Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Tuesday, October 24, 2017

ভাইফোঁটার সৃষ্টিকাল

খ্রীষ্টপূর্ব ৫২৭ সাল থেকে ভাইফোঁটা প্রথমে প্রথা হিসেবে প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এ প্রথাটি উৎসব রূপ নেয়। এ ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বোন ভাইয়ের যেমন দীর্ঘজীবন কামনা করে, তেমনি তাকে দূরে যেতেও বারণ করে । এর মধ্যে ভাইকে রক্ষা করার একটা অনুষঙ্গ নিহিত আছে। এক সময়ের কৃষিকেন্দ্রিক সমাজে এ প্রথা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। প্রথা অনুযায়ী শুক্লাতিথির দ্বিতীয়াতে ভাইফোঁটা উদযাপিত হয়। প্রয়োজনে পরবর্তী সাতদিন ভাইফোঁটা উদযাপণ করা যায়। পঞ্জিকার হিসেবমতে কালীপূজার দুই দিন পরে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোন খুঁজে পায় ভাইকে আর ভাই খুঁজে পায় বোনকে। এ যেন রক্তের ধাধনকে দৃঢ় করে আপন করে নেয়ার এক এক উৎসব। ছোটো ছাটো ছলেমেয়েরা মা-বাবার হাত ধরে আসে ফোঁটার জন্য।
ভাইফোঁটার সময়ুকাল
কার্ত্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অর্থাৎ কালী পূজার দু’দিন পর এ উৎসব উদযাপন করা হয়। দ্বিতীয়া তিথিতে পালন করা হয় বলে এই উৎসবের পোষাকী নাম ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া। অঞ্চলভেদে এই উৎসব বিভিন্ন নামে পরিচিত। পশ্চিম ভারতে ভাইদূজ, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটক-এ ভাইবিজ. নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলে ভাইটিকা ইত্যাদি নামে এই উৎসব পরিচিত। পশ্চিম ভারতের ভাইদূজ উৎসবটি পাঁচ-দিনব্যাপী দিপাবলী উৎসবের শেষ দিন। বিজয়া দশমীর পর ব্যাপক সংখ্যক হিন্দুধর্মাবলম্বী নর-নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণেই এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোনেরা তাদের ভাইয়ের নিরাপত্তা, সফলতা, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্বির জন্য প্রার্থনা করে এবং এ দিনে ভাইকে ফোঁটা না দেয়া পর্যন্ত উপবাস করে। বাঙালী পরিবারে চন্দন পেষ্ট দিয়ে সাধারণত ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয়া হয়। এ সময় ভাইকে মিষ্টি মূখ করানো হয়। অঞ্চল ভেদে ভাইও অনুরূপভাবে বোনোর কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টিমূখ করায়। এ অনুষ্ঠানে ভাই-বোনের মধ্যে উপহার সামগ্রির আদান-প্রদান ঘটে। পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয় স্বজন এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে। এ অনুষ্ঠানের দিন ভাই বোনকে নিমন্ত্রণ করে । বর্তমান সমাজে এ উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ কার্ড মুদ্রন করা হয়। অঞ্চল ভেদে এ দিনকে কেন্দ্র করে বিশেষ বাজার বসে। মিষ্টির দোকানে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের মিষ্টি তৈরি করা হয়।

ভাইফোঁটার আচার অনুষ্ঠান প্রক্রিয়া

সাধারণতঃ শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে ভাইফোঁটা লগ্ন ঠিক হয়। এই হিসেব ধরেই বোন তার ভাইদেরকে নিমন্ত্রণ জানায় তার বাড়ীতে। কাছে-দূরে যেখানেই থাকুক, বোনের নিমত্রণ রক্ষা করতে ভাইয়েরা ছুটে আসে। ঠিক সন্ধ্যাবেলা ভাইকে আদর সমাদর করে সূতির আসনে বসতে দেয়া হয়। বোনের হাতে থাকে ঝকঝকে পেতলের রেকাবী। রেকাবী সাজানো হয়, ঘরে তৈরি কাজল, চন্দন বাটা, ধান-দূর্বা, শুকনো পাটপাতা এবং মিষ্টি দিয়ে। পাশেই রাখা হয় ঘিয়ের প্রদীপ। ভাইয়েরাও স্নান করে পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করে তাদের জন্য নির্ধারিত পিড়িতে গিয়ে বসে। এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য নারীদের উলু ও শঙ্খ ধ্বনির মধ্যে বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটর মন্ত্র পাঠ করে।
বোন তার কড়ে আঙুলে কাজল ছুঁইয়ে ভাইয়ের দুই ভুরুতে এঁকে দেয়। এরপর চন্দনের ফোঁটায় কপাল অংকিত করে, কপালের ঠিক মাঝখানে কড়ে আঙুলকে স্পর্শ করে প্রচলিত ছড়া কাটেঃ

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যম দূয়ারে পড়ল কাঁটা, 
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, 
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা,
ভাই যেন হয় লোহার ভাটা।”

ইংরেজীতে- 
I put a “phota” on my brother's fore-head
To make my brother immortal
“Yamuna” gives a “phota” to “Yama”
I give a “phota” to my brother,
Brother may becomes tough as iron.

The Sanskrit Version
Bhratus tabaa grajaataaham
Bhunksa bhaktamidam shuvam Preetaye yama raajasya
Yamunaah Visheshatah.

English Translation: আমি তোমার বোন (I’m your sister)
রাজা যম ও তার বোন যমুর আনন্দের জন্য তুুমি এ পবিত্র খাবর গ্রহণ কর (Eat this sacred rice for the pleasure of "Yam Raj" and "Yamuna").

ছড়া শেষে বোন ভাইয়ের মাথায় ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে, পাশ থেকে বেজে উঠে উলুধ্বনি আর শংখধ্বনি। শংখধ্বনিতে ভাইয়ের জীবন থেকে সকল ধরনের বাঁধা বিপপ্তি দূর হয়ে যায়, ভাইয়ের মুখে একটু তেতো নিমপাতা বা পাটপাতা তুলে দিতে হয়। ভাইকে তেতো মুখে বেশিক্ষণ থাকতে হয়না, সাথে সাথে থালা ভর্তি মিষ্টি খেতে দেয়া হয়। মিষ্টির সাথে ভাইকে বোনের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়। অবশ্য কোন কিছুই একতরফা হয়না। বোন যেমন ভাইকে দেয়, ভাইও বড় বোনকে প্রনাম শেষে দিদির হাতে উপহার তুলে দেয়। আর বোন যদি বয়সে ছোট হয়, তাহলে বড় ভাইকে প্রনাম করে, ছোট বোনের হাতে উপহার তুলে দিতে ভাইয়ের আনন্দের সীমা থাকেনা। এভাবেই ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা ও ফ্রীতির সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। এই ছোট্ট আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের সকলে মিলে আরও বড় পরিসরের আনন্দ-উৎসবে মিলিত হয়। 

বছরের অন্য দিনগুলোতে খাবারের মান যতই সাধারণ হোক না কেনো, ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে ভাইয়ের পছন্দের খাবার রান্না করা হয়। বোনের যতটুকু সাধ্য, ভাইকে তা উজার করে দিয়ে সুখী হয়। বোনের কাছ থেকে এই পরম মমতামাখানো ভালোবাসা পাওয়ার টানেই ভাইয়েরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। 
অনেক ভাই ফোটার মন্ত্রটি বা ছড়াটি বিভিন্ন পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন-
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥
বা 
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
আজ থেকে আমার ভাই,
যম দুয়ারে তিতো

এভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।
অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ্যবাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে।।

No comments:

Post a Comment