Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, November 3, 2017

যর্জুবেদ ৩২/৩ মন্ত্র নিয়ে আর্য সমাজের(নব্য) লাফালাফির অন্ত নেই চলুন দেখে নেয়া যাক মন্ত্র টাই বা কি তার অনুবাদই ঠিক কি?

ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশ
অর্থ্যাৎ --এই পুরুষের(ঈশ্বরের)মূর্তি নেই, তার মহৎ যশ আছে-- যর্জুবেদ-৩২/৩[দয়ানন্দ ভাষ্য]
আবার একই মন্ত্রে 
ন তস্য প্রতিমা অস্তি, যস্য নাম মহদযশ
অর্থ্যাৎ --এই পুরুষের(ঈশ্বরের) তুলনা দেবার কোন বস্তু নেই,তাহার মহৎ যশ আছে-- যর্জুবেদ-৩২/৩[বিজন বিহারী ভাষ্য]
এখানে দেখুন পরস্পর বিরোধী দুটি অর্থ। এর মধ্যে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা আমাদের বের করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। বেদের শুধু ঐ একটা মন্ত্রের উপর সব কিছু ডিফেন্স করা যাবে না তাই আমাদের আরো মন্ত্র দেখে নিতে হবে সেখানে ঈশ্বরের সাকার রূপ আছে কি নাই।মূর্তি থাকাটা কিন্তু সাকার রূপেই পড়ে।যেহেতু দয়ানন্দ নিরাকার বাদী তাই হয়তো তার বেদ ভাষ্যে তিনি ঐটায় লিখেছেন কিন্তু আবার সায়ণ ভাষ্য তার ঠিক উল্টে।প্রতিমা শব্দটি স্বাভাবিক ভাবে মূর্তি অর্থ বুঝালেও আসোলেই বাংলা আভিধানিক অর্থে প্রতিমা অর্থ করা হয়েছে তুলনা দেবার বস্তু বা পরিমাপ করার বস্তু (নিচে স্কিন সুট)..কিন্তু প্রতিমা অর্থ যখনই বলবো তুলনা দেবার বস্তু তখনই সবাই হাসবে কেননা প্রতিমা অর্থ স্বাভাবিক ভাবে মূর্তি বোঝায়।এখন যদি ঠিক প্রতিমা অর্থ মূর্তি ধরে নেয়া যায় তবে বেদের কিছু মন্ত্রের বিরোধীতা করতে হয় যেমন নিচে কিছু ঈশ্বরের সাকার তত্ব দেখুন--
যর্জুবেদ--৩২/৪ বলা হয়েছে
এষো হে দেব------জনাতিষ্ঠন্তি
অর্থ্যাৎ --এ দেব সকল দিক ব্যোপে আছেন।হে মনুষ্যগণ ইনিই প্রথমে ছিলেন, গর্ভমধ্যেও তিনিই, এবং জনিষ্যমানও তিনিই, তিনিই প্রতি পর্দাথে বিচরণ করেন, সর্বত্র তার মুখাদি অবযব আছে তিনি অচিশ্ত্য শক্তিবিশিষ্ট।
#Important_points -- এই মন্ত্রে ঈশ্বরের মুখ থাকার কথা বলা হচ্ছে।। অর্থ্যাৎ সাকার তত্ব।
যর্জুবেদ--৩২/৮ বলা হয়েছে
বেনস্তৎ পশ্য ন্নিহিতং গূহা-------সত ওতঃ প্রোতশ্চ বিভু প্রজাসু।
অর্থাৎ--পন্ডিতেরা সে ব্রক্ষ কে জানে তিনি গূহাতে নিহিত অর্থ্যাৎ দূর্জ্ঞেয়,তিনি নিত্য, তিনিই বিশ্বের আশ্রয় অর্থাৎ নির্বশেষ কারণ,সে ব্রক্ষে সকল প্রাণী সংহার কালে মিলিত ও সৃষ্টি কালে তা থেকে নির্গত হয়।সে পরমাত্না ওতপ্রোতভাবে বিরাজমান,তিনি বিভু অর্থ্যাৎ কার্য কারণ রূপে নানান রূপ হয়েন।তিনিই ব্রক্ষ।
#Important_points--এখানে বলা হয়েছে ঈশ্বর কার্য কারণে নানান রকম রূপ নিতে পারে। অর্থাৎ সাকার তত্ব না হলে কখনোই রূপ নিতেন না।অথবা এখানে অবতার তত্ব ও বোঝা যায়। কারণ অবতার তত্বে কার্য কারণ বিশেষে কিন্তু কখনো বরাহবতার,কখনো নৃসিংহবতার কখনোবা মনুষ্য দেহ ধারীর মতো।
যর্জুবেদ--২৫/১০ বলা হয়েছে
হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্ত তাগ্রে ভূতস্য জাতঃ --------- কর্মে দেবায় হবিষা বিধেম।
অর্থ্যাৎ--হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি প্রাণী সকলের উৎপত্তির পূর্বে স্বয়ং শরীর ধারী ছিলেন। তিনি জাত মাত্র সমস্ত জগতের ঈশ্বর,তিনি দ্যুলোক,ভূলোক ও অন্তরিক্ষ লোক ধারণ করে আছেন। সেই প্রজাপতির উদ্দ্যশ্যে আমরা হবি প্রদান করি।
#Important_points--এখানে ঈশ্বরের শরীর ধারণের কথা বলা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ সাকার তত্ব ও অবতার তত্ব।কিন্তু হ্যা তা শরীর কোন সাধারণ মানুষের শরীর মতো নয় তার শরীর দিব্য (অলৌকিক,ঐশ্বরীয়,অপ্রাকৃত) শঙ্করাচার্য,রামানুজ, শ্রীধরস্বামী ভাষ্য গীতা--৪/৯।
যর্জুবেদ--৩১/৫ বলা হয়েছে
ততো বিরাডজাত----পক্ষাদ্ভুমিমথো পূর্বং।
অর্থ্যাৎ--সে আদিপুরুষ থেকে বিরাটপুরুষ উৎপন্ন হয়েছে,সে জাত বিরাটপুরুষ দেব, তির্যক, মনুষ্যাদিরূপ হয়েছেন তারপর তিনি ভূমি ও জীব গণের সৃষ্টি করেছেন।
#Important_points--মনুষ্যাদিরূপ হয়েছে।কথাটি অবতার তত্ব।
যর্জুবেদ--৩১/১০বলা হয়েছে
যৎ পুরুষং ব্যদথঃ-----পদাউচ্যেতে
অর্থ্যাৎ--প্রজাপতির প্রাণরূপ দেবগণ কত প্রকারে পুরুষ সৃষ্টি করেছিলেন? এ পুরুষের কি মুখ,বাহুদ্বয়,উরুদ্বয় ছিলো?
#Important_points--ঈশ্বরের কি হাত পা ছিলো?সাকার তত্ব।
যর্জুবেদের ৩০/১১-১৩ পর্যন্ত এই আলোচনা হয়েছে যে ঐ পুরুষের মুখ, বাহুদয়, উরুদ্বয়, নাভি থেকে কারা কার সৃষ্ট হয়েছিলো তারা হলো ব্রাম্মণ, ক্ষিত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র।
#Important_points--ঈশ্বরের মুখ, হাত পা, নাভি থেকই ব্রাম্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রের উৎপত্তি।।সুতারাং বলা যায় ঈশ্বরের সাকার তত্ব বেদেও বিদ্যমান।।
এবার ফিরে যাই সেই পূর্বের আলোচনায় --ন তস্য প্রতিমা অস্তি।।আমরা বেদের ঐ সব মন্ত্রে দেখতে পাচ্ছি যে ঈশ্বরের সাকার তত্ব বহুল আলোচনা।। সুতারাং ঈশ্বরের মূর্তি নেই বলাটা মূর্খামী। আর যেহেতু প্রতিমা অর্থ মূর্তিই নয় সেহেতু ঈশ্বরের মূর্তি অবশ্যই আছে।আর এটা বিষয় সবাই জানে যে ঈশ্বরের সংগে কখনো কারোর তুলনা হয়।কেননা ঈশ্বরের মতো সর্বশক্তিমান কেউই হতে পারে না।তিনি চাইলে যেমন রূপ নিতে পারে আবার নাও নিতে পারে। 
কিন্তু চিন্তার বিষয় একটাই এই সব আলোচনা পড়ে নব্য আর্যরা যে যর্জুবেদকেই অবৈদিক বলে ঘোষণা না করবে তার কোন গ্যারান্টি নেই।কারণ এই নব্য আর্য দয়ানন্দের পোষ্য (চেলারা) এরা দয়ানন্দের মির্থাথ্য প্রকাশ ছাড়া কিছুই চোখে দেখে না অর্থ্যাৎ সব কিছুই অবৈদিক বলে ঘোষণা করেছে।এদের কাছে মির্থাথ্য প্রকাশই হলো একমাত্র প্রামাণিক বৈদিক শাস্ত্র আর সব কিছু অবৈদিক। অবৈদিক হলেন--আদি শঙ্কারাচার্য যার জন্য ভারত বর্ষে বেদ, বেদান্ত টিকে আছে, অবৈদিক হলো --রামানুজ, শ্রী ধর স্বামি,নিম্বাকাচার্য, বলদেব বিদ্যাভূষন,কারণ এনারা সবাই শ্রী কৃষ্ণ কে ঈশ্বর বলেছে।তবে হ্যা বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় বৈদিক কারণ তিনি শ্রী কৃষ্ণ কে যোগী বলেছে।কিন্তু বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় যিনি ব্যাসদেবের মতো নয় তিনি হলেন সাধারণ একজন লেখক। তার কথায় নব্যরা বেশি অনুপ্রাণীত।। এটাই হলো নব্যদের বৈদিক।।
[ বি.দ্র.-- নব্যদের পতনের জন্য সবাই এগিয়ে আসুন। এরা বিভিন্ন ধরণের দেব দেবিকে পর্যন্ত ভূয়া বলে আ্যাখ্যা দিচ্ছে, সাথে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ তো চলছেই]

ঋষি মার্কেণ্ড জীবন ইতিহাস

ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একমাত্র মৃত্যুকে জয় করেছেন ঋষি মার্কেণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুঞ্জয়ের পেছনে রয়েছে এক বহুল ইতিহাস। কি সেই ইতিহাস? কিভাবে ষোলবছরের পরমায়ু নিয়ে এক বালক ষোলো কল্প পরমায়ু অর্জন করে? প্রিয় ভক্তগণ, আজ আমরা সৃষ্টির একমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী মহর্ষি মার্কেণ্ডয়ের ব্যাপারে আলাপচারিতা করবো।
সত্যযুগের কথা, মৃকণ্ডু ঋষি ও তাঁর পত্নী মরুদবতী। মৃকণ্ডু ঋষি শিবের আরাধনা করতো এবং উনার পত্নী মরুদবতী ছিলো আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গার ভক্ত। এই দুই ভক্তের দীর্ঘদিন সংসার জীবন ব্যয় হওয়ার পরেও তাঁদের কোনও সন্তান প্রাপ্তির সৌভাগ্য হয়নি। একদিন মরুদবতী মনভার করে বসে ছিলেন তখন ঋষি মৃকণ্ডু এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হলো দেবী; আপনার মনভার কেন? উত্তরে মরুদবতী বললেন, স্বামী আমার অপূর্ণতার কারণে। ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, কেমন অপূর্ণতা? মরুদবতী বলল, সন্তানের অপূর্ণতা, মাতৃত্বের অপূর্ণতা। তখন ঋষি পত্নী মরুদবতী বলল, স্বামী আমার একান্ত ইচ্ছা মাতৃত্ব স্বাদ পেতে। পত্নী মুখে এইবাক্য শুনে ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, তাহলে আমাদের মহাদেবের তপস্যা শুরু করতে হবে। তখন ঋষি পত্নী মরুদবতী বলল, ঠিক আছে তবে তাই হোক; তারপরও আমি মাতৃত্ব স্বাদ পেতে চায়। এরপর তাঁরা দুজনে গভীর বনে পুত্রকামনায় ভগবান শিবের আরাধনা তপস্যা শুরু করে। তাঁদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে প্রভু মহাদেব শিব তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত হন। তখন মহাদেব জিজ্ঞাসা করেন, কি তোমাদের মনবাঞ্ছা? কেন তোমাদের এই কঠোর তপস্যা? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু ও মরুদবতী বললেন, পুত্র কামনায় প্রভু! তখন মহাদেব বললেন, কেমন পুত্র চাও? দীর্ঘজীবী পুত্র মূর্খপুত্র নাকি ক্ষণজীবী জ্ঞানীপুত্র? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, মূর্খ দীর্ঘজীবী পুত্রের চেয়ে ক্ষণজীবী জ্ঞানী পুত্রই শ্রেয়। তখন মহাদেব বললেন, তথাস্তু! এবং অতঃপর মহাদেব সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। তারপর ঠিক বছর পর ঋষি মৃকণ্ডু পত্নী মরুদবতী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর মরুদবতী সেই সন্তানের নামকরণ করে মার্কেণ্ড। সন্তান জন্মের পরদিন যখন ঋষি মৃকণ্ডু পুত্রকে দেখতে যান, তখন ঋষি মৃকণ্ডু পত্নীকে বললেন, মার্কেণ্ড মাতা আমাদের পুত্র অল্পায়ু! কিন্তু সে এত অল্পায়ু হবে তা কখনও কল্পনা করিনি। ঋষি মৃকণ্ডু পত্নী বললেন, কতসময় পরমায়ু নিয়ে এসেছে আমাদের পুত্র? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু বলল, মাত্র ষোলদিন। ঋষি মুখে এইবাক্য শুনে মরুদবতী স্তব্ধ হয়ে গেল। বলতে লাগলেন হে মাতা আদ্যাশক্তি! এ কেমন অবিচার আমাদের উপরে? এই যদি আপনার ইচ্ছা তাহলে কেন এই বরদান দিয়েছিলেন প্রভু মহাদেব! তখন মরুদবতী বলল, না এ হতে পারেনা, এইবাক্য বলার কিছু সময় পরে মরুদবতী পুত্র মার্কেণ্ডকে নিয়ে কৈলাশের দিকে চললেন। দ্বিতীয় দিনে মরুদবতী কৈলাসে উপস্থিত হয়ে, নিজ পুত্রকে আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গার পায়ে রেখেদিলেন এবং বললেন; মাতা আপনাদের কৃপালাভ সরুপ এই পুত্র কিন্তু আমি এই ষোলদিনের পুত্র মোহে মোহিত হয়ে মাতৃত্ব স্বাদ পেতে চাই না। তাই আপনাদের দেওয়া আশীর্বাদ আপনার চরণে রেখে গেলাম। এই বলে মরুদবতী 
কৈলাস থেকে প্রস্থান করলেন। তখন দেবী দূর্গা ভক্তের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূর্ণের জন্য ধ্যান যোগে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে স্মরণ করলেন। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দেবীর ধ্যান স্থিতির আবাস পেয়ে নিজেও ধ্যানমগ্ন হইলেন। ধ্যান অবস্থায় দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বললেন, এই পুত্রের অল্পায়ুর কারণ কি? ব্রহ্মা দেবীকে বিস্তারিত ভাবে বললেন। অতঃপর দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বললেন, হে সৃষ্টি সরুপ আমার একান্ত ইচ্ছা এই সন্তানের পরমায়ু বৃদ্ধি হেতু! তখন ব্রহ্মা বললেন, মাতা এই সন্তানের পরমায়ু স্বর্গের সময়ানুসারে মাত্র তিথি যা মত্যলোকের সময়ানুসারে মাত্র ষোলদিন। তবে মাতা আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হেতু আমি এই সন্তানের পরমায়ু স্বর্গের সময়ানুসারে ষোলদিন প্রদান করছি যা মত্যলোকের সময়ানুসারে ষোলবছর হবে, কিন্তু মাতা ক্রোধিত হবেন না; এর উর্দ্দে পরমায়ু প্রদান আমার ক্ষমতায় নেই। তখন দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বলল, আমি যথাযথর সন্তুষ্ট সৃষ্টিবর। এরপর মার্কেণ্ড কৈলাসে অবস্থান করে এবং যখন মার্কেণ্ডয়ের বয়স আটবছর অতিক্রম করে, তখন আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে একটি শিবলিং তৈরী করে দেয় এবং তাঁকে মহামন্ত্র প্রদান করে। দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে আরো বললেন, পুত্র যতকিছু হোক তুমি এই মন্ত্রজপ বন্ধ করবে না এবং এই শিবলিং থেকে প্রস্থানের মনোভাব আনবে না। তখন মার্কেণ্ড জিজ্ঞাসা করলেন, মাতা এই মন্ত্রটি কিসের? উত্তরে দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে বলল, এটি মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র! এই মন্ত্রটিই তোমার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আর সেই মহা মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রটি হলো:-
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম।
উর্বারুকমিববন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ স্বাহা।
ভাবার্থ --- হে সৃষ্টিকর্তা, ধর্তা ও হর্তা পরমাত্মন! তুমি আমাদের জন্য সুগন্ধিত, পুষ্টিকারক তথা বলবর্ধক ভোগ্য বস্তু দান করো। আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে তোমার ভজন করি। হে দেব! আমরা পূর্ণায়ু ও পূর্ণভোগ করেই যেন এই শরীর রূপী বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি।
-
ব্যাখ্যা --- খরমুজ পাকলেই বিনা কষ্টে সে তার ডাল থেকে মুক্ত হয়ে যায়। হে প্রভো! আমরা যেন এই জন্ম-মৃত্যু চক্র থেকে মুক্ত হয়ে কিন্তু তোমার অমৃতময়ীস্নেহ থেকে যেন বিমুখ না হই। তোমার অমৃতধারার বরদ হস্ত সদা যেন আমাদের উপরে থাকে।
এটিই বেদে উল্লেখিত মহামৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র!
তখন মার্কেণ্ড সেই মন্ত্রকে পাঠ করে
এবং শিবলিংটিকে আরাধনা করে। এভাবে মার্কেণ্ড প্রায় ষোলবছর বয়স পূর্তি পর্যন্ত সেই শিবলিং এর সম্মুখে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে। এরপর একদিন, যখন মার্কেণ্ডয়ের ষোলবছর বয়স পূর্ত হয়; তখন যমরাজ তাঁকে নিয়ে যেতে এলে মার্কেণ্ড সেই শিবলিংটি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে। যমরাজ তাঁর রজ্জু দিয়ে মার্কণ্ডেয়কে বন্ধন করলে, মার্কণ্ডেয় শিবলিংটিকে আঁকড়ে ধরে এবং মহাদেব শিবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। করুণাময় ভগবান শিব ভক্তের এমন দুর্দশা দেখে শিবলিং থেকে আবির্ভূত হন। ক্রুদ্ধ ভগবান শিব আক্রমণ করেন যমকে। যম পরাভূত হন এবং মার্কণ্ডেয়ের উপর থেকে তাঁর দাবি ত্যাগ করে ফিরে যান। ভগবান শিব যমকে পরাজিত করে মৃত্যুঞ্জয় নামে পরিচিত হন। তখন থেকে মহাদেবের আরেকটি নাম প্রচারিত হয় "মহা মৃত্যুঞ্জয়"। অতঃপর মহাদেব মার্কেণ্ডকে বলল উঠো পুত্র, তোমাকে আর মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে হবে না; কারণ তোমার জপশক্তির প্রভাবে তোমার পূর্বের ষোড়শদিন পরমায়ু এখন ষোড়শকল্পে রুপান্তর হয়েছে। যাও পুত্র এখন তোমার মাতা-পিতার ইচ্ছা পূর্ণের সময় এসেছে। তখন সেই স্থান থেকে মহাদেব অদৃশ্য হয়ে যান। ঠিক এভাবে ঋষি মার্কেণ্ড মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ষোড়শকল্প পরমায়ু অর্জন করে। অথচ যে ব্রহ্মা দুদিনের শিশু মার্কেণ্ডকে ষোলবছর(মত্যলোক অনুসারে) পরমায়ু প্রদান করে, সেই ব্রহ্মার এককল্পে জন্ম আর এককল্পে মৃত্যু! আর মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ঋষি মার্কেণ্ড ষোড়শকল্প পরমাণু অর্জন করে স্বয়ং ব্রহ্মার চেয়ে দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে। যে মন্ত্রটি ঋষি মার্কণ্ডেয় পাঠ করেছিলেন সেটিই মহা মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র।
এটিই শিবমন্ত্রের মাহাত্ম্য!!! মহাদেবের আরাধনা ও তাঁকে স্মরণ করলে কালও তাঁকে গ্রাস করতে পারে না।
পরমেশ্বর ভগবান শিবের প্রণাম মন্ত্র:-
নমোঃ শিবায় শান্তায় করুণাত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামী চাত্মাণং ত্বং গতি পরমেশ্বরং।।
জয় শিব শঙ্কর!!! জয় দেবাদিদেব মহাদেব!!!
বিঃদ্রঃ:- ঋষি মার্কেণ্ড জীবনী তথ্য সূত্র, মার্কেণ্ড পুরাণ দ্বিতীয় অধ্যায় ও স্কন্ধ পুরাণ অষ্টাদশ অধ্যায় ও শিব পুরাণ চতুর্দশ অধ্যায় মহা মৃত্যুঞ্জয় মাহাত্ম্য কথা; হইতে সংগৃহীত।
ॐ সর্বেসাং মঙ্গলং ভবতুঃ সর্বে সন্তু্ নিরাময়াহা।
সর্বে ভদ্রানি নিপশসন্তু্ মা কশ্চিত দুঃখ ভাগভবেৎ।।
ॐ জয় মহাদেব ॐ

Wednesday, November 1, 2017

সকল কৃষ্ণ বিরোধীদের এটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।। আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারব যে, এসব কৃষ্ণবিরোধীরা শেষমেষ এই মহাভারতকে অবৈদিক বলে চালিয়ে দিবে।। ওসব কৃষ্ণবিরোধীদের কাছে উপনিষদ, গীতা, ব্রহ্মসূত্র, পঞ্চরাত্র ও আরো অনেক শাস্ত্র তাদের জন্যে অবৈদিক। তারা তাদের যে 'মিত্যার্থ প্রকাশের' ঠেলায় কত যে বলদামি করছে, সেটা তারা বুঝতে পারছে না। তারা অবতারগণকে যোগীপুরুষ বানাচ্ছে, কতটুকু বলদামি হলে এ ধরনের কথা বলতে পারে। এখানে সেই বেদ উপনিষদের গুপ্ত পুুরুষকেই উম্মোচন করা হয়েছে। তো মহাভারত থেকেই দেখে নেয়া যাক, কে এই "বাসুদেব"? কষ্ট করে পুরোটা পড়ে যাবেন।

""মহাভারত""
//ভীষ্মপর্ব//
দুর্য্যোধন উবাচ
দ্রোণশ্চ তঞ্চ শল্যশ্চ কৃপো দ্রোণিস্তথৈব চ।
কৃতবর্ম্মা চ হাদ্দিক্যঃ কম্বোজশ্চ সুদকক্ষিণ
ভুরিশ্রবা বিকর্ণশ্চ ভগদত্তশ্চ বির্য্যবান।
মহারথাঃ সমাখ্যাতাঃ কুলপুত্রাস্তনুত্যজঃ।। (৬৪/৩১-৩২)
=> দূর্যোধন বলিলেন- পিতামহ আপনি, দ্রাোণ, শল্য, কৃপ, অশ্বথামা, হ্রদিকন্দন, কৃতকর্ম্মা, কম্বোজরাজ, সুদক্ষিণ, ভূরিশ্রবা, বিকর্ণ এবং বলবান জগদত্ত, আপণারা সকলেই মহারথী বলিয়া বিখ্যাত, সদ্বংশবাত এবং দেহত্যাগে উদ্যত।।

ত্রয়াণামপি লোকানাং পর্য্যাপ্তা ইতি মে মবিঃ।
পান্ডবানাং সমস্তাশ্চ ন তিষ্ঠন্তি পরাক্রমে।।(৬৪/৩৩)
=>অতএব, আপণারা ত্রিভুবন জয় করিতেও সমর্থ। সুতরাং আপণাদের এক এক জনের পরাক্রমের সম্মুখে পান্ডবেরা সকলে মিলিয়াত অবস্থান করিতে পারে না, ইহাই আমার ধারণা।

তত্র মে সংশরো জাতত্ত্বং মমাচক্ষ পৃচ্ছতঃ।
যত্তসমাশ্রিত্য কৌন্তেয় জয়স্ত্যমান পদে পদে।। (৬৪/৩৪)
=> সে বিষয়ে আমার সন্দেহ জমিয়াছে। পান্ডবরা যে উপায় অবলম্বন করিয়া পদে পদে আমাদিগকে জয় করিতেছে, সেই বিষয়ই আমি জিজ্ঞাসা করিতেছি, আপণি তাহা আমার নিকট বলুন।।

