Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, October 19, 2017

দীপাবলি উৎসব কি ও কেন পালন করা হয়? -The history of Diwali(Dipabali)

পুরাণের কাল। কথাও পুরাণের। রামায়ণী যুগ। ১৪টা বছর অযোধ্যানাথের কাটল বনবাসে। বধ করলেন মহাবলী রাবণকে। এবার তিনি ফিরবেন লঙ্কা নগরী থেকে অযোধ্যা নগরীতে। এই নগরী কেমন ছিল রামায়ণী যুগে?

রাজশেখর বসুর ‘বাল্মীকি রামায়ণ’-এ মহাকবি বাল্মীকি লব কুশের মুখ থেকে রামায়ণ গানের মাধ্যমে প্রাচীন অযোধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে –

“সরযূ তীরে কোশল নামে এক আনন্দময় সমৃদ্ধিশালী প্রচুর ধনধান্যসম্পন্ন বৃহৎ জনপদ আছে। তার নগরী লোকবিশ্রুতা অযোধ্যা।… এই সুদৃশ্য মহানগরী দ্বাদশ যোজন দীর্ঘ, তিন যোজন বিস্তৃত এবং প্রশস্ত মহাপথ ও রাজমার্গে সুবিভক্ত। এই সকল পথ বিকশিত পুষ্পে অলংকৃত এবং নিত্য জলসিক্ত।… এই শ্রীসম্পন্ন অতুল প্রভাবান্বিত পুরী উচ্চ অট্টালিকা ও ধ্বজাসমূহে শোভিত এবং শত শতঘ্নী দ্বারা সংরক্ষিত। বহুস্থানে পুরনারীদের জন্য নাট্যশালা, উদ্যান ও আম্রবন আছে এবং চতুর্দিক শালবনে বেষ্টিত।

সেই অযোধ্যায় বেদজ্ঞ দূরদর্শী মহাতেজা প্রজাগণের প্রিয় রাজা দশরথ রাজত্ব করতেন। সেখানকার লোকেরা আনন্দিত, ধর্মপরায়ণ, শাস্ত্রজ্ঞ, নিজ নিজ সম্পত্তিতে তুষ্ট, নির্লোভ ও সত্যবাদী ছিল। অযোধ্যায় কামাসক্ত, নীচপ্রকৃতি বা নৃশংস পুরুষ অথবা অবিদ্বান বা নাস্তিক দেখা যেত না। এমন লোক ছিল না যে কুণ্ডল মুকুট ও মালা ধারণ করে না, যার দেহ অপরিষ্কৃত, যে চন্দনাদি লেপন করে না, যার অঙ্গ সুবাসিত নয় এবং যার ভোগের অভাব আছে। সেখানে নাস্তিক, মিথ্যাবাদী, অল্প শাস্ত্রজ্ঞ, অবিদ্বান অসূয়া পরবশ বা অসমর্থ কেউ ছিল না। পর্বতকন্দরে যেমন সিংহ থাকে সেইরূপ অযোধ্যায় অগ্নিতুল্য তেজস্বী চতুর অসহিষ্ণু (যে অপমান সয় না) ধনুর্বিদ্যায় শিক্ষিত যোদ্ধৃগণ বাস করতেন।”…

এমন অযোধ্যা নগরী চোদ্দটা বছর নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়েছিল রঘুকুলপ্রদীপ শ্রীরামচন্দ্র ছাড়া। অযোধ্যার কুলতিলক ফিরছেন, এই আনন্দ সংবাদে সম্পূর্ণ নগরী দীপমালায় সুসজ্জিত করে তুললেন অযোধ্যাবাসী। তাঁরা গা ভাসিয়ে দিলেন আনন্দলহরিতে। উৎসব মুখরিত অযোধ্যায় শ্রীরামচন্দ্র ফিরেছিলেন জনককন্যা জানকী ও অনুজ লক্ষ্মণকে নিয়ে। প্রজারা শ্রীরামচন্দ্র ও সীতাদেবীকে সম্মান ও অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন আলোকউৎসবের এই দিনটিতে। সেই দিনটি থেকে শুরু হল আনন্দময় দীপাবলি উৎসব।

দীপাবলী আর কালীপূজা কি এক?

অমাবস্যা তিথি। এদিন সারা পৃথিবীব্যাপী চলবে দীপাবলী আর মাতা মহাকালীকার পূজা এক কথায় কালীপূজা। কিন্ত আপনি কি জানেন, কালীপূজা আর দীপাবলী একই দিনে দুইটি ভিন্ন উৎসব?
কালীপূজার এই তিথী বছরে ঘুরে একবার আসে - মাংসাহারী তমসাচ্ছন্ন জীবদের কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্য থেকে ধীরে ধীরে মাংসাহারকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে যেতে! যা মনুসংহিতাসহ বিভিন্ন পুরাণে পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সময় পেলে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার আশা রাখছি। একটু টাচ করছি- এদিন কঠোর নিয়ম মেনে, কঠোর শর্তসাপেক্ষে আর আসন্ন নিহত ছাগল/ছাগ-শিশুর কাছ থেকে প্রতিঘাত পাবে এই প্রতিজ্ঞা করে ঘোর তমসাচ্ছন্ন বা পাপী ব্যক্তিদের সীমিত পরিসরে মাংসাহারের অনুমতি দেয়, যা পাপেরই শুরু যে কারণে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হওয়ার ফলও ভোগ করতে হয় পরবর্তীতে!
ছাগল/ছাগ-শিশু বধ করার সময় মনুসংহিতার এই মন্ত্র উচ্চারণ করতেই হয় তাদের! না করলে পাপ হয় অসীম! মন্ত্রটি হলো-
“...মাংস ইতি খাদতি মাংস”
যার অর্থ: আমি লোভ বশতঃ এ জীবনে তোমার মাংস ভক্ষণ করার জন্য তোমাকে বধ করছি। পরবর্তী জন্মে তুমিও আমাকে এভাবেই বধ করে আমার মাংস ভক্ষণ করিও!
তবে অনেকে ভাবতে পারে, তাহলে এই মন্ত্র না বলে পশুবলি দিব! তাতেও লাভ নেই। ফল একই সংঘটিত হবে। শুধু মাংসাহারীদের মাংসাহার থেকে ক্রমান্বয়ে বিরত রাখার তাগিদেই পরমেশ্বর ভগবানের এই অলঙ্ঘনীয় নিয়মটি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মাত্র। অবশ্য শাস্ত্রে এও আছে যে মায়ের সামনে কোন জীব হত্যা মাতা সহ্য করেন না। আর তিনি তো পরম বৈষ্ণবী। মাংসাহার তাঁর পক্ষে অসম্ভব।
যাই হোক এবার আসি দীপাবলী প্রসঙ্গ। কালীপূজা আর #দীপাবলীসৌভাগ্যবশতঃ একই দিনে পড়েছে। আসলে এ দুটি উৎসব সম্পূর্ণ ভিন্ন।
জগতে মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকারী ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র রাবণ বধ করে মাতা সীতাদেবী ও সপার্ষদ রওয়ানা দেন অযোধ্যর দিকে। ইতোমধ্যে ১৪ বছর বনবাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর রাজ্যাভিষেক নির্ধারিত ছিল। তাঁরা সবাই পুষ্পক রথে করে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে যুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুদের আতিথ্যগ্রহণ শেষে যখন অযোধ্যায় তিনি পৌঁছান তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল।
শ্রীরামের অযোধ্যায় ফেরার সংবাদে পুরো রাজ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। রাজ কর্মচারী তো বটেই স্বয়ং ভরত মহারাজ ও সমস্ত প্রজাগণও এমনকি স্বর্গের দেবতারাও এই সংবাদ পেয়ে শ্রীরামকে এক নজর অযোধ্যায় দেখার জন্য রাজপথে যেন মানুষ-দেবতাদের বন্যা বয়ে গেছে। শ্রীরাম বনে যাওয়ার পর মানুষ সন্ধ্যা প্রদীপ পর্যন্ত দিত না চরম দূঃখে। সেই সমস্ত জীবগণ শ্রীরামের ফেরার সংবাদে অতি খুশিতে নিজ নিজ বাড়িতে যেমন আলোর সারি জ্বালিয়েছেন তেমনি আলোর মশাল নিয়ে রাজপথে বেড়িয়ে এসেছেন প্রিয় রামকে এক নজর দেখার জন্য। সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়ায় এ আলোর মিছিল চলছিল পুরো অযোধ্যাসহ সমস্ত আর্যাবর্তেও।
এটিকেই প্রতিবছর স্মরণ করা হয় আলোর সারি জ্বালিয়ে। এটিই হলো দীপাবলী বা দিওয়ালীর মাহাত্ম্য। এটিকে দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত করা হয়।
এতদিন না জানলেও আজ থেকে আমাদের সব আচার অনুষ্ঠান হয়ে উঠুক ভগবান কেন্দ্রিক। হরেকৃষ্ণ।
পুনশ্চ: অনেকেই কমেন্টে মাংসাহারের বিষয়টিকে হাইলাইট করে সমালোচনা করেছেন। যদিও বিষয়টা আমি ডিটেইলসে টাচ করিনি! অনেকে খাদ্যশৃঙ্খল বিষয়টিকে টেনে এনেছেন। এটাকে আমিও অযথা বলছি না তো! খাদ্য শৃঙখলের প্রয়োজনেই কারোর না কারোর মাংস খেতে হতোই। এজন্য কিছু মানুষ নির্ধারিত অবশ্যই আছে, তবে তা শুধু কলিযুগের জন্য। কেন অন্য যুগে তা অপরাধ ছিল তা আর একটা লেখায় দেয়ার আশা রাখছি। ঐ নির্ধারিত কিছু মানুষ ছাড়াও কিছু পশুকেও পরমেশ্বর ভগবান এ শৃঙ্খল রক্ষার কাজে নিয়োজিত করেছেন। যেমন- বাঘ, সিংহ, শেয়াল, কুকুর, শুকৃন ইত্যাদি।
খাদ্যশৃঙখল রক্ষার কাজে এত জীব থাকতে কেন আমাকে বা আপনাকেই তা পূরণ করতে এগিয়ে আসতে হবে? কেন অন্যরা নয়? আপনি খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষার অজুহাত দেন বা অন্য কোন লোভ মাংসাহার করেন- ঐ জীব হত্যার দায় আপনাকে নিতেই তো হবে- পুরো অথবা আংশিক! যেমন টি শিবপুরাণে বলছিলেন শিবপত্নী মাতা সতীদেবী। কি বলছিলেন?-
যখন পিতা দক্ষের রাজগৃহে অনিমন্ত্রিত শিবজি আসেন নি। তখন সতীকে দক্ষগৃহে দেখে দক্ষরাজ শিবকে উদ্দেশ্য করে নানাভাবে অপমান করছিলেন। একটা পর্যায়ে স্বামীর প্রতি কটাক্ষ, অপমান, অসম্মান সহ্য করতে না পেরে পিতার প্রতি ক্ষৃদ্ধ হন মাতা সতীদেবী। পতিব্রতা স্ত্রীর এ কর্তব্য শাস্ত্রও সমর্থন করে। তখন জন্মদাতা পিতা জেনেও তাকে হত্যা করতে মনস্থ করেন। কিন্তু কর্মবন্ধনের নিষ্ঠুর নিয়মের কথা মাথায় এলে তিনি শান্ত হয়ে যান আর ক্ষোভে, দুঃখে নিজেই প্রাণত্যাগ করেন, সেই পরিস্থিতিতে যেটা কর্মবন্ধনের আওতার বাইরে ছিল।
এখন কথা হলো কি সেই কর্মবন্ধন? শাস্ত্রের নিদের্শনা অনুসারে পতিব্রতা যেকোন স্ত্রী স্বামীর প্রতি অন্যায়কারী, অপমান কারী এমনকি সে যদি পিতাও হন তাকে হত্যার অনুমোদন আছে যাতে পাপ স্পর্শ করে না জেনেও কর্মবন্ধনের কারণে তিনি সেটা করলেন না?
উত্তর মাতা সতীদেবী স্বয়ং দিয়েছিলেন সেই রাজসভায় (সেটা দক্ষের আর এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল), যা শিবপুরাণে পাবেন। পিতা দক্ষকে হত্যা করে মাতা সতীদেবীর কোনও পাপ হতো না সত্যি। কিন্ত জীব হত্যার ফলে তিনি কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়তেন। তিনি আর স্বর্গে/কৈলাশে ফিরে যেতে পারতেন না। তাঁকে আরো একটা জন্ম নিতে হতো এই পৃথিবীতে, যাতে দক্ষ তার পরের জন্মে সতীকে হত্যা করে তার হত্যার বদলা নিত। এর কোন ব্যত্যয় ঘটত না। তাই, সতীদেবী সেটা করেননি। এটা শুধু মানুষ, দেবতা, অসুর, দানব বা পিশাচ শরীরের জন্য প্রযোজ্য নয়, অন্যান্য সকল জীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, গীতায় উল্লিখিত কর্মবন্ধন মুক্ত খাদ্যশৃ্ঙ্খল ছাড়া-"...পত্রং পুষ্পং ফলম্ তোয়ম্...."।
হরে কৃষ্ণ।।

Sunday, October 15, 2017

বেদ-পুরাণ কথন

বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চার, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।

এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।

উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি

সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত

গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :

অনুবাদঃ

১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।

৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।

৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।

৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।

৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।

৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।

৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।

১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।

১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।

১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।

১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।

১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।

১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।

১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।

১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।

১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।

টীকাঃ

১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।

২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।

৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।

৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।

৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।

৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না।
খুজে নিন সহজেই...

বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চারটি মূল অংশ রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।

এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।

উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি

সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত

গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :

অনুবাদঃ

১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।

৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।

৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।

৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।

৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।

৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।

৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।

১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।

১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।

১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।

১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।

১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।

১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।

১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।

১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।

১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।

টীকাঃ

১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।

২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।

৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।

৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।

৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।

৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না। অংশ রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।

এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।

উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি

সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত

গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :

অনুবাদঃ

১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।

৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।

৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।

৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।

৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।

৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।

৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।

১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।

১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।

১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।

১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।

১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।

১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।

১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।

১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।

১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।

টীকাঃ

১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।

২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।

৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।

৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।

৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।

৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না।