Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, May 4, 2018

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৭) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

আমাদের পারমার্থিক কর্মে বা শাস্ত্র পাঠে একটি বিষয় আলোচিত হয় যে, এখানে তোমার অধিকার নেই ওখানে আছে! কেন এমন? কি ছিল বৈদিক ঋষিদের উদ্দেশ্য ?
আজকের বিষয় অধিকারীঃ ‘অধিকারী’ বলতে এখানে বেদান্তশাস্ত্রের তাৎপর্য অনুধাবনের অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে। যিনি বেদান্তশাস্ত্রের বিষয় বুঝতে, শাস্ত্রের নির্দেশ যত্নসহকারে পালন করতে এবং সদা সৎকর্মে ব্যাপৃত থাকতে সক্ষম, তিনিই বেদান্ত দর্শনের মর্মকথা অনুধাবনের অধিকারী। এজন্যেই অধিকারীকে প্রথমত ব্রহ্মচর্যাদির অনুষ্ঠানপূর্বক শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, জ্যোতিঃশাস্ত্র এবং ছন্দঃশাস্ত্র, এই ছয়টি অঙ্গের সাথে বেদ অধ্যয়ন করবে। এভাবে বেদ অধীত হলে আপাতত বেদার্থের অবগতি হবে। কাম্যকর্ম ও নিষিদ্ধকর্মের অনুষ্ঠান করলে অনুষ্ঠিত কর্মের ফলভোগের জন্য শরীর-পরিগ্রহ বা জন্ম অবশ্যম্ভাবী। শরীরপরিগ্রহ এবং কর্মফলভোগ, উভয়ই বন্ধনের হেতু বা বন্ধন। বন্ধনাবস্থায় মুক্তি অসম্ভব। কারণ, বন্ধন ও মুক্তি পরস্পরবিরুদ্ধ। অতএব কাম্য ও নিষিদ্ধ কর্ম বর্জন করবে। এবং নিত্য, নৈমিত্তিক ও প্রায়শ্চিত্তের অনুষ্ঠান করবে। তাই ‘বেদান্তসার’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, যিনি বিধিপূর্বক বেদ-বেদান্ত অধ্যয়ন করে তার মূলমর্ম গ্রহণ করেছেন এবং ইহজন্মে বা জন্মান্তরে কাম্য কর্ম ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ কর্ম ত্যাগপূর্বক কেবল নিত্য কর্ম, নৈমিত্তিক কর্ম ও প্রায়শ্চিত্তের অনুষ্ঠানের দ্বারা নিষ্পাপ ও নির্মলচিত্ত হয়েছেন, তিনিই বেদান্ত পাঠের অধিকারী। বেদান্তের অধিকারী সাধন-চতুষ্টয়ের অনুসরণ করে থাকেন। এই সাধন-চতুষ্টয় হলো- (১) বিবেক, (২) বৈরাগ্য, (৩) সাধন-সম্পত্তি ও (৪) মুমুক্ষুত্ব।

‘বিবেক’ বলতে বোঝায় নিত্যানিত্যবস্তুবিবেক। অর্থাৎ কোন্ বস্তু নিত্য, কোন্ বস্তু অনিত্য, নিত্য ও অনিত্য বস্তুর ভেদ কী প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞানই হলো বিবেকজ্ঞান। এই জ্ঞানের দ্বারাই কোন্ বস্তু গ্রহণীয় এবং কোন্ বস্তু বর্জনীয়, তা নির্ধারণ করা সম্ভব। ‘বৈরাগ্য’ বলতে বোঝায় ঐহিক ও পারলৌকিক সকল প্রকার সুখের প্রতি বিরাগ। ‘সাধনসম্পত্তি’ বলতে বোঝায় শম্, দম্, উপরতি, তিতিক্ষা, সমাধান ও শ্রদ্ধা। ‘মুমুক্ষুত্ব’ বলতে বোঝায় ব্রহ্মোপলব্ধি তথা মোক্ষলাভের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা।

এখানে উল্লেখ্য, আত্মসাক্ষাৎকারের উপযোগী শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন এবং তার অনুকুল বিষয় ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বিষয় থেকে অন্তঃকরণের নিয়ন্ত্রণ বা নিগ্রহের নাম শম, এবং এসব বিষয় থেকে বাহ্যকরণ অর্থাৎ চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের নিগ্রহকে দম বলা হয়। উপরতি হলো সন্ন্যাসাশ্রম গ্রহণপূর্বক শাস্ত্রবিহিত কার্যকলাপ পরিত্যাগ। তিতিক্ষা হলো শীত-তাপ, সুখ-দুঃখ, মান-অপমান ইত্যাদি পরস্পরবিরুদ্ধ প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও কষ্টসহিষ্ণু থাকা। দর্শন, শ্রবণ ইত্যাদি এবং তার অনুকুল বিষয়ে মনের সমাধি বা একাগ্রতা অর্থাৎ তৎপরতার নাম সমাধান। আর গুরুবাক্য এবং বেদান্তবাক্যে বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা বলা হয়।
ক্রমশঃ

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৬) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

আমাদের নিকট বেদের কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড সকলের বিশেষ রূপ প্রকাশ না থাকায় এবং ধর্ম শাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবে বেদের সাথে পুরাণ, ইতিহাসের বিভিন্নতা অনুমান করি। বাস্তবিক বেদ থেকে পুরাণ, স্মৃতি, আগম অর্থাৎ তন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত শাস্ত্রেরই উৎপত্তি হয়েছে। যদিও ঐ সকল শাস্ত্রে পরস্পর বিরোধ অর্থাৎ বিপরীত বিধান দেখা যায়, তারও হেতু বেদ ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। মনের গুণ ভেদে লোকের অধিকার ভেদ হয়, এজন্য অধিকার ভেদে বেদে পরস্পর বিপৰ্য্যয় নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সুতরাং একের সাথে অন্য শাস্ত্রের বিরোধ মনে হয়। বেদে যে প্রকার কৰ্ম কাণ্ড, উপাসনা কাণ্ড, এবং জ্ঞান কাণ্ড আছে পুরাণে এবং তন্ত্রেও তেমনি কৰ্ম, উপাসনা, এবং জ্ঞান সম্বন্ধে উপদেশ দেখা যায়। বেদ, পুরাণ, ইতিহাস এবং তন্ত্র সকল শাস্ত্রেরই প্রতিপাদ্য ব্ৰহ্ম। তার অতিরিক্ত অন্য কোন দেবতার উপাসনা করার উপদেশ মুমুক্ষু জনগণের প্রতি কোথাও দেখা যায় না। কায় মনো বাক্যে ভক্তি পূর্বক, পরাৎপর পরমেশ্বরের উপাসনা করেই” মনের শান্তি লাভ করবার বিধান সর্বত্রই দেখা যায়। তবে কেবল এই মাত্র প্রভেদ, যে, বেদ-যা বলছেন, পুরাণ আদি তার আচরণের উপায় বলেছেন, যথা বেদ এই আদেশ করেন যে- “আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যোমন্তব্যে নিদিধ্যাসিতব্যঃ”। অর্থঃ অরে আত্মা শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন দ্বারা সাক্ষাৎকার হতে পারে। কিন্তু বিষয় আসক্ত বেদ অনভিজ্ঞ লোকদেরকে সেই শ্রবণ আদি অনুষ্ঠান করবার উপায় পুরাণ আদি নানা শাস্ত্ৰে বলা হয়েছে। যদিও শাস্ত্ৰে উপাসনাকাণ্ডে অর্থাৎ ভক্তি প্রকরণে বিবিধ দেব দেবীর প্রসঙ্গে মানুষের ন্যায় ‘তাঁদের বাসস্থান ও পরিবার এবং বাহন ইত্যাদি থাকার বিবরণ ও সেই সেই দেবদেবীর উপাসনা করবার উপদেশ অথবা উপাস্য দেবের বিভিন্নতা দেখা যায়, তথাপি এটা বেদের আশ্চৰ্য কৌশল জানবে, এর কারণ ও প্রমাণ অন্যান্য পর্বে তুলে ধরবো। বিভিন্ন দেবতাদের উপাসনার বিধি শাস্ত্ৰে আছে, কিন্তু তা বিষয় ভোগার্থি লোকের প্রতি বলা হয়েছে, দেবতারা আমাদের ন্যায় জড় জীব এটা বিষ্ণুপুরাণের পঞ্চম অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সুতরাং তারাও নশ্বর, যেহেতু জড় পদার্থ মাত্রই ধ্বংস হয়ে থাকে। বিশেষতঃ তার প্রমাণ শ্রুতিতেও আছে যথা- ‘ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্ত্য লোকং বিশন্তি”। এর ভাবাৰ্থ এই যে মানুষ সকল পুণ্য দ্বারা দেবত্ব প্ৰাপ্ত হন, পুণ্যক্ষয় হলেই তাঁরা স্বৰ্গচ্যুত হয়ে মৰ্ত্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ করেন। এবং শ্ৰীমদ্ভাগবতের পঞ্চম স্কন্ধের উনবিংশতি অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যে স্বর্গের এবং পৃথিবীর অপরাপর খণ্ডের জীবেরা ভারতবর্ষে এবং ভারতবর্ষের লোকেরা স্বৰ্গ আদিতে জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ জীব সকল নিজ নিজ কর্ম বশে স্বৰ্গ মৰ্ত্ত্য আদি নানা স্থানে ভ্ৰমণ করে, এবং ভবিষ্যোত্তর পুরাণের চতুৰ্থ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে যে শুভ কর্মে দেবত্ব, শুভ অশুভ মিশ্রিত কর্ম দ্বারা মনুষ্যত্ত্ব, এবং অশুভ কৰ্ম দ্বারা তিৰ্য্যক-যোনিত্ব লাভ হয়। দেব-দেবীর যে সমস্ত স্ত্রী, পুরুষ, পুত্র, কন্যা নামে রূপ বর্ণনা দেখতে পাই তারা সকলেই এক পরব্রহ্মেরই রূপ হয়, তা ভিন্ন ভিন্ন দেব দেবীর নয়। এবং বিবিধ প্রকারে যে উপাসনা করা যায়, সেও তার ব্যতীত অন্যের নয়, উপাসনা ভেদে ফলের পার্থক্য। এ বিষয়ে আমরা আগামী পর্বে বিস্তারিত তুলে ধরবো।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীত স্কুল।
ক্রমশঃ

Tuesday, May 1, 2018

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৫) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

সমাজ পরিবার থেকে ধর্ম সংস্কৃতির মর্ম না জেনেই এক ব্যক্তি সংসারে নানা সমস্যায় জর্জরীতে হন এবং সংসারে প্ৰতি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে ঘর ছেড়ে কোন নির্জন স্থানে এক গাছের ছায়ায় বসে মনে মনে ভাবছেন শুনেছি ধর্ম মানুষের মনে শান্তি আনয়ন করে; এ বিষয়ে নানা রকম আলোচনা করছিলেন। খৃষ্টান, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে কিছু মাত্র সার পদাৰ্থ না পেয়ে অত্যন্ত খুন্ন হন। তিনি ধর্মে বিস্তর গোলযোগ দেখছেন, অর্থাৎ নানা শাস্ত্রের নানা মত, বেদে নিরাকার অদ্বয় ব্রহ্মের এবং তন্ত্রে ও পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা বিহিত হয়েছে, আর সেই উপাসনার প্ৰণালীও এক রকম নয়। অতএব এ অবস্থায় ঐধর্মের অনুগামী হওয়া কৰ্ত্তব্য কি ধর্মান্তর অবলম্বন করা উচিত হয়, আমি এই চিন্তায় অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে
ধর্ম বক্তার শরণাপন্ন হয়ে বললেন, আপনি অনুগ্রহ পূর্বক সংশয় ছিন্ন করে উপদেশ অমৃত বর্ষণ করেন, তাহলে সুস্থ হতে পারি, নতুবা আর দ্বিতীয় উপায় নেই।
ধর্ম বক্তা বললেন- আমি তোমার কথা শুনে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলাম, এবং তোমাকে সাধুবাদ প্ৰদান করলাম। দেখ বাবা, এখন অনেকেই হিন্দুশাস্ত্রের মর্ম অবগত হতে না পেরে তাকে ভ্ৰান্তিমূলক বিবেচনায় অগ্ৰাহ করে থাকে, এটা অপরিচিত ব্যক্তির নাম শোনা মাত্র তাকে দোষী বলার ন্যায়, অতি অনুচিত ব্যবহার করা, তাতে সন্দেহ নেই। অতএব তুমি যে তা না করে স্বজাতীয় ধর্ম শাস্ত্রের দোষগুণ বিবেচনা করার প্রয়োজনে ঐ শাস্ত্রের অভিপ্রায় জানতে ইচ্ছুক হয়েছ, এর থেকে অধিক প্রশংসনীয় কর্ম আর কি হতে পারে? সেজন্য তোমাকে সাধুবাদ দিলাম। এখন আমি তোমার সংশয় নিরশনে আলোচনা শুরু করছি। তুমি ভক্তি ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে সংশয় দূরীভূত কর। শাস্ত্ৰ সকল পরস্পরে কোন বিরোধ নেই। কারন-
মুল শাস্ত্ৰ যে শ্রুতি তার নানা অর্থধোধকতা সংযোগ করে ভিন্ন ভিন্ন ঋষি তার ভিন্ন ভিন্ন ভাব গ্রহণ করেছেন। নিজ অভিপ্ৰায় অনুসারে শাস্ত্ৰ রচনা করেছেন, এতে একই প্রধান শাস্ত্ৰে সামান্য বিষয়ে মতভেদ দেখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ সাধু লোক যে মতের অনুগামী হয়েছেন তাই আমাদের গ্রহণযোগ্য, যেহেতু শাস্ত্ৰেই উল্লেখ আছে যে “কেবলং শাস্ত্ৰমাশ্ৰিত্য ন কৰ্ত্তব্যোবিনির্ণয়ঃ। যুক্তিহীন বিচারে তু ধৰ্ম্মহানিঃ প্রজায়তে”। ইতি (ব্যবহার তত্ত্বে) বৃহস্পতিবচনং।
অৰ্থঃ কোন কৰ্ত্তব্য কর্মের নির্ণয় করতে হলে কেবল শাস্ত্ৰ আশ্ৰয় করা উচিত নয়, যেহেতু যুক্তি হীন বিচারে ধর্মের হানি হয়।
পুনরায় –
“বেদা বিভিন্নঃ স্মৃতিয়ে বিভিন্ন নাসেী মুনির্যন্ত মতং ন ভিন্নং।
ধৰ্ম্মৱন্ত তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াং মহাজনো যেন গভঃ সপস্থাঃ”।
অর্থঃ
“বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্ৰ এক মত নয়।
স্বেচ্ছামত নানা মুনি নানামত কয়॥
কে জানে নিগুড় ধর্ম তত্ত্ব নিরূপণ!
সেই পথ গ্রাহ্য যাহে যায় মহাজন॥”
ইতি মহাভারত বনপৰ্ব্ব ।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৪) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

আমরা বলে থাকি মনুষত্ব হলেই তো হল আবার ধর্মের প্রয়োজন কি, সবার প্রতি সাম্য, সুখে দুখে অন্যের পাশে দাঁড়ানো এসব করা গেলেই হতো হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রাচীন ঋষিরা এবিষয়ে কি নির্ধারণ করেছেন তা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক বা সেই উন্নত চিন্তার প্রকাশ কি আজও প্রতিফলিত হচ্ছে না!
ধর্ম কথাটির যে স্বরূপ তা নানাভাবে পরিপুষ্ট ও পরিস্ফুট হয়ে সনাতন ধর্মে ব্যক্ত হয়েছে। মানুষের মনুষ্যত্বের পূর্ণতা সাধন ধর্মের উদ্দেশ্য-এই মনুষ্যত্বের সাহায্যে দেবত্বপ্রাপ্তি বা পরমসুখলাভ বা আত্যন্তিক দুঃখনাশ, এটাই সনাতন ধর্মের মূল কথা। দুঃখনাশ ও সুখপ্রাপ্তি সর্বদেশেই মানুষের চরমকাম্য-সকলেই দুঃখতাপদগ্ধ, কেউ নিজ অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। নানাভাবে দুঃখদূর করবার বহু টেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সর্বদুঃখ দূর হবে মনে করে রাষ্ট্রীয় নীতি সংস্কারে বহু লােক মনােযােগী হয়েছেন। কেউ বা সমাজের রীতিনীতিগুলির আমূল সংস্কারপুর্বক সমাজে সুখসঞ্চলের চেষ্টা করেছেন। কেউ বা অর্থনীতির দিক দিয়ে কিভাবে সর্ববিষয়ে সুখসমৃদ্ধি আনা যায়, তারই চেষ্টা করেছেন। এই সকল আন্দোলন বা প্রচেষ্টা আধুনিক যুগে আধুনিক রীতিতে প্রচারিত হচ্ছে। ভারতবর্ষে সনাতন ধর্ম এই সকল ভাব অবলম্বন না করেই তার ও মৌলিক বা নিজস্ব রীতি(অন্যকে পরিবর্তন করা চেষ্টা না করে স্বয়ং কে পরিবর্তন করার উপায়) অবলম্বন করেছে। মানুষের সুখ আহার নিজস্ব বা আত্মবশ; বাইরের বস্তুর উপর সুখসমৃদ্ধি নির্ভর করে। সুখদুঃখ সকলই আপেক্ষিক শব্দ (relative term); এটার কোন সংজ্ঞা নেই-সুখদুঃখ কাকে বলে তা নিয়ে নানামত। একজনের নিকট যা শ্রেয়ঃ ও প্রেয় অপরের নিকট তা হেয় ও অগ্রাহ্য; বস্তুতঃ কোন বস্তুবিশেষে সর্বাঙ্গীন সুখ নেই; প্রত্যেক বস্তুতেই সুখ ও দুঃখ সংমিশ্রিত রয়েছে। অর্থের আগমনে যেমন সুখ এর অর্জনে সংরক্ষণে তেমনি দুঃখ। অর্থ যেমন পরমার্থ সেইরকমই আবার অনৰ্থ; প্রত্যেক বস্তুরই বিচারের এরকম সুখ ও দুঃখ মিশে আছে। রাষ্ট্রনীতির আমূল পরিবর্তনে যদি সুখ হোত তবে আমেরিকার দুঃখ ঘুচিত-বেকারের সংখ্যা লুপ্ত হোত। সমাজনীতি সংস্কারে যদি তা পেতাম, তবে ইউরােপে যেখানে স্ত্রীপুরুষে বৈষম্য নেই জাতিভেদ নেই, বিবাহবিচ্ছেদ চলে, সে দেশে সামাজিক সুখের পরাকাষ্ঠা দেখা যেত। কিন্তু এ সকলে মানবে আত্যন্তিক দুঃখনাশ ঘটে না; এ ভাবের সাধনার সীমা নেই। এসকল খণ্ডপ্রচেষ্টা ও সাময়িক ব্যাপার-এতে মানুষের চিরন্তন দুঃখ যাবার নয়-সুতরাং যা নিত্য ও সত্য, শাশ্বত ও সনাতন, সেই পথে যেতে হবে। ‘ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি’ এই কারণে ভারতের সাধনা আধ্যাত্মিক পথ অবলম্বন করে সর্বদুঃখনাশের পথ দেখাচ্ছে-মানুষ যাতে মানুষ হয়, দেবতা হয়, আপনার সন্ধান পায় ,অমৃতের স্বাদ লাভ করে, সচ্চিদানন্দের উপলব্ধি করে-রসং লব্ধা হ্যেবায়মানন্দী ভবাত- যা পেলে আর অধিক লাভ চায় না-সেই স্বরাজ্য সিদ্ধির পথ দেখায়। মানুষের তারই করায়ত্ত্ব- ধর্মের আশ্রয় তার প্রধান আশ্রয়। আলেয়ার আলােকে দিগভ্রান্ত না হয়ে ধর্মের স্থির ও ভাস্বর জ্যোতিঃ অনুসরণ করলে লক্ষ্যহীন হয়ে ঘুরতে হবে না।
ধর্মের দুই মুর্ত্তি-ব্যক্ত ও অব্যক্ত; ব্যক্তমুর্ত্তি সমাজ শরীর অবলম্বন পূর্বক ফুটে উঠে; ধর্মাবলম্বীর আচারবিচার ব্যবহার, সাধনা, চিন্তার ধারা, নৈতিক সংস্কার, দৈনন্দিন জীবন প্রভৃতির মধ্যে ধর্মের যে বাহ্যরূপ ফুটে উঠে, তা ব্যক্তস্বরূপ। যে মূলনীতি অবলম্বন করে ধর্মের বাহ্যরূপ বিকশিত হয়, তাহাই ধর্মের প্রাণ। আমাদের এই সনাতন ধর্মকে শাস্ত্রে ‘উর্দ্ধমূলমধঃশাখমশ্বত্থং প্রাহুরব্যয়ম’ বলে নির্দেশ করেছেন। এর মূল স্বয়ং শাশ্বতধর্মগােপ্তা বাসুদেব ও ব্রাহ্মণগণ। শ্রীভগবান এর মূল-ইনি ব্রহ্মণ্যদেব, গোব্রাহ্মণ হিতকারী ও জগদ্ধিতকারী। ধর্মের মূল শ্রীভগবান্ ও শ্রীভাগবত সম্প্রদায় ব্রাহ্মণবর্গ।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।
ক্রমশ.....

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৩) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

বৈদিক ঋষিরা মানুষের মনুষত্বকে জাগিয়ে তোলার জন্য নানা দর্শন ও ভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং উপস্থাপন করেছেন নানা যুক্তি- এই যে আমরা ধর্ম ধর্ম বলছি, এর মূল কথাই হল মানুষের নৈতিক ও উত্তম চরিত্রের গুণাবলিতে প্রকাশ করা। এজন্য তারা বলছেন-
দুঃখের নিবৃত্তি ও সুখের সন্ধানে মানুষ একান্ত ভাবে ব্যস্ত; মানুষকে পশুপাশ হতে বিমুক্ত করাই ধর্মের উদ্দেশ্য। ধর্মের আবশ্যকতা সম্বন্ধে প্রমাণ প্রয়ােগের প্রয়ােজন নেই। কারণ এটাই স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে ধৰ্ম ভিন্ন মানুষ মানুষ হতে পারে না। ধৰ্ম বা অধৰ্ম বা অসৎ ধর্ম নিয়ে কথা উঠতে পারে; কিন্তু ধর্মের একান্ত অভাব বা ন-ধর্ম বলে কোন কথা থাকতে পারে না। যারা ধর্মের মিশে থাকতে চান না তাদের জীবন পশুর জীবন-
যেহেতু-
আহার নিদ্রা ভয়মৈথুনঞ্চ সামান্যমেতৎ পশুভিন রাণাম্।
আর এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য যে জ্ঞান, তা পশুদেরও আছে। এজন্য চণ্ডীতে বলা হয়েছে,-
জ্ঞানিনাে মনুজাঃ সত্যং কিন্তু তে নহি কেবলম্।
যতো হি জ্ঞানিনঃ সর্ব্বে পশুপক্ষিমৃগাদয়ঃ॥
-শ্রীচণ্ডী ১/৪৪
অর্থ- মানুষ মাত্রেই জ্ঞানসম্পন্ন এটা সত্য, কিন্তু কেবল মানুষ নয়, পশু, পাখী, মৃগ প্রভৃতিরাও বিষয়ের উপলব্ধি করে থাকে সুতরাং তাদেরও জ্ঞানী বলা যায়।
আমরা আর্য্য(সভ্য জাতির) সন্তান-বহুপুণ্যে মুক্তিক্ষেত্র ভারতবর্ষে(ভা=জ্ঞানের কিরণ+রত) জ্ঞানের ভূমিতে জ্ন্মলাভ করেছি। জড় হতে চেতন শ্রেষ্ঠ চেতনের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ; মানুষের মধ্যে আবার আর্য্য(যারা সভ্য) শ্রেষ্ঠ। লক্ষ লক্ষ যােনি(শরীর বা জন্ম) ভ্রমণ পূর্বক প্রাপ্ত মানবজীবন যদি হেলায় নষ্ট করি, তা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় কি আছে ? জন্ম মাত্রই দুঃখের, জীবন দুঃখের, মানুষ হয়ে যদি মানুষ না হওয়া যায় তার মত দুঃখের আর কিছু নেই। এই দুঃখদাহ জ্বালা এড়ানোর জন্য ধর্মের শরণ লওয়া আবশ্যক। ধর্মময় অমৃতফল গ্রহন করে আমরা মানুষেরা ‘অমৃতত্বায় কল্পতে’; আমরা তা ত্যাগ করে ক্ষণবিধ্বংসি আপাত সুখদ ইতর ইন্দ্রিয়সুখে মগ্ন হয়ে ইহলােক সর্বস্ব হয়েছি, নিজের মৃত্যুর জন্য সমাধিগহ্বর নিজেই রচনা করছি। এই দুঃখশত সমাকুল ভীমভবার্ণবে আমরা পরমা ভয়প্রদ অশরণের শরণ ধর্ম নৌকার আশ্রয় নিচ্ছি না, কি মাশ্চর্য্যমতঃ পরম?

একটু ভাবুনতো এমন করে পৃথিবীর কোন দর্শন আপনাকে বলছে, এমন উদার আহ্বান কেউ করেছেন, আমরা সভ্য জাতি গঠনের যে উপাদান নিয়ে ভাবি তা ঋষিরাও বলেছেন কিভাবে মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করে সভ্য হতে পারে।
নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল
ক্রমশ.....

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ২) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

কালে কালে ধর্মহীনতা বৃদ্ধির কারনে ধর্মজ্ঞান প্রচারকেরা দেখলেন,
অশ্রদ্ধাবান এবং কু-তৰ্ককারী ব্যক্তিদের কিছুতেই শ্রদ্ধার উদয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সুতরাং তাদের নিকট শাস্ত্র তাৎপৰ্য্য প্রকাশের ভূয়োভুয়ঃ নিষেধ করেছেন, আবার যে সকল ব্যক্তি ঈশ্বর নিষ্ঠ, অথচ কেবল শাস্ত্রের যথার্থ তাৎপৰ্য্য অবগত হতে না পারাতেই শ্রদ্ধা বিহীন হয়েছেন তাদের অবশ্যই শাস্ত্র কথা শুনাতে নিশেধ নেই, যেহেতু তারা শাস্ত্রের তাৎপৰ্য্য অবগত হতে পারলেই তার অনুগামী হয়ে দুস্তর ভব সমুদ্র পার হওয়া জন্য যত্ন করতে পারবেন তার সন্দেহ নেই। অতএব ঐরকম ব্যক্তিদের বোঝার সুবিধা করা প্রয়োজন। যদিও এবিষয়টি সম্পাদনে সাধারণ বিদ্যা, বিজ্ঞান বিষয়ে ধারনা, শাস্ত্ৰজ্ঞান, ঈশ্বরে অচলা ভক্তি, এবং বাংলা ভাষায় রচনা শক্তি ইত্যাদি যে সকল গুণ আবশ্যক।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।
ক্রমশ....