তারপর ভীষ্ম কিছু কথার পর তিনি বললেন,

নাস্তি লোকেষু তদ্ভূতং ভবিতা নো ভবিষ্যতি।
যো জয়েৎ পান্ডবান সর্ব্বান পালিতান শার্ঙ্গ ধম্বনা।। (৬৪/৪০)
=> ত্রিভুবনে এমন কোনো প্রাণী ছিল না, বর্তমানে নাই, এবং ভবিষ্যতেও হইবে না, যে প্রাণী #কৃষ্ণ কর্তৃক রক্ষিত পান্ডবগণকে জয় করিতে পারে।

যচ্চ মে কথিতং তাত মুনিভির্ভাবিতারভি।
পুরাণগীতং ধর্মজ্ঞ তচ্ছৃণেস্ব যথাযথম্।। (৬৪/৪১)
=> বৎস, ধর্মজ্ঞ। বিশুদ্ধচিত্ত মুনিরা আমার নিকট যাহা বলিয়াছেন এবং প্রাচীন ব্যাক্তিরা যাহা বলিয়া গেছেন, সেই যথার্থ বৃত্তান্ত তুমি শ্রবণ কর।

পূর্বাকালে একদা দেবতা ও ঋষিরা সকলে সম্মিলিত হইয়া গন্ধমাদন পর্বতে ব্রহ্মার নিকট উপবিষ্ট ছিলেন।।৪২
তাহাদের মধ্যে উপবিষ্ট ব্রহ্মা দর্শন করিলেন- তেজে উজ্জ্বল ও উৎকৃষ্ট একখানা বিমান আকাশে অবস্থান করিতেছে।।(৬৪/৪৩)

ধ্যানে নাবেদ্য তদব্রহ্মা কৃত্বা নিততোহঞ্জলিম্।
নয়শ্চকার হ্রষ্টাত্মা পুরুষং পরমেশ্বরম্।।(৬৪/৪৪)
=> তখন ব্রহ্মা ধ্যানে তাহার বিষয়ে জানিয়া, সংযত ও হ্রষ্ট চত হইয়া এবং অঞ্জলি বন্ধন করিয়া #আদিপুরুষ_পরমেশ্বরকে নমস্কার করিলেন।।

বিশ্বাবসুর্বিশ্বগো বিশ্বমূর্ত্তির্বিস্বকুসেনো বিশ্বকর্ম্মা বশী চ।
বিশ্বেশ্বরা বাসুদেবোহসি তস্মাদযোগত্মানং দৈবতং ত্বামু পৌম।।(৬৪/৪৭)
=> ভগবান আপনি যেহেতু বিশ্বাবসু, #বিশ্বব্যাপী, বিশ্বমূর্ত্তি, বিশ্বকর্ম্মা, স্বাধীন, বিশ্বেশ্বর, #বাসুদেব, মায়াশীল এবং নানাবিধ ক্রিড়ামুক্ত, সেই হেতু আপণার শরণাপন্ন হইতেছি।।

জয় বিশ্বমহাদেব ! জয় লোহিতে রত।
জয় যোগীশ্বর ! বিভো ! জয় যোগপরাবর।।(৬৪/৪৮)
=> ত্রিভুবনের মহাদেব! আপনার জয় হউক! লোকহিতনিরত ! আপণার জয় হউক, যোগীশ্বর বিশ্বব্যাপক আপণার জয় হউক যোগশ্রেষ্ঠ, যোগনিকৃষ্ট। আপণার জয় হউক।।

পদ্মানাভ ! বিশালক্ষ! লোকেশ্বরেশ্বর।
ভূতভব্যভবন্নাথ! জয় মৌম্যাত্মজাত্মজ।।(৬৪/৪৯)
=> #পদ্মানাভ! বিশালনয়ন! দিকপালেশ্বর! আপনার জয় হউক! ভূত ভবিষ্যতে ও বর্তমানের নাথ! সুন্দর! আমার পুত্রের পুত্র (দাত্তাত্রেয়) আপণার জয় হউক।

অসংখ্যেয়গুণাধর! জয় সর্ব্বপরায়ণ।
নারায়ণ! সুদুস্পার! জয় শার্ঙ্গধনুর্দ্ধর।।(৬৪/৫০)
=> অনন্তগুণের আধার। সকলের পরমাশ্রয় আপনার জয় হউক #নারায়ণ। অতিদুর্গম শার্ঙ্গধনুর্দ্ধর। আপনার জয় হউক।।

জয় সর্ব্বগুণোধর! বিশ্বমুর্ত্তে! নিরাময়।
বিশ্বেশ্বর! মহাবাহো! জয় লোকার্থতৎপর।।(৬৪/৫১)
=> সর্ব্বগুণসম্পন্ন! বিশ্বমূর্ত্তি! নির্বিকার! আপণার জয় হউক! বিশ্বেশ্বর! মহাবাহো! ভক্তাভীষ্ট সাধক! আপণার জয় হউক।।

অনন্তবিদিত! ব্রহ্মম! নিত্য! ভূতবিভাবন।
কৃগকার্য্য! কৃতপ্রজ্ঞ! ধর্মজ্ঞ! বিজয়াবাহু।।(৬৪/৫৪)
=> জ্ঞানীরা আপনাকে অনন্ত বলিয়া জানেন, #আপনি_পরমব্রহ্ম ! #আপনার_উৎপত্তি_ও_বিকাশ_নায়! আপণি সমস্ত পদার্থ সৃষ্টি করেন, আপনি নিত্যযুক্ত বলিয়া সকল কার্য্যই আপণার করা হয়েছে, আপণার জ্ঞান সর্ব্বদা রহিয়াছে বলিয়া আপনি কৃতপ্রজ্ঞ! আপণি নিত্যযুক্ত বলিয়া সকল কার্য্যই আপণার করা হয়েছে! আপণার জ্ঞান সর্ব্বদা রহিয়াছে বলিয়া আপণি কৃতপ্রজ্ঞ! আপনি সর্বজ্ঞ বলিয়া ধর্ম্মজ্ঞ এবং আপনি ভক্তের বিজয়দাতা! আপনার জয় হউক।

গুহ্যাত্মন! সর্ব্বযোগাত্মন! স্ফুতৈসম্ভুতসম্ভব।
ভূতাত্মতত্ত্ব! লোকেশ! জয় ভূত! বিভাবন।। (৬৪/৫৫)
=>#আপনি_অভক্তের_নিকট_আত্মপ্রকাশ_করেন_না! সমস্ত যোগ আপনাতে আছে! আপনি প্রাণীগণের জীব। আপণি জগতের নিয়ন্তা। আপনি সত্যস্বরূপ এবং #যোগীরা_আপণারই_ধ্যান_করেন! আপনার জয় হউক।।

আত্মযোনে! মহাভাগ! কল্পসংক্ষেপতৎপর।
উদ্ভাবনমনোভাব! জয় ব্রহ্মজনপ্রিয়।।(৬৪/৫৬)
=> #আপণি_''সয়ম্ভু''! যজ্ঞের প্রধান ভাগ আপণার! #আপণি_রুদ্ররূপে_জগৎ_সংহার_করেন। #মহাযোগীরা_আপণারই_ধ্যান_করে! আপনি ব্রহ্মনিষ্ঠ লোকের প্রিয়! আপণার জয় হউক।

★★★
পাদৌ তব ধরা দেবী দিশো বাহু দিবং শির।
মূর্তিস্তেহহং সুরা কায়শ্চন্দ্রাদিতৌ চ চক্ষুসী।।(৬৪/৫৯)
=> দেব! পৃথিবী আপণার চরণযুগল, দিক্ সকল আপণার বাহুদ্বয়, আকাশ আপণার মস্তক, আমি (ব্রহ্মা) আপণার মূর্ত্তি, দেবতারা আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং চন্দ্রও সূর্য আপনার নয়নযুগল।

★★★
অশ্বিণৌ শ্রবণৌ নিত্যং দেবী জিহ্বা সরস্বতি।
বেদাঃ সংস্কারনিষ্ঠা হি ত্বয়ীদং জগদাশ্রিতম্।। (৬৪/৬১)
=> অশ্বিণী কুমারেরা আপণার কর্ণ, স্বরস্বতী দেবী আপণার জিহ্বা, চারিটা বেদ আপণার সংস্কারে রহিয়াছে এবং এ জগতটা আপণাতে অবস্থান করিতেছে।

ন সংখ্যানং পরিমাণম ন তেজো ন পরাক্রমম্।
ন বলং যোগাযোগীশ! জানিমস্তে পরন্তপ।।(৬৪/৬২)
=> শত্রুতাপন! #যোগপ্রবর্ত্তক! যোগীশ্বর! আমরা আপনার সংখ্যা, পরিমাণ, তেজ, পরাক্রম ও বলের #স্বরূপ_জানি_না

তদ্ভক্তিনীরতা দেব! নিয়মৈত্বাং সমাজ্ঞিতাঃ।
অর্চয়ামঃ সদাবিষ্ণো! পরমেশং মহেশ্বরম্।।(৬৪/৬৩)
=> তথাপি #নারায়ণ! আমরা আপনার ভক্তিতে ব্যাপৃত থাকিয়া এবং নানাবিধ নিয়মে আপণাকে আশ্রয় করিয়া সর্বদা আপনার পূজা করি।।

★★★
ঋষয়ো দেবগন্ধর্ব্বা যক্ষরাক্ষসপনগাঃ।
পিশাচা মানুষাশ্চৈব মৃগপক্ষিসরীসৃপাঃ।।(৬৪/৬৪)
এবমাদি ময়া সৃষ্টং পৃথিব্যাং তৎপ্রসাদঞ্জম।
পদ্মনাভ! বিশালাক্ষ! কৃষ্ণ! দুঃখ প্রণাশন।।(৬৪/৬৫)
=> #পদ্মনাভ! বিশালনয়ন! #দুঃখনাশক_কৃষ্ণ! দেবতা, ঋষি, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, নাগ, পিচাশ, মানুষ, পশু, পক্ষী ও সর্প ইত্যাদি সকল পদার্থ আপণার অনুগ্রহেই আমি সৃষ্টি করিয়াছি।।

ত্বং গতিঃ সর্বভূতানাং ত্বং নেতা ত্বং জগদগুরুঃ।
ত্বৎপ্রসাদেন দেবেশ! সুখিনো বিষুধাঃ সদা।।(৬৪/৬৬)
=> দেবেশ্বর! আপনিই সমস্ত ভূতের গতি ও পরিচালক এবং আপনিই জগতের গুরু, আর আপনার অনুগ্রহেই দেবতারা সর্বদা সুখে থাকেন।

ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় দৈত্যানাঞ্চ যথায় চ।
জগতো ধারপার্থায় বিজ্ঞাপ্যং কুরু মে বিভো।।(৬৪/৬৮)
=> প্রভু! ধর্মসংস্থাপন, দৈত্যবিনাশ ও জগতের রক্ষার জন্য আপনি আমার বিজ্ঞাপিত বিষয় সম্পাদন করুন।।

যত্তৎ পরমকং গুহং তৎ প্রসাদাদদিদং বিভো।
বাসুদেব তদেতত্তে ময়োদ্গীতং যথাতথম্।।(৬৪/৬৯)
=> #জগদ_ব্যাপক_''বাসুদেব''! সেই যাহা অত্যন্ত গোপণীয় ছিল, এই সেই স্তব আপনারই অনুগ্রহে আমি এই যথার্থভাবে প্রকাশ করিলাম।।

স্রষ্টা সঙ্ককর্ষণং দেবং স্বয়মাত্মানমাত্মনা।
কৃষ্ণ! তমাত্মনাস্রাক্ষীঃ প্রদ্যুৃম্নাঞ্চাত্মসম্ভবম্।। (৬৪/৭০)
=> #কৃষ্ণ! আপণি পূর্বাকল্পে নিজেই নিজেকে সঙ্কর্ষণ রূপে সৃষ্টি করিয়া, আবার নিজেই নিজের পুত্র প্রদ্যুম্নকে সৃষ্টি করিয়াছিলেন।।

★★★
তত্রাসুরবধং কৃত্বা সর্বলোকসুখার বৈ।
ধর্ম্মং স্থাপ্য যশঃ প্রাপ্য যোগং প্রাপ্স্যসিত ত্ত্বতঃ।।(৬৪/৭৩)
=> সেই জন্মে সমগ্র মর্ত্তলোকের সুখের জন্য অশুরসংহার, ধর্মসংস্থাপন ও যশোলাভ করিয়া পুনরায় আসিয়া যথার্থরূপে আপন শরীরে মিলিত হইবেন।

স্থিতাশ্চ সর্বে ত্বরী ভূতসংঘাঃ কৃত্বাশ্রয়ং ত্বাং বরদং সুবাহু।
অনাদিমধ্যাস্তমপারযোগং লোকস্য সেতুং প্রবদন্তি বিপ্রাঃ।।(৬৪/৭৫)
=> হে সুবাহু! আপনি বরদাতা; তাই সমস্ত ভূতসমূহ আপনাকে অবলম্বন করিয়া আপনাতেই অবস্থান করে; আর জ্ঞানীরা #আদি_মধ্য ও #অন্তবীহিন এবং #শেষসীমাশূণ্য আপনাকে লোকের সেতু বলিয়া থাকেন।

ভীষ্ম বলিলেন- তারপর জগতের #ইশ্বরগণেরও_ইশ্বরসর্ব্বাতিশায়ীমাহাত্মশালী সেই দেবতা স্নিগ্ধগভীর বাক্যে ব্রহ্মাকে এইরূপ প্রত্যুত্তর করিলেন-'বৎস! তোমার এই সমস্ত অভীষ্ট বিষয়ই আমি তোমার ধ্যানে জানিতে পারিয়াছি। তাহা সেইরূপই হবে' বলিয়া তিনি সেই স্থানেই অন্তর্নিহিত হইলেন। তারপর দেবতা ঋষি ও গন্ধর্বেরা সকলেই অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন ও কৌতুকাস্বিত হইয়া ব্রহ্মাকে বলিলেন-'প্রভু! ইনি কে? আপণি প্রণাম করিয়া বিনয় সহকারে শ্রেষ্ঠবাক্যদ্বারা যাহার স্তব করিলেন। আমরা তাহার বিষয়ে শুনিতে ইচ্ছা করি। তাহারা এইরূপ বলিলে ভগবান ব্রহ্মা মধুর বাক্যে সমস্ত দেবতা, ব্রহ্মর্ষী ও গন্ধর্বকে প্রত্যুত্তর করলেন- (৬৫/১-৫)

যত্তৎ পরং তবিশ্যঞ্চ ভবিতব্যঞ্চ যৎ পরম্।
ভূতাত্মা চ প্রভুশ্চৈব ব্রহ্ম যচ্চ পরং পদম্।। 
তেনাস্মি কৃতসংবাদঃ প্রসন্নেন সুরর্ষভাঃ।
জগতোহনুগ্রহার্থায় যাচিতো মে জগৎপতিঃ।।(৬৫/৬-৭)
=> দেবশ্রেষ্ঠগণ! সেই যিনি পরম বস্তু এবং যে পরম বস্তু অতীতকালে ছিলেন, বর্তমানে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকিবেন, আর যে পরমবস্তু ত্রিভুবনের প্রভু, এবং #ব্রহ্ম নামে অভিহিত, তিনি প্রসন্ন হইয়া আমার সহিত আলাপ করিলেন। আমিও জগতের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য সেই জগৎপতির নিকট প্রার্থনা করিলাম।

★★★
মানুষং লোকমাতিষ্ঠ বাসুদেব ইতি শ্রুতঃ।
অসুবাণাং বধার্থায় সম্ভবস্ব মহীতলে।।(৬৫/৮)
=> আপনি মনুষ্যলোকে গমন করুন এবং সেখানে গমন করিয়া অশুরবধের জন্য জন্মগ্রহন করুন, আর #বাসুদেব নামে প্রসিদ্ধ হন।

তস্যাহমগ্রজঃ পুত্রঃ সর্বস্ব জগতঃ প্রভুঃ। 
বাসুদেবাহর্চ্চনীয়ো বঃ সর্ব্বলোকমহেশ্বর।।(৬৫/১৩)
=> #সমস্ত_জগতের_প্রভু_আমিও_সেই_নারায়ণের_জ্যেষ্ঠপুত্র; অতএব দেবগণ জগতের #মহেশ্বর_বাসুদেব তোমাদের পূজনীয় হবেন।

তথা মনুষ্যোহয়মিতি কদাচিৎ সুরসত্তমাঃ।
নাবজ্ঞেয়ো মহাবীর্য্যঃ শঙ্খচক্রগদাধর।।(৬৫/১৪)
=> সুতরাং দেবশ্রেষ্ঠগণ! 'ইনি মানুষ' এইরূপ মনে করিয়া কখনো তোমরা মহাশক্তিশালী #শঙ্খ_চক্র_গদাধারী_নারায়নকে অবজ্ঞা করিও না।

এতৎ পরমকং গুহ্যমেতৎ পরমকং পদম্।
এতৎ পরমকং ব্রহ্ম এতৎ পরমকং যশঃ।। (৬৫/১৫)
=> ইনি পরমগোপণীয়, ইনি পরম বস্তু, ইনি #পরমব্রহ্ম এবং ইনি পরম যশ।

এতদক্ষরমব্যক্তমেতদ্বৈশাশ্বতং মহঃ।
যত্তৎ পুরুষংজ্ঞং বৈ গীয়তে জায়তে ন চ।।(৬৪/১৬)
=> ইনি নিত্য, ইনি #অব্যক্ত, ইনি চিরস্থায়ী তেজ এবং ঋষীরা যাহাকে #পুরুষ বলেন ইনিই সেই পদার্থ ; কিন্তু ইহাকে জানা যায় না।

এতৎ পরমকং তেজ এতৎ পরমকং সুখম্।
এতৎ পরমকং সত্যং কীর্ত্তিতং বিশ্বকর্ম্মণা।। (৬৫/১৭)
=> ইনি পরম তেজ, ইনি পরম সুখ এবং ইনিই পরম সত্য - #ইহা_বেদ_বলেছেন।।

★★★★★
যশ্চ মানুষমাত্রোহয়মিতি ক্রয়াৎ স মন্দবীঃ।
হ্রষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহুঃ পুরুষাধমম্।। (৬৫/১৯)
=> যে লোক অজ্ঞানবসতঃ এই হ্রষীকেশকে কেবল মানুষ বলিবে, সে লোক মূঢ়বুদ্ধি এবং তাহাকে সকলে পুরুষাধম বলে জানিবে।

★★★
দেবং চরাচবাত্মানং শ্রীবৎসাঙ্কং সুবর্চসম্।
পদ্মানাভং ন জানাতি তমাসুস্তামসং বুধাঃ ।।(৬৫/২১)
=> সমস্ত স্থাবর জঙ্গমরূপী, শ্রীবৎসচিহ্নে চিহ্নিত ও মনোহরকান্তি নারায়ণ দেবকে যে জানিতে পারিবে না, জ্ঞানীরা তাহাকে #তামসিক_বলিবেন।

কিরীটকৌস্তভধরং মিত্রাণাভয়ঙ্কবম্।
অবজানন্ মহাত্মানং ঘোরে তমসি মজ্জতি।।(৬৫/২২)
এবং বিদিত্বা তত্ত্বার্থং লোকানামীশ্বরেশ্বরঃ ।
বাসুদেবা নমস্কার্য্যঃ সর্বলোকৈঃ সুরত্তমাঃ ।।(৬৫/২৩)
=> কীরিট ও কৌস্তভমণিধারী এবং বন্ধুবর্গের ভয়হারী মহাত্মা #বাসুদেবকে অবজ্ঞা করিয়া মানুষ চিরকালই ভয়ঙ্কর অন্ধকারে মগ্ন থাকে।
দেবশ্রেষ্ঠগণ! এইরূপ তত্ত্ববিষয় জানিয়া #দিক্পালগণেরও_অধীশ্বর_'বাসুদেব' কে নমস্কার করা সকলেরই উচিত।

এতচ্ শ্রতুং ময়া তাত! ঋষীণাং ভাবিতাত্মনাম্।
বাসুদেবং কথয়তাং সমবায়ে পুরাতনম্।।(৬৫/২৬)
=> বৎস বিশুদ্ধচিত্ত ঋষীরা কোন সভায় #আদি_পুরুষ_বাসুদেবের এইরূপ কথা বলিতেছিলেন, তখন আমি এই উপসখ্যান শুনিয়াছিলাম।

★★★
এতমর্থঞ্চ বিজ্ঞায় শ্রুত্বা চ প্রভুমব্যয়ম্। 
বাসুদেবং মহাত্মানং লোকানামীশ্বরেশ্বরম্।। (৬৫/২৮)
যস্য চৈযাত্মজৌ ব্রহ্মা সর্ব্বস্যঃ জগতঃ পিতা।
কথং ন বাসুদেবোহয়মর্চ্চ্যশ্চেজ্যশ্চ মানবৈঃ।।(৬৫/২৯)
=> সমস্ত জগতের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ব্রহ্মা যাহার পুত্র এবং যিনি দেবগণেরও অধীশ্বর, অবিনশ্বর ও ত্রিভুবনের প্রভু সেই মহাত্মা বাসুদেবের বিষয় শুনিয়া এবং এইরূপ তাহাকে জানিয়া মানুষ কেন পূজা বা তাহার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করিবে না?

তস্মাদব্রব্রীমি তে রাজন! এষ বৈ শ্বাশ্বতোহব্যয়ঃ।
সর্ব্বলোকময়ো নিত্যঃ শান্তা ধাত্রীধরো ধ্রুবঃ।।(৬৫/৩৩)
=> অতএব রাজা! তোমার নিকট যথার্থ বলিতেছি- ইনি #চিরন্তন, বিকার-বিহীন, #সর্ব্বময়, #নিত্য, শাসনকর্ত্তা, পৃথিবীর আধার এবং অচল।

যো ধাবয়তি লোকাংস্ত্রীংশ্চবাচরগুরুঃ প্রভুঃ।
যোদ্ধা জয়শ্চ জেতা চ সর্ব্বপ্রকৃতিরীশ্বর।।(৫৫/৩৪)
=> যিনি ত্রিভুবন ধারন করিতেছেন, চরাচরের গুরু, মহাপ্রভাবশালী, যোদ্ধা জয়, জেতা, সকলের সৃষ্টিকর্তা এবং সকলের অধীশ্বর।

★★★
তস্য মহাত্ম্যযোগেন যোগেনাত্মময়েন চ।
ধৃতাঃ পান্ডুসুতা রাজন জয়শ্চৈষাং ভবিষ্যতি।।(৬৫/৩৬)
=> তাহারই মাহাত্ম্যে এবং তাহারই আত্মিয়তায় পান্ডবেরা রক্ষীত হয়তেছে; সুতরাং জয়ও তাদেরই হইবে।

★★★
স এষ শ্বাশ্বতো দেবঃ সর্বভূতময়ঃ শিবঃ।
বাসুদেব ইতি জ্ঞেয়ো যন্মাং পৃচ্ছসি ভারত।। (৬৫/৩৮)
=> ভরতনন্দন! তুমি যাহার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিয়াছ, তাহাকে তুমি নিত্য, চিত্তসরূপ, সর্ব্বভূতময় এবং মঙ্গলময় বাসুদেব বলিয়া জানিও।

★★★★★
ব্রাহ্মণৈঃ ক্ষত্রিয়ৈর্ব্বৈশ্যৈঃ শুদ্রেশ্য কৃতলক্ষণৈঃ।
সেব্যতেহভ্যর্চতে চৈব নিত্যযুক্তৈঃ সকর্ম্মভিঃ।। (৬৫/৩৯)
=> ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রগণ ভিন্ন ভিন্ন চিহ্ন ধারণ করিয়া এবং সর্ব্বদা তৎপর হইয়া আপন আপন কর্ম দ্বারা তাহার সেবা ও পূজা করিয়া থাকেন।

★★★
দ্বাপরস্য যুগস্যাস্তে আদৌ কলিযুগস্য চ।
সাত্বতং বিধিমাস্থায় গীতঃ সঙ্কর্ষণেন যঃ।।(৬৫/৪০)
এষ ধর্ম্মস্তত্ত্ববিদঃ সর্ব্বেশঃ সর্বকামদঃ।
এষ কর্ত্তা চ কার্য্যঞ্চ পূর্ব্বদেবঃ স্বয়ং প্রভুঃ।
ভূতভব্যভবিষ্যঞ্চ পূর্ব্বমেতদকল্পয়ৎ।।(৬৫/৪১)
=> বলরাম দ্বাপরযুগের অন্তে ও কলিযুগের প্রথমে যদুবংশে জন্ম গ্রহন করিয়া যাহার বিষয় বলিয়াছেন, সেই ইনি ধর্মতত্ত্ববিদগণের ধর্ম্ম, #জগদীশ্বর, সর্বাভিষ্ট দাতা, কর্তা, কার্য্য, আদিদেব, আত্মা ও সর্ব্বাধিক প্রভাবশালী। ইনি সৃষ্টির পূর্বে ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের কল্পনা করিয়া রাখিয়াছিলেন।

★★★★★
উভৈ সন্ধ্যে দীশঃ খঞ্চ নিয়মঞ্চ জনার্দ্দনঃ।
ঋষিংশ্চৈব চ গোবিন্দস্তপশ্চৈবাপ্যকল্পয়ৎ।।(৬৫/৪২)
=> তাহার পর #জনার্দ্দন_গোবিন্দ- দুইটি সন্ধ্যা, সকল দিক্, আকাশ, দিন ও রাত্রি প্রভৃতি নিয়ম, মরীচি প্রভৃতি ঋষি এবং তপস্যা সৃষ্টি করিয়াছিলেন।

স এব সর্ব্বং সুরমর্ত্ত্যলোকং সমুদ্রকক্ষ্যান্তরিতাং পুরীঞ্চ। 
যুগে যুগে মানুষঞ্চৈব বাসং পুনঃ পুনঃ সৃজতে বিশ্বকর্ম্মা।। (৬৫/৪৩)
=> আর সেই #জগৎস্রষ্টা_নারায়ণই স্বর্গ, মর্ত্ত, পাতাল ও সমুদ্রবেষ্টিত দ্বারকা-নগরী এবং যুগে যুগে বার বার নিজের মনুষ্যাবতার সৃষ্টি করিয়া থাকেন।

মার্কন্ডেয়শ্চ গোবিন্দ কথয়ত্যদ্ভুতং মহৎ।
সর্বভূতাণি ভূতাত্মা মহাত্মা পুরুষোত্তমঃ।।(৬৬/৩)
=> মহর্ষি মার্কন্ডেয় সেই বাসুদেব সম্বন্ধে বলে থাকেন- তিনি জগতের সমস্ত প্রাণী ও তাহাদের জীবাত্মা, আবার তিনিই #পরমাত্মা ও #পুরুষোত্তম।

★★★
আপো বায়ুশ্চ তেজশ্চ ত্রয়মেতদকল্পয়ৎ।
স সৃষ্ট্বা পৃথীবিং দেবীং সর্বলোকেশ্বরঃ প্রভুঃ।।(৬৬/৪)
=> সেই সর্ব্বলোকেশ্বর প্রভু প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করিয়া, পরে জল, বায়ু ও তেজ - এই তিনটা সৃষ্টি করিয়াছিলেন।

অপ্সু বৈ শয়নং চক্রে মহাত্মা পুরুষোত্তমঃ।
সর্ব্বদেবময়ো দেবঃ শয়ানঃ শয়নে সুখম্।।(৬৬/৫)
=> পরে সেই মহাত্মা পুরুষোত্তম ও সর্ব্বদেবময় বাসুদেব সমুদ্রজলশয্যায় শয়ন করিয়া সুখে নিদ্রা গিয়াছিলেন।।

মুখতঃ সোহগ্নিমসৃজ প্রাণাদ্বায়ুমথাপি চ।
সরস্বতিঞ্চ বেদাংশ্চ মনসঃ সসৃজেহচ্যুতঃ।।(৬৬/৬)
=> ক্রমে তিনি মুখ হইতে অগ্নি, প্রাণ হইতে বায়ু এবং মন হইতে বাণী ও #চারি_বেদ_সৃষ্টি_করিয়াছিলেন।

★★★
এষ লোকান্ সসর্জ্জাদৌ দেবাংশ্চর্ষিগণৈঃ সহ।
নিধানঞ্চৈব মৃত্যুঞ্চ প্রজানাং প্রভবোহব্যয়।।(৬৬/৭)
=> জগতের সৃষ্টিকর্তা ও অবিনশ্বর এই নারায়াণ ত্রিভুন ও ঋষিগণের সহিত দেবগণকে সৃষ্টি করিয়াছিলেন। পরে প্রাণীগণের স্থিহি ও মৃত্যু সৃষ্টি করেন।

★★★
ঋষাংশ্চৈব হি গোবিন্দস্তপশ্চৈবাভ্যকল্পরৎ।
স্রষ্টারং জগতশ্চাপি মহাত্মা প্রভুরব্যয়ঃ।।(৬৬/১০)
অগ্রজং সর্ব্বভূতানাং সঙ্কর্ষণমকল্পয়ৎ।
স্রষ্টারং জগতাশ্চাপি মহাত্মা প্রভুরব্যয়ঃ।।(৬৬/১১)
=> জগদীশ্বর ও অবিনশ্বর এই নারায়ণ তপস্যা, ঋষিগণকে এবং জগতের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করিয়াছিলেন এবং শেষনাগকেও ইনিই সৃষ্টি করিয়াছিলেন; লোকে যাহাকে অনন্ত দেব বলিয়া জানেন।

যো ধারযতি ভূতানি ধবাঞ্চেমাং সপর্ব্বতাম্।
ধ্যানযোগেন বিপ্রাশ্চ তং বিদন্তি মহৌজসম্।। (৬৬/১২)
=> যিনি প্রাণীগণকে এবং পর্বতসমূহের সহিত পৃথীবিকে ধারণ করিয়া রহিয়াছেন, ব্রাহ্মণেরা ধ্যানযোগে তাহাকে #চিৎস্বরূপ বলিয়া জানেন।

কর্ণশ্রোতোভবঞ্চাপি মধুং নাম মহাসুরম্।
তমুগ্রমুগ্রকর্ম্মাণমুগ্রাং বুদ্ধিং সমাস্থিতম্।।(৬৬/১৩)
হবন্তং ব্রাহ্মণো বেদান্ জঘান ব্রহ্মণ পিতা।
ব্রহ্মণোহপচিতিং কুর্ব্বন্ মহাত্মা পুরুষোত্তমঃ।।(৬৬/১৪)
=> এই নারায়ণেরই কর্ণমল হতে উৎপন্ন , ভয়ঙ্করমূর্তি, ভয়ঙ্করকার্য্যকারী ও ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি মধু নামক মহাসুর যখন ব্রহ্মার নিকট হইতে #বেদ হরণ করিবার উপক্রম করেছিলো, তখন ব্রহ্মার পিতা ও মহাত্মা নারায়ণ ব্রহ্মার সম্মান রক্ষা করিবার জন্যে তাহাকে বধ করিয়াছিলেন।

তস্য তাত! বধ দেবদানবমানধাঃ।
মধুসূদনমিত্যাহুর্ঋষযশ্চ জনার্দ্দনম্।।(৬৬/১৫)
=> বৎস! নারায়ণ সেই মধুকে বধ করিয়াছিলেন বলিয়ায় দেবগণ, ঋষিগণ, দানবগণ ও মানবগণ তাহাকে 'মধুসূদন' বলেন।

বরাহশ্চৈব সিংহশ্চ ত্রিবিক্রমগতিঃ প্রভুঃ।
এষ মাতা পিতা চৈব সর্ব্বেষাং প্রাণিনাং হরি।।(৬৬/১৬)
=> জগতের অধীশ্বর এবং সমস্ত প্রাণীর পিতা ও মাতাস্বরূপ এই #নারায়ণই_বরাহ_নৃসিংহ_ও_বামন_হইয়াছিলেন।

পরং হি পুন্ডরীকাক্ষান্ন ভূতং ন ভবিষ্যতি।
মুখতঃ সোহসৃজদ্বিপ্রাণ্ বাহুভ্যাং ক্ষত্রিয়াংস্তথা।।(৬৬/১৭)
বৈশ্চাংশ্চাপ্যুরুতো রাজন্! শূদ্রান্ পদ্ভ্যাং তথৈব চ।
তপসা নিয়তো দেবো নিধানং সর্ব্বদেহিনাম্।। (৬৬/১৮)
=> রাজা! নারায়ণ হইতে শ্রেষ্ঠ বস্তু নেয়, বর্তমানে ও নায়, ভবিষ্যতেও হইবে না। জগতের মঙ্গল বিধানে ব্যাপমত এই নারায়ণ শক্তি সঞ্চয় করিয়া #মুখ_হইতে_ব্রাহ্মণ, #বাহুযুগল_হইতে ক্ষত্রিয়, #উদরযুগল_হইতে_বৈশ্য_এবং_চরণযুগল_হইতে_শূদ্রজাতিকে_সৃষ্টি_করিয়াছিলেন এবং ইনিই সমস্ত প্রাণীর আধার।

কেশবঃ পরমং তেজঃ সর্ব্বভূতজগৎপতিঃ।
এবমাহুর্হ্রষীকেশং মুনয়ো বৈ নরাধপি।।(৬৬/২০)
=> নরনাথ! মুনিরা এইরূপ বলিয়া থাকে যে, #নরায়ণই_পরমব্রহ্ম এবং তিনিই সমস্ত প্রাণীর ও সমগ্র জগতের ইশ্বর।

★★★
সর্বাত্মনা মহাত্মানং কেশবং জগদীশ্বরম্।
প্রপন্নঃ শরণং রাজন্! যোগানামীশ্বরং প্রভুম্।।(৬৬/২৪)
=> ভারতনন্দন! যুধিষ্ঠির এইরূপ জানিয়া, সর্বপ্রযত্নে মহাত্মা, জগদীশ্বর, যোগনিয়ন্তা ও মহাপ্রভাবশালী নারায়ণের শরণাপন্ন হইয়াছেন।

★★★
স্তবং বৈ ব্রহ্মসংযুক্তং শৃণু কৃষ্ণস্য ভারত।
ব্রহ্মর্ষিভিশ্চ দেবৈশ্চ যঃ পুরা কথিতো ভুবি।।(৬৭/১)
=> ভারতনন্দন! পূর্বাকালে দেবতারা ও ব্রহ্মর্ষীরা যে স্তবটি পৃথিবীতে বলিয়াছিলেন, তুমি #কৃষ্ণের সেই তত্ত্বার্থসংযুক্ত স্তবটি শ্রবণ কর।

সাধ্যানামপি দেবানাং দেবেদেবেশ্বরঃ প্রভুঃ।
লোকভাবনভাবজ্ঞ ইতি ত্বাং নারদোহব্রবীৎ।।(৬৭/২)
=> নারায়ণ! আপনি দেবগণ এবং সাধ্যগণেরও প্রভু দেবদেব ব্রহ্মা এবং #শিবেরও_অধীশ্বর, আর আপনি লোকের মনের ভাব জানেন, ইহা নারদ বলিয়াছেন।

★★★
ভূতং ভব্যং ভবিষ্যঞ্চ মার্কন্ডেয়োহভ্যুবাচ হ।
যজ্ঞং ত্বাঞ্চৈব যজ্ঞানাং তপশ্চ তপসামপি।।(৬৭/৩)
=> মার্কন্ডেয় বলিয়াছেন- আপনি ভূত ভবিষ্যৎ ও বর্তমান এবং আপনি যাজ্ঞিগগণের যজ্ঞ এবং তপস্যিগণ তপস্যা।

★★★
দেবানামপি দেবঞ্চ ত্বমাহ ভগবান্ ভৃগুঃ।
পুরাণঞ্চৈব পরমং বিষ্ণো রূপং তবেতি চ।।(৬৭/৪)
=> ভগবান ভৃগু বললেন- আপনি দেবগনেরও দেবতা এবং বিষ্ণুরূপি আপনার রূপটী আদিম ও সুন্দর।

বাসূদেবো বসূনাং ত্বাং শত্রুং স্থাপয়িতা তথা।
দেবদেবোহসি দেবানামিতি দ্বৈপায়নোহব্রবীৎ।।(৬৭/৫)
=> দ্বৈপায়ণ বলিয়াছেন- আপনি বসুগণের বাসুদেব, ইন্দ্রকে স্বর্গরাজ্য স্থাপন করেন এবং দেবগণের দেবদেব।

★★★
পূর্ব্বানি প্রজানিসর্গে চ দক্ষমাহুঃ প্রজাপতিম্।
স্রষ্টারাং সর্ব্বভূতানামঙ্গিরাত্ত্বাং তথা ব্রবীৎ।। (৬৭/৬)
=> অনেক ঋষি বলেন- প্রথম প্রজাসৃষ্টির বিষয়ে আপনি দক্ষপ্রজাপতি। আর অঙ্গিরা বলেন- আপণি #সর্ব্বভূতের_সৃষ্টি_কর্তা।।

অব্যক্তং তে শরারস্থং ব্যাক্তং তে মনসি স্থিতম্।
দেবাস্ত্বৎসম্ভবাশ্চৈব দেবলস্ত্বসিতোহব্রবীৎ।।(৬৭/৭)
=> অস্বিতদেবল বলিয়াছেন- প্রকৃতি আপনার শরীরে রহিয়াছেন, মহাভূত প্রভৃতি আপনার মনে রহিয়াছে এবং দেবতারা আপনা হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন।

★★★
শিরসা তে দিবং ব্যাপ্তং বাহুভ্যাং পৃথিবী তথা।
জঠরং তে ত্রয়ো লোকাঃ পুরুষোহসি সনাতনঃ।।(৬৭/৮)
=> নারায়ন! বিরাটরূপে আপনার মস্তক স্বর্গলোককে এবং বাহুযুগল পৃথিবীকে ব্যাপ্ত করিয়া রহিয়াছে, আর অনন্তরূপে আপনার উদরই ত্রিভুবন। সুতরাং আপনিই সনাতন পুরুষই বটেন।।

এবং ত্বামভিজানান্তি তপসা ভাবিতা নরাঃ।
আত্মদর্শনতৃপ্তানামৃষীণাঞ্চাসি সত্তমঃ।।(৬৭/৯)
=> তপস্যার গুণে তত্ত্বজ্ঞানপ্রাপ্ত লোকেরা আপনাকে এইরূপই জানেন; আত্মদর্শনসন্তুষ্ট ঋষিদের মধ্যে প্রধান।

★★★
রাজর্ষীণামুদারাণামাহবেষ্বানিবর্ত্তিনাম্।
সর্ব্বধর্ম্মপ্রধানানাং ত্বাং গতির্মধুসূদন।।(৬৭/১০)
=>এবং মধুসূদন! উদরচরীত্র, যুদ্ধে অনিবর্ত্তি ও সর্ব্বধর্মজ্ঞপ্রধানদের একমাত্র আপনিই গতি।

★★★
ইতি নিত্যং যোগবিদ্ভির্ভগবান্ পুরুষোত্তমঃ।
সনৎকুমারপ্রমুখৈ স্তুয়তেহভ্যর্চতে হরিঃ।।(৬৭/১১)
=> সনৃৎকুমার প্রভৃতি যোগীরা এইভাবে সর্বদা পুরুষোত্তম নারায়ণের স্তব ও পূজা করিয়া থাকেন।

এষ তে বিস্তরস্তাত! সংক্ষেপশ্চ প্রকীর্ত্তিতঃ।
কেশবস্য যথাতত্ত্বং সুপ্রীতো ভজ কেশবম্।।(৬৭/১২)
=> বৎস। নারায়ণ তত্ত্ব অনুসারে তোমার নিকট বিস্তৃতভাবে তাহার মাহাত্ম্য এবং সংক্ষিপ্তভাবে তাহার স্তব বলিলাম। এখন তুমি বিশেষ প্রীতিযুক্ত হইয়া কেশবের সেবা কর।

এমন আরো অনেক রেফারেন্স রয়েছে, সময়ের অভাবে কিছুই পারছি না।। আমার যতটুকু সম্ভব হয়েছে, ততটুকু প্রকাশ করেছি। মহাভারতের অনেক স্থানেই কে ইশ্বর তা প্রতিপন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না, ওসব #কৃষ্ণবিরোধীদের চোখে কি ওসব পরে নি!!!!.. কৃষ্ণকে কোথাও যোগী বলা হয় নি, উল্টো তিনি যে পরমব্রহ্ম তা প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তারপরও তারা কৃষ্ণকে যোগীপুরুষ বানাচ্ছে, নিজের মনগড়া মতবাদ দিয়ে। আর এ কলিযুগে এসব হবেই, কলিযুগের ভবিষ্যত বাণীতে এ ও বলা হয়েছে যে, তারা শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করবে।। সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হচ্ছে।।
সংগৃহীতঃ রাকেশ রায়।