Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Saturday, October 28, 2017

তুলসী গাছ শুকিয়ে যায় কেন?

অনেকেই বাড়িতে তুলসীগাছ লাগান। নিয়মিত যত্ন নেন। পুজাও করেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখেছেন কখনও... আপনার বা আপনার পরিবারে কোনও সমস্যা
হলে তার প্রথম প্রভাব পরে তুলসীগাছের উপর! তখন হাজারো যত্নের পরও তুলসীগাছ শুকিয়ে যেতেথাকে। কেন হয় এমন? জেনে নিন কারণগুলো-

১. পুরাণ বা শাস্ত্র মতে, তুলসী দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক। আর অশান্তি, দারিদ্র্য-র মতো সমস্যা যে পরিবারে থাকে সেই বাড়িতে লক্ষ্মী থাকেন না। প্রতীক হিসেবে সবার আগে তুলসীগাছ নষ্ট হয়ে যায়।
২. জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে তুলসীগাছ শুকিয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ বুধ গ্রহ। এই গ্রহের রং সবুজ। এবং সমস্ত গাছ (তুলসী-সহ) এই গ্রহের কারক। আবার অনেক সময় অন্য গ্রহের শুভ বা অশুভ ফল বুধ সেই গ্রহের জাতক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এছাড়া, যে কোনও অশুভ প্রভাব সবার আগে বুধ গ্রহ আর তার কারকের উপর পড়ে। সেই অনুসারেও তুলসীগাছ শুকিয়ে যায়।
৩. শাস্ত্র মতে, তুলসী গাছ নীরবে একজন 'বৈদ্য'-র কাজ করে। ডাক্তারবাবু যেমন চিকিৎসা করে আমাদের নিরোগ রাখেন, তুলসীগাছও তেমনি নেগেটিভ এনার্জি সরিয়ে ঘরে পজিটিভ এনার্জি আনতে সাহায্য করে। ঘরের 'দোষ-ত্রুটি' মুক্ত করতে
গিয়েও অনেক সময় তুলসী শুকিয়ে যায়।
৪. মাত্রাতিরিক্ত পারিবারিক অশান্তি-কলহ কমাতে চাইলে তুলসী-র টব রান্নাঘরের পাশে রাখুন। ছেলে প্রচণ্ড জেদি? কিছুতেই বশে আনতে পারছেন না? ঘরের পূর্বমুখী জানালার পাশে তুলসী গাছ রাখতে পারলে উপকার মিলবে।
৫. বাড়িতে বিবাহযোগ্য মেয়ে রয়েছে। কিছুতেই তাকে পাত্রস্থ করতে পারছেন না। বাড়ির অগ্নিকোণে তুলসী-র চারা লাগিয়ে অবিবাহিত মেয়েটি রোজ জল ঢেলে
গাছটি প্রদক্ষিণ করলে বিয়ের বাধা দূর হবে।
৬. ব্যবসায় মন্দা? বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তুলসী গাছ লাগিয়ে প্রতি শুক্রবার তাতে কাঁচা দুধ ঢালুন। এবং কোনও বিবাহিতাকে মিষ্টি কিছু খেতে দিন। নিয়মিত কিছুদিন করলে ব্যবসার মন্দা কাটবে।
নমষ্কার।।

Thursday, October 26, 2017

দ্বাদশ পদাবলী

আমরা যারা সনাতন বা বৈদিক ধর্মাবলম্বী, তাদের কাছে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা একখানি পবিত্র গ্রন্থ। এ শুধু গ্রন্থ বললে ভুল হবে, গীতা মানব জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান সহ সকল শাস্ত্রের আধার। এই পূণ্য গ্রন্থ পাঠের পুর্বে আমরা একটি শ্লোক বা স্তোত্র পাঠ করে থাকি।
"ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়!!"
এই শ্লোকে আছে বারটি বর্ণ।যা হলো, ওঁ, ন, মো, ভ, গ, ব, তে, বা, সু, দে, বা, য়। এই বারটি বর্ণ নিয়ে রচিত হয়েছে বারটি পদাবলী। যা সবার জানার জন্য পোস্ট করলাম। আশাকরি সবার ভাল লাগবে।
.
ওঁ-
বীজেতে ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবকে বোঝায়,
রাগদ্বেষাদি যার কৃপায় জয় করা যায়!
রোগে শোকে কাল নিদ্রায় মোরা হই মগন,
দয়াকরে রক্ষা করো হে মধুসূদন!!
.
ন-
নমি তব শ্রীপদেতে নিলাম শ্মরণ,
অনাশ্রয়ে অনাথের রক্ষো হে মধুসূদন!!
.
মো-
মোহ মায়ায় স্ত্রীসন্তানে সদা নিমগন,
তৃষ্ণা নিবারণ করো হে মধুসূদন!!
.
ভ-
ভক্তিহীন শোকে তাপে রত অনুক্ষণ,
পাপ হতে রক্ষা করো হে মধুসূদন!!
.
গ-
গতাগতি বারংবার করো নিবারণ,
জন্মমৃত্যু রহিত করো হে মধুসূদন!!
.
ব-
বহুগামীর বহু যোনী করেছি ভ্রমণ,
গর্ভদুঃখ হতে রক্ষো হে মধুসূদন!!
.
তে-
তেমনি ভোগ করতে হয় কর্ম যেমন,
সংসার মায়ায় রক্ষো হে মধুসুদণ!!
.
বা-
বাক্য দিয়েছিলাম তোমা করিব সাধন,
মায়ামোহে তা' ভুলিলাম হে মধুসুদণ!!
.
সু-
সুকর্ম করিনি আমি আমার এ জীবন,
দুঃখার্ণবে রক্ষা করো হে মধুসুদণ!!
.
দে-
দেহান্তর ছিলাম কতো নাই তা স্মরণ,
জন্মমৃত্যু বন্ধ করো হে মধুসুদণ!!
.
বা-
বাসুদেবে যেনো আমি স্মরি চিরন্তন,
জরাব্যাধি মৃত্যু হতে রক্ষো মধুসুদণ!!
.
য়-
যথা যথা জন্ম আমি করি হে ধারণ,
তব পদে অচলাবস্থা ভক্তি দাও মধুসুদণ!!
.
হে পরমকরুনাময়, সচ্চিদানন্দ ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ, তোমার সৃষ্টির সকল কিছুই তুমি রক্ষা করো প্রভু। সবার মঙ্গল
আর কল্যাণ করো প্রভু দয়াময়।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে।।
জয় শ্রীমধুসুদণ, জয় রাধে।

Wednesday, October 25, 2017

হিন্দু ধর্মে কোন কোন খাবার গ্রহণীয় ও কোন কোন খাবার বর্জনীয় -আসুন জেনে নেই। The food items which is allowed or not allowed in Hindu Religion.

হিন্দুদের কাছে খাবার বাছাই করা একটি ব্যাক্তিগত, পরম্পরাগত ও নির্দিষ্ট মতবাদের বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। কাজেই এমন অনেক হিন্দু আছেন যারা তাদের বংশানুক্রমিক পরম্পরা ও বিশ্বাসের জন্য কিছু জিনিস খাওয়া ত্যাগ করেছে। যেমন – ভারতের অনেক বৈষ্ণব সম্প্রদায় ভুক্ত হিন্দু (উত্তর ভারত) আছেন যাদের বাড়িতে মাছ তোলা নিষিদ্ধ। আবার অনেকের হিন্দু বাড়িতে (উত্তর-পশ্চিম ভারত) মাছ মাংশ দুটোই তোলা নিষিদ্ধ। কাজেই হিন্দুদের মধ্যে পরম্পরাগত, ব্যাক্তিগত ও বিশ্বাসী মতবাদগত ফ্যাকটর গুলির উপর অনেক অংশে নির্ভর করে নিষিদ্ধ খাবার গুলি বাছাই এর ক্ষেত্রে।
তাই কারো ব্যাক্তিগত বা পরম্পরাগত পছন্দ তে হস্তক্ষেপ করার জন্য এই নিবন্ধ টি লিখা হয়নি! বরং উক্ত নিবন্ধটি সেইসব বাঙালী হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য লিখা হয়েছে যারা হিন্দু সংস্কার (সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়) কে অবলম্বন করে চলেন এবং জানতে ইচ্ছা রাখেন কোন কোন খাবার গুলো হিন্দু শাস্ত্রের সাপেক্ষে সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু শাস্ত্র বলতে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্রের মূল গ্রন্থ গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বৈধ-অবৈধ খাবারের সূচীটি বানানো হয়েছে।
প্রাণীজ

{দুধ}
[১] উট ও ভেড়ার দুধ পান করা নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২২-২৩, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১১-১২, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
[২] এক খুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – ঘোড়া) দুধ পান করা নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৩, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
[৩] গরু, মোষ, ছাগলের বাচ্চা জন্মানোর পর থেকে ১০দিন যাবৎ তাদের দুধ পান নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৪, বসিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৫, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৯, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
[৪] নিচুস্তরের পশু (যেমন – কুকুর, বেড়াল) ও মাংসাশী পশুর (যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল) দুধ পান নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৮৪

{ডিম}
[১] হাঁস, মুরগি, ময়ুরের ডিম খাওয়া সিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪, ভেল সংহিতা – চিকিতসাস্থানম – ২৬৭, চরক সংহিতা ২৭.৬৩-৬৪

{মাছ-মাংস}
[১] সাপ, কুমীর, ঘড়িয়াল, শুশুক, সর্প আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, অনিয়তকার মস্তক বিশিষ্ট মাছ (যেমন – ইল, কুঁচে মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি) ও জলজ শামুক, ঝিনুক, গুগলি ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪১, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৬, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৮-৩৯
[২] বন্য মোরগ/মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪
★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত মোরগ/মুরগি খাওয়া সিদ্ধ।
[৩] যে সমস্ত পাখী শুধু তাদের পা দিয়ে মাটিতে আঁচড়ে আঁচড়ে খাবারের সন্ধান করে এবং যেসব পাখীরা লিপ্তপদী (যেমন – হাঁস) তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭
[৪] রাজহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, বক, কাক, পায়রা, টিয়া, ঘুঘু, তিতির, বাজ, চিল, শকূন, বাদুড়, ময়ূর, স্টার্লিং, দোয়েল, চড়ুই, কাঠঠোঁকরা, মাছরাঙা এবং নিশাচর পাখীর মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২-১৭৪
[৫] মাংসাশী পাখির মাংশ আহার নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৪, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২
[৬] যেকোনো বিস্বাদ ও খাদ্য অনুপযোগী মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মনু স্মৃতি ৫.১১-১৭, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৪
[৭] যে সমস্ত পশুর দুধের দাঁত ভাঙেনি তাকে জবাই করা নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৫, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩০-৩১
★ অর্থ্যাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক পশুর মাংস আহার নিষিদ্ধ।
[৮] যে সমস্ত পশুর একটি মাত্র চোয়ালে দাঁত আছে (যেমন-ঘোড়া) তাদের মাংস আহার নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪০, মনু স্মৃতি ৫.১৪, বিষ্ণু স্মৃতি LI.৩০
[৯] যে সমস্ত প্রাণীর পা বহু অংশে বাঁকা। যেমন শজারু, কাঁটাচয়া, শশক, খরগোশ, কচ্ছপ, গোধা, গোধিকা ইত্যাদির মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৯, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.২৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪
[১০] গণ্ডার ও বন্য শূকরের মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫
[১১] নরমাংস বা নরাকার যন্তুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮
[১২] গৃহপালিত পশু, ছাগল, ভেড়ে, শূকরের মাংশ খাওয়া বৈধ।
তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১-৪
★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত শূকরের মাংস বৈধ।
[১৩] গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
★ গ্রাম্য শূকর বলতে ফালতু শূকরের সেইসব প্রজাতি গুলোকে বোঝানো হয়, যারা আকারে ছোটো এবং পঙ্কিল নোংরা স্থানেই শুধু বাস করে। নোংরা স্থানে থাকার জন্য এদের মাংসে কৃমিজাতীয় পরজীবীর সিস্ট থাকে যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমিত হয়। উক্ত কারণের জন্য গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ কিন্তু গৃহপালিত শূকর নয়।
[১৪] যেকোনো মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা নিষিদ্ধ। তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.১৬
[১৫] বহু উপকারী গোজাতির মাংস আহার নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, বিষ্ণু পুরাণ ৩.৩.১৫, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ ১.৯.৯, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩-৪৫
[১৬] গৌর, ঘায়ল, সরাভ, ষাঁড় প্রভৃতি গো সম্প্রদায় ভুক্ত জীবের মাংস নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
[১৭] মাংসাশী প্রাণীর মাংস নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪
★ মূলত মাংসাশী প্রাণী বলতে উচ্চতর প্রাণীদের বোঝানো হয়েছে যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বন্য কুকুর ইত্যাদি। এদের শিকার করা কঠিন এবং মাংস নিরস, দুর্গন্ধ এবং কুরুচিকর স্বাদ যুক্ত হওয়ার জন্য পরিত্যাজ্য।
[১৮] একখুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – উটের) মাংস নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
[১৯] কৃষ্ণসার, নীলগাই, সাধারণ হরিণ, বন্য শূকরের মাংস খাওয়া বৈধ।
তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৬
[২০] স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মাছ (যেমন- বিভিন্ন মেজর ও মাইনর কার্প, খাঁড়ির মাছ ইত্যাদি) আহার হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ।
তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৮

{অন্যান্য}
[১] মাদক দ্রব্য মিশ্রিত পানীয় নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২১
[২] সুরা ও সুরা প্রস্তুতের জন্য ব্যাবহৃত দ্রব্য সমূহ নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৫
[৩] ব্যাঙের ছাতা, শালগম নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৮, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭১, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩
[৪] যেকোনো আহারে উপযোগী বীজ, ফল, মূল, সব্জি খাওয়া বৈধ।
তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১১.১২-২২
[৫] সুস্বাদু আহারে উপযোগী রস (যেমন – খেঁজুরের রস, তালের রস, আখের রস, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি), দুগ্ধজাত পদার্থ (যেমন – দুধ, ঘি, মাখন, দই) মধু ইত্যাদি বৈধ।
তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১৮.১২-১৩
[৬] রসুন, পেঁয়াজ, পলাণ্ডু খাওয়ার উপর বিতর্কিত বিধান আছে, কাজেই ইহা খাওয়া যেতে পারে।
★আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৬, মনু স্মৃতি ৫.৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ১.১৭৬, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ অনুসারে পেঁয়াজ রসুন খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অপরদিকে বৈদিক আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র গুলিতে ভিন্ন চিকিৎসার কাজে পেঁয়াজ রসুনের ব্যাবহার উল্লেখ রয়েছে। কাজেই পেঁয়াজ রসুন খাওয়া কে নিষিদ্ধ বলা অযৌক্তিক।
[৭] টকে যাওয়া (ব্যাতিক্রম – দই) বা পচে যাওয়া বা কোনো খাবারে উভয়ে মিশ্রিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২০, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
[৮] কুকুর, বিড়াল, বানর, মহিষ প্রভৃতি বন্য প্রাণীর মাংস আহার নিষিদ্ধ।
তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৯৩, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩, মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪
[৯] যে খাবারে কোনো পশু মুখ দিয়েছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ। তথ্যসূত্র – গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.১০, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
[১০] যে সব খাবারে পোকা জন্মছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ। তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.২৬, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭

উক্ত নিষিদ্ধতার বাইরের খাদ্য বস্তু বা আহার সামগ্রী সমূহ বৈধ, কারণ সেইসব আহার সামগ্রীর উপরে নিষিদ্ধতা আরোপ হয়নি হিন্দুশাস্ত্র সমূহে।

Writer and Editor:- Samir Kumar Mondal.

Tuesday, October 24, 2017

কৃষ্ণ‌প্রিয়া মীরা  পর্ব - ২

====================
আহ্বান ও মীরার সাড়া 
====================

১৫২৩ খ্রীষ্টা‌ব্দে মীরার বয়স যখন মাত্র স‌তে‌রো , তাঁর স্বামী ভোজরাজ দেহত্যাগ কর‌লেন । কোন কোন জীব‌নী‌তে ভোজরা‌জকে চি‌ত্রিত করা হ‌য়ে‌ছে একজন ঈর্ষাপরায়ণ স্বামীরূপে , যি‌নি মীরার প্রবল ঈশ্বরানুর‌ক্তি - যা তাঁ‌কে মধুর দাম্পত্য সুখ হ‌তে ব‌ঞ্চিত ক‌রে‌ছে -- প্র‌তি বি‌দ্বেষযুক্ত হ‌য়ে স্ত্রীর মীরার প্র‌তি অত্যন্ত ক‌ঠোর ব্যবহার কর‌তেন । আবার কেউ কেউ এরূপ ধ‌ারণার বি‌রো‌ধিতা করে‌ছেন , তাঁ‌দের ম‌তে ভোজরাজ একজন বিরহী স্বামী , যি‌নি স্ত্রী‌কে অত্যন্ত ভালবাস‌লেও তাঁর হৃদয় লা‌ভে অসমর্থ হ‌য়ে‌ছি‌লেন , কারণ মীরার মন সম্পূর্ণতই ভগবৎ প্রে‌মে বাঁধা প‌ড়েছিল ।

যাই‌হোক , স্বামীর মৃত্যুর পর মীরার জীব‌নের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো । সে অধ্যায়‌টি তাঁর জীব‌নে মহা পরীক্ষার এবং সেই স‌ঙ্গে তা সাফ‌ল্যেরও ব‌টে । ক‌থিত আ‌ছে , এইসময় তি‌নি রইদাস নামক এক বৈষ্ণব সাধুর নিকট মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ ক‌রেন । তাঁর বৈধব্য অ‌তি স্বাভাবিকভা‌বেই তাঁর আধ্যা‌ত্মিক সাধনা তীব্রতর ক‌রে‌ছিল । এখন গুরুর নিকট নির্দিষ্ট পথ‌নি‌র্দেশ লাভ ক‌রে তাঁর ব্যাকুলতা , তন্ময়তা , সাধুসঙ্গ লা‌ভের জন্য তীব্র স্পৃহা , গতানুগ‌তিক সাংসা‌রিক জীব‌নের প্র‌তি প্রবল বিতৃষ্ণা প্রভৃ‌তি অনন্তগু‌ণে বৃ‌দ্ধি পেল এবং সে সকল অহরহ তাঁকে উত্ত্যক্ত কর‌তে থাকল ।

ইতিম‌ধ্যে শ্বশুর সংগ্রাম সিং‌হের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে এবং ভোজরা‌জের ভ্রাতা কুমার বিক্রম‌জিৎ চি‌তো‌রের সিংহাস‌নে আ‌রোহণ ক‌রে‌ছেন । তি‌নি মীরার প্র‌তি ক‌ঠোর নিয়ম জা‌রি কর‌তে বিন্দুমাত্র বিলম্ব কর‌লেন না । কিন্তু মীরার সাধনভজন একান্তভা‌বেই তাঁর নিজস্ব ধারায় অগ্রসর হ‌তে থাকল ।
তিনি গি‌রিধারী গোপা‌লের সম্মু‌খে নৃত্য কর‌তেন , আপ্লুত হৃদ‌য়ে ভজন নি‌বেদন করেন । স‌াধুসঙ্গ লা‌ভের সু‌যোগ তো কিছুমাত্রও হারান না ।

সাধুসঙ্গ লা‌ভের তৃষ্ণা তাঁর এতই তীব্র ছিল যে , রাজপরিবা‌রের প্রথাগত বি‌ধি‌নিয়ম সকল শি‌থিল ক‌রেও অধ্যাত্ম প্রেরণালা‌ভের জন্য সাধুভ‌ক্তের সঙ্গ কর‌তেন । অশু‌দ্ধচিত্ত মানুষজ‌নের স্বভাবতই মীরার এই সাধুপ্রী‌তির অর্থ বোধগম্য হয়‌নি ।

মহারাজা বিক্রম‌জিৎ অতঃপর আ‌দেশ জা‌রি কর‌লেন ,মীরা‌কে তার ঐ অ‌শোভন নৃত্য- গীত বন্ধ কর‌তে হবে এবং আ‌রো আপ‌ত্তিকর , তার ঐ সাধু‌দের স‌ঙ্গে মেলামেশা ত্যাগ কর‌তে হবে । তি‌নি না একজন নারী ? তি‌নি না বিধবা ? ত‌বে কেন তাঁর এই পুরুষ মানুষ‌দের সঙ্গলাভে ব্যাকুলতা ? বিক্রম‌জিৎ সেই অপ‌াপা‌বিদ্ধা প‌বিত্রা নারীর বিরুদ্ধে কলঙ্ক রটনা কর‌তেও কিছুমাত্র বিচ‌লিত হ‌লেন না ।

রাজ - অন্তঃপু‌রে মীরা যখন এরূ‌পে সাধনভজ‌নে বাধাপ্রাপ্ত হ‌লেন , তি‌নি নিকটবর্তী এক দেবাল‌য়ে আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে সেখা‌নেই তাঁর অ‌ভিরু‌চি অনুযায়ী সাধ‌নে মগ্ন হ‌লেন । তাঁর অভূতপূর্ণ দিব্য অনুরাগ ও প্রেম শীঘ্রই মানু‌ষের দৃ‌ষ্টি আকর্ষণ ক‌রল এবং ক্রমশই নিকট ও দূর - দূরান্তর হ‌তে দ‌লে দ‌লে ভক্তরা তাঁর নিকট আধ্যা‌ত্মিক অনু‌প্রেরণা লা‌ভের আশায় এ‌সে জমা‌য়েত হ‌তে থাকল । ফ‌লে মহারাণা ও পরিবারের অপরাপর লোকজ‌নের ক্রোধ উত্তরোত্তর বৃ‌দ্ধি পে‌তে থাকল । মীরা‌কে অতঃপর আক্ষ‌রিত অ‌র্থেই প্রাসা‌দের অভ্যন্তরে বন্দী করা হলো এবং তাঁর উপর এ‌কের পর এক নানাপ্রকার অমা‌নবিক নির্যাতন চল‌তে থাকল ।

মীরা নিছক এক ঈশ্বর‌প্রে‌মিক মাত্রই ছি‌লেন না , তি‌নি ক‌বিও ব‌টে । তাঁর কাব্য , যা তি‌নি ভজনাকার তাঁর গি‌রিধারীলা‌লের নিকট নি‌বেদন করতেন তা‌তে তাঁর প্র‌তি রাণ‌ার নির্যাতনের রূপ সম্প‌র্কে কিঞ্চিৎ আভাস মেলে । সে নির্যাতন কি অমানুষিক ছিল তা জেনে বিস্মিত হ‌তে হয় , কিন্তু মীরা কত সহ‌জে সে সকল সহ্য ক‌রে‌ছি‌লেন । এক‌টি ভজ‌নে মীরা গে‌য়ে‌ছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথাঃ

মীরা সুখী তার প্রি‌য়ের পূজায় ।
ঝু‌ড়ি ভ‌রে সর্প আ‌সে মীরার তরে -
র‌াণার উপহ‌ার ।
ঝু‌ড়ি খু‌লে দে‌খে মীরা প্রভু স্বয়ং ।
রাণা পাঠান পেয়াল‌া ভরা বিষ ,
মীরা পান ক‌রে তা আকন্ঠ ।
‌বিষ হয় অমৃত , 
তাঁর ( শ্রীকৃ‌ষ্ণের কৃপায় বিষ অমৃত হ‌য়ে গেল ) ক‌ারসা‌জি‌তে ।
আ‌সে কন্টকশয্যা রাণার কাছ হতে ,
মীরা দে‌খে সে যে ফুল শয্যা ।
সকল বিপদ তুচ্ছ হয় 
‌গিরিধ‌ারীর সর্তক রক্ষ‌ণে ।
‌প্রেম ম‌দিরায় মা‌তোয়ারা মীরা 
হাসে , নাচে , গায় প্রভুর নাম , 
উৎসর্গীকৃত সে যে 
দ‌য়ি‌তের চর‌ণে ।

ভক্তজীব‌ন অবলম্বন ক‌রে ভগবানের কৃপা ব‌হে শতধারে সহস্র বি‌চিত্র প‌থে । গান্ধী হত্যার সংবাদ শুনে বার্ণার্ড শ ' আ‌র্তি প্রকাশ ক‌রে‌ছি‌লেন , " এই দু‌নিয়ায় ভাল মানুষ হবার এই তো ফল । " শ্রীরামচ‌ন্দ্রের ভক্ত ছি‌লেন গান্ধীজী । মাত্র কিছু‌দিন আ‌গেই এক প্রার্থন‌া সভায় বোমা বি‌স্ফো‌রণ হওয়া স‌ত্ত্বেও তিনি অক্ষত আ‌ছেন জে‌নে লো‌কে ব‌লে‌ছিল ' রা‌খে হ‌রি মারে কে ? ' কিন্তু তার অল্প‌দিন প‌রেই সেই শ্রীহরি তাঁ‌কে খুনীর বু‌লেট হ‌তে বাঁচা‌তে এ‌গি‌য়ে এ‌লেন না ।

পুরা‌ণে ক‌থিত বিষ্ণুর বালকভক্ত প্রহ্লাদকে হা‌তির পা‌য়ের নি‌চে ফে‌লে , পাহা‌ড়ের চূড়া হ‌তে ফে‌লে অথবা বিষ প্র‌য়োগা‌দি বি‌বিধ উপা‌য়েও মারা সম্ভব হয়‌নি । আবার সেই ঈশ্বর যীশু‌কে ক্রুশ‌বিদ্ধ বেশ নি‌র্বি‌ঘ্নেই ঘ‌টে‌ছিল । কিন্তু মীরার ক্ষে‌ত্রে গি‌রিধারীলাল তাঁ‌কে সর্ব‌তোভা‌বে রক্ষা ক‌রে যা‌চ্ছি‌লেন ।
ভগবা‌নের এক‌নিষ্ট ভক্ত‌দের জীব‌নের বি‌ভিন্ন ঘটনা আ‌লোচনা করে আমরা কখনো বা হতবু‌দ্ধি হ‌য়ে প‌ড়ি ।

আমা‌দের পক্ষে ঈশ্বর কৃপার প্রকৃত অর্থ সম্যক উপল‌ব্ধির প্রধান বাধা এই যে , আমরা স্থূলদৃ‌ষ্টি‌তে ভ‌ক্তি‌কে একপ্রক‌ার বি‌নি‌য়োগ ব‌লে বি‌বেচনা ক‌রি । আ‌মি ভগবা‌নকে ভ‌ক্তি ক‌রি --- সুতরাং তাঁ‌কে হ‌তে হ‌বে একাধা‌রে আমার ব্য‌ক্তিগত পু‌লিশ , চি‌কিৎসক , উ‌কিল ইত্যা‌দি সব‌কিছু । অর্থাৎ তাঁ‌কে হতে হবে আমার আপৎকালীন লাইফ‌বোট । ভ‌ক্তির নগদ বিদায় হিসা‌বে পাওয়া চাই স্ব‌র্গের শিল‌মোহরা‌ঙ্কিত সুরক্ষা পত্র । ধর্ম‌ক্ষে‌ত্রে এরূপ ম‌নোভাব হ‌লো ব্যবসাদা‌রি , বা প্রশয় লাভের আগাম অঙ্গীকারপত্র গ্রহণ ক‌রে তার বি‌নিম‌য়ে বি‌বিধ অ‌বৈধ উপা‌য়ে ফল‌াও উপায়ে ফলাও কারবার করা !

গরল যখন অমৃত রূপান্ত‌রিত হয় তখন সত্যতা বজায় থা‌কে , আবার যখন বিষ স‌ক্রিয় হয় তখনও । যারা সৎকর্ম কর‌তে ব্রতী হ‌য়ে তার শুভাশুভ কর্মফল শান্ত‌চিত্তে গ্রহণ কর‌তে প্রস্তুত থাকে , ভগবানের কৃপা তাদের উপরই ব‌র্ষিত হয় । মীরা বিষ অমৃ‌তে প‌রিণত হ‌বেই এমন‌টি আশা ক‌রে তা গ্রহণ ক‌রে‌ছি‌লেন এমন নয় , তি‌নি তা গ্রহণ ক‌রে‌ছি‌লেন পরম প্রেমাষ্পদের প্রের‌তি প্রসাদ জ্ঞানে । কৃপার সত্যতা প্রমা‌ণিত হয় ভগবান প্রদত্ত সেই শ‌ক্তির আ‌বির্ভাব চাক্ষুষ ক‌রে , যার ব‌লে ভক্ত যে কোন ফ‌লের জন্য সদা প্রস্তুত থা‌কে , নিঃশঙ্ক থা‌কে ।

মহা‌যোগী পত্তহারী বাবা‌কে যখন সর্প দংশন ক‌রে‌ছিল , তি‌নি ব‌লে‌ছি‌লেন , " প্রভুর নিকট হ‌তে দূত প্রে‌রিত হ‌য়ে‌ছে । " ভাল - মন্দ , আনন্দ - বেদনা , আনুকূল্য - প্র‌তিকূলতা , জন্ম -মৃত্যু প্রভৃ‌তি সকলই সেই পরম‌প্রি‌য়ের নিকট হ‌তে প্রে‌রিত বার্তা । যখন আমরা এই দ্বন্ধমূলক বিষয়সমূহ গ্রহণীয় অথবা বর্জনীয় রূ‌পে না দে‌খে তা‌দের ঈশ্বর প্রেরিত প্রেম প্রসাদ ব‌লে গ্রহণ কর‌তে শি‌খি , তখনই যথার্থ ভ‌ক্তির উদয় হ‌য়ে‌ছে বলা য‌ায় ।

ঈশ্বর কৃপার প্রমাণ অনুকূল অথবা প্র‌তিকূল ঘটনার উপর নির্ভরশীল নয় , তার প্রমাণ আত্মশ‌ক্তির প‌রিচ‌য়ে , যা ঈশ্ব‌রের দান মাত্র । সেই দেবদত্ত শ‌ক্তি ব‌লে আনন্দ অথব‌া দুঃখ যাই আসুক না কেন , হা‌সিমু‌খে গ্রহণ করা সম্ভব হয় । ঈশ্বর সকল সম‌য়ে পরীক্ষা নেন আমাদের থে‌কে । যখন সু‌খে থা‌কি তখন ভু‌লে যায় , যখন দুঃখী হই তখন ম‌নে প‌ড়ে । কারণ ঈশ্বর‌কে ভু‌লে থাকার কার‌ণে কত কিছুর সম্মুখীন হ‌তে হয় ।

কৃষ্ণ‌প্রিয়া মীরা  পর্ব - ১

====================
শৈশব ও প্রার‌ম্ভিক জীবন 
====================

ভারতব‌র্ষের ই‌তিহা‌সে মহাসা‌ধিকা মীরাবাঈ‌য়ের জীবন ঈশ্ব‌রের প্র‌তি সর্বগ্রাসী প্রে‌মের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । মীরাবাঈ‌য়ের নাম স্মরণমাত্র ভক্তহৃদ‌য়ে ভ‌ক্তির প্রেরণা জাগায় । মীরার জীব‌নে ভারতবর্ষ দে‌খে‌ছিল কৃ‌ষ্ণের প্র‌তি গোপী‌প্রে‌মের পুনরা‌বির্ভাব , যা তার মহান আধ্যা‌ত্মিক ধারা‌টি‌তে নব প্রাণ সঞ্চার করে‌তে সাহায্য ক‌রে‌ছিল ।

ভারতব‌র্ষে লক্ষ লক্ষ মানু‌ষের ক‌ন্ঠে , দেবাল‌য়ে , ম‌ঠে , আখড়ায় , অসংখ্য পথ - চল‌তি পান্থ‌নিবা‌সে , এমন‌কি চল‌চ্চি‌ত্রে যদিও মীরার ভজন নিত্য‌দিন গীত হ‌য়ে চ‌লে‌ছে , তাঁর কোন প্রামা‌ণিক জীবন কিন্তু এখ‌নো পাওয়া যায়‌নি । অবশ্য অনুসন্ধান কার্য চল‌ছে । এখ‌া‌নে আমরা বি‌ভিন্ন কার‌ণে অ‌ধিকতর গ্রহণ‌যোগ্য ব‌লে ম‌নে হয় এমন এক‌টি জীবনীর অনুসরণ করব ।

১৫০৪ খ্রীষ্টা‌ব্দে রাজস্থা‌নের অন্তর্গত কুড়কী গ্রা‌মে , ক্ষত্রিয় বং‌শে , রতন সিং - এর কন্যারূ‌পে মীরার জন্ম । রাজস্থা‌নের অবস্থান ভারতব‌র্ষের মধ্য- প‌শ্চিম অঞ্চ‌লে । ভারত ই‌তিহা‌সের বহু শৌর্য -পূর্ণ কা‌হিনী রাজস্থা‌নের অ‌ধিবাসী বীর রাজপুত রমণী‌দের কেন্দ্র ক‌রে প্রচা‌রিত । ঊষর মরু প্র‌দে‌শে যোদ্ধাজা‌তির ম‌ধ্যে মীরার আবির্ভা‌বে অ‌ভিনবত্ব আ‌ছে । তি‌নিও বীর , ত‌বে যুদ্ধ‌ক্ষে‌ত্রে নয় , বীর রমণী তি‌নি ভ‌ক্তি‌তে , ভগবা‌নের চর‌ণে আত্ম‌নি‌বেদ‌নে ।

মাত্র তিন বৎসর বয়‌সে মীরা অ‌ধিকার ক‌রে‌ছিল তার জীব‌নের প্র‌তিমা‌টি‌কে , য‌া‌কে জগ‌তের কোন শ‌ক্তিই তার নিকট হ‌তে বি‌চ্ছিন্ন কর‌তে সমর্থ হয়‌নি । এক‌দিন এক সাধুভক্ত তাঁর পিত্রাল‌য়ে রা‌তের অ‌তি‌থিরূ‌পে আশ্রয় নি‌য়ে‌ছি‌লেন । তাঁর স‌ঙ্গে ছিল এক শ্রীকৃষ্ণমূ‌র্তি - গি‌রিধর গোপাল , যাঁ‌কে তি‌নি নিত্য পূজা কর‌তেন । রন সিং - এর গৃ‌হে থাকাকা‌লে যখন এক‌দিন সাধু‌টি তাঁর ইষ্ট‌দেবতা গি‌রিধ‌রের পূজা কর‌ছেন , ছোট্ট মীরা উক্ত মূ‌র্তি‌টির প্র‌তি এক অপ্রতি‌রোধ্য আকর্ষণ অনুভব করল এবং তাঁ‌কে একান্ত নি‌জের ক‌রে পে‌তে চাইল ।

কিন্তু সাধুজী তাঁর উপাস্য দেবতা , যাঁ‌কে দীর্ঘকাল যাবৎ পূজা করে আস‌ছেন , হাতছাড়া কর‌তে রা‌জি নন । মীরা অনশন করার উপক্রম করল । ছোট শিশুর ভালবাসার প্রচণ্ড দা‌বি হৃদয় স্পর্শ না ক‌রে পা‌রে না । কিন্তু বাবাজীও তাঁর প্রা‌ণের দেবতা ' গি‌রিধারী‌লাল ' ছাড়া অপর সব কিছুই দি‌তে প্রস্তুত । প্রে‌মের এই দ্ব‌ন্বে অব‌শে‌ষে মীরারই জয় হ‌লো । স্বয়ং ' গি‌রিধারীলাল ' সাধুজী‌কে স্ব‌প্নের মাধ্যমে মীর‌ার কা‌ছে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ কর‌লেন । সুতরাং অব‌শে‌ষে ব্য‌থিত হৃদ‌য়ে তাঁর দেবতা‌কে শেষবা‌রের ম‌তো নি‌মেষভা‌বে দর্শন ক‌রে সাধুজী ক‌ম্পিত হ‌স্তে ' গি‌রিধারীলাল ' কে মীরার হা‌তে তু‌লে দি‌লেন । সজল চ‌ক্ষে তি‌নি ভগবানের অবোধ্য লীলার কথা ভাব‌তে ভা‌ব‌তে জনার‌ণ্যে অন্ত‌র্হিত হ‌লেন ।

শ্রীরামকৃ‌ষ্ণের জীবনী পাঠকরাও অবগত আ‌ছেন ,‌কেমন ক‌রে ঠিক অনুরূ‌পভা‌বে জটাধারী না‌মে এক বৈষ্ণব সাধু দ‌ক্ষি‌ণেশ্ব‌রেকিছু‌দি‌নের জন্য এ‌সে , তাঁর প্রিয় ' রামলালা ' মূ‌র্তিখা‌নি শ্র‌ীরামকৃ‌ষ্ণের নিকট অর্পণ ক‌রে চ‌লে গে‌ছি‌লেন । তখনো জটাধারী‌কে ' রামলালা ' স্ব‌প্নে দেখা দি‌য়ে শ্রীরামকৃ‌ষ্ণের নিকট থাকার আকা‌ঙ্ক্ষা প্রকাশ ক‌রে‌ছি‌লেন ।

ভক্ত ও ভগবা‌নের ম‌ধ্যে এই রহস্যপূর্ণ ভাব বি‌নিম‌য়ের অর্থ আমা‌দের প্রাকৃত জ‌নের বু‌দ্ধির অগম্য । কিন্তু তাই ব‌লে আমা‌দের ক্ষুদ্রবু‌দ্ধিরউপর যেন অ‌ধিক আস্থা না রা‌খি এবং যা বু‌দ্ধির অগম্য , এমন ঘটনাসমূহ তুচ্ছজ্ঞা‌নে বা‌তিল না ক‌রে দিই । আধ্যাত্মিক অনুভূ‌তির অ‌ধিকাংশ ঘটনাই ঘ‌টে যু‌ক্তি - বু‌দ্ধির সীমানা ছা‌ড়ি‌য়ে । প্রে‌মের সেই দ্বন্ধযু‌দ্ধে জয়ী হয়ে মীরা যে কত আনন্দিত হ‌য়ে‌ছিল তা সহ‌জেই অনু‌মেয় । কিন্তু সেই গি‌রিধর মূর্তির মীরার বিরহ ও আন‌ন্দের কেন্দ্র হ‌য়ে ওঠার ব্যাপার‌টি কল্পনা করা আমাদের দুঃসাধ্য ।

‌শিশুরা স্বভাবতই খুব চতুর । তারা জা‌নে কেমন ক‌রে বাবা - মা‌য়ের কাছ হ‌তে ঠোঁট ফু‌লি‌য়ে বায়না ক‌রে খেলনা আদায় কর‌তে হয় । এ‌ক্ষে‌ত্রে মীরা কিন্তু ছিল অস্বাভা‌বিক রকম জেদী ও আগ্রাসী । সে যা অধিকার করল তা , যেমন শিশুরা আগ্রহ ফু‌রি‌য়ে গে‌লে খেলনা ছুঁ‌ড়ে ফে‌লে দেয়, তেমন ক‌রে ত্যাগ করল না ।

এই ঘটনার পর এক‌দিন বা‌ড়ির সাম‌নে দি‌য়ে যখন এক বিবাহ মি‌ছিল যাচ্ছে , মীরা তার মা‌কে জিজ্ঞাসা করল , " মা আমার দুল্-হা কোথায় ? '" ' দুল্-হা ' অ‌র্থে বর অথবা প্রেমাস্পদও হয় । শিশুর সরল ছে‌লেমানুষী দে‌খে মা হে‌সে গি‌রিধারীর মূ‌র্তির প্র‌তি অঙ্গু‌লি নি‌র্দেশ ক‌রে মীরা‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন , " গি‌রিধারীলাল গোপালই তোমার দুল্-হা । " তি‌নি যখন একথা ব‌লে‌ছি‌লেন , তাঁর নিশ্চয় মীরার দেখা সেই স্বপ্নদৃ‌শ্যের কথা ম‌নে প‌ড়ে‌ছিল , যা মীরা তাঁ‌কে এক‌দিন ব‌লে‌ছিল । স্ব‌প্নে মীরা দে‌খে‌ছিল শ্রীকৃ‌ষ্ণের স‌ঙ্গে তার বিবাহ হ‌চ্ছে ।

যাই‌হোক , মা‌য়ের সেই কথা মীরা যে কত সত্য ব‌লে গ্রহণ ক‌রে‌ছিল তা আত্মীয় স্ব‌জনের বি‌স্মিত দৃ‌ষ্টির সম্মু‌খে তার বয়স বাড়ার স‌ঙ্গে স‌ঙ্গে ক্রমশই প্রকাশ হ‌তে থাকল । অন্ত‌রের ভাষা মীরা তাঁর র‌চিত ভজ‌নে চিরা‌য়িত ক‌রে রে‌খে‌ছেন ঃ

" মে‌রে তো গি‌রিধারী গোপাল দুসরা না কোঈ ।
যা‌কে শির মোর মুকুট মে‌রে প‌তি সোঈ . . . . । "

অর্থাৎ " আমার প্রভু গি‌রিধারী গোপাল ছাড়া আর তো কেউ নয় । 
যাঁর শি‌রে ময়ূর মুকট তিনিই যে আমার প‌তি । "

আটবছর বয়‌সে মীরা মা‌কে হা‌রি‌য়ে তার ' দুদাজী'র কা‌ছে চলে এল । তি‌নি ছি‌লেন পরম বৈষ্ণব ভক্ত । ঠাকুর্দার কো‌লে ব‌সে মীরা তন্ময় হ‌য়ে শুনত মহাভারত প্রভৃ‌তি পৌরা‌ণিক কা‌হিনী । মীরা কিন্তু ম‌নে ম‌নে সর্বদাই জা‌নে গি‌রিধারী গোপা‌লের স‌ঙ্গেই তার বিবাহ হ‌য়ে‌ছে । কিন্তু অপর কেউই সে ব্যাপা‌রে গুরুত্ব দেয়‌নি । ১৫১৬ খ্রীষ্টা‌ব্দে যখন মীরা ১৩ বছ‌রে পা দি‌ল , তার বাবা মেবা‌রের মহারাণা সংগ্রাম সিং‌হের পুত্র যুবরাজ ভোজরা‌জের স‌ঙ্গে মীরার বিবাহ দি‌লেন ।

শ্বশুরাল‌য়ে এ‌সে মীরা নিত্যই তার নতুন আত্মীয় প‌রিজন‌দের হতাশ কর‌তে লাগ‌লেন । কুলপ্রথা হিসা‌বে নববধূ‌কে যখন রাজপ‌রিবা‌রের দেবী ম‌ন্দি‌রে নি‌য়ে যাওয়া হ‌লো , মীরা জানা‌লেন , তিতি ' গি‌রিধারী ' কৃষ্ণ ছাড়া অপর কাউ‌কে প্রণাম নি‌বেদন কর‌বেন না । সদ্যনতুন আত্মীয়দের নিকট মীরার এই অবাধ্যতার অর্থ বোধগম্য হ‌লো না । তি‌নি কি উন্মাদ অথবা ধর্মাদ্ধ ? রাজপ‌রিবা‌রের নিকট তি‌নি শ্রদ্ধাহীন ও উদ্ধত ব‌লে প্র‌তিভাত হ‌লেন ।

মীরার ন্যায় সা‌ধিকার মন সাধারণভা‌বে কাজ ক‌রে না । তি‌নি এমন এক‌টি প‌রি‌স্থি‌তির সম্মুখীন হ‌য়ে‌ছি‌লেন যখন , এক‌টি অনাবশ্যক ও অবাস্তব বিবাহ অনুষ্ঠান দ্বারা এক পরম বাস্ত‌বে দিব্য বিবাহ ব্যাপার‌কে সম্পূর্ণ বা‌তিল করার প্রয়াস হ‌চ্ছিল , সেই পুরু‌ষের প্র‌তি কোন অনুরাগ বা তাঁ‌কে প্র‌য়োজন এমন বোধ তাঁর হ‌চ্ছিল না । তি‌নি যে ই‌তিমধ্যেই তাঁর স্বামী , তাঁর সর্বস্ব গি‌রিধারী গোপাল‌কে তনু - মন - প্রাণ সমর্পণ ক‌রে দি‌য়ে‌ছেন । ঠিক এমনই মান‌সিকতার আ‌বে‌গে তি‌নি অপর দেবতার প্র‌তি ভ‌ক্তি প্রদর্শন করা‌কে দ্বিচারিণীর কর্ম ব‌লে ম‌নে ক‌রে‌ছি‌লেন । যে হৃদয়‌টি‌কে একজনের প্র‌তি নি‌বেদন ক‌রেই দি‌য়ে‌ছেন , তা কেমন ক‌রে পুনরায় অপর দেবতার প্র‌তি নি‌বেদন কর‌বেন ? তা কি কপটতা নয় ?

মীরার শ্বশুলা‌য়ের কুটুম্ব‌দের আশাভ‌ঙ্গের আ‌রো কা‌রণ ,‌ তি‌নি যুবতী কন্যাসুলভ কোন ভোগবাসনায় উৎসাহ প্রকাশ ক‌রেন‌নি । রাজপুত সমা‌জে র‌জোগু‌ণের বি‌শেষ সমাদর , সেখা‌নে নারী দৈ‌হিক ও মান‌সিক ভোগ্যবস্তু ব‌লেই সর্বজনস্বীকৃত । কিন্তু মীরা সম্পূর্ণ অন্য প্রকৃ‌তির নারী । বিবা‌হের পর মীরার অ‌ধিকাংশ সময় ব্য‌য়িত হ‌তো পূজাগৃ‌হে গি‌রিধ‌রের সেবা - পূজা ও ভজন কীর্ত‌নে । অ‌ধিকন্তু তি‌নি সাধু - ভক্ত - জ্ঞানী‌দের নিমন্ত্রণ ক‌রে ধর্মসভার আসর ব‌সি‌য়ে নিয়ত তাঁ‌দের স‌ঙ্গে ধর্মচর্চা কর‌তে লাগ‌লেন । বলাবাহুল্য , তাঁর এরূপ জীবনধারার কোন‌টিই , রাজপ‌রিবারের পছন্দ হ‌লো না ।

মীরা‌কে আ‌দেশ দেওয়া হ‌লো , তি‌নি যেন এ সকল ত্যাগ ক‌রে রাজপ‌রিবা‌রের ঐ‌তিহ্য মে‌নে চ‌লেন , কিন্তু তা‌তে ফল হ‌লো না । তাঁর অন্ত‌রে আধ্যা‌ত্মিক তৃষ্ণা এতই তীব্র , সাধারণ গৃহীসুলভ জীবন যাপন করা তাঁর পক্ষে একান্তই অসম্ভব । সুতরাং তাঁর উপর ক‌ঠোর নি‌ষেধাজ্ঞা জা‌রি হলো । মীরা তাঁর স্বভাবসুলভ ভ‌ঙ্গি‌তে ভজ‌নের মাধ্য‌মে প্রকাশ কর‌লেন তাঁর প্র‌তি‌ক্রিয়া । এক‌টি গা‌নে তি‌নি গাই‌ছেন , " এ রাজপুরীর সকল প‌রিজন আমার সাধুসঙ্গ প্রিয়তার কার‌ণে আমা‌কে দি‌চ্ছে যন্ত্রণা , আমার পূজায় ঘটা‌চ্ছে বিঘ্ন । গি‌রিধর নাগর মীরার সখ্য ও প্রিয়তম , তার সে অনুরাগ তো ঘোচার নয় , তা যে উত্ত‌রোত্তর বাড়তেই থা‌কবে । "