আমরা কম বেশি রামায়ন সম্পর্কে জানি কিন্তু এর থেকে কি শিক্ষা পাচ্ছি তা আমরা অনেকেই জানি না । নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল –
১) কিভাবে অসৎ সঙ্গ আমাদের ক্ষতি/প্রভাবিত করেঃ – কৈকেয়ী ভগবান রামকে স্নেহ করত কিন্তু মন্থরার সঙ্গ প্রভাবে সে অসৎ হয়ে গেল । তাই আমাদের অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে আর বেশি করে সাধু সঙ্গ করতে হবে ।
২) আমাদের হৃদয়ে অসৎ প্রবৃত্তিগুলো দমন করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিতঃ – ভগবান রামচন্দ্র বনে গিয়ে সমস্ত অসুরদের বধ করে তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছিল । আমাদের হৃদয়ে সুর আর অসুর দুটোই আছে, তাই ভগবান রামের কাছে প্রার্থনা করতে হবে যে, ভগবান রাম যেন আমার হৃদয়ের অসুরকে বধ করে । তাই ভগবানের আরেক নাম অরিসূদন অর্থাৎ যিনি আমাদের হৃদয়ের অসুরদের বধ করে ।
৩) কখনো কখনো ভাল মানুষেরা অন্যদের যন্ত্রনা দেয় কিন্তু তিনি কাউকে কষ্ট দেন না, তিনি তাকে ভাল বা সাহায্য করার জন্যে তাকে যন্ত্রনা দেয়ঃ – ভরত তার মাতা কৈকেয়ীকে ত্যাগ করেছিল, প্রহ্লাদ মহারাজ তার বাবা হিরণ্যকশিপুকে উপেক্ষা করেছিল । একজন ডাক্তার রোগীর শুশ্রুষা (অপারেশন) করার সময় রোগীর যন্ত্রনার কারন হয় কিন্তু তা রোগীর ভালর জন্যেই করে ।
৪) ধূর্ততাঃ – রাবন ছলচাতুরি করে সীতাদেবীকে পেতে চেয়েছিলেন পরিনামে সর্বশেষে তাঁকে কুকর্মের জন্যে ফলভোগ করতে হয়েছিল । লোভ এবং কাম আমাদেরকে শুধুমাত্র দম্ভ ও দ্বেষের পথে ধাবিত করে ।
৫) সর্বদা ন্যায়ের পথে থাকবেনঃ – জটায়ু সীতাদেবীকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের প্রাণ হারিয়েছিলেন কিন্তু তার জীবনের উদ্দেশ্য ন্যায়ের পথে থাকা এবং অশুভের বিপক্ষে যুদ্ধ করা ।
৬) ধৈর্য্য এবং দৃঢ়চরিত্রঃ - শবরীর গুরুদেব শবরীকে বললেন, ভগবান রামচন্দ্রের জন্য প্রতীক্ষা করতে । সে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে ভগবান রামচন্দ্রের জন্য স্থান পরিষ্কার করে এবং ফুল ও ফলমূল অর্পনের মাধ্যমে তার উদ্দীপনার পরিচয় দিয়েছিল । তাঁর গুরুর বাক্যের প্রতি প্রবল বিশ্বাস ছিল এবং সে ধৈর্যসহকারে দৃঢ়চিত্তে প্রতীক্ষা করেছিলেন ।
৭) ভক্তির পথে বাধাঃ – হনুমান সীতাদেবীকে খুজতে সমুদ্রের উপর লাফ দিয়ে লংকার পৌছানোর আগে তাকে বিভিন্ন রাক্ষস বাধা দিয়েছিল ।
প্রথমে ময়নাক(সুবর্ন পর্বত) – আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্বে আরাম/স্বাচ্ছন্দে পাওয়ার প্রলোভন/লোভ ।
এরপর শিমকা(ছায়াধারী রাক্ষস) - ভক্তির জন্য সংগ্রামের সময় মানুষ আমাদের তাড়না, সমালোচনা এবং ভুল বুঝার চেষ্টা করে ।
এরপর সুরশ(সর্প) – মানুষের উচ্চমাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের প্রগতি রোধ করার চেষ্টা । এটাই মনের ঈর্ষা ।
৮) দাম্ভিকতার ফলে শুভাকাঙ্গীদের চিনতে/বুঝতে পারি নাঃ – এই পৃথিবী আমাদের স্ব-সচেতনতার দর্পন স্বরূপ । রাবন ভাবত যে মন্দোদরী সীতার প্রতি বিদ্বেষী ছিলেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ভগবান রামের বিদ্বেষী ছিলেন । রাবন ভাবতে যে, বিভীষন ছিল তার অনুগত কিন্তু সে ছিল তার ভাই কুবেরের প্রতি অনুগত । যখন আমরা ভাবি যে আমি সব কিছু জানি, তার মানে আমরা কারো সু-পরামর্শ শুনতে ইচ্ছুক না । আধ্যাত্মিক প্রগতি অর্থ দীন্যতা এবং নম্রতা । যদি এতে ঘাটতি থাকে তবে রাবনের মত আমিই ভাল জানি ভেবে কারো পরামর্শ শুনতে পারব না ।
৯) অহংকার বা আসক্তি অজ্ঞতা ও ধ্বংশের পথে ধাবিত করেঃ – ধ্যায়তো বিষয়ান পুংস (গীতা ২/৬২-৬৩), এই শ্লোকের প্রতিটি ক্ষেত্র রাবনকে নিয়ে সাজানো হয়েছে । অজ্ঞতা – কুম্ভকর্ণ, ইন্দ্রজিৎ সহ সকল অদম্য যোদ্ধাদের মৃত্যুবরণের পরেও তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন নি । শেষে রামের হাতে রাবনের করুন মৃত্যু হয়েছে ।
১০) সদাচার – বিভীষন ভগবান রামচন্দ্রের কাছে আশ্রিত হতে এসেছিলেন এবং হনুমান ছাড়া সকল বানররা এর বিপক্ষে ছিল । বিভীষন অসৎ অনুষ্ঠাতাদের বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্যই তাদের দ্বারা ভ্রান্ত এবং তাড়িত হতে চেয়েছিলেন ।
১১) কখনো কখনো আসক্তি ফাঁদ তৈরি করে আমাদের ভোগাতে পারেঃ – মরিচী একটি সুবর্ণ হরিণের বেশ ধরেছিল যাকে পাওয়ার জন্য সীতাদেবীর প্রবল আসক্তি জন্মেছিল এবং এভাবেই তা সীতাদেবীকে ফাঁদে ফেলেছিল । আমাদের উচিত শাস্ত্রের দৃষ্টিতে বাস্তব বস্তুটি দর্শন করা । উদাহরনস্বরূপ – একটি মাকড়সার জালি উড়ন্ত কীটদের কাছে আকর্ষনীয় কিন্তু এটা একটা ফাঁদ ।
১২) গুরু বা জেষ্ঠদের পথ প্রদর্শন আবশ্যকঃ – অগস্ত্যা মুনি ভগবান রামকে একটি স্বর্গীয় ধনুক দিয়েছিল যেটা দিয়ে রাম রাবনের হৃদয় বেধন করে তাকে বধ করেছিল । গুরু বা জেষ্ঠ্যদের যে পথে চলে সেই পথে আমরা চললে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন উন্নত হবে আমরা সর্ব ক্ষেত্রে জয়ী হব । যা আমরা রামের থেকে শিক্ষা পাই ।
১৩) আধ্যাত্মিক জীবনে সতর্কতাঃ – যদি কেউ অমনযোগী বা অলস হয় তবে সে ভক্তি পরীক্ষায় হেরে যাবে । রাবন শিবের ভক্ত ছিল কিন্তু অজ্ঞতার ফলে সে সদাচারের পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছিল । যার ফলে রাবনের মৃত্যু হয় ।
১৪) সততা, আমরা ভগবানকে বোকা বানাতে পারি নাঃ – হনুমান ভগবান রামের সাথে সাক্ষাতের সময় ছদ্মবেশ ধারন করেছিল । ভগবান জানেন আমরা কারা । তাঁর কাছে পৌছানোর জন্য আমাদের সৎ হতে হবে । তাই ভগবান রাম চার মাস হনুমানের সাথে কথা বলেননি ।
১৫) বৈষ্ণব অপরাধঃ – সুগ্রীব লক্ষ্মনের চরনে বৈষ্ণব অপরাধ করেছিল তাই বালি আর সগ্রীবের যুদ্ধে সুগ্রীবকে অনেক মার খেতে হয়েছিল আর হেরে এসেছিল । তখন রামের আদেশে লক্ষ্মন একটা ফুলের মালা এনে সুগ্রীবের গলায় পরিয়ে দেয় আর সুগ্রীব লক্ষ্মনকে প্রণাম করে এর ফলে সুগ্রীবের বৈষ্ণব অপরাধ কেটে যায় এবং ২য় বার বালীর সাথে যুদ্ধে জয় হয় । তাই বৈষ্ণব অপরাধ খুব মারাত্মক, এটা আধ্যাত্মিক পথে বাধাস্বরূপ এবং আমাদের পারমার্থিক উন্নতি হয় না ।
১৬) হৃদয় থেকে ভগবানকে স্বাগত জানানোঃ – দিওয়ালী অনুষ্ঠানের সময় ভগবান রাম আলক নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে গিয়েছেলেন । যখন আমাদের চিত্ত পূর্ণ দীপ্ত থাকে তখনই আমরা আমাদের হৃদয়ে ভগবান রামকে খুঁজে পাব । যখন আমাদের প্রেম জেগে উঠে তখন এই প্রেমে সকল সৃষ্টির জন্য করুনা জেগে উঠে ।
রাধানাথ স্বামী মহারাজের লেকচার থেকে সংক্ষিপ্ত তুলে ধরা হয়েছে।।
Saturday, April 15, 2017
রামায়নের শিক্ষা
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment