অমাবস্যা তিথি। এদিন সারা পৃথিবীব্যাপী চলবে দীপাবলী আর মাতা মহাকালীকার পূজা এক কথায় কালীপূজা। কিন্ত আপনি কি জানেন, কালীপূজা আর দীপাবলী একই দিনে দুইটি ভিন্ন উৎসব?
কালীপূজার এই তিথী বছরে ঘুরে একবার আসে - মাংসাহারী তমসাচ্ছন্ন জীবদের কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্য থেকে ধীরে ধীরে মাংসাহারকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে যেতে! যা মনুসংহিতাসহ বিভিন্ন পুরাণে পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সময় পেলে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার আশা রাখছি। একটু টাচ করছি- এদিন কঠোর নিয়ম মেনে, কঠোর শর্তসাপেক্ষে আর আসন্ন নিহত ছাগল/ছাগ-শিশুর কাছ থেকে প্রতিঘাত পাবে এই প্রতিজ্ঞা করে ঘোর তমসাচ্ছন্ন বা পাপী ব্যক্তিদের সীমিত পরিসরে মাংসাহারের অনুমতি দেয়, যা পাপেরই শুরু যে কারণে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হওয়ার ফলও ভোগ করতে হয় পরবর্তীতে!
ছাগল/ছাগ-শিশু বধ করার সময় মনুসংহিতার এই মন্ত্র উচ্চারণ করতেই হয় তাদের! না করলে পাপ হয় অসীম! মন্ত্রটি হলো-
“...মাংস ইতি খাদতি মাংস”
যার অর্থ: আমি লোভ বশতঃ এ জীবনে তোমার মাংস ভক্ষণ করার জন্য তোমাকে বধ করছি। পরবর্তী জন্মে তুমিও আমাকে এভাবেই বধ করে আমার মাংস ভক্ষণ করিও!
তবে অনেকে ভাবতে পারে, তাহলে এই মন্ত্র না বলে পশুবলি দিব! তাতেও লাভ নেই। ফল একই সংঘটিত হবে। শুধু মাংসাহারীদের মাংসাহার থেকে ক্রমান্বয়ে বিরত রাখার তাগিদেই পরমেশ্বর ভগবানের এই অলঙ্ঘনীয় নিয়মটি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মাত্র। অবশ্য শাস্ত্রে এও আছে যে মায়ের সামনে কোন জীব হত্যা মাতা সহ্য করেন না। আর তিনি তো পরম বৈষ্ণবী। মাংসাহার তাঁর পক্ষে অসম্ভব।
যাই হোক এবার আসি দীপাবলী প্রসঙ্গ। কালীপূজা আর #দীপাবলীসৌভাগ্যবশতঃ একই দিনে পড়েছে। আসলে এ দুটি উৎসব সম্পূর্ণ ভিন্ন।
জগতে মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকারী ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র রাবণ বধ করে মাতা সীতাদেবী ও সপার্ষদ রওয়ানা দেন অযোধ্যর দিকে। ইতোমধ্যে ১৪ বছর বনবাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর রাজ্যাভিষেক নির্ধারিত ছিল। তাঁরা সবাই পুষ্পক রথে করে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে যুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুদের আতিথ্যগ্রহণ শেষে যখন অযোধ্যায় তিনি পৌঁছান তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল।
শ্রীরামের অযোধ্যায় ফেরার সংবাদে পুরো রাজ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। রাজ কর্মচারী তো বটেই স্বয়ং ভরত মহারাজ ও সমস্ত প্রজাগণও এমনকি স্বর্গের দেবতারাও এই সংবাদ পেয়ে শ্রীরামকে এক নজর অযোধ্যায় দেখার জন্য রাজপথে যেন মানুষ-দেবতাদের বন্যা বয়ে গেছে। শ্রীরাম বনে যাওয়ার পর মানুষ সন্ধ্যা প্রদীপ পর্যন্ত দিত না চরম দূঃখে। সেই সমস্ত জীবগণ শ্রীরামের ফেরার সংবাদে অতি খুশিতে নিজ নিজ বাড়িতে যেমন আলোর সারি জ্বালিয়েছেন তেমনি আলোর মশাল নিয়ে রাজপথে বেড়িয়ে এসেছেন প্রিয় রামকে এক নজর দেখার জন্য। সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়ায় এ আলোর মিছিল চলছিল পুরো অযোধ্যাসহ সমস্ত আর্যাবর্তেও।
