সমাজ পরিবার থেকে ধর্ম সংস্কৃতির মর্ম না জেনেই এক ব্যক্তি সংসারে নানা সমস্যায় জর্জরীতে হন এবং সংসারে প্ৰতি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে ঘর ছেড়ে কোন নির্জন স্থানে এক গাছের ছায়ায় বসে মনে মনে ভাবছেন শুনেছি ধর্ম মানুষের মনে শান্তি আনয়ন করে; এ বিষয়ে নানা রকম আলোচনা করছিলেন। খৃষ্টান, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে কিছু মাত্র সার পদাৰ্থ না পেয়ে অত্যন্ত খুন্ন হন। তিনি ধর্মে বিস্তর গোলযোগ দেখছেন, অর্থাৎ নানা শাস্ত্রের নানা মত, বেদে নিরাকার অদ্বয় ব্রহ্মের এবং তন্ত্রে ও পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা বিহিত হয়েছে, আর সেই উপাসনার প্ৰণালীও এক রকম নয়। অতএব এ অবস্থায় ঐধর্মের অনুগামী হওয়া কৰ্ত্তব্য কি ধর্মান্তর অবলম্বন করা উচিত হয়, আমি এই চিন্তায় অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে
ধর্ম বক্তার শরণাপন্ন হয়ে বললেন, আপনি অনুগ্রহ পূর্বক সংশয় ছিন্ন করে উপদেশ অমৃত বর্ষণ করেন, তাহলে সুস্থ হতে পারি, নতুবা আর দ্বিতীয় উপায় নেই।
ধর্ম বক্তা বললেন- আমি তোমার কথা শুনে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলাম, এবং তোমাকে সাধুবাদ প্ৰদান করলাম। দেখ বাবা, এখন অনেকেই হিন্দুশাস্ত্রের মর্ম অবগত হতে না পেরে তাকে ভ্ৰান্তিমূলক বিবেচনায় অগ্ৰাহ করে থাকে, এটা অপরিচিত ব্যক্তির নাম শোনা মাত্র তাকে দোষী বলার ন্যায়, অতি অনুচিত ব্যবহার করা, তাতে সন্দেহ নেই। অতএব তুমি যে তা না করে স্বজাতীয় ধর্ম শাস্ত্রের দোষগুণ বিবেচনা করার প্রয়োজনে ঐ শাস্ত্রের অভিপ্রায় জানতে ইচ্ছুক হয়েছ, এর থেকে অধিক প্রশংসনীয় কর্ম আর কি হতে পারে? সেজন্য তোমাকে সাধুবাদ দিলাম। এখন আমি তোমার সংশয় নিরশনে আলোচনা শুরু করছি। তুমি ভক্তি ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে সংশয় দূরীভূত কর। শাস্ত্ৰ সকল পরস্পরে কোন বিরোধ নেই। কারন-
মুল শাস্ত্ৰ যে শ্রুতি তার নানা অর্থধোধকতা সংযোগ করে ভিন্ন ভিন্ন ঋষি তার ভিন্ন ভিন্ন ভাব গ্রহণ করেছেন। নিজ অভিপ্ৰায় অনুসারে শাস্ত্ৰ রচনা করেছেন, এতে একই প্রধান শাস্ত্ৰে সামান্য বিষয়ে মতভেদ দেখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ সাধু লোক যে মতের অনুগামী হয়েছেন তাই আমাদের গ্রহণযোগ্য, যেহেতু শাস্ত্ৰেই উল্লেখ আছে যে “কেবলং শাস্ত্ৰমাশ্ৰিত্য ন কৰ্ত্তব্যোবিনির্ণয়ঃ। যুক্তিহীন বিচারে তু ধৰ্ম্মহানিঃ প্রজায়তে”। ইতি (ব্যবহার তত্ত্বে) বৃহস্পতিবচনং।
অৰ্থঃ কোন কৰ্ত্তব্য কর্মের নির্ণয় করতে হলে কেবল শাস্ত্ৰ আশ্ৰয় করা উচিত নয়, যেহেতু যুক্তি হীন বিচারে ধর্মের হানি হয়।
পুনরায় –
“বেদা বিভিন্নঃ স্মৃতিয়ে বিভিন্ন নাসেী মুনির্যন্ত মতং ন ভিন্নং।
ধৰ্ম্মৱন্ত তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াং মহাজনো যেন গভঃ সপস্থাঃ”।
অর্থঃ
“বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্ৰ এক মত নয়।
স্বেচ্ছামত নানা মুনি নানামত কয়॥
কে জানে নিগুড় ধর্ম তত্ত্ব নিরূপণ!
সেই পথ গ্রাহ্য যাহে যায় মহাজন॥”
ইতি মহাভারত বনপৰ্ব্ব ।
নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।
No comments:
Post a Comment