Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Tuesday, May 1, 2018

সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য (পর্ব ৪) About Sanatan Dharma - the prime religion over the time.

আমরা বলে থাকি মনুষত্ব হলেই তো হল আবার ধর্মের প্রয়োজন কি, সবার প্রতি সাম্য, সুখে দুখে অন্যের পাশে দাঁড়ানো এসব করা গেলেই হতো হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রাচীন ঋষিরা এবিষয়ে কি নির্ধারণ করেছেন তা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক বা সেই উন্নত চিন্তার প্রকাশ কি আজও প্রতিফলিত হচ্ছে না!
ধর্ম কথাটির যে স্বরূপ তা নানাভাবে পরিপুষ্ট ও পরিস্ফুট হয়ে সনাতন ধর্মে ব্যক্ত হয়েছে। মানুষের মনুষ্যত্বের পূর্ণতা সাধন ধর্মের উদ্দেশ্য-এই মনুষ্যত্বের সাহায্যে দেবত্বপ্রাপ্তি বা পরমসুখলাভ বা আত্যন্তিক দুঃখনাশ, এটাই সনাতন ধর্মের মূল কথা। দুঃখনাশ ও সুখপ্রাপ্তি সর্বদেশেই মানুষের চরমকাম্য-সকলেই দুঃখতাপদগ্ধ, কেউ নিজ অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। নানাভাবে দুঃখদূর করবার বহু টেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্রের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সর্বদুঃখ দূর হবে মনে করে রাষ্ট্রীয় নীতি সংস্কারে বহু লােক মনােযােগী হয়েছেন। কেউ বা সমাজের রীতিনীতিগুলির আমূল সংস্কারপুর্বক সমাজে সুখসঞ্চলের চেষ্টা করেছেন। কেউ বা অর্থনীতির দিক দিয়ে কিভাবে সর্ববিষয়ে সুখসমৃদ্ধি আনা যায়, তারই চেষ্টা করেছেন। এই সকল আন্দোলন বা প্রচেষ্টা আধুনিক যুগে আধুনিক রীতিতে প্রচারিত হচ্ছে। ভারতবর্ষে সনাতন ধর্ম এই সকল ভাব অবলম্বন না করেই তার ও মৌলিক বা নিজস্ব রীতি(অন্যকে পরিবর্তন করা চেষ্টা না করে স্বয়ং কে পরিবর্তন করার উপায়) অবলম্বন করেছে। মানুষের সুখ আহার নিজস্ব বা আত্মবশ; বাইরের বস্তুর উপর সুখসমৃদ্ধি নির্ভর করে। সুখদুঃখ সকলই আপেক্ষিক শব্দ (relative term); এটার কোন সংজ্ঞা নেই-সুখদুঃখ কাকে বলে তা নিয়ে নানামত। একজনের নিকট যা শ্রেয়ঃ ও প্রেয় অপরের নিকট তা হেয় ও অগ্রাহ্য; বস্তুতঃ কোন বস্তুবিশেষে সর্বাঙ্গীন সুখ নেই; প্রত্যেক বস্তুতেই সুখ ও দুঃখ সংমিশ্রিত রয়েছে। অর্থের আগমনে যেমন সুখ এর অর্জনে সংরক্ষণে তেমনি দুঃখ। অর্থ যেমন পরমার্থ সেইরকমই আবার অনৰ্থ; প্রত্যেক বস্তুরই বিচারের এরকম সুখ ও দুঃখ মিশে আছে। রাষ্ট্রনীতির আমূল পরিবর্তনে যদি সুখ হোত তবে আমেরিকার দুঃখ ঘুচিত-বেকারের সংখ্যা লুপ্ত হোত। সমাজনীতি সংস্কারে যদি তা পেতাম, তবে ইউরােপে যেখানে স্ত্রীপুরুষে বৈষম্য নেই জাতিভেদ নেই, বিবাহবিচ্ছেদ চলে, সে দেশে সামাজিক সুখের পরাকাষ্ঠা দেখা যেত। কিন্তু এ সকলে মানবে আত্যন্তিক দুঃখনাশ ঘটে না; এ ভাবের সাধনার সীমা নেই। এসকল খণ্ডপ্রচেষ্টা ও সাময়িক ব্যাপার-এতে মানুষের চিরন্তন দুঃখ যাবার নয়-সুতরাং যা নিত্য ও সত্য, শাশ্বত ও সনাতন, সেই পথে যেতে হবে। ‘ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি’ এই কারণে ভারতের সাধনা আধ্যাত্মিক পথ অবলম্বন করে সর্বদুঃখনাশের পথ দেখাচ্ছে-মানুষ যাতে মানুষ হয়, দেবতা হয়, আপনার সন্ধান পায় ,অমৃতের স্বাদ লাভ করে, সচ্চিদানন্দের উপলব্ধি করে-রসং লব্ধা হ্যেবায়মানন্দী ভবাত- যা পেলে আর অধিক লাভ চায় না-সেই স্বরাজ্য সিদ্ধির পথ দেখায়। মানুষের তারই করায়ত্ত্ব- ধর্মের আশ্রয় তার প্রধান আশ্রয়। আলেয়ার আলােকে দিগভ্রান্ত না হয়ে ধর্মের স্থির ও ভাস্বর জ্যোতিঃ অনুসরণ করলে লক্ষ্যহীন হয়ে ঘুরতে হবে না।
ধর্মের দুই মুর্ত্তি-ব্যক্ত ও অব্যক্ত; ব্যক্তমুর্ত্তি সমাজ শরীর অবলম্বন পূর্বক ফুটে উঠে; ধর্মাবলম্বীর আচারবিচার ব্যবহার, সাধনা, চিন্তার ধারা, নৈতিক সংস্কার, দৈনন্দিন জীবন প্রভৃতির মধ্যে ধর্মের যে বাহ্যরূপ ফুটে উঠে, তা ব্যক্তস্বরূপ। যে মূলনীতি অবলম্বন করে ধর্মের বাহ্যরূপ বিকশিত হয়, তাহাই ধর্মের প্রাণ। আমাদের এই সনাতন ধর্মকে শাস্ত্রে ‘উর্দ্ধমূলমধঃশাখমশ্বত্থং প্রাহুরব্যয়ম’ বলে নির্দেশ করেছেন। এর মূল স্বয়ং শাশ্বতধর্মগােপ্তা বাসুদেব ও ব্রাহ্মণগণ। শ্রীভগবান এর মূল-ইনি ব্রহ্মণ্যদেব, গোব্রাহ্মণ হিতকারী ও জগদ্ধিতকারী। ধর্মের মূল শ্রীভগবান্ ও শ্রীভাগবত সম্প্রদায় ব্রাহ্মণবর্গ।

নিবেদনে - শ্রীমদ্ভগবদগীতা স্কুল।
ক্রমশ.....

No comments:

Post a Comment