Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, August 10, 2019

প্রশ্ন- সমূদ্র, পৃথিবী, চন্দ্র ইত্যাদির সৃষ্টি এবং পরিচালনা তো প্রকৃতি করে। সব কিছু প্রকৃতির দ্বারাই হয়। তাহলে ঈশ্বর কে সৃষ্টিকর্তা এবং নিয়ামক বলে কেন মানব ?

উত্তর- আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, প্রকৃতি জড়, না চেতন অর্থাৎ তাতে চৈতন্য আছে কি নেই? যদি আপনি প্রকৃতিকে জ্ঞান- চৈতন্যসম্পন্ন বলে মনে করেন, তাহলে তাকেই আমি ‘ঈশ্বর’ বলছি। আমাদের শাস্ত্ৰে শক্তিকেও ঈশ্বর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব আপনার এবং আমার মেনে নেওয়াতে মাত্র শব্দের প্রভেদ, আসল তত্ত্বে কোনাে ভেদ নেই। আর যদি মনে করেন প্রকৃতি জড় পদার্থ, তাহলে জড় প্রকৃতির দ্বারা জ্ঞানপূর্বক ক্রিয়া কখনও হওয়া সম্ভব নয়। প্রাণী সৃষ্টি, তাদের শুভাশুভ কর্মের ফল দেওয়া ইত্যাদি কর্ম জড় প্রকৃতির দ্বারা কখনও সম্ভব নয়। কারণ জ্ঞানপূর্বক ক্রিয়া ছাড়া জগতের প্রাণীদের সুচারুভাবে সঞ্চালন হতে পারে না। জড়প্রকৃতিতে পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু তাতে জ্ঞানপূর্বক কৰ্ম সম্পাদনের শক্তি নেই। সেইজন্য ‘ভগবান’ আছেন তা মানতেই হবে।
এক পক্ষ বলছেন ঈশ্বর নেই’, দ্বিতীয় পক্ষ বলছেন ‘ঈশ্বর আছেন। যদি ‘ঈশ্বর নেই’ একথাই সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলেও আস্তিক এবং নাস্তিক দুই পক্ষই সমান ভাবে থাকবে অর্থাৎ যাঁরা ঈশ্বর মানেন তাঁদের কোন কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি ‘ঈশ্বর আছেন- এই কথাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে যাঁরা ঈশ্বর মানেন তাঁদের ঈশ্বর প্রাপ্তি হবে এবং ঈশ্বরকে যাঁরা মানেন না তাঁরা রিক্ত থেকে যাবেন। সুতরাং ‘ঈশ্বর আছেন’ এরূপ স্বীকার করাই সকলের পক্ষে লাভজনক। কিন্তু শুধু ঈশ্বরকে মেনে সন্তুষ্ট হলেই চলবে না, তাকে লাভ করতে হবে; কারণ, তাঁকে পাবার সামর্থ্য সকল মানুষেরই আছে।
প্রাপ্তিযােগ্য কোন বস্তু থাকলে তবেই তার সম্বন্ধে বিধিনিষেধ বাক্য প্রযোজ্য হয়—‘প্রাপ্ত সত্যাং নিষেধঃ'। এ কথা কেউ বলা প্রয়ােজন মনে করে না যে, ‘ঘােড়ার ডিম হয় না। কারণ যা হতেই পারে না তার প্রসঙ্গে নিষেধ করাই অবাস্তব। তেমনি যদি ঈশ্বর নাই থাকেন তাহলে-‘ঈশ্বর নেই’-একথা বলার মানেই হয় না। সুতরাং ‘ঈশ্বর নেই’ বলাতেই প্রমাণিত হয় যে তিনি আছেন। 
যে ব্যক্তি ইংরাজী ভাষার অস্তিত্ব মানেন, তিনিই তা শেখবার চেষ্টা করতে পারেন, পড়াশুনা করে ইংরাজী ভাষা আয়ত্ত করতে পারেন। কিন্তু যারা ইংরাজী ভাষার অস্তিত্বই স্বীকার করেন না, তারা তা শেখবার প্রয়াস কেন করবেন ? যেমন, কারাের যদি ইংরাজীতে ‘তার’ (টেলিগ্রাম) আসে, সে ইংরাজী জানা ব্যক্তির দ্বারা তার মর্মোদ্ধার করে জানতে পারে যে তার কেউ খুব অসুস্থ এবং সেস্থানে গিয়ে সত্যই সে যদি জানতে পারে লােকটি ঠিকই অসুস্থ ছিল তখন তাকে বিশ্বাস করতেই হয় যে তারটি যখন ইংরাজী ভাষাতে লেখা তখন ইংরাজী ভাষা যথ্যথই আছে। যে ব্যক্তি ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সত্যি সত্যি আগ্রহী তাঁর সঙ্গে সাধারণ ব্যক্তির (যাঁরা ঈশ্বর লাভের জন্য সচেষ্ট নন) অনেক পার্থক্য দেখা যায়। তাঁর সঙ্গ করলে, কথা শুনলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। শুধু মানুষের নয়, বস্তুতঃ পশুপক্ষী ইত্যাদিও তার কাছে পেলে শাস্তি পায়। যাঁর ঈশ্বরপ্রাপ্তি ঘটেছে তার মধ্যে অনেক বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, যা কিনা সাধারণ মানুষের থাকে না। ঈশ্বর না থাকলে তাদের মধ্যে এই বিশেষ লক্ষণ কোথা থেকে আসে? সুতরাং মানতেই হবে যে ঈশ্বর আছেন।
মনুষ্যমাত্রই নিজের মধ্যে কিছু অপূর্ণতা, শূন্যতা অনুভব করে। এই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার যদি কোন কিছু না থাকত, তাহলে মানুষ এই অপূর্ণতা অনুভব করত না। যেমন মানুষের খিদে পেলে প্রমাণিত হয় যে খাবার বস্তু কিছু আছে। যদি খাদ্যবস্তু না থাকত, তাহলে মানুষের খিদে পেত না। পিপাসা পেলে প্রমাণিত হয় পানীয় বস্তু কিছু আছে, পানীয় না থাকলে মানুষ পিপাসা অনুভব করত না। সেভাবেই মানুষের অপূর্ণতা অনুভব হলে প্রমাণিত হয় যে, সেটি পূর্ণ করার মতে কোনকিছু আছে। যদি না পূর্ণত্ত্ব থাকত তাহলে মানুষ অপূর্ণতা অনুভব করত না। এই পূর্ণতত্ত্বকেই ঈশ্বর বলা হয়। 
কোন বস্তু থাকলে সেটি পাবার ইচ্ছা হয়। যে বস্তু নেই, সেটি পাবার ইচ্ছাও হয় না। যেমন কারাে কখনও আকাশের ফল খেতে বা আকাশের ফুলের আঘ্রাণ নিতে ইচ্ছা করবে না; কারণ, আকাশে ফল বা ফুল হয় না। মানুষমাত্রেরই এই ইচ্ছা হয় যে ‘আমি যেন চিরঞ্জীবী হই (কখনও না মরি)’, ‘সমস্ত কিছুর জ্ঞান প্রাপ্ত হই (যেন অজ্ঞান না থাকি)', এবং 'সদা সুখী হই (কথনও দুঃখ যেন না পাই’)। আমি “চিরকাল জীবিত থাকি'– এই হল সৎ-এর ইচ্ছা, ‘সকল জ্ঞান প্রাপ্ত হই'- এ হচ্ছে ‘চিৎ'-এর ইচ্ছা, ‘সদা সুখে থাকি’-এই হচ্ছে ‘আনন্দের’ ইচ্ছা। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ বলে এমন কিছু আছে যা পাবার ইচ্ছা সকল মানুষের মধ্যেই আছে। এই তত্ত্বকেই ঈশ্বর বলা হয়। 
কোনাে মানুষ যখন অন্য মানুষকে নিজের চেয়ে বড় বলে মেনে নেয়, তাতে আসলে সে ঈশ্বরবাদকেই স্বীকার করছে বােঝায়। কেননা এই বড় হওয়ার পরম্পরা যেখানে পৌছায়, সেটিকেই ঈশ্বর বলে। পূর্বের্ষামপি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাৎ। (পাতঞ্জল যােগদর্শন ১/২৬)। কোন মানুষ থাকলেই তার একজন বাবাও থাকবেন এবং তাঁর বাবারও একজন বাবা থাকবেন। এই পরস্পরা যেখানে সমাপ্ত হয়, তারই নাম ঈশ্বর-‘পিতাসি লােকস্য চরাচরস্য’ (১১/৪৩) একজন বলশালী থাকলে বুঝতে হবে, তার চেয়েও একজন বেশী বলশালী আছেন। এই উত্তরের যেখানে গিয়ে সমাপ্ত হয়, তারই নাম ঈশ্বর, কেননা তাঁর তুল্য বলশালী কেউ নেই। কেউ বিদ্বান হলে, তার চেয়েও বেশী বিদ্বান আর কেউ থাকবেন। এই বিদ্যাবত্তার যেখানে সমাপ্তি তিনিই ঈশ্বর, কারণ তার সমান বিদ্বান কেউ নেই ‘গুরুৰ্গরীয়ান্‌’ (১১/৪৩)। এর তাৎপর্য হচ্ছে যে বল, বুদ্ধি, বিদ্যা, যােগ্যতা, ঐশ্বর্য, শােভা ইত্যাদি গুণগুলির যেটি শেষ সীমা, অর্থাৎ পূৰ্ণতা, তাকেই ঈশ্বর বলা হয়; কেননা তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই,-‘ন ত্বৎসমােহস্তাভ্যধিকঃকুতোহন্যঃ (১১।৪৩)।
বস্তুতঃ ঈশ্বর মেনে নেবারই বিষয়, বিচার করবার বিষয় নয়। বিচার্য বিষয় সেটাই হতে পারে যাতে জিজ্ঞাসা থাকে এবং জিজ্ঞাসা সে বিষয়েই হতে পারে যার সম্বন্ধে আমাদের কিছুটা জানা আর কিছু অজানা। কিন্তু যাঁর সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না, তাঁর বিষয়ে জিজ্ঞাসা বা বিচার করা যায় না। তাঁকে আমরা মানি বা না মানি এ ব্যাপারে আমরা স্বতন্ত্র বা স্বাধীন। এই জগৎ-সংসার দৃষ্টিগােচর হলেও এর আসল তত্ত্ব কি তা আমরা জানি না; অতএব জগৎ-সংসার বিচার করে বােঝার বিষয়। তেমনি জীবাত্মা স্থাবর বা জঙ্গমরূপে শরীরধারীরূপে দৃষ্টিগােচর হয়ে থাকেন। কিন্তু জীবাত্মা আসলে কি তা আমরা জানি না, অতএব জীবাত্মাও বিচার করে বােঝার বিষয়। কিন্তু ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না, সুতরাং ঈশ্বর বিচার বা তর্কের বিষয় নয়, বস্তুতঃ তিনি শ্রদ্ধা এবং মান্য করারই বিষয়। শাস্ত্রের দ্বারা অথবা তত্ত্বদৰ্শী বা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন সাধু ও মহাপুরুষের কাছে শুনেই ঈশ্বর আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। শাস্ত্র এবং সাধু দুই-ই বিশ্বাস করার বিষয়। যেমন বেদ ও পুরাণ ইত্যাদিতে হিন্দুদের বিশ্বাস আছে কিন্তু মুসলমানদের নেই, তেমনি সাধু মহাপুরুষদের ও কেউ মান্য করেন, কেউ করেন না; বস্তুতঃ তাদের সাধারণ মানুষ বলে মনে করেন। 
#গীতা_দর্পণ
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দর্পণ

1 comment:

  1. How to open a sportsbook in Mississippi - Dr.MCD
    How to open a sportsbook 광주광역 출장안마 in Mississippi? For example, if you 서울특별 출장안마 are 사천 출장마사지 betting on 안동 출장안마 an NBA team, 부산광역 출장마사지 you will see that you have the “Minnesota

    ReplyDelete