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ১) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

অতীত কালে এই ভারতবর্ষ স্বাধীন থাকায় এতে কেবল এক সনাতন ধর্মের প্রচলন ছিল, এবং সর্ব সাধারণই ধর্ম পরায়ণ এবং ধর্ম নিয়ে নিজেদের মধ্যে অধিক বাদানুবাদও ছিল না, কিন্তু কাল ক্ৰমে ভারতবর্ষে বিজাতীয় রাজাদের অধিকার ভুক্ত হওয়ায় ক্রমশঃ ইসলাম ও খ্রিষ্টান প্রভৃতি বিজাতীয় ধর্মের শক্তি বৃদ্ধি হওয়াতে কিছু কাল থেকে ধর্ম বিষয়ে নান৷ প্রকার তর্ক বিতর্ক উপস্থিত হয়েছে। বিশেষতঃ মুসলমান ও ইংরাজদের শাসন লাভের পর মিশনারি ও আরব্য অর্থের সহায়ে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার অভিপ্ৰায়ে পৌরাণিক ইতিহাস ও সনাতন ধর্মের রূপক কথা সমূহের প্ৰতি মিথ্যা দোষ আরোপ করে আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্মের গ্লানি ঘোষণা করছে। অশিক্ষিত ও শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে কেউ কেউ শাস্ত্র তাৎপর্য্যে অনভিজ্ঞতায় ঐ অমূলক মিথ্যা গ্লানিকে যথার্থ এবং তান্ত্রিক উপাসনাকে ভ্ৰান্তি মুলক বুঝে পবিত্র সনাতন ধর্ম একেবারে অগ্ৰাহ করে কথিত ধর্মান্তরিত হচ্ছে, এবং কেউ বা যুক্তি বিরুদ্ধ বিবেচনায় শাস্ত্রীয় উপাসনা ও কৰ্ম কাণ্ডের প্রতি সন্দিহান হয়ে আচার সমুহকে কুসংস্কার বলছেন। ধর্মান্তরেনের আধুনিকায়নে যুক্ত হয়েছে লোভ লালসা, অর্থনৈতিক মুক্তি প্রাপ্তি(অর্থের লোভ) বা সামাজিক ভাবে বর্ণপ্রথার কুফল, অনৈক্যতা।

আমাদের ধর্ম শাস্ত্ৰ, বাইবেল ও ‘কোরাণের মত একটি বই মাত্র নয়, যে সেগুলি পড়লেই শাস্ত্ৰজ্ঞ হওয়া যায়। বিশেষতঃ উত্তম, মধ্যম অধম, তিনটি অধিকার ভেদে বিশেষ বিশেষ নিয়ম সকলের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, এবং মানুষের প্রবৃত্তি অনুসারে কিছু বিষয় পরোক্ষ ভাবে(রূপক) লেখা হয়েছে, ও অনেক অর্থবাদও বর্ণনা করা হয়েছে। এই সকল কারনে প্রকৃত তাৎপৰ্য রূপ রত্ন সকল শাস্ত্র সমুদ্রের গর্ভে নিহিত রয়েছে,যা শুধুমাত্র শ্রদ্ধাবানের কাছেই প্রকাশিত হয়।

সুতরাং বৈদিক শাস্ত্র সমূহের পুনপ্রচার, বিশেষ করে বেদ-উপনিষদ-গীতা গ্রন্থ পাঠে প্রজন্মকে শাস্ত্ৰ আলোচনা করা ছাড়া বৈদিক সনাতন ধর্মের যথার্থ তাৎপর্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই অতএব এখন সাধারণের বোধ হতে পারে এবং বিজ্ঞান ও যুক্তি নির্ভর সনাতন ধর্ম প্রচারে আমাদের সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক হয়ে উঠেছে। আমরা আশাকরি এবিষয়ে আপনারা এগিয়ে আসবেন, নিজের ধর্মধ্বজা এবং জাতিসত্ত্বাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
ঈশ্বর সকল শুভ শক্তির সহায় হোন।

নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।
ক্রমশ.......