরকে শুধুমাত্র দম্ভ ও দ্বেষের পথে ধাবিত করে ।
৫) সর্বদা ন্যায়ের পথে থাকবেনঃ – জটায়ু সীতাদেবীকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের প্রাণ হারিয়েছিলেন কিন্তু তার জীবনের উদ্দেশ্য ন্যায়ের পথে থাকা এবং অশুভের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ।
৬) ধৈর্য্য এবং দৃঢ়চরিত্রঃ - শবরীর গুরুদেব শবরীকে বললেন, ভগবান রামচন্দ্রের জন্য প্রতীক্ষা করতে । সে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে ভগবান রামচন্দ্রের জন্য স্থান পরিষ্কার করে এবং ফুল ও ফলমূল অর্পনের মাধ্যমে তার উদ্দীপনার পরিচয় দিয়েছিল । তাঁর গুরুর বাক্যের প্রতি প্রবল বিশ্বাস ছিল এবং সে ধৈর্যসহকারে দৃঢ়চিত্তে প্রতীক্ষা করেছিলেন ।
৭) ভক্তির পথে বাধাঃ – হনুমান সীতাদেবীকে খুজতে সমুদ্রের উপর লাফ দিয়ে লংকার পৌছানোর আগে তাকে বিভিন্ন রাক্ষস বাধা দিয়েছিল ।
প্রথমে ময়নাক(সুবর্ন পর্বত) – আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্বে আরাম/স্বাচ্ছন্দে পাওয়ার প্রলোভন/লোভ ।
এরপর শিমকা(ছায়াধারী রাক্ষস) - ভক্তির জন্য সংগ্রামের সময় মানুষ আমাদের তাড়না, সমালোচনা এবং ভুল বুঝার চেষ্টা করে ।
এরপর সুরশ(সর্প) – মানুষের উচ্চমাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের প্রগতি রোধ করার চেষ্টা । এটাই মনের ঈর্ষা ।
৮) দাম্ভিকতার ফলে শুভাকাঙ্গীদের চিনতে/বুঝতে পারি নাঃ – এই পৃথিবী আমাদের স্ব-সচেতনতার দর্পন স্বরূপ । রাবন ভাবত যে মন্দোদরী সীতার প্রতি বিদ্বেষী ছিলেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ভগবান রামের বিদ্বেষী ছিলেন । রাবন ভাবতে যে, বিভীষন ছিল তার অনুগত কিন্তু সে ছিল তার ভাই কুবেরের প্রতি অনুগত । যখন আমরা ভাবি যে আমি সব কিছু জানি, তার মানে আমরা কারো সু-পরামর্শ শুনতে ইচ্ছুক না । আধ্যাত্মিক প্রগতি অর্থ দীন্যতা এবং নম্রতা । যদি এতে ঘাটতি থাকে তবে রাবনের মত আমিই ভাল জানি ভেবে কারো পরামর্শ শুনতে পারব না ।
৯) অহংকার বা আসক্তি অজ্ঞতা ও ধ্বংশের পথে ধাবিত করেঃ – ধ্যায়তো বিষয়ান পুংস (গীতা ২/৬২-৬৩), এই শ্লোকের প্রতিটি ক্ষেত্র রাবনকে নিয়ে সাজানো হয়েছে । অজ্ঞতা – কুম্ভকর্ণ, ইন্দ্রজিৎ সহ সকল অদম্য যোদ্ধাদের মৃত্যুবরণের পরেও তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন নি । শেষে রামের হাতে রাবনের করুন মৃত্যু হয়েছে ।
১০) সদাচার – বিভীষন ভগবান রামচন্দ্রের কাছে আশ্রিত হতে এসেছিলেন এবং হনুমান ছাড়া সকল বানররা এর বিপক্ষে ছিল । বিভীষন অসৎ অনুষ্ঠাতাদের বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্যই তাদের দ্বারা ভ্রান্ত এবং তাড়িত হতে চেয়েছিলেন ।
১১) কখনো কখনো আসক্তি ফাঁদ তৈরি করে আমাদের ভোগাতে পারেঃ – মরিচী একটি সুবর্ণ হরিণের বেশ ধরেছিল যাকে পাওয়ার জন্য সীতাদেবীর প্রবল আসক্তি জন্মেছিল এবং এভাবেই তা সীতাদেবীকে ফাঁদে ফেলেছিল । আমাদের উচিত শাস্ত্রের দৃষ্টিতে বাস্তব বস্তুটি দর্শন করা । উদাহরনস্বরূপ – একটি মাকড়সার জালি উড়ন্ত কীটদের কাছে আকর্ষনীয় কিন্তু এটা একটা ফাঁদ ।
১২) গুরু বা জেষ্ঠদের পথ প্রদর্শন আবশ্যকঃ – অগস্ত্যা মুনি ভগবান রামকে একটি স্বর্গীয় ধনুক দিয়েছিল যেটা দিয়ে রাম রাবনের হৃদয় বেধন করে তাকে বধ করেছিল । গুরু বা জেষ্ঠ্যদের যে পথে চলে সেই পথে আমরা চললে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন উন্নত হবে আমরা সর্ব ক্ষেত্রে জয়ী হব । যা আমরা রামের থেকে শিক্ষা পাই ।
১৩) আধ্যাত্মিক জীবনে সতর্কতাঃ – যদি কেউ অমনযোগী বা অলস হয় তবে সে ভক্তি পরীক্ষায় হেরে যাবে । রাবন শিবের ভক্ত ছিল কিন্তু অজ্ঞতার ফলে সে সদাচারের পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছিল । যার ফলে রাবনের মৃত্যু হয় ।
১৪) সততা, আমরা ভগবানকে বোকা বানাতে পারি নাঃ – হনুমান ভগবান রামের সাথে সাক্ষাতের সময় ছদ্মবেশ ধারন করেছিল । ভগবান জানেন আমরা কারা । তাঁর কাছে পৌছানোর জন্য আমাদের সৎ হতে হবে । তাই ভগবান রাম চার মাস হনুমানের সাথে কথা বলেননি ।
১৫) বৈষ্ণব অপরাধঃ – সুগ্রীব লক্ষ্মনের চরনে বৈষ্ণব অপরাধ করেছিল তাই বালি আর সগ্রীবের যুদ্ধে সুগ্রীবকে অনেক মার খেতে হয়েছিল আর হেরে এসেছিল । তখন রামের আদেশে লক্ষ্মন একটা ফুলের মালা এনে সুগ্রীবের গলায় পরিয়ে দেয় আর সুগ্রীব লক্ষ্মনকে প্রণাম করে এর ফলে সুগ্রীবের বৈষ্ণব অপরাধ কেটে যায় এবং ২য় বার বালীর সাথে যুদ্ধে জয় হয় । তাই বৈষ্ণব অপরাধ খুব মারাত্মক, এটা আধ্যাত্মিক পথে বাধাস্বরূপ এবং আমাদের পারমার্থিক উন্নতি হয় না ।
১৬) হৃদয় থেকে ভগবানকে স্বাগত জানানোঃ – দিওয়ালী অনুষ্ঠানের সময় ভগবান রাম আলক নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে গিয়েছেলেন । যখন আমাদের চিত্ত পূর্ণ দীপ্ত থাকে তখনই আমরা আমাদের হৃদয়ে ভগবান রামকে খুঁজে পাব । যখন আমাদের প্রেম জেগে উঠে তখন এই প্রেমে সকল সৃষ্টির জন্য করুনা জেগে উঠে ।
রাধানাথ স্বামী মহারাজের লেকচার থেকে সংক্ষিপ্ত তুলে ধরা হয়েছে।।