এটিকেই প্রতিবছর স্মরণ করা হয় আলোর সারি জ্বালিয়ে। এটিই হলো দীপাবলী বা দিওয়ালীর মাহাত্ম্য। এটিকে দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত করা হয়।
এতদিন না জানলেও আজ থেকে আমাদের সব আচার অনুষ্ঠান হয়ে উঠুক ভগবান কেন্দ্রিক। হরেকৃষ্ণ।
পুনশ্চ: অনেকেই কমেন্টে মাংসাহারের বিষয়টিকে হাইলাইট করে সমালোচনা করেছেন। যদিও বিষয়টা আমি ডিটেইলসে টাচ করিনি! অনেকে খাদ্যশৃঙ্খল বিষয়টিকে টেনে এনেছেন। এটাকে আমিও অযথা বলছি না তো! খাদ্য শৃঙখলের প্রয়োজনেই কারোর না কারোর মাংস খেতে হতোই। এজন্য কিছু মানুষ নির্ধারিত অবশ্যই আছে, তবে তা শুধু কলিযুগের জন্য। কেন অন্য যুগে তা অপরাধ ছিল তা আর একটা লেখায় দেয়ার আশা রাখছি। ঐ নির্ধারিত কিছু মানুষ ছাড়াও কিছু পশুকেও পরমেশ্বর ভগবান এ শৃঙ্খল রক্ষার কাজে নিয়োজিত করেছেন। যেমন- বাঘ, সিংহ, শেয়াল, কুকুর, শুকৃন ইত্যাদি।
খাদ্যশৃঙখল রক্ষার কাজে এত জীব থাকতে কেন আমাকে বা আপনাকেই তা পূরণ করতে এগিয়ে আসতে হবে? কেন অন্যরা নয়? আপনি খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষার অজুহাত দেন বা অন্য কোন লোভ মাংসাহার করেন- ঐ জীব হত্যার দায় আপনাকে নিতেই তো হবে- পুরো অথবা আংশিক! যেমন টি শিবপুরাণে বলছিলেন শিবপত্নী মাতা সতীদেবী। কি বলছিলেন?-
যখন পিতা দক্ষের রাজগৃহে অনিমন্ত্রিত শিবজি আসেন নি। তখন সতীকে দক্ষগৃহে দেখে দক্ষরাজ শিবকে উদ্দেশ্য করে নানাভাবে অপমান করছিলেন। একটা পর্যায়ে স্বামীর প্রতি কটাক্ষ, অপমান, অসম্মান সহ্য করতে না পেরে পিতার প্রতি ক্ষৃদ্ধ হন মাতা সতীদেবী। পতিব্রতা স্ত্রীর এ কর্তব্য শাস্ত্রও সমর্থন করে। তখন জন্মদাতা পিতা জেনেও তাকে হত্যা করতে মনস্থ করেন। কিন্তু কর্মবন্ধনের নিষ্ঠুর নিয়মের কথা মাথায় এলে তিনি শান্ত হয়ে যান আর ক্ষোভে, দুঃখে নিজেই প্রাণত্যাগ করেন, সেই পরিস্থিতিতে যেটা কর্মবন্ধনের আওতার বাইরে ছিল।
এখন কথা হলো কি সেই কর্মবন্ধন? শাস্ত্রের নিদের্শনা অনুসারে পতিব্রতা যেকোন স্ত্রী স্বামীর প্রতি অন্যায়কারী, অপমান কারী এমনকি সে যদি পিতাও হন তাকে হত্যার অনুমোদন আছে যাতে পাপ স্পর্শ করে না জেনেও কর্মবন্ধনের কারণে তিনি সেটা করলেন না?
উত্তর মাতা সতীদেবী স্বয়ং দিয়েছিলেন সেই রাজসভায় (সেটা দক্ষের আর এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল), যা শিবপুরাণে পাবেন। পিতা দক্ষকে হত্যা করে মাতা সতীদেবীর কোনও পাপ হতো না সত্যি। কিন্ত জীব হত্যার ফলে তিনি কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়তেন। তিনি আর স্বর্গে/কৈলাশে ফিরে যেতে পারতেন না। তাঁকে আরো একটা জন্ম নিতে হতো এই পৃথিবীতে, যাতে দক্ষ তার পরের জন্মে সতীকে হত্যা করে তার হত্যার বদলা নিত। এর কোন ব্যত্যয় ঘটত না। তাই, সতীদেবী সেটা করেননি। এটা শুধু মানুষ, দেবতা, অসুর, দানব বা পিশাচ শরীরের জন্য প্রযোজ্য নয়, অন্যান্য সকল জীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, গীতায় উল্লিখিত কর্মবন্ধন মুক্ত খাদ্যশৃ্ঙ্খল ছাড়া-"...পত্রং পুষ্পং ফলম্ তোয়ম্...."।
হরে কৃষ্ণ।।
Thursday, October 19, 2017
দীপাবলী আর কালীপূজা কি এক?
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment