Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, April 13, 2018

বর্ষচক্র

মানবসভ্যতার ঊষাকালে এই ভারত ভূমিতে যে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল, তার তুলনা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না।
যে সভ্যতা পেশিশক্তির প্রভাবে নয় জ্ঞানশক্তির প্রভাবে বিকশিত হয়েছিল, যার সঠিক কাল নির্ধারণ করা এখন সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি, সমবেত মানুষের উন্মুক্ত জ্ঞানের উপলব্ধি থেকে এই সভ্যতার বিকাশ, তাই এই সভ্যতা অপৌরুষ সভ্যতা।
যদিও এই সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে তেমন নাই, তবুও যেটা রয়ে গেছে এটাই অসীম আকাশের ন্যায়, যার নাম বৈদিক সাহিত্য।
কিন্তু অনুতাপের বিষয় এইযে তার সামান্যতম অংশও আমরা বর্তমানে নিজের করে রাখতে পারিনি। তাই আমাদের সমাজ অতীতের ন্যায় উজ্জ্বল নয়।।
আজথেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে বৈদিক ঋষিরা উদাত্তকণ্ঠ বলে গেছেন।
"দ্বাদশ প্রধয়শ্চক্রমেকং ত্রীণি নভ্যানি ক উ তচ্চিকেত।
তস্মিন্ৎসাকং ত্রিশতা ন শঙ্কবোহর্পিতাঃ যষ্টির্ন চলাচলাসঃ।।
★শব্দার্থ -- চক্রন- এই বর্ষচক্রে/ দ্বাদশ - দ্বাদশ / ত্রীণি নভ্যানি- ইহার নাভি স্থান তিন ঋতু রহিয়াছে / কঃ উ তৎ চিকেত-এই তত্ত্বকে কে জানে/ তস্মিন সাকম শঙ্কব -সেই বর্ষের সহিত কীলক / ত্রিশতা ষষ্টি - তিন শত ষাট / অর্পিতা - স্থাপিত / ন চলা চলাশ - তাহা বিচলিত হয় না।
★অনুবাদ ঃ- বর্ষ চক্রে দ্বাদশ মাস আরের ন্যায় আবর্তন করে। ইহার কেন্দ্র স্থলে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত এই তিন ঋতু রহিয়াছে।এই তত্ত্বকে কে জানে! এই বর্ষচক্রে ৩৬০দিনর্দ্ধ, কীলকের ন্যায় স্থাপিত।ইহার ব্যতিক্রম ঘটে না।
(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৮)
বৈদিক সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেকদিকই আমাদের সামনে খুলে দিয়ে গেছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমন তা আমরা সঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
অনেকেই ভাবেন ৭০০ বছরের মুসলিম আগ্রাসন আমাদের ভারতীয় সভ্যতার প্রচুর ক্ষতি করে গেছে, এইকথা যেমন সত্য তেমনি তার থেকে বড় সত্য এইযে ১২০০ বছরের বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রভাবে বৈদিক সাহিত্যের ধ্বংস সবথেকে বেশি হয়েছে, বৈদিক সাহিত্য জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেদের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই দুই ধর্মের অন্যতম কাজ।।
