বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চার, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।
এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।
উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি
সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত
গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :
অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।
৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।
৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।
৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।
৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।
৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।
৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।
১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।
১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।
১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।
১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।
১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।
১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।
১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।
১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।
১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।
টীকাঃ
১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।
২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।
৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।
৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।
৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না।
খুজে নিন সহজেই...
বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চারটি মূল অংশ রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।
এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।
উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি
সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত
গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :
অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।
৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।
৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।
৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।
৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।
৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।
৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।
১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।
১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।
১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।
১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।
১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।
১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।
১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।
১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।
১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।
টীকাঃ
১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।
২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।
৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।
৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।
৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না। অংশ রয়েছে: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ। বেদ (সংস্কৃত véda वेद " জ্ঞান ") প্রাচীন ভারতে লেখা হয়েছে। তারা সংস্কৃত সাহিত্যের পুরনোতম স্তর সংগঠিত করে হিন্দুধর্মের উপর।
এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ হিন্দুদের। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, বেদ একটি মানবিক গ্রন্থ নয়। বৈদিক মন্ত্রগুলো হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কাজ এবং অন্যান্য মঙ্গলজনক কাজে পড়া হয়। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।
উৎপত্তি ও ব্যবহারের রীতিনীতি
সংস্কৃত শব্দ véda " জ্ঞান" মূল বে- থেকে উৎপত্তি নির্ণয় করা হল " জানতে "। এটি চার বিধিসম্মত বেদের সঙ্গে সহযোগী (ঋগ্বেদ, যজু বেদ, সাম বেদ ও অথর্ব বেদ) যদিও তথ্যসূত্র অনুযায়ী এটি যুক্ত ছিলো ব্রাহ্মন, আর্য এবং উপনিষদের সাথে। বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত
গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি। বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খণ্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। :
অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।
৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।
৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।
৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।
৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।
৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।
৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।
১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।
১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।
১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।
১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।
১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।
১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।
১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।
১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।
১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।
টীকাঃ
১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।
২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।
৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।
৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।
৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না।
No comments:
Post a Comment