Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, August 10, 2019

প্রশ্ন- সমূদ্র, পৃথিবী, চন্দ্র ইত্যাদির সৃষ্টি এবং পরিচালনা তো প্রকৃতি করে। সব কিছু প্রকৃতির দ্বারাই হয়। তাহলে ঈশ্বর কে সৃষ্টিকর্তা এবং নিয়ামক বলে কেন মানব ?

উত্তর- আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, প্রকৃতি জড়, না চেতন অর্থাৎ তাতে চৈতন্য আছে কি নেই? যদি আপনি প্রকৃতিকে জ্ঞান- চৈতন্যসম্পন্ন বলে মনে করেন, তাহলে তাকেই আমি ‘ঈশ্বর’ বলছি। আমাদের শাস্ত্ৰে শক্তিকেও ঈশ্বর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব আপনার এবং আমার মেনে নেওয়াতে মাত্র শব্দের প্রভেদ, আসল তত্ত্বে কোনাে ভেদ নেই। আর যদি মনে করেন প্রকৃতি জড় পদার্থ, তাহলে জড় প্রকৃতির দ্বারা জ্ঞানপূর্বক ক্রিয়া কখনও হওয়া সম্ভব নয়। প্রাণী সৃষ্টি, তাদের শুভাশুভ কর্মের ফল দেওয়া ইত্যাদি কর্ম জড় প্রকৃতির দ্বারা কখনও সম্ভব নয়। কারণ জ্ঞানপূর্বক ক্রিয়া ছাড়া জগতের প্রাণীদের সুচারুভাবে সঞ্চালন হতে পারে না। জড়প্রকৃতিতে পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু তাতে জ্ঞানপূর্বক কৰ্ম সম্পাদনের শক্তি নেই। সেইজন্য ‘ভগবান’ আছেন তা মানতেই হবে।
এক পক্ষ বলছেন ঈশ্বর নেই’, দ্বিতীয় পক্ষ বলছেন ‘ঈশ্বর আছেন। যদি ‘ঈশ্বর নেই’ একথাই সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলেও আস্তিক এবং নাস্তিক দুই পক্ষই সমান ভাবে থাকবে অর্থাৎ যাঁরা ঈশ্বর মানেন তাঁদের কোন কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি ‘ঈশ্বর আছেন- এই কথাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে যাঁরা ঈশ্বর মানেন তাঁদের ঈশ্বর প্রাপ্তি হবে এবং ঈশ্বরকে যাঁরা মানেন না তাঁরা রিক্ত থেকে যাবেন। সুতরাং ‘ঈশ্বর আছেন’ এরূপ স্বীকার করাই সকলের পক্ষে লাভজনক। কিন্তু শুধু ঈশ্বরকে মেনে সন্তুষ্ট হলেই চলবে না, তাকে লাভ করতে হবে; কারণ, তাঁকে পাবার সামর্থ্য সকল মানুষেরই আছে।
প্রাপ্তিযােগ্য কোন বস্তু থাকলে তবেই তার সম্বন্ধে বিধিনিষেধ বাক্য প্রযোজ্য হয়—‘প্রাপ্ত সত্যাং নিষেধঃ'। এ কথা কেউ বলা প্রয়ােজন মনে করে না যে, ‘ঘােড়ার ডিম হয় না। কারণ যা হতেই পারে না তার প্রসঙ্গে নিষেধ করাই অবাস্তব। তেমনি যদি ঈশ্বর নাই থাকেন তাহলে-‘ঈশ্বর নেই’-একথা বলার মানেই হয় না। সুতরাং ‘ঈশ্বর নেই’ বলাতেই প্রমাণিত হয় যে তিনি আছেন। 
যে ব্যক্তি ইংরাজী ভাষার অস্তিত্ব মানেন, তিনিই তা শেখবার চেষ্টা করতে পারেন, পড়াশুনা করে ইংরাজী ভাষা আয়ত্ত করতে পারেন। কিন্তু যারা ইংরাজী ভাষার অস্তিত্বই স্বীকার করেন না, তারা তা শেখবার প্রয়াস কেন করবেন ? যেমন, কারাের যদি ইংরাজীতে ‘তার’ (টেলিগ্রাম) আসে, সে ইংরাজী জানা ব্যক্তির দ্বারা তার মর্মোদ্ধার করে জানতে পারে যে তার কেউ খুব অসুস্থ এবং সেস্থানে গিয়ে সত্যই সে যদি জানতে পারে লােকটি ঠিকই অসুস্থ ছিল তখন তাকে বিশ্বাস করতেই হয় যে তারটি যখন ইংরাজী ভাষাতে লেখা তখন ইংরাজী ভাষা যথ্যথই আছে। যে ব্যক্তি ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সত্যি সত্যি আগ্রহী তাঁর সঙ্গে সাধারণ ব্যক্তির (যাঁরা ঈশ্বর লাভের জন্য সচেষ্ট নন) অনেক পার্থক্য দেখা যায়। তাঁর সঙ্গ করলে, কথা শুনলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। শুধু মানুষের নয়, বস্তুতঃ পশুপক্ষী ইত্যাদিও তার কাছে পেলে শাস্তি পায়। যাঁর ঈশ্বরপ্রাপ্তি ঘটেছে তার মধ্যে অনেক বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, যা কিনা সাধারণ মানুষের থাকে না। ঈশ্বর না থাকলে তাদের মধ্যে এই বিশেষ লক্ষণ কোথা থেকে আসে? সুতরাং মানতেই হবে যে ঈশ্বর আছেন।
মনুষ্যমাত্রই নিজের মধ্যে কিছু অপূর্ণতা, শূন্যতা অনুভব করে। এই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার যদি কোন কিছু না থাকত, তাহলে মানুষ এই অপূর্ণতা অনুভব করত না। যেমন মানুষের খিদে পেলে প্রমাণিত হয় যে খাবার বস্তু কিছু আছে। যদি খাদ্যবস্তু না থাকত, তাহলে মানুষের খিদে পেত না। পিপাসা পেলে প্রমাণিত হয় পানীয় বস্তু কিছু আছে, পানীয় না থাকলে মানুষ পিপাসা অনুভব করত না। সেভাবেই মানুষের অপূর্ণতা অনুভব হলে প্রমাণিত হয় যে, সেটি পূর্ণ করার মতে কোনকিছু আছে। যদি না পূর্ণত্ত্ব থাকত তাহলে মানুষ অপূর্ণতা অনুভব করত না। এই পূর্ণতত্ত্বকেই ঈশ্বর বলা হয়। 
কোন বস্তু থাকলে সেটি পাবার ইচ্ছা হয়। যে বস্তু নেই, সেটি পাবার ইচ্ছাও হয় না। যেমন কারাে কখনও আকাশের ফল খেতে বা আকাশের ফুলের আঘ্রাণ নিতে ইচ্ছা করবে না; কারণ, আকাশে ফল বা ফুল হয় না। মানুষমাত্রেরই এই ইচ্ছা হয় যে ‘আমি যেন চিরঞ্জীবী হই (কখনও না মরি)’, ‘সমস্ত কিছুর জ্ঞান প্রাপ্ত হই (যেন অজ্ঞান না থাকি)', এবং 'সদা সুখী হই (কথনও দুঃখ যেন না পাই’)। আমি “চিরকাল জীবিত থাকি'– এই হল সৎ-এর ইচ্ছা, ‘সকল জ্ঞান প্রাপ্ত হই'- এ হচ্ছে ‘চিৎ'-এর ইচ্ছা, ‘সদা সুখে থাকি’-এই হচ্ছে ‘আনন্দের’ ইচ্ছা। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ বলে এমন কিছু আছে যা পাবার ইচ্ছা সকল মানুষের মধ্যেই আছে। এই তত্ত্বকেই ঈশ্বর বলা হয়। 
কোনাে মানুষ যখন অন্য মানুষকে নিজের চেয়ে বড় বলে মেনে নেয়, তাতে আসলে সে ঈশ্বরবাদকেই স্বীকার করছে বােঝায়। কেননা এই বড় হওয়ার পরম্পরা যেখানে পৌছায়, সেটিকেই ঈশ্বর বলে। পূর্বের্ষামপি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাৎ। (পাতঞ্জল যােগদর্শন ১/২৬)। কোন মানুষ থাকলেই তার একজন বাবাও থাকবেন এবং তাঁর বাবারও একজন বাবা থাকবেন। এই পরস্পরা যেখানে সমাপ্ত হয়, তারই নাম ঈশ্বর-‘পিতাসি লােকস্য চরাচরস্য’ (১১/৪৩) একজন বলশালী থাকলে বুঝতে হবে, তার চেয়েও একজন বেশী বলশালী আছেন। এই উত্তরের যেখানে গিয়ে সমাপ্ত হয়, তারই নাম ঈশ্বর, কেননা তাঁর তুল্য বলশালী কেউ নেই। কেউ বিদ্বান হলে, তার চেয়েও বেশী বিদ্বান আর কেউ থাকবেন। এই বিদ্যাবত্তার যেখানে সমাপ্তি তিনিই ঈশ্বর, কারণ তার সমান বিদ্বান কেউ নেই ‘গুরুৰ্গরীয়ান্‌’ (১১/৪৩)। এর তাৎপর্য হচ্ছে যে বল, বুদ্ধি, বিদ্যা, যােগ্যতা, ঐশ্বর্য, শােভা ইত্যাদি গুণগুলির যেটি শেষ সীমা, অর্থাৎ পূৰ্ণতা, তাকেই ঈশ্বর বলা হয়; কেননা তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই,-‘ন ত্বৎসমােহস্তাভ্যধিকঃকুতোহন্যঃ (১১।৪৩)।
বস্তুতঃ ঈশ্বর মেনে নেবারই বিষয়, বিচার করবার বিষয় নয়। বিচার্য বিষয় সেটাই হতে পারে যাতে জিজ্ঞাসা থাকে এবং জিজ্ঞাসা সে বিষয়েই হতে পারে যার সম্বন্ধে আমাদের কিছুটা জানা আর কিছু অজানা। কিন্তু যাঁর সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না, তাঁর বিষয়ে জিজ্ঞাসা বা বিচার করা যায় না। তাঁকে আমরা মানি বা না মানি এ ব্যাপারে আমরা স্বতন্ত্র বা স্বাধীন। এই জগৎ-সংসার দৃষ্টিগােচর হলেও এর আসল তত্ত্ব কি তা আমরা জানি না; অতএব জগৎ-সংসার বিচার করে বােঝার বিষয়। তেমনি জীবাত্মা স্থাবর বা জঙ্গমরূপে শরীরধারীরূপে দৃষ্টিগােচর হয়ে থাকেন। কিন্তু জীবাত্মা আসলে কি তা আমরা জানি না, অতএব জীবাত্মাও বিচার করে বােঝার বিষয়। কিন্তু ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না, সুতরাং ঈশ্বর বিচার বা তর্কের বিষয় নয়, বস্তুতঃ তিনি শ্রদ্ধা এবং মান্য করারই বিষয়। শাস্ত্রের দ্বারা অথবা তত্ত্বদৰ্শী বা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন সাধু ও মহাপুরুষের কাছে শুনেই ঈশ্বর আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। শাস্ত্র এবং সাধু দুই-ই বিশ্বাস করার বিষয়। যেমন বেদ ও পুরাণ ইত্যাদিতে হিন্দুদের বিশ্বাস আছে কিন্তু মুসলমানদের নেই, তেমনি সাধু মহাপুরুষদের ও কেউ মান্য করেন, কেউ করেন না; বস্তুতঃ তাদের সাধারণ মানুষ বলে মনে করেন। 
#গীতা_দর্পণ
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দর্পণ

কিছু মন্ত্র

১. ঘুমাবার আগে বলুন - ওঁ শয়নে শ্রী পদ্মনাভায় নম:। 
২. জন্ম সংবাদ শুনলে বলুন -আয়ুষ্মান ভব। 
৩. মৃত্যু সংবাদ শুনলে বলুন -দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু। 
৪. খাবার আগে বলুন - ওঁ শ্রী জনার্দ্দনায় নম:। 
৫. বিপদে বলুন - ওঁ শ্রী মধুসূদনায় নম:। 
৬. হিন্দু ধর্মীয় সকলকাজ শুরুর আগে বলুন - ওঁ তৎ সৎ। 
৭. গৃহ প্রবেশ মন্ত্র - ওঁ শ্রী বাস্তুপুরুষায় নম:। 
৮. মাতৃ প্রনাম মন্ত্র - 
ভূমেগরীয়সী মাতা স্বাগাৎ উচ্চতর পিতা জননী জন্মভূমিশ্চ স্বগাদগি গরিয়সী। গর্ভ ধারণ্যং পোষ্যভাং পিতুমাতা বিশ্বস্তে।সর্বদেব সরুপায় স্তন্মৈমাএ নমঃ নমঃ।। 
৯. পিতৃ প্রনাম মন্ত্র - 
পিতাস্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহিপরমংতপঃ। । পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা নমঃ পিতৃ চরনেভ্য নমঃ।। 
১০. শ্রীকৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র - 
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে।। 
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নমঃ।। 
১১. শ্রীরাধারানী প্রণাম মন্ত্র - 
তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী। বৃষভানু সূতে দেবী তাং প্রণমামি হরি প্রিয়ে।। 
১২. দেহ শুচীর মন্ত্র - 
ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবাং সর্বাবস্থান গতহ্বপিবা। যৎ সরেত পুন্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি।। 
পাপোহং পাপ কর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভাবান্। ত্রাহি মাং পুন্ডরীকাক্ষং সর্ব পাপো হরো হরি।। 
১৩. গুরু প্রণাম মন্ত্র - 
অখন্ড মন্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম। তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।। 
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া। চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।। 
গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর। গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।। 
১৪. শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র - 
পঞ্চতত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্। ভক্ত অবতারং ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্।। 
১৫. সূর্য প্রণাম মন্ত্র - 
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহষ্মি দিবাকরম্।। 
১৬. গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র - 
ঔঁ ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ।। 
১৭. তুলসী প্রণাম মন্ত্র - 
ঔঁ বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়াঐ কেশবস্য চঃ। কৃষ্ণভক্তিপদে দেবী সত্যবত্যৈ নমঃ নমঃ।। 

সনাতন ধর্মের ইতিহাস বা সময়কাল

হিন্দুধর্মে সময়ের হিসেব দেখুন।
সত্যযুগ=১৭,২৮,০০০ বছর
ত্রেতাযুগ= ১২,৯৬,০০০ বছর
দ্বাপরযুগ= ৮,৬৪,০০০ বছর
কলিযুগ= ৪,৩২,০০০ বছর

চারযুগ মিলে এক চতুর্যুগ= ৪.৩২ মিলিয়ন বছর
১০০০ চতুর্যুগ= এক “কল্প”= ব্রহ্মার একদিন= ব্রহ্মার একরাত= ৪.৩২ বিলিয়ন বছর
১০০ বছর হল ব্রহ্মার আয়ু= আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের আয়ু= ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর।

আবার এক “কল্প” সময়ের মধেয় ১৪ জন মনু আসেন। প্রথম মনুকে বলা হয় স্বায়ম্ভুব মনু এবং তাঁর স্ত্রী হলেন স্বতরুপা(এই ব্রহ্মান্ডের প্রথম নারী ও পুরুষ)। প্রত্যেক মনুর সময়কালকে বলা হয় মন্বন্তর।

১ মন্বন্তর= ৭১ চতুর্যুগ= ৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর
ছয়জন মনু গত হয়েছেন, মানে ৬টি মন্বন্তর চলে গিয়েছে। আমরা আছি সপ্তম মনুর অধীনে যাঁর নাম “বিবস্বত মনু”। তার মানে, এই মনুর পরে আরও ৭ জন মনু আসবেন, আরও ৭ টি মন্বন্তর অতিবাহিত হবে। তারপর পূর্ণ হবে ব্রহ্মার একদিন!! তারপর হবে রাতের শুরু!!
এখন গীতা কি বলে দেখি-

“মনুষ্যমানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় এবং সহস্র চতুর্যুগে তাঁর এক রাত হয়। ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত জীব অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রির সমাগমে সমস্ত জীব আবার অব্যক্তে লয়প্রাপ্ত হয়।”গীতা-৮/১৭-১৮

“কল্পের শেষে সমস্ত জড় সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পের শুরুতে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।”গীতা-৯/৭

“আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা(পরিচালনায়) জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে। প্রকৃতির নিয়মে এই জগৎ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।”

বিঃ দ্রঃ হিন্দুদের প্রচার বিমুখতার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো আজও শুধু ধর্মগ্রন্থের পাতায় সীমাবদ্ধ! অন্যের প্রশ্নের সামনে আমরা নুয়ে পড়ি, না জানার লজ্জায়, অথচ কতো সমৃদ্ধ আমাদের ইতিহাস। সারা জীবন আমরা অন্যের উপহাসের পাত্রই রয়ে গেলাম, শুধু নিজেদের সম্বন্ধে না জানার জন্য। তাই সত্যকে জানুন, জানিয়ে দিন সবাইকে।
হিন্দুধর্ম সনাতন ধর্মের ইতিহাস

অনেকেই বলে সনাতন ধর্মের ইতিহাস নেই, আবার অনেকেই নানা রকম যুক্তি দিয়ে আসল জিনিসটা এড়িয়ে যায় না জানার কারণে, সনাতন ধর্মের ইতিহাস আছে কিনা, তা আজ দ্বিতীয়বারের মত আমি তুলে ধরার চেষ্টা করব আপনাদের সামনে।

পুরাণ পড়ুন ও ডাউনলোড করুন - বাংলায় 
আমরা জেনেছি, আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের জীব সৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত দেবতা প্রজাপতি ব্রহ্মার(চতুর্মুখ ব্রহ্মার) আয়ু তথা এই ব্রহ্মান্ডের আয়ু হল ১০০ বছর(মহাভারত অনুযায়ী এক বছর= ৩৬০ দিন) মানে আমাদের সময় অনুযায়ী ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর। ব্রহ্মার আয়ু তথা ১০০ বছর শেষ হলে ঘটবে মহাপ্রলয় বা প্রাকৃতিক প্রলয়, এই পুরা ব্রহ্মান্ড(স্থাবর জঙ্গম যা কিছু আছে) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

ব্রহ্মার ১ মাস= ৩০ দিন, এই ৩০ দিনে ৩০ টি কল্প গত হয়, কল্প বলতে প্রধানত কেবল দিবাভাগকে ফোকাস করা হয়, রাত নয়। ৩০ টি কল্পের ৩০ টি নাম আছে। প্রথম কল্পের নাম শ্বেত-বরাহ কল্প বা অনেক জায়গায় আছে শ্বেত কল্প।

এই কল্পের ১৪ জন মনুর নাম হলঃ স্বায়ম্ভুব, স্বরোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুস, বৈবস্বত বা সত্যব্রত, সাবর্ণি, দক্ষসাবর্ণি, ব্রহ্মসাবর্ণি, ধর্মসাবর্ণি, রুদ্রসাবর্ণি, দেবতাসাবর্ণি ও ইন্দ্রসাবর্ণি। কল্প হল ব্রহ্মার দিন বা দিবাভাগ, আরও জানুন, ২ কল্পের সমান সমাম সময়= ব্রহ্মার ১ দিন + ১ রাত; কিন্তু কল্প বলতে কেবল দিবাভাগকেই ফোকাস করা হয়। এখানে মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক মন্বন্তর শেষে একটি করে খন্ড প্রলয় ঘটে, এই সময়ে পৃথিবী এবং জীবসমুহ অব্যক্ত বা লয়প্রাপ্ত হয়। আর ব্রহ্মার দিন বা কল্পের শেষে ঘটে নৈমিত্তিক প্রলয়। এক্ষেত্রে গীতা বলে “…কল্পের শেষে সমস্ত জড় সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পের শুরুতে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।”গীতা-৯/৭

তাহলে ব্রহ্মার এক বছরে আসেন ৫০৪০ জন মনু, এবং ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল তথা এই ব্রহ্মান্ডের আয়ুষ্কাল জুড়ে মোট ৫০৪,০০০ জন মনু আসেন এবং তাঁরা আসেন ভিন্ন ভিন্ন নামে। একেকজন মনুর আয়ুষ্কাল হল ৩০৬.৭২ মিলিয়ন বছর এবং এই সময় হল মহাবিষ্ণুর এক নিঃশ্বাস নিতে যেটুকু সময় লাগে সেইটুকু!!! মহাবিষ্ণুর প্রত্যেকটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে একজন করে মনু আসে আর যায় তথা একটি করে মন্বন্তর শেষ হয়।

আমি বলেছিলাম, এটা সপ্তম মন্বন্তর চলছে আর আমরা সপ্তম মনু “বৈবস্বত মনু” এর অধীনে আছি। তাঁর আরেক নাম সত্যব্রত। তিনি সূর্যদেব বিবস্বানের পুত্র। এ প্রসঙ্গে আমরা গীতার জ্ঞানযোগ নামক ৪র্থ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে দেখতে পাই,

আমি পূর্বে সূর্যদেব বিবস্বানকে এই অব্যয় নিষ্কাম কর্মসাধ্য জ্ঞানযোগ বলেছিলাম। তিনি তা মানবজাতির জনক বৈবস্বত মনুকে বলেছিলেন। মনু আবার তা নিজ সন্তান ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।

অর্থাৎ অবতার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগেও সর্বশেষ প্রায় ১২০.৫৩ মিলিয়ন বছর আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সূর্যদেব বিবস্বানকে গীতাজ্ঞান দান করেছিলেন। কিন্তু কালের প্রবাহে তা ধীরে ধীরে নষ্ট বা বিলুপ্ত হয়, মানুষ ভুলে যায়, তাই ৫০০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে আবার অর্জুনকে তিনি এই জ্ঞান দান করেন, এবং ঋষি ব্যাসদেব তা লিপিবদ্ধ করায় একই সাথে সারা পৃথিবীর মানবজাতিও আবার এই পবিত্র গীতা জ্ঞানের সান্নিধ্য লাভ করে।

বিশেষ আকর্ষণঃ
উপরের ডাটা যারা মনযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা এখন ব্রহ্মান্ডের বয়স তথা সনাতন ধর্মের বয়স জানুন!

ব্রহ্মার ৫০ বছর গত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর ৫১ তম বছরের প্রথম দিন বা প্রথম কল্প চলছে। তাই বর্তমান কল্পের নাম শ্বেত-বরাহ কল্প। এই কল্পের আবার ৭ম মন্বন্তর বা বৈবস্বত মন্বন্তর চলছে। এই মন্বন্তরের ২৭ টি চতুর্যুগ বা মহাযুগ গত হয়েছে এবং ২৮ তম চতুর্যুগ বা মহাযুগের সত্য, ত্রেতা এবং দ্বাপরযুগ শেষ হয়েছে। সুতরাং এখন ২৮ তম মহাযুগের কলিযুগ চলমান, যার ৫১১৫ বছর পার হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ এই কলিযুগ শুরু হয়েছে মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৩২০১ অব্দের ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে বা সন্ধিক্ষণে! সুতরাং সনাতন ধর্মের হিসাব মতে আমাদের এই ব্রহ্মান্ডের বয়স হল ১৫৫,৫২১,৯৭১,৯৪৯,১১৫ বছর (২০১৩ সাল পর্যন্ত)!!!!!

কে বলে সনাতন ধর্মের ইতিহাস নেই ? নিজে জানুন,অন্যকে জানান।