ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ জীব মূলত চিন্ময়, পবিত্র ও সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত৷ তাই সে জড় জগতের পাপের অধীন নয় ৷ কিন্তু যখন জড় জগতের সংস্পর্শে আসে তখন সে বিনা দ্বিধায় ইচ্ছাকৃতভাবে ও অনিচ্ছাকৃতভাবে নানা রকম পাপকার্যে লিপ্ত হয় ৷ অর্জুন জীবদের এই বিকৃত স্বভাব সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রশ্ন উণ্থাপন করেছিলেন ৷ যা আমাদের মনেও প্রশ্ন জাগে ৷ প্রশ্নটি এই যে, " হে বার্ষেয় ! মানুষ কার দ্বারা চালিত হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেন বলপূর্বক নিয়োজিত হয়েই পাপাচরণে প্রবৃত্ত হয় ?"
উত্তরে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন— "হে অর্জুন ! রজোগুণ থেকে সমুদ্ভত কামই মানুষকে এই পাপে প্রবৃত্ত করে এবং এই কামই ক্রোধে পরিণত হয় ৷ কাম সর্বগ্রাসী ও পাপাত্মক, কামকেই জীবের প্রধান শত্রু বলে জানবে ৷"
জীব যখন জড়া প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে, তখন অন্তরের শাশ্বত কৃষ্ণপ্রেম রজোগুণের প্রভাবে কামে পর্যবসিত হয় ৷ টক তেঁতুলের সংস্পর্শে দুধ যেমন দই হয়ে যায়, তেমনই ভগবানের প্রতি আমাদের অপ্রাকৃত প্রেম কামে রূপান্তরিত হয় ৷ তারপর, কামের অতৃপ্তির ফলে হৃদয়ে ক্রোধের উদয় হয়, ক্রোধ থেকে মোহ এবং এভাবেই মােহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার ফলে জীব জড় জগতের বন্ধনে স্থায়িভাবে অাবদ্ধ হয়ে পড়ে ৷ তাই, কাম হচ্ছে জীবের সব চাইতে বড় শত্রু ৷ এই কামই শুদ্ধ জীবাত্মাকে এই জড় জগতে আবদ্ধ হয়ে থাকতে অনুপ্রাণিত করে ৷
আবৃতং জ্ঞানমেতেন জ্ঞানিনো নিত্যবৈরিণা ৷
কামরূপেণ কৌন্তেয় দুষ্পূরেণানলেন চ ৷৷
অর্থাৎ, "কামরূপী চির শত্রুর দ্বারা জীবের শুদ্ধ চেতনা আবৃত হয় ৷ এই কাম দুর্বারিত অগ্নির মতো চিরঅতৃপ্ত ৷ " (গীতা ৩/৩৯)
ঘি ঢেলে যেমন আগুণকে কখনও নেভানো যায় না, তেমনই কাম উপভোগের দ্বারা কখনই কামের নিবৃত্তি হয় না ৷ জড় জগতে সমস্ত কিছুর কেন্দ্র হচ্ছে যৌন আকর্ষণ, তাই জড় জগৎকে বলা হয় 'মৈথুনাগার' বা যৌন জীবনের শিকল ৷ অপরাধ করলে মানুষ যেমন কারাগারে আবদ্ধ হয়, তেমনই যারা ভগবানের অাইন অমান্য করে, তারাও যৌন জীবনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে এই মৈথুনাগারে পতিত হয় ৷ তাই, এই কাম হচ্ছে অজ্ঞানতার প্রতীক, যার দ্বারা জীবদের এই জড় জগতে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে ৷ ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধন করার সময় সাময়িকভাবে সুখের অনুভূতি হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই তথাকথিত সুখই হচ্ছে জীবের পরম শত্রু ৷
প্রতিটি জীবের অন্তরে যে ভগবৎ-প্রেম আছে, তারই বিকৃত প্রতিবিম্ব হচ্ছে কাম ৷ কিন্তু জীবনের শুরু থেকেই যদি আমরা ভগবানকে ভালবাসতে শিখি, তা হলে আমাদের স্বাভাবিক ভগবৎ-প্রেম আর কামে পর্যবসিত হতে পারে না ৷ ভগবৎ প্রেম কামে বিকৃত হয়ে গেলে তখন আর তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনা অত্যন্ত কঠিন ৷ তা সত্ত্বেও কৃষ্ণভাবনা এমনই শক্তিশালী যে, জীবনের শেষ পর্যায়েও যদি গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে ভগবদ্ভক্তির বিধি-নিষেধগুলি অনুশীলন করা যায়, আমরা পরম শত্রু কামকে কৃষ্ণপ্রেমে রূপান্তরিত করতে পারি ৷ এটিই হচ্ছে মানব জীবনের সর্বোত্তম পূর্ণতার স্তর ৷
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
নিবেদনেঃ- শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।।
Wednesday, November 22, 2017
মানুষ যে কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাপাচরণে প্রবৃত্ত হয়-
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Posts (Atom)