Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Tuesday, July 4, 2017

ইসকন মন্দিরে বিষ্ণুর দশ অবতারদের মধ্যে শুধুমাত্র নৃসিংহদেবের প্রার্থনা পূজা কেন করা হয়?আলাদাভাবে অন্য অবতারদের কেন পূজা করা হয় না? - Why ISCKON worship divine Nrishimha?

সারাজগতে কৃষ্ণনাম প্রচার করাই ইসকনের লক্ষ্য। যদিও কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তন এবং জগৎমঙ্গলকর পন্থা হল কৃষ্ণভক্তি অনুশীলন, তবুও কলিযুগের আসুরিক মানুষরা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের বিরোধী। তারা চায় কৃষ্ণনাম প্রচার বন্ধ করে দিতে।শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন কৃষ্ণনাম সংকীর্তন প্রবর্তন করলেন, তখন নবদ্বীপে স্মার্ত ব্রাহ্মণেরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নবদ্বীপে হরিনাম বন্ধ করার জন্য তৎকালীন নদীয়ার শাসনকর্তা চাঁদ কাজীর কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। চাঁদ কাজীও গুন্ডা পাঠিয়ে মায়াপুরের শ্রীবাস অঙ্গনে সংকীর্তনকারী ভক্তদের উৎপীড়ন করতে লাগলেন তারপর নাগরা পিটিয়ে হরিনাম সংকীর্তন বন্ধের ঘোষণা জারি হয়েছিল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভু সেই সংবাদ পেয়ে চাঁদ কাজী সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলেন। লক্ষ লক্ষ লোক মশাল জ্বালিয়ে হরিনাম করতে করতে চাঁদ কাজীর প্রাসাদে এসে পৌঁছলেন। চাঁদ কাজী ভয়ে লুকিয়ে ছিলেছিলেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে, তিনি বেরিয়ে এসে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সমাদর করলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কাজীকে যখন প্রশ্ন করলেন, 'আপনার নির্দেশ অমান্য করে ভক্তরা হরিনাম করছে,আর আপনি কেন কিছুই প্রতিবাদ করছেন না ?' উত্তরে চাঁদ কাজী মহাপ্রভুকে বলেন, 'নিমাই,তোমাদের হরিনামে আমি আর কখনই বাধা দেবো না।কেননা আমি ভয়ে ভীত হয়ে ঘুমাতে পারিনি। এক দেবতা-যার মুখ সিংহের মতো, শরীরটা মানুষের মতো। তার হাতে ছিল বড় বড় নখ। সে আমার বুকে নখের আচড় লাগিয়ে ধমক দিয়ে বলল, "ভক্তদের সংকীর্তন যদি বন্ধ করিস্ তবে তোর বংশ নিপাত করব।" তারপর সে অদৃশ্য হয়ে যায়।তার নখের দাগ এখনো বুকে রয়েছে।'
.
সবাই বুঝলেন, ভক্তদের রক্ষার জন্য ভগবান নৃসিংহদেব,যিনি অত্যাচারী অসুর হিরণ্যকশিপুর কবল থেকে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন, তিনিই চাঁদ কাজীকে সাবধানবাণী শুনিয়েছেন।
.
কলিযুগের আসুরিক লোকদের উৎপাত থেকে ভগবানের যে অবতার সর্বদা জাগ্রত হয়ে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ পূর্বক ভক্তদের রক্ষা করেন, তিনি হচ্ছেন শ্রীনৃসিংহদেব।
.
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ রাত দুপুরে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শ্রীধাম মায়াপুর ইসকন মন্দির আক্রমণ করেছিল ৩৫ জন ডাকাত। প্রভুপাদের বিগ্রহ ও রাধারাণীর বিগ্রহ তারা অপহরণ করে। মন্দিরের আর্তক্রন্দনময় বিভীষিকা ভক্তদের মর্মাহত করেছিল। জিবিসির পক্ষ থেকে সমাধান কল্পে শ্রীমায়াপুর ইসকন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন শ্রী শ্রী উগ্রনৃসিংহদেব। সময়টি ছিল ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দের জুলাইয়ের শেষ দিক।
.
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর হরে কৃষ্ণ আন্দোলনে ভক্তদের সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রান্তে আসুরিক শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। আসুরিক শক্তির কাজটিই হল ভক্তদের উৎপীড়ন করা এবং হরিনাম প্রচার বন্ধ করা।সর্বত্রই ভক্তিবিঘ্ন বিনাশক শ্রীনৃসিংহদেবই সুরক্ষা দান করেন।
.
আমাদের মায়াপুর ইসকন মন্দিরে শ্রীনৃসিংহদেব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে পরেই বহু শালগ্রাম শিলাও উপস্থিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় শিলা নৃসিংহ শিলা, তারপরে দশ অবতার সহ বহু অসংখ্য অবতারের শিলাও অর্চিত হচ্ছে।সমস্ত অবতারেরই পূজা-অর্চনা হলেও প্রায় ক্ষেত্রে নৃসিংহদেবের প্রকাশ প্রভাবটাই বেশী দেখা যায় সেজন্য সব মন্দিরে ভক্তরা নৃসিংহ প্রার্থনাই নিত্য গীত করে থাকেন।
.
জয় ভক্তবৎসল শ্রীনৃসিংহদেব!!

Monday, July 3, 2017

শয়ন একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য- Shayan Ekadasi Brata Mahatma

"হরে কৃষ্ণ"
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন---'হে কৃষ্ণ! আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? এর মহিমাই বা কি? তা আমাকে কৃপা করে বলুন।'
.
শ্রীকৃষ্ণ বলেলেন, ব্রহ্মা এই
একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে যা বলেছিলেন আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি। শ্রীব্রহ্মা বললেন---হে নারদ! এ সংসারে একাদশীর মতো পবিত্র আর কোন
ব্রত নেই। সকল পাপ বিনাশের জন্য এই বিষ্ণুব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক। যে ব্যক্তি এই প্রকার পবিত্র পাপনাশক এবং সকল অভিষ্ট প্রদাতা একাদশী ব্রত না করে তাকে নরকগামী হতে হয়।
.
আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের এই একাদশী 'শয়নী' নামে বিখ্যাত। শ্রীভগবান ঋষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের সমন্ধে এক মঙ্গলময় পৌরাণিক কাহিনী আছে। আমি এখন তা বলছি।
.
বহু বছর পূর্বে সূর্যবংশে মান্ধাতা
নামে একজন রাজর্ষি ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যপ্রতিজ্ঞ এবং
প্রতাপশালী চক্রবর্তী রাজা।
প্রজাদেরকে তিনি নিজের সন্তানের মতো প্রতিপালন করতেন। সেই রাজ্যে কোনরকম দুঃখ, রোগ-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, আতঙ্ক, খাদ্যাভাব অথবা কোন অন্যায় আচরণ ছিল না। এইভাবে বহুদিন অতিবাহিত হল। কিন্তু একসময় হঠাৎ দৈবদুর্বিপাকে
ক্রমাগত তিনবছর সে রাজ্যে কোন বৃষ্টি হয়নি। দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে দানমন্ত্রের 'স্বাহা' 'স্বধা' ইত্যাদি শব্দও বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল।
.
তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগল---মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। শাস্ত্রে জলকে নার বলা হয় আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস। তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ। মেঘরূপে
ভগবান বিষ্ণু সর্বত্র বারিবর্ষণ
করেন। সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগণ জীবন ধারণ করেন। এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। অতএব হে মহারাজ আপনি এমন কোন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন
হয়।
.
রাজা মান্ধাতা বললেন---তোমরা ঠিকই বলেছ। অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব। অন্ন থেকেই প্রজার পালন। তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হয়। আবার রাজার দোষেও রাজ্য নষ্ট
হয়। আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার নিজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।
.
তারপর রাজা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে সৈন্যসহ বনে গমন করলেন। সেখানে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমণ করলেন। এভাবে একদিন তিনি ব্রহ্মার
পুত্র মহাতেজস্বী অঙ্গিরা ঋষির
সাক্ষাৎ লাভ করলেন। তাকে
দর্শনমাত্রই রাজা মহানন্দে ঋষির চরণ বন্দনা করলেন। মুনিবর তাকে আর্শীর্বাদ ও কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে
ঋষির কাছে জানালেন।
.
ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ
থাকার পর বলতে লাগলেন---‘হে
রাজন! এটি সত্যযুগ। এই যুগে সকল লোক বেদপরায়ণ এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কেউ তপস্যা করে না। এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এক শূদ্র এ রাজ্যে তপস্যা করছে। তার এই অকার্যের জন্যই রাজ্যের এই দুর্দশা। তাই তাকে
হত্যা করলেই সকল দোষ দূর হবে।
.
রাজা বললেন---হে মুনিবর!
তপস্যাকারী নিরপরাধ ব্যক্তিকে
আমি কিভাবে বধ করব? আমার পক্ষে সহজসাধ্য অন্য কোন উপায় থাকলে আপনি তা দয়া করে আমাকে বলুন।
.
তদুত্তরে মহর্ষি অঙ্গিরা বললেন---আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়নী নামে প্রসিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করুন। এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে। এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী এবং সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী। হে রাজন! প্রজা ও পরিবারবর্গ সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন।
.
মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন। আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সাথে এই একাদশী ব্রতের
অনুষ্ঠান করলেন। ব্রত প্রভাবে
প্রচুর বৃষ্টিপাত হল। কিছুকালের
মধ্যেই অন্নাভাব দূর হল। ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজাগণ সুখী হল।
.
এ কারণে সুখ ও মুক্তি প্রদানকারী এই উত্তম ব্রত পালন করা সকলেরই অবশ্য কর্তব্য। ভবিষোত্তরপুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ-ব্রহ্মা সংবাদ রূপে একাদশীর এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।