Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Wednesday, September 11, 2019

কেমন ভক্তি থাকলে ভগবানের দেখা পাবেন? জেনে নিন সেই রোমাঞ্চিত কৃষ্ণ কাহিনী

আমরা সকলেই জানি ভক্তদের সঙ্গে ভগবানের এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। এর উদাহরণ আমরা পুরাণ কাহিনী সূত্রে জেনেছি যেমন রাধা ও কৃষ্ণ লীলা। আজকে জানবো কি ভাবে ভগবানকে ভক্তি ভরে ডাকলে ভগবানের সাক্ষাত পাওয়া যায়। ভক্ত সুরদাস জন্ম থেকেই অন্ধ। তার দেখা শোনার জন্য কোনো লোক থাকত না। লাঠি হাতে কৃষ্ণ নাম জপ করতে করতে ভ্রমণ করে বেড়ায়। সংসারে একা দরিদ্র ভিক্ষুক। কোনো দিন খাবার জোটে আবার কোনো কোনো দিন জোটে না। কিন্তু তার দারিদ্রতা তার মনের আনন্দকে হরণ করতে পারে নি। কিন্তু তার মনের আত্মা পড়ে থাকে কৃষ্ণ নামে। মুখে দারিদ্র ভাব থাকলেও মনে আছে গম্ভীর আনন্দ এর সুখ। সে ঠিক করে যে করে হোক কৃষ্ণ দেখা পেতেই হবে। সে মনে করে কৃষ্ণ দেখা না পেলে তার জীবন বৃথা।
তাই সে রওনা হয় মথুরা পথে। অন্ধ হওয়া সত্বেও সে কেবল মাত্র লাঠি কে অবলম্বন করে মথুরা পথে গমন করে আর মুখে কৃষ্ণ নাম। রাস্তা তে কোনো বাঁধা বিপত্তি তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সে কৃষ্ণ নাম জপ করতে করতে গভীর অরন্যে প্রবেশ করে। আর রাস্তায় কোনও লোকের দেখা পেলে জিজ্ঞেস করে ভাই মথুরা কতো দূর। কেউ কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেয় আবার কেউ কেউ দেয় না। বন্য পশুর পদধ্বনি শুনলেও জিজ্ঞাস করে মথুরা কত দূর। পথে মাঝে মাঝে কেউ জল দেয়, রুটি দেয়, পথে কেউ কেউ বলে মথুরা তো অনেক দূর তাতেও সে বলে প্রভুর দেখা পেতেই হবে। কঠিন পথ পার হতে গিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে গিয়ে অনেক আঘাত পেয়েছে কিন্তু তাতেও মুখে কৃষ্ণ নাম নিয়ে এগিয়ে চলে।
তার মনে আনন্দের জোয়ার মথুরাতে প্রভু কে দর্শন করবে। সব দুঃখ কষ্ট মুছে যায়। গভীর আনন্দ তাকে এত টাই দুর্বল হয়ে যায় যে চলতে চলতে মানুষহীন এক অরন্যে এসে পৌঁছায়। আর লক্ষহীন ভাবে এক কুঁয়োতে পড়ে যায়। কিন্তু সে আনন্দে গান গেয়ে যায় আর মুখে কৃষ্ণ নাম। কিন্তু কয়েক দিন পর ক্ষুধায় তার জীবন অনাড়ম্বর হয়ে গেছে। হঠাৎ একদিন এক বালক এক ঘটি দুধ নিয়ে বনের মধ্য দিয়ে
যাচ্ছিলো। গো গো শব্দ শুনে আসে। আর একটি লতা দিয়ে তাকে ওপরে তুলে আনে। আর বলে আমার জীবন দাতা তুমি কে, তারপর বালক টি বলে সুর দাস তুমি তিন দিন কিছু খাওনি এই নাও দুধ টুকু খাও।
তারপর দুধ পান করে বালকটির হাত ধরতেই তার সারা শরীর রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে এবং নয়ন ভোরে জল পড়তে শুরু করে। সুর দাস বললো বন্ধু এবার পরিচয় দাও এবার। বালকটি বললো আমি গোয়ালার ছেলে। এই পথে মথুরার উদ্দেশে যে সব যাত্রী যায় তাদের তৃষ্ণা দূর করে থাকি। সুর দাস তার গলা জড়িয়ে ধরে বললো আমি তো সেই গোয়ালার ছেলে কেই করে খুঁজছি। যদি তুমি এসে থাকো তো একবার তোমার শ্রী মুখ খানি দেখাও। বালকটি বললো তুমি তো অন্ধ কি করে দেখবে আমাকে। আচ্ছা আমি তোমাকে দৃষ্টি দান করলাম। চোখে হাত বলাতেই সুর দাসের দৃষ্টি ফিরে আসে, আর সে দেখতে পায় সামনে এক শ্যাম রুপি বালক মাথায় এক ময়ূর পালক, গলাতে বনমালা, কোমরে বাঁশি।
সুর দাস মোহিত হয়ে তার পদ চরণে লুটিয়ে পড়ল। বলল দেখা পেয়েছি প্রভু। আমার চোখ আজ ধন্য। আমার প্রথম দেওয়া দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকেই দর্শন করলাম প্রভু। আজ আমি ধন্য। আর কার রূপ আমি দেখতে চাই না। এই ভাবে সুর দাস শ্রী কৃষ্ণের দর্শন পেয়ে ছিলেন। অর্থাৎ পবিত্র হৃদয়ে লক্ষ্য স্থির রেখে, যত বাধাই আসুক না কেন তা সত্ত্বেও ভগবানকে ডেকে গেলে নিশ্চয় ভগবান সদয় হবেন, তাঁর দেখা পাবেন।

