Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, April 13, 2018

বর্ষচক্র

মানবসভ্যতার ঊষাকালে এই ভারত ভূমিতে যে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল, তার তুলনা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না।
যে সভ্যতা পেশিশক্তির প্রভাবে নয় জ্ঞানশক্তির প্রভাবে বিকশিত হয়েছিল, যার সঠিক কাল নির্ধারণ করা এখন সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি, সমবেত মানুষের উন্মুক্ত জ্ঞানের উপলব্ধি থেকে এই সভ্যতার বিকাশ, তাই এই সভ্যতা অপৌরুষ সভ্যতা।
যদিও এই সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে তেমন নাই, তবুও যেটা রয়ে গেছে এটাই অসীম আকাশের ন্যায়, যার নাম বৈদিক সাহিত্য।
কিন্তু অনুতাপের বিষয় এইযে তার সামান্যতম অংশও আমরা বর্তমানে নিজের করে রাখতে পারিনি। তাই আমাদের সমাজ অতীতের ন্যায় উজ্জ্বল নয়।।
আজথেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে বৈদিক ঋষিরা উদাত্তকণ্ঠ বলে গেছেন।
"দ্বাদশ প্রধয়শ্চক্রমেকং ত্রীণি নভ্যানি ক উ তচ্চিকেত।
তস্মিন্ৎসাকং ত্রিশতা ন শঙ্কবোহর্পিতাঃ যষ্টির্ন চলাচলাসঃ।।
★শব্দার্থ -- চক্রন- এই বর্ষচক্রে/ দ্বাদশ - দ্বাদশ / ত্রীণি নভ্যানি- ইহার নাভি স্থান তিন ঋতু রহিয়াছে / কঃ উ তৎ চিকেত-এই তত্ত্বকে কে জানে/ তস্মিন সাকম শঙ্কব -সেই বর্ষের সহিত কীলক / ত্রিশতা ষষ্টি - তিন শত ষাট / অর্পিতা - স্থাপিত / ন চলা চলাশ - তাহা বিচলিত হয় না।
★অনুবাদ ঃ- বর্ষ চক্রে দ্বাদশ মাস আরের ন্যায় আবর্তন করে। ইহার কেন্দ্র স্থলে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত এই তিন ঋতু রহিয়াছে।এই তত্ত্বকে কে জানে! এই বর্ষচক্রে ৩৬০দিনর্দ্ধ, কীলকের ন্যায় স্থাপিত।ইহার ব্যতিক্রম ঘটে না।
(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৮)
বৈদিক সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেকদিকই আমাদের সামনে খুলে দিয়ে গেছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমন তা আমরা সঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
অনেকেই ভাবেন ৭০০ বছরের মুসলিম আগ্রাসন আমাদের ভারতীয় সভ্যতার প্রচুর ক্ষতি করে গেছে, এইকথা যেমন সত্য তেমনি তার থেকে বড় সত্য এইযে ১২০০ বছরের বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রভাবে বৈদিক সাহিত্যের ধ্বংস সবথেকে বেশি হয়েছে, বৈদিক সাহিত্য জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেদের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই দুই ধর্মের অন্যতম কাজ।।
যে সভ্যতা এত প্রাচীন, যে সভ্যতার ঋষিরা এত আগে সৌরবিজ্ঞান কে আয়ত্ত করে ছিল তাদের নিজেদের প্রাচীন বর্ষপঞ্জী নেই এটা ভাবাই যায়না।
এখন না থাকেলেও, আমার দৃঢ় বিশ্বাস সৌর পঞ্জিকাবর্ষ অবশ্যই বৈদিক যুগ থেকে ছিল, যা বৌদ্ধ যুগে বৌদ্ধ রাজানুগ্রহে ধ্বংস করা হয়।
তবে কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌরপঞ্জিকা বর্তমানে ভারতীয় প্রচলিত বর্ষের সঙ্গে টিকে আছে। যেমন শকাব্দ।
শকাব্দ একটি প্রাচীন ভারতীয় সৌরবর্ষ, পণ্ডিতরা মনে করেন রাজা শালীবাহন শক জাতির উপর বিজয়ের সময় থেকে এই অব্দ শুরু হয় সৌরসিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে, একটি রাশি থেকে অপর রাশিতে আপতগমনের জন্য মাস পরিবর্তন হয়।
পূর্ব ভারতে প্রচলিত বঙ্গাব্দে এবং ভাস্করাব্দে বর্ষগণনার ক্ষেত্রে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতিটিই অনুসৃত হয়ে থাকে। শকাব্দে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সময়ে বর্ষারম্ভ হত। যেমন উত্তর ভারতে বছর শুরু হত চৈত্র মাসে কিন্তু পূর্ব ভারতে নববর্ষ অনুষ্ঠিত হত বৈশাখ মাসে। ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ, নববর্ষের সঙ্গে ধর্মাচরণ এবং কৃষিকাজ সম্পর্ক যুক্ত।
ভারতীয় ইতিহাসের আধুনিক যুগেও অন্যান্য অব্দের পাশাপাশি শকাব্দের ব্যবহার বহুলভাবে লক্ষিত হয়। সূর্যসিদ্ধান্তের প্রাচীন নিয়ম মেনেই অসমে বৈশাখ পালিত নববর্ষ উৎসব "বহাগ বিহু" থেকে শকাব্দ গণনা করা হয়।
অনেক প্রাচীন গ্রন্থ ও মধ্যযুগীয় গ্রন্থে শকাব্দের উল্লেখ আছে। আবার কনিষ্কের সঙ্গেও শকাব্দ সম্পর্ক আছে, অনেকেই মনে করেন, আমাদের বঙ্গাব্দ থেকে শকাব্দ ৫১৫ বছর প্রাচীন।
ভারতের বঙ্গাব্দ(পশ্চিমবঙ্গ) এবং ভাস্করাব্দ(অসম) শকাব্দের অনুকরণে প্রবর্তিত।
কামরুপ রাজ ভাস্কর দেবের রাজ্যভিষেকের সময় থেকে ভাস্কারব্দ গণনা করা হয়। এখন প্রশ্ন বঙ্গাব্দ কে প্রবর্তন করেন? যা ভাস্কারাব্দের সমান সৌরবর্ষ পঞ্জিকা।
গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ছিলেন সেই সময়ে অধুনা বঙ্গেশ্বর সুতরাং তিনিই ছিলেন বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বাঙ্গালি রাজা।
আকবর বীরবল প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর এবং ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর মাত্র।

- নিবেদনে শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।

No comments:

Post a Comment