যে সভ্যতা এত প্রাচীন, যে সভ্যতার ঋষিরা এত আগে সৌরবিজ্ঞান কে আয়ত্ত করে ছিল তাদের নিজেদের প্রাচীন বর্ষপঞ্জী নেই এটা ভাবাই যায়না।
এখন না থাকেলেও, আমার দৃঢ় বিশ্বাস সৌর পঞ্জিকাবর্ষ অবশ্যই বৈদিক যুগ থেকে ছিল, যা বৌদ্ধ যুগে বৌদ্ধ রাজানুগ্রহে ধ্বংস করা হয়।
তবে কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌরপঞ্জিকা বর্তমানে ভারতীয় প্রচলিত বর্ষের সঙ্গে টিকে আছে। যেমন শকাব্দ।
শকাব্দ একটি প্রাচীন ভারতীয় সৌরবর্ষ, পণ্ডিতরা মনে করেন রাজা শালীবাহন শক জাতির উপর বিজয়ের সময় থেকে এই অব্দ শুরু হয় সৌরসিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে, একটি রাশি থেকে অপর রাশিতে আপতগমনের জন্য মাস পরিবর্তন হয়।
পূর্ব ভারতে প্রচলিত বঙ্গাব্দে এবং ভাস্করাব্দে বর্ষগণনার ক্ষেত্রে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতিটিই অনুসৃত হয়ে থাকে। শকাব্দে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সময়ে বর্ষারম্ভ হত। যেমন উত্তর ভারতে বছর শুরু হত চৈত্র মাসে কিন্তু পূর্ব ভারতে নববর্ষ অনুষ্ঠিত হত বৈশাখ মাসে। ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ, নববর্ষের সঙ্গে ধর্মাচরণ এবং কৃষিকাজ সম্পর্ক যুক্ত।
ভারতীয় ইতিহাসের আধুনিক যুগেও অন্যান্য অব্দের পাশাপাশি শকাব্দের ব্যবহার বহুলভাবে লক্ষিত হয়। সূর্যসিদ্ধান্তের প্রাচীন নিয়ম মেনেই অসমে বৈশাখ পালিত নববর্ষ উৎসব "বহাগ বিহু" থেকে শকাব্দ গণনা করা হয়।
অনেক প্রাচীন গ্রন্থ ও মধ্যযুগীয় গ্রন্থে শকাব্দের উল্লেখ আছে। আবার কনিষ্কের সঙ্গেও শকাব্দ সম্পর্ক আছে, অনেকেই মনে করেন, আমাদের বঙ্গাব্দ থেকে শকাব্দ ৫১৫ বছর প্রাচীন।
ভারতের বঙ্গাব্দ(পশ্চিমবঙ্গ) এবং ভাস্করাব্দ(অসম) শকাব্দের অনুকরণে প্রবর্তিত।
কামরুপ রাজ ভাস্কর দেবের রাজ্যভিষেকের সময় থেকে ভাস্কারব্দ গণনা করা হয়। এখন প্রশ্ন বঙ্গাব্দ কে প্রবর্তন করেন? যা ভাস্কারাব্দের সমান সৌরবর্ষ পঞ্জিকা।
গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ছিলেন সেই সময়ে অধুনা বঙ্গেশ্বর সুতরাং তিনিই ছিলেন বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বাঙ্গালি রাজা।
আকবর বীরবল প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর এবং ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর মাত্র।

- নিবেদনে শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।

শ্ৰীনিত্যানন্দ প্রভুর জীবনী ও তীর্থ পর্যটন(১ম ভাগ)

কিঞ্চিদধিক পাঁচশত বৎসর আগেকার কথা। বীরভূমির একচক্রা আর নদীয়ার নবদ্বীপ ধন্য হয়েছিল যথাক্রমে শ্ৰীনিত্যানন্দ ও শ্ৰীগৌরচন্দ্ৰকে বক্ষে ধারণ করে। কলিতে জীব উদ্ধার মানসে উভয়ের আবির্ভাব।
শ্ৰীনিত্যানন্দ লীলামৃত গ্রন্থে আছে-
“রাঢ় দেশে একচক্র গ্রাম মনোহর।
ভারতের উচ্চভূমি অতিশোভাকর ॥"
এই একচক্র গ্রামে বাস করতেন শ্ৰী নিত্যানন্দের পিতা শ্ৰীল মুকুন্দ বন্দোপাধ্যায়, ইনি হাড়াই পণ্ডিত বা হাড়ো ওঝানামে খ্যাত ছিলেন। এই হাড়াই পণ্ডিতের বিয়ে হয় নিকটস্থ ময়ূরেশ্বর গ্রামের জমিদার রাজা মুকুট নারায়ণের কন্যা, রূপে গুণে অনুপমা, পদ্মাবতীর সঙ্গে। এঁদেরই প্রথম সন্তান নিত্যানন্দ। নিত্যানন্দ ছাড়া আরও পুত্র কৃষ্ণানন্দ, সর্বানন্দ, ব্ৰহ্মানন্দ, পুর্ণানন্দ, প্ৰেমানন্দ ও বিশুদ্ধানন্দ ছিল হাড়াই পণ্ডিতের। হাড়াই পণ্ডিত যাজকতাও করতেন।
১৪৭৩ খৃষ্টাব্দে অর্থাৎ ১৩৯৫ শকে মাঘ মাসে শুক্লা ত্ৰয়োদশীর দিনে মধাহ্নে শ্ৰীপাদ হাড়াই পণ্ডিতের ধর্মপত্নী শ্ৰীমতী পদ্মাবতী দেবী এক অপরূপ পুত্ররত্ন প্রসব করেন। ইনিই শ্ৰীনিত্যানন্দ, শ্ৰীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরাম। শ্ৰীমতী পদ্মাবতী গর্ভাবস্থায় নানা অলৌকিক রহস্য দর্শন করতেন। তিনি দেখতেন চতুর্মুখ ও পঞ্চমুখ প্রভৃতি অপূর্বসুন্দর দেবমূর্তিগণ এসে কাকে যেন স্তব করছেন, বলছেন, হে অনন্ত দিব্য প্রকাশ ধন্য তোমার গর্ভবাস। শ্ৰীশ্ৰীনিত্যানন্দ প্রভুর জন্মস্থানকে এখনও একচক্র গর্ভবাস বলা হয়। প্রবাদ আছে যে শ্ৰীমতি পদ্মাদেবীর আটমাস গর্ভকালে আচম্বিতে এক যোগীরাজ শ্ৰীহাড়াই পণ্ডিতের গৃহে এসে “এই গর্ভবাস, এই গর্ভবাস,” বলে নৃত্য করেছিলেন। তিনিই ছদ্মবেশী গর্গাচার্য। তার প্রেম বিকার দেখে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কি বলছেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা। তিনি বলেছিলেন “শ্ৰীকৃষ্ণের অগ্রজ শ্ৰীবলরাম আসছেন। ‘গর্ভবাস গর্ভবাস, মাঘি শুক্লা ত্ৰয়োদশী দিনে এই একচক্রায় তার আশু প্ৰকাশ।” এ কথা বলতে বলতে ছদ্মবেশী অন্তর্হিত হন। হাড়াই পণ্ডিত নিত্যানন্দকে খুব ভাল বাসেন।
"তিল মাত্র নিত্যানন্দ পুত্রেরে ছাড়িয়া।
কোথাও হাড়াই ওঝা না যায় চলিয়া ॥”
কিবা কৃষি কর্মে, কিবা যজমান ঘরে, “সর্বত্রই নিতানন্দকে সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু দৈবে একদিন এক সন্ন্যাসী প্রবর। আইলেন নিত্যানন্দ জনকের ঘর।'
এই সন্ন্যাসী রাত্রিযাপন করে হাড়াইকে
'ন্যাসীবর বলে এক ভিক্ষা আছয়ে আমার।
নিত্যানন্দ পিতা বলে যে ইচ্ছা তোমার”
তখন সন্ন্যাসী তীর্থ ভ্ৰমণের সঙ্গী হিসাবে নিত্যানন্দকে ভিক্ষা চাইলেন, মনে হয় এ সন্ন্যাসী ঈশ্বর পুরী। মতান্তরে চৈতন্যাগ্রজ বিশ্বরূপ যাঁর সন্ন্যাসাশ্রমের নাম শঙ্করারণ্য পুরী। যাইহোক সন্ন্যাসীর সঙ্গে নিত্যানন্দ ফিরলেন সারা ভারতবর্ষে। কিশোর ক্রমে যুবক হলেন। দক্ষিণাত্যে শ্ৰীপাদ মাধবেন্দ্র পুরীর গুরুদেব শ্ৰীপাদ লক্ষ্মীপতি পুরী নিত্যানন্দকে দীক্ষা দেন। শ্ৰীপাদ লক্ষ্মীপতি পুরীর অন্তৰ্ধানে শোকীর্তচিত্তে শ্ৰীনিত্যানন্দ আসেন শ্ৰীবৃন্দাবন ধামে। তখন মাধবেন্দ্র পুরীও ছিলেন বৃন্দাবনে। যদিও উভয়ে এক গুরুর শিষ্য তথাপি শ্ৰীনিত্যানন্দ মাধবেন্দ্র পুরীকে গুরুর মত শ্ৰদ্ধা করতেন। তাঁরই আদেশে শ্ৰীনিত্যানন্দের নবদ্বীপে শুভাগমন।
ক্রমশঃ 
#কৃষ্ণকমল

প্রশ্নঃ মায়া থেকে মুক্ত হয়ে কিভাবে পূর্ণ শান্তি লাভ করা যায় ?

উত্তরঃ মায়ার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে বদ্ধ জীব এই জড় জগতে শান্তির অন্বেষণ করে, কিন্তু ভগবদ্গীতার ৫/২৯ অংশে বর্ণিত শান্তি লাভের যথার্থ পন্থার কথা তারা জানে না। শান্তি লাভের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নীতি হচ্ছে-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সমস্ত কর্মের ভোক্তা, এটি উপলব্ধি করা। তাই, মানুষের কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের সেবায় সব কিছু উৎসর্গ করা, কারণ তিনি হচ্ছেন সমস্ত গ্রহলােকের এমন কি দেবতাদের অধীশ্বর। তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। শিব, ব্রহ্মা আদি শ্রেষ্ঠ দেবতারাও তাঁর অনুগত ভৃত্য। বেদে (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৭) ভগবানকে বলা হয়েছে- তমীশ্বরাণাং পরমং মহেশ্বরম্। মায়ার দ্বারা মােহাচ্ছন্ন হয়ে জীব সব কিছুর উপর আধিপত্য করার প্রয়াসী হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে ভগবানের মায়ার অধীন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন মায়াধীশ, কিন্তু জীব জড়া প্রকৃতির কঠোর নিয়মের দ্বারা আবদ্ধ। এই সরল সত্যটিকে উপলব্ধি করতে না পারলে, ব্যক্তিগতভাবে অথবা সংঘবদ্ধ ভাবে, কোনমতেই এই সংসারে শান্তি লাভ করা সম্ভর নয়। কৃষ্ণভাবনার অর্থ হচ্ছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর এবং আর সমস্ত জীব, এমন কি বড় বড় দেবতাও হচ্ছেন তার অনুগত ভৃত্য। এই পরম সত্যকে উপলব্ধি করতে পারলেই পূর্ণ শান্তি লাভ করা যায়।
সূত্র- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ ৫ম অধ্যায় শ্লোক ২৯।

প্রেম

এই যে জড় জগতে তথাকথিত যে প্রেম সেটি নিজের ইন্দ্রিয় ভোগের একটি চেষ্টা মাত্র, সে প্রেমিক প্রেমিকারই প্রেম হোক, পিতা পুত্রেরই প্রেম হোক, মাতা পুত্রেরই প্রেম হোক , বন্ধুবান্ধবেরই প্রেম হোক এগুলি কোনটিই প্রেম নয়, এইগুলি সবই কাম। প্রেম সংজ্ঞাটি তখনি আমরা ব্যবহার করতে পারব যখন সেটি কৃষ্ণের প্রতি অর্পিত হবে।
.
- আমাদের সকলের হৃদয়ে প্রেম রয়েছে, কেবল মানুষেরই নয় পশু পাখির হৃদয়েও প্রেম রয়েছে,সরীসৃপের হৃদয়েও প্রেম রয়েছে, একটা সাপ তারও হৃদয়ে প্রেম আছে। যেখানেই কোন জীব আছে,সেখানেই আত্মা আছে , আর যেখানেই আত্মা আছে সেখানেই প্রেম আছে।
.
- এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই প্রেমটি আমরা কোথায় অর্পণ করবো? যদি আমরা এই প্রেমটি উপযুক্ত স্থানে অর্পণ করি তখনই এই প্রেমটি সার্থক হয়। এখন শাস্ত্র আমাদের দেখাচ্ছে, শাস্ত্র আমাদের বোঝাচ্ছে সেই প্রেমটি কোথায় কিভাবে এবং কাকে নিবেদন করতে হবে। আর সেই শাস্ত্রে বলা হচ্ছে একমাত্র প্রেমাস্পদ হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ, আর তাঁর তদিয় মানে সেই কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত যা তাদের প্রতিও সেই প্রেমটি অর্পণ করা যাবে।
.
কিন্তু কৃষ্ণকে বাদ দিয়ে প্রেম হবে না। কৃষ্ণকে বাদ দিয়ে তথাকথিত প্রেমের যে আনন্দ সেটা লাভ হবে না। আমাদের এই পৃথিবীর সমস্ত পরিস্থিতিতেই আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সর্বত্র যে প্রেমের আকাঙ্ক্ষা, সকলেই চাইছে কাউকে না কাউকে ভালবাসতে এবং কারও না কারও ভালবাসা প্রাপ্তি হতে,এটি সকলেরই বাসনা, এটা সকলেই চায়, কেন? কেননা আমাদের সকলের হৃদয়ে প্রেম রয়েছে। যেহেতু হৃদয়ে প্রেমটি রয়েছে, আমরা চাই এটি কাউকে অর্পণ করতে। 
.
কিন্তু আমাদের জানতে হবে কোথায় সেটি অর্পণ করতে হবে, কাকে সেটি অর্পণ করতে হবে, তাহলেই সেটি সার্থক হবে। যেমন ঘি আছে, ঘি টা যদি আগুনে দেওয়া হয় , তাহলে ঘি টা সার্থক হবে, আর ঘি টা যদি ছাইয়ের গাদায় ফেলা হয় তাহলে কি ঘি টা স্বার্থক হবে, তাহলে কি ঘি টা থেকে আগুন জ্বলবে? ঠিক তেমনি এই ঘি এর পরিণতি যেমন আগুন তেমনি প্রেমের পরিণতি হচ্ছে৬ আনন্দ। এটি যদি উপযুক্ত স্থানে ঢালা যায় তাহলে আনন্দ আপনা থেকেই আসবে কিন্তু সেই স্থানে না ঢেলে যদি আমরা ছাইয়ের গাদায় ঢালি তাহলে প্রকৃত বস্তুটা লাভ হবে? না! সেই বস্তুটির অপচয় করা হবে। ছাইয়ের গাদায় ঘি ঢাললে লাভ হয় কখন? ঠিক তেমনি আমাদের প্রেম উপযুক্ত স্থানে অর্পণ করতে হবে। 
.
আমাদের প্রেম যদি ঘি হয় তাহলে আগুনটি কে? কৃষ্ণ! আর আমাদের প্রেম যদি ঘি হয় তাহলে ছাইয়ের গাদাটি কি? ঐ আগুন ছারা আর যা কিছু তা সব। আগুনের চারপাশে আর যা কিছু রয়েছে আগুন ছাড়া তা সবই ছাইয়ের গাদা। “একলা ঈশ্বর কৃষ্ণ”—তিনি আমাদের একমাত্র প্রেমাস্পদ। সেই শিক্ষাটি দেওয়া হচ্ছে এবং তার বিশেষভাবে বিশ্লেষণ ও করা হচ্ছে যে কেন, কেন আমরা কৃষ্ণের প্রতি প্রেমাশক্ত হব?
হরে কৃষ্ণ।

