Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Friday, May 4, 2018

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৬) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

আমাদের নিকট বেদের কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড সকলের বিশেষ রূপ প্রকাশ না থাকায় এবং ধর্ম শাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবে বেদের সাথে পুরাণ, ইতিহাসের বিভিন্নতা অনুমান করি। বাস্তবিক বেদ থেকে পুরাণ, স্মৃতি, আগম অর্থাৎ তন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত শাস্ত্রেরই উৎপত্তি হয়েছে। যদিও ঐ সকল শাস্ত্রে পরস্পর বিরোধ অর্থাৎ বিপরীত বিধান দেখা যায়, তারও হেতু বেদ ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। মনের গুণ ভেদে লোকের অধিকার ভেদ হয়, এজন্য অধিকার ভেদে বেদে পরস্পর বিপৰ্য্যয় নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সুতরাং একের সাথে অন্য শাস্ত্রের বিরোধ মনে হয়। বেদে যে প্রকার কৰ্ম কাণ্ড, উপাসনা কাণ্ড, এবং জ্ঞান কাণ্ড আছে পুরাণে এবং তন্ত্রেও তেমনি কৰ্ম, উপাসনা, এবং জ্ঞান সম্বন্ধে উপদেশ দেখা যায়। বেদ, পুরাণ, ইতিহাস এবং তন্ত্র সকল শাস্ত্রেরই প্রতিপাদ্য ব্ৰহ্ম। তার অতিরিক্ত অন্য কোন দেবতার উপাসনা করার উপদেশ মুমুক্ষু জনগণের প্রতি কোথাও দেখা যায় না। কায় মনো বাক্যে ভক্তি পূর্বক, পরাৎপর পরমেশ্বরের উপাসনা করেই” মনের শান্তি লাভ করবার বিধান সর্বত্রই দেখা যায়। তবে কেবল এই মাত্র প্রভেদ, যে, বেদ-যা বলছেন, পুরাণ আদি তার আচরণের উপায় বলেছেন, যথা বেদ এই আদেশ করেন যে- “আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যোমন্তব্যে নিদিধ্যাসিতব্যঃ”। অর্থঃ অরে আত্মা শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন দ্বারা সাক্ষাৎকার হতে পারে। কিন্তু বিষয় আসক্ত বেদ অনভিজ্ঞ লোকদেরকে সেই শ্রবণ আদি অনুষ্ঠান করবার উপায় পুরাণ আদি নানা শাস্ত্ৰে বলা হয়েছে। যদিও শাস্ত্ৰে উপাসনাকাণ্ডে অর্থাৎ ভক্তি প্রকরণে বিবিধ দেব দেবীর প্রসঙ্গে মানুষের ন্যায় ‘তাঁদের বাসস্থান ও পরিবার এবং বাহন ইত্যাদি থাকার বিবরণ ও সেই সেই দেবদেবীর উপাসনা করবার উপদেশ অথবা উপাস্য দেবের বিভিন্নতা দেখা যায়, তথাপি এটা বেদের আশ্চৰ্য কৌশল জানবে, এর কারণ ও প্রমাণ অন্যান্য পর্বে তুলে ধরবো। বিভিন্ন দেবতাদের উপাসনার বিধি শাস্ত্ৰে আছে, কিন্তু তা বিষয় ভোগার্থি লোকের প্রতি বলা হয়েছে, দেবতারা আমাদের ন্যায় জড় জীব এটা বিষ্ণুপুরাণের পঞ্চম অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সুতরাং তারাও নশ্বর, যেহেতু জড় পদার্থ মাত্রই ধ্বংস হয়ে থাকে। বিশেষতঃ তার প্রমাণ শ্রুতিতেও আছে যথা- ‘ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্ত্য লোকং বিশন্তি”। এর ভাবাৰ্থ এই যে মানুষ সকল পুণ্য দ্বারা দেবত্ব প্ৰাপ্ত হন, পুণ্যক্ষয় হলেই তাঁরা স্বৰ্গচ্যুত হয়ে মৰ্ত্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ করেন। এবং শ্ৰীমদ্ভাগবতের পঞ্চম স্কন্ধের উনবিংশতি অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যে স্বর্গের এবং পৃথিবীর অপরাপর খণ্ডের জীবেরা ভারতবর্ষে এবং ভারতবর্ষের লোকেরা স্বৰ্গ আদিতে জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ জীব সকল নিজ নিজ কর্ম বশে স্বৰ্গ মৰ্ত্ত্য আদি নানা স্থানে ভ্ৰমণ করে, এবং ভবিষ্যোত্তর পুরাণের চতুৰ্থ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে যে শুভ কর্মে দেবত্ব, শুভ অশুভ মিশ্রিত কর্ম দ্বারা মনুষ্যত্ত্ব, এবং অশুভ কৰ্ম দ্বারা তিৰ্য্যক-যোনিত্ব লাভ হয়। দেব-দেবীর যে সমস্ত স্ত্রী, পুরুষ, পুত্র, কন্যা নামে রূপ বর্ণনা দেখতে পাই তারা সকলেই এক পরব্রহ্মেরই রূপ হয়, তা ভিন্ন ভিন্ন দেব দেবীর নয়। এবং বিবিধ প্রকারে যে উপাসনা করা যায়, সেও তার ব্যতীত অন্যের নয়, উপাসনা ভেদে ফলের পার্থক্য। এ বিষয়ে আমরা আগামী পর্বে বিস্তারিত তুলে ধরবো।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীত স্কুল।
ক্রমশঃ

No comments:

Post a Comment