Tuesday, September 10, 2019

সনাতন হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ

#বেদ ৪ টি- মন্ত্র সংখ্যা- ২০,৪৩৪ 
১.ঋগবেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ১০,৫৮৯
২.সামবেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ১,৮৯৩
৩.যজু:বেদ. মন্ত্র সংখ্যা- ১,৯৭৫
৪.অথর্ববেদ. মন্ত্রসংখ্যা- ৫,৯৭৭
#উপবেদ ৪ টি.
১. আয়ুর্বেদ. ২.ধনুর্বেদ. ৩.গন্ধর্ববেদ. ৪.অর্থশাস্ত্র.
#বেদাঙ্গ -৬ টি.
১.শিক্ষা- পাণিনী
২.কল্প- বিভিন্ন ঋষি সম্প্রদায়
৩.ব্যাকরণ- পাণিনী.
৪.নিরুক্ত- যাস্ক.
৫.ছন্দ- পিঙ্গলাচার্য.
৬.জ্যোতিষ- গর্ণ.
#বেদের উপাঙ্গ-৪ টি.
১.পুরাণ. ২.মীমাংসা. ৩.ন্যায়. ৪.ধর্মশাস্ত্র
#বেদের জ্ঞানকাণ্ড- ২ টি.
১.আরণ্যক. ২.উপনিষদ.
#আরণ্যক - ৪ টি. ১.ঐতেরেয়. ২.কৌষীতকী ৩.শতপথ ব্রহ্মণ. ৪.ছান্দোগ্য.
#উপনিষদ -১২ টি.
১.বৃহদারণ্যক মন্ত্র- ৪৩৫.
২.ছান্দোগ মন্ত্র- ৬৬৮
৩.তৈত্তিরীয় মন্ত্র- ৬৮.
৪.ঐতরেয় মন্দ্র- ৩৩
৫.ঈশোপনিষ মন্ত্র- ১৮
৬.কেন উপনিষদ- ৩৫
৭.কঠো উপনিষদ- ১১৯.
৮.প্রশ্ন উপনিষদ- ৬৭
৯.মুণ্ডকোপনিষদ- ৬৫.
১০.মাণ্ডুক্যউপনিষদ- ১২
১১.শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ. মন্ত্র. - ১১৩.
১২.কৌষীতকী উপনিষদ মন্ত্র. - ৪৯.
#ষড়_দর্শন -৬ টি.
১.সাংখ্যা দর্শন - মহর্ষি কপিল.
২.যোগ দর্শন- পাতঞ্জলি.
৩.ন্যায় দর্শন - গৌতম.
৪.বৈশেষিক দর্শন-কণাদ.
৫.পূর্ব মীমাংসা - জৈমিনী.
৬.উত্তর মীমাংসা বেদান্ত দর্শন- ব্যাসদেব.
#মীমাংসা - ২ টি.
১.কর্ম মীমাংসা ২.ব্রহ্ম মীমাংস বা ব্রহ্মসূত্র.
#স্মৃতি_সংহিতা(সমাজ ব্যবস্থাপক শাস্ত্র) ২০টি
১.মনু সংহিতা
২.অত্রি সংহিতা.
৩.বিষ্ণু সংহিতা.
৪.হরিত সংহিতা.
৫.যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা.
৬.পরাশর সংহিতা.
৭.ব্যাস সংহিতা.
৮.উশনা সংহিতা.
৯.অঙ্গিরা সংহিতা.
১০.যম সংহিতা.
১১.অপস্তম্ভ সংহিতা
১২.সম্বর্ত সংহিতা.
১৩.কাত্যায়ন সংহিতা.
১৪.বৃহস্পতি সংহিতা.
১৫.শঙ্খ সংহিতা
১৬.লিখিত সংহিতা.
১৭.দক্ষ সংহিতা.
১৮.গৌতম সংহিতা.
১৯.শতাতপ সংহিতা.
২০.বশিষ্ট সংহিতা.
#পুরাণ - ২ টি.
১.মহাপুরাণ. ২.উপ-পুরাণ.
#মহা_পুরাণ -১৮টি.
১.ব্রহ্ম পুরাণ মন্ত্রসংখা-১০,০০০.
২.শিব পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৪,০০০.
৩.পদ্ম পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৫৫,০০০.
৪.বিষ্ণু পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৩,০০০.
৫.ভাগবত মহাপুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৮,০০০.
৬.মার্কণ্ডেয় পুনাণ মন্ত্রসংখ্যা-৯,০০০.
৭.অগ্নি পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৫,৪০০.
৮.ভবিষত পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৪,৫০০.
৯.ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৮ ,০০০.
১০.মৎস পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৪,০০০.
১১.লিঙ্গ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১১,০০০.
১২.বরাহ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৪,০০০.
১৩.কুর্ম্ম পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৭,০০০.
১৪.গরুড় পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১৯,০০০.
১৫.ব্রহ্মান্ড পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১২,০০০.
১৬.নারদীয় পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-২৫,০০০
১৭.স্কন্ধ পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-৮১,১০১.
১৮.বামন পুরাণ মন্ত্রসংখ্যা-১০,০০০.
#দেবী_ভাগবত(শাক্ত সম্প্রদায়)
#শ্রীমদ্ভাগবদ(বৈষ্ণব সম্প্রদায়)
#শ্রীমদ্ভাগবতগীত মন্ত্রসংখ্যা-৭০০ শ্রেষ্ঠগ্রন্থ (৫ম বেদ)
#শ্রীশ্রীচণ্ডী.মন্ত্রসংখ্যা-৭০০

Monday, September 9, 2019

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, হিন্দুরা কেন মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে?

হিন্দুরা কেন মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে? কবরও তো দিতে পারতো বা অন্যকিছু করতে পারতো। পুড়িয়ে ফেলা কি অমানবিক নয়? 
আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা প্রশ্নটির সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হই।
প্রথমে যে ইনফরমেশনটি আপনার জানা প্রয়োজন তা হলো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ হিন্দু-বৌদ্ধ রীতি অনুসরণ করে অর্থাত মৃতদেহ পুড়িয়ে সৎকার করে। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি জাপান থেকে শুরু করে চীন, কুরিয়া, ভারত ও অন্যান্য জাতি এই রীতি অনুসরণ করে। তাহলে আপনি প্রথমত: পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন :
১. পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি জাপানিরা কি তাহলে অমানবিক ? পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ কি অমানবিক ? যদি এই অর্ধেক মানুষ অমানবিক হয় তবে এদের মধ্যে কেন আমরা সবচেয়ে কম হানাহানি দেখতে পাই ? আসুন এবার প্রকৃত উত্তরের দিকে যায়।
২. হিন্দুধর্মে কবর দেয়া বা সমাধি দেয়া নিষিদ্ধ নয়। স্মৃতিশাস্ত্রে স্পষ্টভাবেই এটা অনুমোদিত। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে এখনও এটা প্রচলিত আছে। যেমন- নাথ বা যোগী সম্প্রদায় এবং সন্ন্যাসীদেরকে সমাধি দেয়া হয়। অনেক জায়গায় দেখা যায় কারও অপমৃত্যু হলে তার শব সমাধি দেয়া হয়, পোড়ানো হয় না।
৩. আমরা কথ্য ভাষায় ‘লাশ পোড়ানো’ বলি, কিন্তু শাস্ত্রীয় ভাষায় এটা ‘অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া’। এটা আবার কী? অন্ত+ইষ্টি=অন্ত্যেষ্টি। ইষ্টি মানে যজ্ঞ। অন্ত্যেষ্টি হলো জীবনের শেষ যজ্ঞ। আমরা জানি, আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষদের বৈদিক সমাজ ছিল যজ্ঞপ্রধান। জীবনের শুরু ‘গর্ভাধান’ থেকে জীবনের শেষ ‘দেহত্যাগ’ সবই হতো ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে। জীবৎকালে প্রতিদিনই পঞ্চমহাযজ্ঞ করতে হতো (এখনও করার বিধান)। এছাড়া অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মতো বিবিধ যজ্ঞে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ‘হবি’ (বর্তমানে পূজায় অর্ঘ্য নিবেদনের মতো) উৎসর্গ করা হতো। এ হলো ঈশ্বরের দেয়া জীবন ও দেহ দ্বারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির উপাদানসমূহ ভোগ করার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতাপূর্বক তাঁর উপাসনা করা। তাই অন্ত্যেষ্টি তথা জীবনের শেষ যজ্ঞে ঈশ্বরপ্রদত্ত এই দেহখানি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই ‘হবি’ বা অর্ঘ্যরূপে উৎসর্গ করা হয়। এটা সত্যিই চমৎকার একটা ব্যাপার!
৪. প্রাচীন দর্শন অনুযায়ী বিশ্বচরাচর তথা আমাদের দেহও পাঁচটি ভূত বা উপাদান দ্বারা তৈরি। একে ‘পঞ্চভূত’ বলে। এগুলো হলো- ক্ষিতি (মাটি), অপ (জল), তেজ (আগুন), মরুৎ (বাতাস), ব্যোম (আকাশ বা শূন্যস্থান)। যারা বলেন ‘মাটির দেহ’ বা দেহ শুধু মাটি দিয়ে তৈরি, তাই একে মাটির সাথেই মিশিয়ে দেয়া উচিৎ, তারা অবশ্যই ভুল বলেন। বাস্তবে দেহ এই পাঁচটি উপাদানের সমষ্টি। শবদাহ করার মাধ্যমে দেহকে এই ৫টি উপাদানেই মিশিয়ে দেয়া হয় প্রত্যক্ষভাবে। দাহ শেষে অবশিষ্টাংশ জলে বিসর্জন দেয়া হয়। এজন্য শ্মশান সর্বদাই জলাশয়ের পাশে হয়ে থাকে। অপরদিকে সমাধি বা কবর দিলে দেহ পঞ্চভূতে লীন হয় বটে, তবে পরোক্ষ ও ধাপে ধাপে। কারণ দেহ মাটির সাথে মেশে পঁচন প্রক্রিয়ায়। কোটি কোটি অনুজীব, পোকা-মাকড়ের খাবারে পরিণত হয় দেহ। এভাবে পঁচে গলে মাটিতে মেশানোই বরং দাহ করার চেয়ে বেশি অমানবিক মনে হয়। একটা মজার তথ্য দিই। অনেক সময় আমরা বলি, লোকটা তো মরে ভূত হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে সে প্রকৃতিতে (পঞ্চভূতে) লীন হয়েছে -এটাই বুঝতে হবে।
৫. মৃত্যু হয় দেহের; আত্মার নয়। অবিনাশী আত্মা অজর, অমর, অক্ষয়, অব্যয়। এটা জগদীশ্বর পরমাত্মার অংশ। (‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েক লাইন মনে পড়ে কি?) জড় প্রকৃতির পঞ্চভূতে গড়া দেহ ফিরে যায় পঞ্চভূতে, আর জীবাত্মা ফিরে যায় পরমাত্মাতে। (মৃত্যুর পরে অবশ্যই আর কখনোই আপনি পুরনো দেহে ফিরে আসবেন না, বা কোন প্রকার শাস্তি/আজাব ভোগ করবেন না। শবদাহ করার পরে/মাটিতে মিশে যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই লীন হওয়া দেহকে শাস্তি/আজাব যৌক্তিকভাবে সম্ভব নয়। )
৬. মৃত্যু প্রকৃতপক্ষে শোকের কোন ব্যাপার নয়। তীর্থস্থান বেনারস বা কাশীতে মৃত্যুও একটা উৎসবের ব্যাপার। “জাতস্য হি ধ্রুবর্মৃত্যো ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ”-গীতা। যে জন্মেছে তার মৃত্যু নিশ্চিত, যে মরেছে তার জন্মও নিশ্চিত। অতএব, দেহান্তরের নিছক সাধারণ ঘটনায় শোক কেন? বরং জরাজীর্ণ রোগশোকে আক্রান্ত দেহ ছেড়ে জীবাত্মার নতুন সুস্থ-সুন্দর দেহে জীবন আরম্ভের প্রাক্কালে মৃতকে হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানানোই উচিত।

সনাতন ধর্মে দেবদেবীর সংখ্যা কত?

বেদে ৩৩ কোটি দেব-দেবীর উল্লেখ নেই কিন্তু ৩৩ ধরনের দেব-দেবীর উল্লেখ রয়েছে। সংস্কৃততে কোটি অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার। ৩৩ কোটি (সংখ্যা) না, ৩৩ প্রকার দেব-দেবীা আছে সনাতন ধর্মে ।
সনাতন ধর্মের অপপ্রচার এটাই যে হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবী আর অনভিজ্ঞ যারা তারাও বলে আমাদের ৩৩ কোটি (সংখ্যায়) দেব-দেবী । সত্যিটা এই যে মোট ৩৩ প্রকার দেব-দেবী আছে সনাতন ধর্মে ।
.
এই ৩৩ ধরনের দেব-দেবীর মধ্যে রয়েছেন...
১২ প্রকার হল----------------------------------------------------
আদিত্য-ধাতা, মিত, আযমা, শুক্রা, বরুন, অংশ, ভাগ, বিবস্বান, পুষ, সবিত্রা, তবাস্থা এবং বিষ্ণু ।
.
৮ প্রকার হল-----------------------------------------------------
বাসু-ধর, ধ্রুব, সোম, অহ, অনিল, অনল, প্রত্যুষ এবং প্রভাষ ।
.
১১ প্রকার হল----------------------------------------------------
রুদ্র-হর, বহুরুপ, ত্রয়ম্বক, অপরাজিতা, বৃষাকাপি, শমভু, কপার্দী, রেবাত, মৃগব্যাধ, শর্বা এবং কপালী ।
.
২ প্রকার হল------ অশ্বিনী এবং কুমার ।
.
মোট ১২+৮+১১+২=৩৩
জয় শ্রীকৃষ্ণ

সংসারটা হচ্ছে মধুচাক আর বিষয়- আশয় হচ্ছে সর্প স্বরুপ

একদিন যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন -
ভগবান তুমি তো তোমার মোহন বাঁশির সুরে সকলকেই আকর্ষণ করছো।
তবু্ও সবাই কি সেই বাঁশির সুরে আকৃষ্ট হচ্ছে?
শ্রীকৃষ্ণ সেই সময় যুধিষ্ঠিরের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।
অপরাহ্নে তিনি যুধিষ্ঠিরকে সঙ্গে নিয়ে একটা বনের মধ্যে বেড়াতে গেলেন ।
বনের মধ্যে একটা গাছে মৌচাক ছিল। চাকের মধ্য থেকে ফোঁটা ফোঁটা মধু ঝরে পড়ছিল।
একটি লোক নিচে দাঁড়িয়ে সেই মধু হাঁ করে খাচ্ছিল। মধু পানে সেই ব্যক্তি এমনি মত্ত হয়েছিল যে, তার বাহ্য জ্ঞান একরকম রহিত হয়েছিল।
একটি প্রকাণ্ড অজগর সর্প মুখ হাঁ করে ওই লোকটার দিকে আসছিল।
যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন -- "এ লোকটিকে তো এখনি সাপে খেয়ে ফেলবে।"
শ্রীকৃষ্ণ বললেন - "লোকটিকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে ডাকুন।"
যুধিষ্ঠির লোকটিকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু লোকটি মধু পানে এমন মত্ত ছিল যে, যুধিষ্ঠিরের ডাক শুনতেই পেল না।
যুধিষ্ঠির পুনরায় লোকটির কাছে গিয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন।
অনেকক্ষণ পর লোকটি বললো- " আর এক ফোঁটা। " কিন্তু এই অবসরে লোকটিকে সাপ গ্রাস করে ফেললো।
শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন -
" আপনি সে-সময় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন
কেন সবাই আমার বাঁশির সুরে আকৃষ্ট হয় না "
আপনি তো এই লোকটিকে এতো ডাকলেন কিন্তু আপনার ডাক এই লোকটি শুনলো না কি ?
# শিক্ষনীয়হলো : সংসারটা হচ্ছে মধুচাক আর বিষয়- আশয় হচ্ছে সর্প স্বরুপ।
সংসারের মধুপানে মত্ত হয়ে আমরা ভগবানের ডাক শুনতে পাচ্ছি না।
আমরা কেবল বলছি , আর কদিন পরে ছেলে উপযুক্ত হলেই, তার হাতে সংসারের ভার দিয়ে বাকি জীবনটা কেবল ভগবানের নাম করেই কাটাবো।
ছেলে উপযুক্ত হলে বললাম, পৌত্রের মুখ দেখতে পেলেই আমার সংসারের স্বাদ মিটে যেত।
পৌত্রের মুখ দেখতে পেয়ে বললাম, পৌত্রের বিবাহ দিতে পারলেই আমার সব কাজ শেষ।
এরূপ বলতে বলতেই মৃত্যু রূপ সর্প এসে সব গ্রাস করে ফেলে ।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে রাম।।

দশ-অবতারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

এক মা নিজের পূজা-পাঠ সেরে,বিদেশে থাকা নিজের ছেলেকে "ভিডিও কল" করে,কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন-
" বেটা,অর্থ রোজগারের পাশাপাশি পূজাপাঠও করছ তো?
ছেলের দাম্ভিক উত্তর-
মা তুমি জানো,আমি এক জীববৈজ্ঞানিক। আমি এখন আমেরিকায়,মানব বিবর্তনের উপর কাজ করছি।
এই বিবর্তনের সিদ্ধান্ত কি?
চার্লস ডারউইন...
মা,তুমি জানো তার সম্পর্কে?
তার মা মৃদু হাসলেন,এবং উত্তর দিলেন-
হ্যাঁ,আমি জানি ডারউইন সম্পর্কে। তবে তিনি যা-ই ব্যাখ্যা দিয়েছেন,তা সকলই সনাতন শাস্ত্রগ্রন্থের বহু পুরানো অধ্যায়।
ছেলে ব্যাঙ্গ করে বলল-হতে পারে মা?
তার মা সেই ব্যাঙ্গের প্রতিবাদ করে বললেন- যদি তুমি প্রকৃতই নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবো...
আচ্ছা,তুমি কি দশাবতার সম্পর্কে শুনেছ?
বিষ্ণুর দশ অবতার?
হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু আমার পরীক্ষা-নীরিক্ষার সঙ্গে দশাবতারের কি সম্পর্ক?
সম্পর্ক অবশ্যই আছে। শোনো,আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি- তুমি এবং ডারউইন এখনও কোন বিষয়গুলি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ আছ।
দশ অবতারের প্রথম অবতার ছিল-মৎস্য অর্থাৎ মাছ।
এটা সকলকে বোঝাতে যে,জীবন জল থেকেই প্রথম শুরু হয়েছে।
ঠিক কি না?
এবার পুত্র মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগল।
এরপর দ্বিতীয় অবতার হলো-কুর্ম অর্থাৎ কচ্ছপ।
অর্থাৎ জীবন এবার জল থেকে ভূমির দিকে আসা শুরু করল।
প্রথম অবস্থায় উভচররূপে ( Amphibian) রইল। এই কচ্ছপই-
বিবর্তনকে সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে নির্দেশ করছে।
তৃতীয় হলো-বরাহ অবতার। যার দ্বারা জঙ্গলের জন্তুদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জীব তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জঙ্গলে ধাবিত হলো। তাদের বুদ্ধি তখনও তেমন উন্নত নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় তোমরা যাদের "ডাইনোসর" বলো।
অর্থাৎ সরীসৃপ ও পক্ষীর মধ্যবর্তী অবস্থা।
ছেলে এবার বড় বড় চোখ করে শুনতে লাগল,এবং "হ্যাঁ" বলে সহমতিও জানাল।
চতুর্থ অবতার হলো নৃসিংহ-অর্ধেক মানব,অর্ধেক পশু।
যা ধীরে ধীরে জংলী জীব থেকে,উন্নত বুদ্ধিমান জীবের বিবর্তনকে নির্দেশ করছে।।
পঞ্চম অবতারে এল-বামন অবতার। "বামন" -
যে লম্বায় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারত।
তুমি কি জানো,সেই সময় দুই প্রকারের মানুষ ছিল- হোমোইরেক্টস (নরবানর) ও হোমোসেপিয়েন্স (মানব)। আর এই হোমোসেপিয়েন্সই বিবরতনের লড়াইয়ে জয়লাভ করে।
এই ব্যাখ্যাই তো দিয়েছেন "যোগ্যতমের উদবর্তন" রূপে- তোমার ডারউইন?
ছেলে তো দশাবতারের ব্যাখ্যার বিস্তার শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল।
মা আবার বললেন-
"পরশুরাম" এলেন ষষ্ঠ অবতারে। যার মধ্যে ছিল শস্ত্র (কুড়াল) এর ক্ষমতা। যা নির্দেশ করে জঙ্গল ও গুহাবাসী মানুষকে।
সপ্তম অবতারে এলেন- ভগবান "মর্যাদা পুরুষোত্তম-রাম"
যা প্রথমবার বিবেকযুক্ত মানুষকে নির্দেশ করে। কিভাবে সেই বিবেক দ্বারা মানুষ প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে মর্যাদা,এবং সমাজের বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করে,সমাজবদ্ধ হতে শিখল- তা নির্দেশ করে।
অষ্টম অবতারে-
"স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ"।
একাধারে রাজনেতা,কূটনীতিজ্ঞ এবং প্রেমীও। তিনি শেখালেন- কিভাবে সমাজের নিয়মকানুনের মধ্যেও আনন্দে থাকা যায়,এবং আরও উন্নত বিবেক ও বিচারসম্পন্ন হওয়া যায়।
মায়ের জ্ঞানগঙ্গা বইতেই রইল-
"মহাত্মা বুদ্ধ" হলেন নবম অবতার। যিনি সেই নৃসিংহ থেকে উদ্ভূত মানবজাতির স্বভাব-প্রকৃতির পুনরালোচনা করলেন।
তিনিই মানবজাতিকে জ্ঞানের অন্তিম লক্ষের সন্ধান দিলেন।
আর শেষে?
দশম অবতার "কল্কি" রূপে আসবে।
যেই মানব বিবর্তনের উপর তোমরা কাজ করছ-
মানুষের বিবর্তন,উদবর্তন, এবং উন্নতির অন্তিম নিদর্শণ রূপে তিনি আসবেন।
পুত্র অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়েই রইল।এ তো অদ্ভূত মা! হিন্দু দর্শণ তো বাস্তবেই অতীব অর্থপূর্ণ!
হ্যাঁ,
বেদ,পুরাণ,গ্রন্থ,উপনিষদ বাস্তবেই খুবই অর্থপূর্ণ। তবে এই দর্শণকে গ্রহণ করার মতো,বিবেকযুক্ত দর্শণও তো তোমার থাকা চাই?
তখন দেখবে-
এই দর্শণের মধ্যেও রস খুঁজে পাবে। তাতে তুমি ধার্মিক হও বা
" বৈজ্ঞানিক "।।