Sunday, April 8, 2018

আচরণ বিজ্ঞানের সাথে সুন্দর জীবনের সম্পর্ক - There are a good relationship between Manner and Good life.

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি সেমিনারে আচরণ বিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিস্টরা সুন্দর জীবনযাপনের বিষয়ে মনো বিজ্ঞানের ভূমিকা বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। সেই সেমিনার থেকে জানা যায়, একটি সুন্দর ও সুষ্ঠুজীবন গঠনের জন্য পঞ্চশীল বা পঞ্চনীতির অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। শীল হলো সদাচার বা চরিত্র গঠনের উপাদান যথা (১) প্রাণী হত্যা না করা (২) চুরি বা পরদ্রব্য হরণ না করা (৩) ব্যাভিচার না করা (৪) মিথ্যা কথা না বলা এবং (৫) মাদকদ্রব্য সেবন না করা।
এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ, আমরা দুঃখের সাগরে ভাসছি। যেহেতু আমাদের কামনা-বাসনার শেষ নেই সেহেতু আমাদের দুঃখেরও শেষ নেই অর্থাৎ সাধও অনন্ত তাই দুঃখও অনন্ত। এমনকি মৃত্যুও দুঃখের ব্যাপারে কোনো সমাধান নয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, কোনো বস্তু স্বয়ং উৎপন্ন হয় না_ একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনা সজ্ঞাত। অর্থাৎ সবকিছুরই উৎপত্তি ঘটে পূর্বের ঘটনা থেকে। অর্থাৎ এই হতে এই হয়, এর উৎপত্তি হতে তার উৎপত্তি। এ আসলে এক অনিত্যবাদ। একদিকে যা কার্য অপরদিকে তা কারণ। এ জগতের প্রতিটি জিনিস বা বিষয় দৈহিক বা মানসিক কার্যকারণ শৃঙ্খলার অধীন। তাই কার্যকরণবাদকে শর্তাধীন সৃষ্টিবাদও বলা যায়। এ তত্ত্বের বারটি অঙ্গ এবং তা হলো_ অবিদ্যা, সংস্কার, বিজ্ঞান, নামরূপ ষাড়াতন, স্পর্শ, বেদনা, তৃষ্ণা, উপাদান, ভব, জন্ম ও জরা ব্যাধি সংবলিত মৃত্যু। এই দ্বাদশ নিদাম চক্রাকারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জগতের সর্বত্র বিবর্তিত হয়ে চলেছে_ এতে কোনো অতিন্দ্রীয় শক্তির হাত নেই। অতিজাগতিক সত্তা বা অধিবিদ্যার আশ্রয় ছাড়াই জগৎ সংসারের বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এই কার্যকারণ যাদের অনুসরণ দ্বারা দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
দুঃখের কারণ হলো দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র এবং দুঃখের মূল কারণ অবিদ্যা। অবিদ্যা হলো সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতা ও জাগতিক বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে প্রান্ত ধারণা। অবিদ্যার কারণে মানুষ জাগতিক বিষয়, বস্তুকে স্থায়ী মনে করে এবং এর প্রতি আসক্ত হয়। প্রকৃত পক্ষে জগতে স্থায়ী বা অবিনশ্বর বলে কিছু নেই। জগতে সবাই অনিত্য, পরিবর্তনশীল, ক্ষণস্থায়ী বা অবিনশ্বর বলে কিছু নেই। জগতে সবই অনিত্য, পরিবর্তনশীল, ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। আমরা যা সত্য বলে মনে করি আসলে তা উৎপাদন বা ভব বা বিকামিং। তা প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল; এ জন্য জগৎকে অবিনশ্বর বা শাশ্বত বলে মনে হয়। জগতে চলছে অন্তহীন বিরামহীন একটা পরিবর্তনের স্রোত। একটি জিনিসের উৎপত্তি হচ্ছে তো অপর একটি বিনাশ হচ্ছে। বর্তমান হয়ে যাচ্ছে অতীত আর ভবিষ্যৎ হচ্ছে বর্তমান। 
সেমিনারে রূপক হিসেবে বেশকিছু তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। যেমন, দুঃখনিরোধের উপায় হলো আর্য অঘটাঙ্গিক মার্গ বাপ সৎ দৃষ্টি, সৎ সঙ্কল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম সৎজীবিকা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি ও সৎসমাধি।
আর দুঃখ নিরোধ হলো নির্বাণ বা পরমমুক্তি বা জীবনে স্রোতের সম্পূর্ণ ছেদন।
আর্য অঘটাঙ্গিক মার্গের উত্তরণের জন্য চারটি ধাপ অতিক্রম করা প্রয়োজন। মনের উৎকর্ষ ছাড়া পরিশুদ্ধ হওয়া যায় না। পরিশুদ্ধ না হয়ে উত্তরণ সম্ভব নয়। ধাপ চারটি হলো_ মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা।
মৈত্রী : সব প্রাণীর প্রতি অপ্রমেয় মৈত্রী প্রদর্শন করতে হবে। আত্মজয় করতে হলে মৈত্রীভাব একান্ত অপরিহার্য। ইহাই বিশ্বশান্তির মূলমন্ত্র। এ মৈত্রী যেন একমাত্র পুত্রের প্রতি মায়ের মমতার মতো হয়।
করুণা : করুণা হলো সহমর্মিতার সর্বোচ্চ অবস্থা। পরের দুঃখকে নিজের দুঃখ বলে মনে করতে হবে। এর ফলে পরস্পরের ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা থাকবে না।
মুদিতা : পরের সুখে সুখী হওয়া, পরের দুঃখে দুখিত হওয়ার চেয়ে এটা আরো কঠিন কাজ।
উপেক্ষা : সুখ দুঃখের ঊধর্ে্ব অবস্থান করা। সুখে আত্মহারা না হয়ে এবং দুঃখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে সমতা রক্ষা করার উপায় বা কৌশলই হলো উপেক্ষা। এর অপর নাম শূন্যতা।
আত্মা হলো, মানসিক প্রক্রিয়ার ধারা যা, নদীর স্রোতের সঙ্গে অতুলনীয়। এ সদা পরিবর্তনশীল। অন্যভাবে বলা যায় চেতনার প্রবাহ হচ্ছে আত্মা। আত্মার স্বরূপ অনুধাবন করতে পারা দুঃখ নিরোধের বিশাল সাফল্য।
শিবরঞ্জন দত্ত।।
নিবেদনে: শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল