Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, November 3, 2017

ঋষি মার্কেণ্ড জীবন ইতিহাস

ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একমাত্র মৃত্যুকে জয় করেছেন ঋষি মার্কেণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুঞ্জয়ের পেছনে রয়েছে এক বহুল ইতিহাস। কি সেই ইতিহাস? কিভাবে ষোলবছরের পরমায়ু নিয়ে এক বালক ষোলো কল্প পরমায়ু অর্জন করে? প্রিয় ভক্তগণ, আজ আমরা সৃষ্টির একমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী মহর্ষি মার্কেণ্ডয়ের ব্যাপারে আলাপচারিতা করবো।
সত্যযুগের কথা, মৃকণ্ডু ঋষি ও তাঁর পত্নী মরুদবতী। মৃকণ্ডু ঋষি শিবের আরাধনা করতো এবং উনার পত্নী মরুদবতী ছিলো আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গার ভক্ত। এই দুই ভক্তের দীর্ঘদিন সংসার জীবন ব্যয় হওয়ার পরেও তাঁদের কোনও সন্তান প্রাপ্তির সৌভাগ্য হয়নি। একদিন মরুদবতী মনভার করে বসে ছিলেন তখন ঋষি মৃকণ্ডু এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হলো দেবী; আপনার মনভার কেন? উত্তরে মরুদবতী বললেন, স্বামী আমার অপূর্ণতার কারণে। ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, কেমন অপূর্ণতা? মরুদবতী বলল, সন্তানের অপূর্ণতা, মাতৃত্বের অপূর্ণতা। তখন ঋষি পত্নী মরুদবতী বলল, স্বামী আমার একান্ত ইচ্ছা মাতৃত্ব স্বাদ পেতে। পত্নী মুখে এইবাক্য শুনে ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, তাহলে আমাদের মহাদেবের তপস্যা শুরু করতে হবে। তখন ঋষি পত্নী মরুদবতী বলল, ঠিক আছে তবে তাই হোক; তারপরও আমি মাতৃত্ব স্বাদ পেতে চায়। এরপর তাঁরা দুজনে গভীর বনে পুত্রকামনায় ভগবান শিবের আরাধনা তপস্যা শুরু করে। তাঁদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে প্রভু মহাদেব শিব তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত হন। তখন মহাদেব জিজ্ঞাসা করেন, কি তোমাদের মনবাঞ্ছা? কেন তোমাদের এই কঠোর তপস্যা? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু ও মরুদবতী বললেন, পুত্র কামনায় প্রভু! তখন মহাদেব বললেন, কেমন পুত্র চাও? দীর্ঘজীবী পুত্র মূর্খপুত্র নাকি ক্ষণজীবী জ্ঞানীপুত্র? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু বললেন, মূর্খ দীর্ঘজীবী পুত্রের চেয়ে ক্ষণজীবী জ্ঞানী পুত্রই শ্রেয়। তখন মহাদেব বললেন, তথাস্তু! এবং অতঃপর মহাদেব সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। তারপর ঠিক বছর পর ঋষি মৃকণ্ডু পত্নী মরুদবতী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর মরুদবতী সেই সন্তানের নামকরণ করে মার্কেণ্ড। সন্তান জন্মের পরদিন যখন ঋষি মৃকণ্ডু পুত্রকে দেখতে যান, তখন ঋষি মৃকণ্ডু পত্নীকে বললেন, মার্কেণ্ড মাতা আমাদের পুত্র অল্পায়ু! কিন্তু সে এত অল্পায়ু হবে তা কখনও কল্পনা করিনি। ঋষি মৃকণ্ডু পত্নী বললেন, কতসময় পরমায়ু নিয়ে এসেছে আমাদের পুত্র? উত্তরে ঋষি মৃকণ্ডু বলল, মাত্র ষোলদিন। ঋষি মুখে এইবাক্য শুনে মরুদবতী স্তব্ধ হয়ে গেল। বলতে লাগলেন হে মাতা আদ্যাশক্তি! এ কেমন অবিচার আমাদের উপরে? এই যদি আপনার ইচ্ছা তাহলে কেন এই বরদান দিয়েছিলেন প্রভু মহাদেব! তখন মরুদবতী বলল, না এ হতে পারেনা, এইবাক্য বলার কিছু সময় পরে মরুদবতী পুত্র মার্কেণ্ডকে নিয়ে কৈলাশের দিকে চললেন। দ্বিতীয় দিনে মরুদবতী কৈলাসে উপস্থিত হয়ে, নিজ পুত্রকে আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গার পায়ে রেখেদিলেন এবং বললেন; মাতা আপনাদের কৃপালাভ সরুপ এই পুত্র কিন্তু আমি এই ষোলদিনের পুত্র মোহে মোহিত হয়ে মাতৃত্ব স্বাদ পেতে চাই না। তাই আপনাদের দেওয়া আশীর্বাদ আপনার চরণে রেখে গেলাম। এই বলে মরুদবতী 
কৈলাস থেকে প্রস্থান করলেন। তখন দেবী দূর্গা ভক্তের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূর্ণের জন্য ধ্যান যোগে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে স্মরণ করলেন। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দেবীর ধ্যান স্থিতির আবাস পেয়ে নিজেও ধ্যানমগ্ন হইলেন। ধ্যান অবস্থায় দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বললেন, এই পুত্রের অল্পায়ুর কারণ কি? ব্রহ্মা দেবীকে বিস্তারিত ভাবে বললেন। অতঃপর দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বললেন, হে সৃষ্টি সরুপ আমার একান্ত ইচ্ছা এই সন্তানের পরমায়ু বৃদ্ধি হেতু! তখন ব্রহ্মা বললেন, মাতা এই সন্তানের পরমায়ু স্বর্গের সময়ানুসারে মাত্র তিথি যা মত্যলোকের সময়ানুসারে মাত্র ষোলদিন। তবে মাতা আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হেতু আমি এই সন্তানের পরমায়ু স্বর্গের সময়ানুসারে ষোলদিন প্রদান করছি যা মত্যলোকের সময়ানুসারে ষোলবছর হবে, কিন্তু মাতা ক্রোধিত হবেন না; এর উর্দ্দে পরমায়ু প্রদান আমার ক্ষমতায় নেই। তখন দেবী দূর্গা ব্রহ্মাকে বলল, আমি যথাযথর সন্তুষ্ট সৃষ্টিবর। এরপর মার্কেণ্ড কৈলাসে অবস্থান করে এবং যখন মার্কেণ্ডয়ের বয়স আটবছর অতিক্রম করে, তখন আদ্যাশক্তি দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে একটি শিবলিং তৈরী করে দেয় এবং তাঁকে মহামন্ত্র প্রদান করে। দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে আরো বললেন, পুত্র যতকিছু হোক তুমি এই মন্ত্রজপ বন্ধ করবে না এবং এই শিবলিং থেকে প্রস্থানের মনোভাব আনবে না। তখন মার্কেণ্ড জিজ্ঞাসা করলেন, মাতা এই মন্ত্রটি কিসের? উত্তরে দেবী দূর্গা মার্কেণ্ডকে বলল, এটি মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র! এই মন্ত্রটিই তোমার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আর সেই মহা মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রটি হলো:-
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম।
উর্বারুকমিববন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ স্বাহা।
ভাবার্থ --- হে সৃষ্টিকর্তা, ধর্তা ও হর্তা পরমাত্মন! তুমি আমাদের জন্য সুগন্ধিত, পুষ্টিকারক তথা বলবর্ধক ভোগ্য বস্তু দান করো। আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে তোমার ভজন করি। হে দেব! আমরা পূর্ণায়ু ও পূর্ণভোগ করেই যেন এই শরীর রূপী বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি।
-
ব্যাখ্যা --- খরমুজ পাকলেই বিনা কষ্টে সে তার ডাল থেকে মুক্ত হয়ে যায়। হে প্রভো! আমরা যেন এই জন্ম-মৃত্যু চক্র থেকে মুক্ত হয়ে কিন্তু তোমার অমৃতময়ীস্নেহ থেকে যেন বিমুখ না হই। তোমার অমৃতধারার বরদ হস্ত সদা যেন আমাদের উপরে থাকে।
এটিই বেদে উল্লেখিত মহামৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র!
তখন মার্কেণ্ড সেই মন্ত্রকে পাঠ করে
এবং শিবলিংটিকে আরাধনা করে। এভাবে মার্কেণ্ড প্রায় ষোলবছর বয়স পূর্তি পর্যন্ত সেই শিবলিং এর সম্মুখে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে। এরপর একদিন, যখন মার্কেণ্ডয়ের ষোলবছর বয়স পূর্ত হয়; তখন যমরাজ তাঁকে নিয়ে যেতে এলে মার্কেণ্ড সেই শিবলিংটি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে। যমরাজ তাঁর রজ্জু দিয়ে মার্কণ্ডেয়কে বন্ধন করলে, মার্কণ্ডেয় শিবলিংটিকে আঁকড়ে ধরে এবং মহাদেব শিবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। করুণাময় ভগবান শিব ভক্তের এমন দুর্দশা দেখে শিবলিং থেকে আবির্ভূত হন। ক্রুদ্ধ ভগবান শিব আক্রমণ করেন যমকে। যম পরাভূত হন এবং মার্কণ্ডেয়ের উপর থেকে তাঁর দাবি ত্যাগ করে ফিরে যান। ভগবান শিব যমকে পরাজিত করে মৃত্যুঞ্জয় নামে পরিচিত হন। তখন থেকে মহাদেবের আরেকটি নাম প্রচারিত হয় "মহা মৃত্যুঞ্জয়"। অতঃপর মহাদেব মার্কেণ্ডকে বলল উঠো পুত্র, তোমাকে আর মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে হবে না; কারণ তোমার জপশক্তির প্রভাবে তোমার পূর্বের ষোড়শদিন পরমায়ু এখন ষোড়শকল্পে রুপান্তর হয়েছে। যাও পুত্র এখন তোমার মাতা-পিতার ইচ্ছা পূর্ণের সময় এসেছে। তখন সেই স্থান থেকে মহাদেব অদৃশ্য হয়ে যান। ঠিক এভাবে ঋষি মার্কেণ্ড মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ষোড়শকল্প পরমায়ু অর্জন করে। অথচ যে ব্রহ্মা দুদিনের শিশু মার্কেণ্ডকে ষোলবছর(মত্যলোক অনুসারে) পরমায়ু প্রদান করে, সেই ব্রহ্মার এককল্পে জন্ম আর এককল্পে মৃত্যু! আর মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ঋষি মার্কেণ্ড ষোড়শকল্প পরমাণু অর্জন করে স্বয়ং ব্রহ্মার চেয়ে দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে। যে মন্ত্রটি ঋষি মার্কণ্ডেয় পাঠ করেছিলেন সেটিই মহা মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র।
এটিই শিবমন্ত্রের মাহাত্ম্য!!! মহাদেবের আরাধনা ও তাঁকে স্মরণ করলে কালও তাঁকে গ্রাস করতে পারে না।
পরমেশ্বর ভগবান শিবের প্রণাম মন্ত্র:-
নমোঃ শিবায় শান্তায় করুণাত্রয় হেতবে।
নিবেদয়ামী চাত্মাণং ত্বং গতি পরমেশ্বরং।।
জয় শিব শঙ্কর!!! জয় দেবাদিদেব মহাদেব!!!
বিঃদ্রঃ:- ঋষি মার্কেণ্ড জীবনী তথ্য সূত্র, মার্কেণ্ড পুরাণ দ্বিতীয় অধ্যায় ও স্কন্ধ পুরাণ অষ্টাদশ অধ্যায় ও শিব পুরাণ চতুর্দশ অধ্যায় মহা মৃত্যুঞ্জয় মাহাত্ম্য কথা; হইতে সংগৃহীত।
ॐ সর্বেসাং মঙ্গলং ভবতুঃ সর্বে সন্তু্ নিরাময়াহা।
সর্বে ভদ্রানি নিপশসন্তু্ মা কশ্চিত দুঃখ ভাগভবেৎ।।
ॐ জয় মহাদেব ॐ

No comments:

Post a Comment