সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি সেমিনারে আচরণ বিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিস্টরা সুন্দর জীবনযাপনের বিষয়ে মনো বিজ্ঞানের ভূমিকা বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। সেই সেমিনার থেকে জানা যায়, একটি সুন্দর ও সুষ্ঠুজীবন গঠনের জন্য পঞ্চশীল বা পঞ্চনীতির অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। শীল হলো সদাচার বা চরিত্র গঠনের উপাদান যথা (১) প্রাণী হত্যা না করা (২) চুরি বা পরদ্রব্য হরণ না করা (৩) ব্যাভিচার না করা (৪) মিথ্যা কথা না বলা এবং (৫) মাদকদ্রব্য সেবন না করা।
এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ, আমরা দুঃখের সাগরে ভাসছি। যেহেতু আমাদের কামনা-বাসনার শেষ নেই সেহেতু আমাদের দুঃখেরও শেষ নেই অর্থাৎ সাধও অনন্ত তাই দুঃখও অনন্ত। এমনকি মৃত্যুও দুঃখের ব্যাপারে কোনো সমাধান নয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, কোনো বস্তু স্বয়ং উৎপন্ন হয় না_ একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনা সজ্ঞাত। অর্থাৎ সবকিছুরই উৎপত্তি ঘটে পূর্বের ঘটনা থেকে। অর্থাৎ এই হতে এই হয়, এর উৎপত্তি হতে তার উৎপত্তি। এ আসলে এক অনিত্যবাদ। একদিকে যা কার্য অপরদিকে তা কারণ। এ জগতের প্রতিটি জিনিস বা বিষয় দৈহিক বা মানসিক কার্যকারণ শৃঙ্খলার অধীন। তাই কার্যকরণবাদকে শর্তাধীন সৃষ্টিবাদও বলা যায়। এ তত্ত্বের বারটি অঙ্গ এবং তা হলো_ অবিদ্যা, সংস্কার, বিজ্ঞান, নামরূপ ষাড়াতন, স্পর্শ, বেদনা, তৃষ্ণা, উপাদান, ভব, জন্ম ও জরা ব্যাধি সংবলিত মৃত্যু। এই দ্বাদশ নিদাম চক্রাকারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জগতের সর্বত্র বিবর্তিত হয়ে চলেছে_ এতে কোনো অতিন্দ্রীয় শক্তির হাত নেই। অতিজাগতিক সত্তা বা অধিবিদ্যার আশ্রয় ছাড়াই জগৎ সংসারের বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এই কার্যকারণ যাদের অনুসরণ দ্বারা দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
দুঃখের কারণ হলো দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র এবং দুঃখের মূল কারণ অবিদ্যা। অবিদ্যা হলো সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতা ও জাগতিক বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে প্রান্ত ধারণা। অবিদ্যার কারণে মানুষ জাগতিক বিষয়, বস্তুকে স্থায়ী মনে করে এবং এর প্রতি আসক্ত হয়। প্রকৃত পক্ষে জগতে স্থায়ী বা অবিনশ্বর বলে কিছু নেই। জগতে সবাই অনিত্য, পরিবর্তনশীল, ক্ষণস্থায়ী বা অবিনশ্বর বলে কিছু নেই। জগতে সবই অনিত্য, পরিবর্তনশীল, ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। আমরা যা সত্য বলে মনে করি আসলে তা উৎপাদন বা ভব বা বিকামিং। তা প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল; এ জন্য জগৎকে অবিনশ্বর বা শাশ্বত বলে মনে হয়। জগতে চলছে অন্তহীন বিরামহীন একটা পরিবর্তনের স্রোত। একটি জিনিসের উৎপত্তি হচ্ছে তো অপর একটি বিনাশ হচ্ছে। বর্তমান হয়ে যাচ্ছে অতীত আর ভবিষ্যৎ হচ্ছে বর্তমান।
সেমিনারে রূপক হিসেবে বেশকিছু তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। যেমন, দুঃখনিরোধের উপায় হলো আর্য অঘটাঙ্গিক মার্গ বাপ সৎ দৃষ্টি, সৎ সঙ্কল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম সৎজীবিকা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি ও সৎসমাধি।
আর দুঃখ নিরোধ হলো নির্বাণ বা পরমমুক্তি বা জীবনে স্রোতের সম্পূর্ণ ছেদন।
আর্য অঘটাঙ্গিক মার্গের উত্তরণের জন্য চারটি ধাপ অতিক্রম করা প্রয়োজন। মনের উৎকর্ষ ছাড়া পরিশুদ্ধ হওয়া যায় না। পরিশুদ্ধ না হয়ে উত্তরণ সম্ভব নয়। ধাপ চারটি হলো_ মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা।
মৈত্রী : সব প্রাণীর প্রতি অপ্রমেয় মৈত্রী প্রদর্শন করতে হবে। আত্মজয় করতে হলে মৈত্রীভাব একান্ত অপরিহার্য। ইহাই বিশ্বশান্তির মূলমন্ত্র। এ মৈত্রী যেন একমাত্র পুত্রের প্রতি মায়ের মমতার মতো হয়।
করুণা : করুণা হলো সহমর্মিতার সর্বোচ্চ অবস্থা। পরের দুঃখকে নিজের দুঃখ বলে মনে করতে হবে। এর ফলে পরস্পরের ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা থাকবে না।
মুদিতা : পরের সুখে সুখী হওয়া, পরের দুঃখে দুখিত হওয়ার চেয়ে এটা আরো কঠিন কাজ।
উপেক্ষা : সুখ দুঃখের ঊধর্ে্ব অবস্থান করা। সুখে আত্মহারা না হয়ে এবং দুঃখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে সমতা রক্ষা করার উপায় বা কৌশলই হলো উপেক্ষা। এর অপর নাম শূন্যতা।
আত্মা হলো, মানসিক প্রক্রিয়ার ধারা যা, নদীর স্রোতের সঙ্গে অতুলনীয়। এ সদা পরিবর্তনশীল। অন্যভাবে বলা যায় চেতনার প্রবাহ হচ্ছে আত্মা। আত্মার স্বরূপ অনুধাবন করতে পারা দুঃখ নিরোধের বিশাল সাফল্য।
শিবরঞ্জন দত্ত।।
নিবেদনে: শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল
Sunday, April 8, 2018
আচরণ বিজ্ঞানের সাথে সুন্দর জীবনের সম্পর্ক - There are a good relationship between Manner and Good life.
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment