কিঞ্চিদধিক পাঁচশত বৎসর আগেকার কথা। বীরভূমির একচক্রা আর নদীয়ার নবদ্বীপ ধন্য হয়েছিল যথাক্রমে শ্ৰীনিত্যানন্দ ও শ্ৰীগৌরচন্দ্ৰকে বক্ষে ধারণ করে। কলিতে জীব উদ্ধার মানসে উভয়ের আবির্ভাব।
শ্ৰীনিত্যানন্দ লীলামৃত গ্রন্থে আছে-
“রাঢ় দেশে একচক্র গ্রাম মনোহর।
ভারতের উচ্চভূমি অতিশোভাকর ॥"
এই একচক্র গ্রামে বাস করতেন শ্ৰী নিত্যানন্দের পিতা শ্ৰীল মুকুন্দ বন্দোপাধ্যায়, ইনি হাড়াই পণ্ডিত বা হাড়ো ওঝানামে খ্যাত ছিলেন। এই হাড়াই পণ্ডিতের বিয়ে হয় নিকটস্থ ময়ূরেশ্বর গ্রামের জমিদার রাজা মুকুট নারায়ণের কন্যা, রূপে গুণে অনুপমা, পদ্মাবতীর সঙ্গে। এঁদেরই প্রথম সন্তান নিত্যানন্দ। নিত্যানন্দ ছাড়া আরও পুত্র কৃষ্ণানন্দ, সর্বানন্দ, ব্ৰহ্মানন্দ, পুর্ণানন্দ, প্ৰেমানন্দ ও বিশুদ্ধানন্দ ছিল হাড়াই পণ্ডিতের। হাড়াই পণ্ডিত যাজকতাও করতেন।
১৪৭৩ খৃষ্টাব্দে অর্থাৎ ১৩৯৫ শকে মাঘ মাসে শুক্লা ত্ৰয়োদশীর দিনে মধাহ্নে শ্ৰীপাদ হাড়াই পণ্ডিতের ধর্মপত্নী শ্ৰীমতী পদ্মাবতী দেবী এক অপরূপ পুত্ররত্ন প্রসব করেন। ইনিই শ্ৰীনিত্যানন্দ, শ্ৰীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরাম। শ্ৰীমতী পদ্মাবতী গর্ভাবস্থায় নানা অলৌকিক রহস্য দর্শন করতেন। তিনি দেখতেন চতুর্মুখ ও পঞ্চমুখ প্রভৃতি অপূর্বসুন্দর দেবমূর্তিগণ এসে কাকে যেন স্তব করছেন, বলছেন, হে অনন্ত দিব্য প্রকাশ ধন্য তোমার গর্ভবাস। শ্ৰীশ্ৰীনিত্যানন্দ প্রভুর জন্মস্থানকে এখনও একচক্র গর্ভবাস বলা হয়। প্রবাদ আছে যে শ্ৰীমতি পদ্মাদেবীর আটমাস গর্ভকালে আচম্বিতে এক যোগীরাজ শ্ৰীহাড়াই পণ্ডিতের গৃহে এসে “এই গর্ভবাস, এই গর্ভবাস,” বলে নৃত্য করেছিলেন। তিনিই ছদ্মবেশী গর্গাচার্য। তার প্রেম বিকার দেখে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কি বলছেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা। তিনি বলেছিলেন “শ্ৰীকৃষ্ণের অগ্রজ শ্ৰীবলরাম আসছেন। ‘গর্ভবাস গর্ভবাস, মাঘি শুক্লা ত্ৰয়োদশী দিনে এই একচক্রায় তার আশু প্ৰকাশ।” এ কথা বলতে বলতে ছদ্মবেশী অন্তর্হিত হন। হাড়াই পণ্ডিত নিত্যানন্দকে খুব ভাল বাসেন।
"তিল মাত্র নিত্যানন্দ পুত্রেরে ছাড়িয়া।
কোথাও হাড়াই ওঝা না যায় চলিয়া ॥”
কিবা কৃষি কর্মে, কিবা যজমান ঘরে, “সর্বত্রই নিতানন্দকে সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু দৈবে একদিন এক সন্ন্যাসী প্রবর। আইলেন নিত্যানন্দ জনকের ঘর।'
এই সন্ন্যাসী রাত্রিযাপন করে হাড়াইকে
'ন্যাসীবর বলে এক ভিক্ষা আছয়ে আমার।
নিত্যানন্দ পিতা বলে যে ইচ্ছা তোমার”
তখন সন্ন্যাসী তীর্থ ভ্ৰমণের সঙ্গী হিসাবে নিত্যানন্দকে ভিক্ষা চাইলেন, মনে হয় এ সন্ন্যাসী ঈশ্বর পুরী। মতান্তরে চৈতন্যাগ্রজ বিশ্বরূপ যাঁর সন্ন্যাসাশ্রমের নাম শঙ্করারণ্য পুরী। যাইহোক সন্ন্যাসীর সঙ্গে নিত্যানন্দ ফিরলেন সারা ভারতবর্ষে। কিশোর ক্রমে যুবক হলেন। দক্ষিণাত্যে শ্ৰীপাদ মাধবেন্দ্র পুরীর গুরুদেব শ্ৰীপাদ লক্ষ্মীপতি পুরী নিত্যানন্দকে দীক্ষা দেন। শ্ৰীপাদ লক্ষ্মীপতি পুরীর অন্তৰ্ধানে শোকীর্তচিত্তে শ্ৰীনিত্যানন্দ আসেন শ্ৰীবৃন্দাবন ধামে। তখন মাধবেন্দ্র পুরীও ছিলেন বৃন্দাবনে। যদিও উভয়ে এক গুরুর শিষ্য তথাপি শ্ৰীনিত্যানন্দ মাধবেন্দ্র পুরীকে গুরুর মত শ্ৰদ্ধা করতেন। তাঁরই আদেশে শ্ৰীনিত্যানন্দের নবদ্বীপে শুভাগমন।
ক্রমশঃ
#কৃষ্ণকমল।
Friday, April 13, 2018
শ্ৰীনিত্যানন্দ প্রভুর জীবনী ও তীর্থ পর্যটন(১ম ভাগ)

Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সুন্দর হয়েছে
ReplyDelete