পুরাণের কাল। কথাও পুরাণের। রামায়ণী যুগ। ১৪টা বছর অযোধ্যানাথের কাটল বনবাসে। বধ করলেন মহাবলী রাবণকে। এবার তিনি ফিরবেন লঙ্কা নগরী থেকে অযোধ্যা নগরীতে। এই নগরী কেমন ছিল রামায়ণী যুগে?
রাজশেখর বসুর ‘বাল্মীকি রামায়ণ’-এ মহাকবি বাল্মীকি লব কুশের মুখ থেকে রামায়ণ গানের মাধ্যমে প্রাচীন অযোধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে –
“সরযূ তীরে কোশল নামে এক আনন্দময় সমৃদ্ধিশালী প্রচুর ধনধান্যসম্পন্ন বৃহৎ জনপদ আছে। তার নগরী লোকবিশ্রুতা অযোধ্যা।… এই সুদৃশ্য মহানগরী দ্বাদশ যোজন দীর্ঘ, তিন যোজন বিস্তৃত এবং প্রশস্ত মহাপথ ও রাজমার্গে সুবিভক্ত। এই সকল পথ বিকশিত পুষ্পে অলংকৃত এবং নিত্য জলসিক্ত।… এই শ্রীসম্পন্ন অতুল প্রভাবান্বিত পুরী উচ্চ অট্টালিকা ও ধ্বজাসমূহে শোভিত এবং শত শতঘ্নী দ্বারা সংরক্ষিত। বহুস্থানে পুরনারীদের জন্য নাট্যশালা, উদ্যান ও আম্রবন আছে এবং চতুর্দিক শালবনে বেষ্টিত।
সেই অযোধ্যায় বেদজ্ঞ দূরদর্শী মহাতেজা প্রজাগণের প্রিয় রাজা দশরথ রাজত্ব করতেন। সেখানকার লোকেরা আনন্দিত, ধর্মপরায়ণ, শাস্ত্রজ্ঞ, নিজ নিজ সম্পত্তিতে তুষ্ট, নির্লোভ ও সত্যবাদী ছিল। অযোধ্যায় কামাসক্ত, নীচপ্রকৃতি বা নৃশংস পুরুষ অথবা অবিদ্বান বা নাস্তিক দেখা যেত না। এমন লোক ছিল না যে কুণ্ডল মুকুট ও মালা ধারণ করে না, যার দেহ অপরিষ্কৃত, যে চন্দনাদি লেপন করে না, যার অঙ্গ সুবাসিত নয় এবং যার ভোগের অভাব আছে। সেখানে নাস্তিক, মিথ্যাবাদী, অল্প শাস্ত্রজ্ঞ, অবিদ্বান অসূয়া পরবশ বা অসমর্থ কেউ ছিল না। পর্বতকন্দরে যেমন সিংহ থাকে সেইরূপ অযোধ্যায় অগ্নিতুল্য তেজস্বী চতুর অসহিষ্ণু (যে অপমান সয় না) ধনুর্বিদ্যায় শিক্ষিত যোদ্ধৃগণ বাস করতেন।”…
এমন অযোধ্যা নগরী চোদ্দটা বছর নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়েছিল রঘুকুলপ্রদীপ শ্রীরামচন্দ্র ছাড়া। অযোধ্যার কুলতিলক ফিরছেন, এই আনন্দ সংবাদে সম্পূর্ণ নগরী দীপমালায় সুসজ্জিত করে তুললেন অযোধ্যাবাসী। তাঁরা গা ভাসিয়ে দিলেন আনন্দলহরিতে। উৎসব মুখরিত অযোধ্যায় শ্রীরামচন্দ্র ফিরেছিলেন জনককন্যা জানকী ও অনুজ লক্ষ্মণকে নিয়ে। প্রজারা শ্রীরামচন্দ্র ও সীতাদেবীকে সম্মান ও অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন আলোকউৎসবের এই দিনটিতে। সেই দিনটি থেকে শুরু হল আনন্দময় দীপাবলি উৎসব।
No comments:
Post a Comment