বৈদিক ঋষিরা মানুষের মনুষত্বকে জাগিয়ে তোলার জন্য নানা দর্শন ও ভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং উপস্থাপন করেছেন নানা যুক্তি- এই যে আমরা ধর্ম ধর্ম বলছি, এর মূল কথাই হল মানুষের নৈতিক ও উত্তম চরিত্রের গুণাবলিতে প্রকাশ করা। এজন্য তারা বলছেন-
দুঃখের নিবৃত্তি ও সুখের সন্ধানে মানুষ একান্ত ভাবে ব্যস্ত; মানুষকে পশুপাশ হতে বিমুক্ত করাই ধর্মের উদ্দেশ্য। ধর্মের আবশ্যকতা সম্বন্ধে প্রমাণ প্রয়ােগের প্রয়ােজন নেই। কারণ এটাই স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে ধৰ্ম ভিন্ন মানুষ মানুষ হতে পারে না। ধৰ্ম বা অধৰ্ম বা অসৎ ধর্ম নিয়ে কথা উঠতে পারে; কিন্তু ধর্মের একান্ত অভাব বা ন-ধর্ম বলে কোন কথা থাকতে পারে না। যারা ধর্মের মিশে থাকতে চান না তাদের জীবন পশুর জীবন-
যেহেতু-
আহার নিদ্রা ভয়মৈথুনঞ্চ সামান্যমেতৎ পশুভিন রাণাম্।
আর এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য যে জ্ঞান, তা পশুদেরও আছে। এজন্য চণ্ডীতে বলা হয়েছে,-
জ্ঞানিনাে মনুজাঃ সত্যং কিন্তু তে নহি কেবলম্।
যতো হি জ্ঞানিনঃ সর্ব্বে পশুপক্ষিমৃগাদয়ঃ॥
-শ্রীচণ্ডী ১/৪৪
অর্থ- মানুষ মাত্রেই জ্ঞানসম্পন্ন এটা সত্য, কিন্তু কেবল মানুষ নয়, পশু, পাখী, মৃগ প্রভৃতিরাও বিষয়ের উপলব্ধি করে থাকে সুতরাং তাদেরও জ্ঞানী বলা যায়।
আমরা আর্য্য(সভ্য জাতির) সন্তান-বহুপুণ্যে মুক্তিক্ষেত্র ভারতবর্ষে(ভা=জ্ঞানের কিরণ+রত) জ্ঞানের ভূমিতে জ্ন্মলাভ করেছি। জড় হতে চেতন শ্রেষ্ঠ চেতনের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ; মানুষের মধ্যে আবার আর্য্য(যারা সভ্য) শ্রেষ্ঠ। লক্ষ লক্ষ যােনি(শরীর বা জন্ম) ভ্রমণ পূর্বক প্রাপ্ত মানবজীবন যদি হেলায় নষ্ট করি, তা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় কি আছে ? জন্ম মাত্রই দুঃখের, জীবন দুঃখের, মানুষ হয়ে যদি মানুষ না হওয়া যায় তার মত দুঃখের আর কিছু নেই। এই দুঃখদাহ জ্বালা এড়ানোর জন্য ধর্মের শরণ লওয়া আবশ্যক। ধর্মময় অমৃতফল গ্রহন করে আমরা মানুষেরা ‘অমৃতত্বায় কল্পতে’; আমরা তা ত্যাগ করে ক্ষণবিধ্বংসি আপাত সুখদ ইতর ইন্দ্রিয়সুখে মগ্ন হয়ে ইহলােক সর্বস্ব হয়েছি, নিজের মৃত্যুর জন্য সমাধিগহ্বর নিজেই রচনা করছি। এই দুঃখশত সমাকুল ভীমভবার্ণবে আমরা পরমা ভয়প্রদ অশরণের শরণ ধর্ম নৌকার আশ্রয় নিচ্ছি না, কি মাশ্চর্য্যমতঃ পরম?
একটু ভাবুনতো এমন করে পৃথিবীর কোন দর্শন আপনাকে বলছে, এমন উদার আহ্বান কেউ করেছেন, আমরা সভ্য জাতি গঠনের যে উপাদান নিয়ে ভাবি তা ঋষিরাও বলেছেন কিভাবে মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করে সভ্য হতে পারে।
নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল
ক্রমশ.....
No comments:
Post a Comment