আপনি রাম নাকি রাবন?
আপনাদের অনেকেই রামের ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত । আমরা আজকের এই দিনে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে
পরমেশ্বর ভগবানের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবতারের আগমন ঘটে যিনি রাম বা রামচন্দ্র নামে পরিচিত ছিল । বহু আগে রঘু বংশে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন ।
বর্তমান সময়ের মত সে সময়ও অনেক খারাপ নেতা ছিল । সেরকম একজন প্রভাবশালী নেতা ছিল রাক্ষসরাজ রাবন । ‘রাবন’ মানে হল যে তিনি এ সমগ্র বিশ্বকে প্রবল অত্যাচারের অতিষ্ট করেছিলেন । রাবন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের গৌন সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মার আশির্বাদ লাভ করেছিলেন । যে, তিনি কোন ভগবান কর্তৃক হত হবে না । রাবন মানব কর্তৃক হত হওয়ার কথা উল্লেখ করেননি । কেননা কোন মানব যে তার কিছু করতে পারবে সেটি তার ধারণাতেই ছিল না ।
বিশ্বব্রহ্মান্ডের ব্যবস্থাপকদের সাহায্য অনুসন্ধান
অতএব সমস্ত ব্যবস্থাপনার পেছনে রয়েছে দেবতারা এবং আরও উপরে রয়েছেন ভগবান । অনেক অনেক আগে ব্রহ্মা রাবনকে বর প্রদান করেছিলেন যে, তাকে দেবতারাও হত্যা করতে পারবে না । কিন্তু মানবের কথা চিন্তা করেনি । দেবতারা তখন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন, “অনুগ্রহ করে আপনি মানব রূপে আবির্ভূত হউন । যাতে করে রাবন কোন শক্তিশালী মানব কর্তৃক হত হন ।”
দেবতারা ব্রাহ্মনের কাছে রাবনের চুক্তি যাতে ভঙ্গ না হয় সেভাবেই প্রার্থনা করতে লাগলেন । তখন পরমেশ্বর ভগবান একজন যাথাযথ রাজা রাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন । রামায়নে এ নিয়ে অনেক কাহিনী বর্ণিত আছে । এক সময় অত্যাচারী রাবন রামের পত্নী, আদর্শ নারী, সীতাদেবীকে হরণ করেছিলেন । সীতাদেবীকে বলা হয় জগৎ মাতা । তখন ভগবান রামচন্দ্র রাবনকে হত্যা করে সীতাদেবীকে উদ্ধার করেন এবং সে সাথে এ বিশ্বকে রক্ষা করেন ।
রাবনের চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে অনেক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রগতিশীল শিক্ষিত ব্যক্তি এবং তার রাজ্য শ্রীলংকা ছিল খুবই সংবেদনশীল । এমনকি হনুমানও, রামের মহান ভক্ত । তিনিও লঙ্কার সংস্কৃতি স্তর দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন । লঙ্কার মনোরম শিল্প-সংস্কৃতি এবং পদ্য এবং খুব সুন্দর জনগণ আকর্ষনীয় ছিল । সবকিছু খুবই সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপিত ছিল । অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও ছিল সমৃদ্ধিশালী । লঙ্কার স্থাপত্যশৈলী কারুকাজও অভূতপূর্ব । প্রত্যেকেরই বাস করার জন্য এটি ছিল আদর্শ একটি স্থান ।
রাবনের একটি মাত্র ত্রুটি ছিল যেটি শ্রীল প্রভুপাদ বারবার উল্লেখ করেন । তার একটি ভুল হল তিনি নারায়ণ (রাম) ছাড়াই লক্ষ্মীদেবীকে (সীতাদেবী) উপভোগ করতে চেয়েছিলেন । লক্ষ্মীদেবী হলেন সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং তার পতি নারায়ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান ।
কৃষ্ণ পাঁচ হাজার বছর পূর্বে গুজরাটের দ্বারকা নগরীতে বাস করতেন । শ্রীলঙ্কা এবং দ্বারকার মধ্যে পার্থক্য হল দ্বারকা এবং অযোধ্যার লোকেরা নারায়ণের সাথে লক্ষ্মী দেবীকে গ্রহণ করেছিলেন । সেক্ষেত্রে রাবন ভেবেছিলেন “আমি নারায়ণের স্থানটি নেব, আমি নারায়ণকে ছাড়াই লক্ষ্মী দেবীকে গ্রহণ করব ।” এবং তাই তার সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাবনের বিনাশ হয়েছিল ।
আধুনিক রাবনেরা
আধুনিক সমাজ নারায়ণকে ছাড়াই লক্ষ্মী দেবীকে গ্রহণের অভিলাষী হয়ে রাবনের পক্ষ অবলম্বন করেছে । যেটি আধুনিক সমস্যাগুলোর কারণ । প্রত্যেকেই অবগত যে কিভাবে এই বিশ্ব কলুষিত হচ্ছে । পরিবেশগত প্রেক্ষাপট থেকে এই বিশ্ব কলুষিত হচ্ছে কেননা লোকদের মন এইরকম খারাপ ভাবনায় কলুষিত যে, “আমি লক্ষ্মীদেবীকে পেতে পারি ।”
“আমি নারায়ণকে ছাড়াই লক্ষ্মী দেবীকে (অর্থ সম্পদকে ইঙ্গিত করে) পেতে পারি” এ ধরনের মনোভাব ভ্রান্ত । যদি রামায়ন থেকে, রামের মহিমান্বিত কাহিনী থেকে কোন কিছু বোঝার থাকে তবে সেটি হল আমাদের কোনভাবেই নারায়ণকে ছাড়াই লক্ষ্মীদেবীকে গ্রহণের অভিলাষী হওয়া উচিত নয় ।
আমাদের বরং অযোধ্যাবাসীদের মত হওয়া উচিত । তারা রাবনের মত ছিল না । তারা জানত ভগবান রামচন্দ্র সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা । বৈদিক মতাদর্শ থেকে প্রথম নীতিটি সম্পর্কে জানা যায় যে, ভগবানই হলেন পরম নিয়ন্তা । উপনিষদের মধ্যে ঈশোপনিষদ হল একমাত্র উপনিষদ যেটি বৈদিক সংহিতা থেকে নেয়া হয়েছে । ঈশোপনিষদের সর্বপ্রথম উক্তি হল ‘ঈশাবাস্যং ইদং সর্বং’ এ বিশ্বব্রহ্মান্ডে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই ভগবানের সম্পত্তি এবং ভগবান কৃষ্ণ ভগবদগীতাতে বলেন, ‘সর্ব লোক মহেশ্বর’ আমিই হলাম সমস্ত ব্রহ্মান্ডের নিয়ন্ত্রণকর্তা । তিনি আরও বলেন, ‘অহম সর্বস্য প্রভবো মত্ত সর্বং প্রবর্ততে’ আমিই হলাম সবকিছুর উৎস, সবকিছু আমার থেকেই প্রবর্তিত ।
গীতার প্রতিটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ, কৃষ্ণ বলেন, ‘ইতি মত্ত্বা ভজন্তে মাম’ বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা আমার পূজা করে । রামায়নে এটিই হল প্রকৃত বিষয়, আমাদের উচিত রাবনের এ ত্রুটি পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা । তিনি রাম এবং নারায়ণকে অগ্রাহ্য করেছিলেন ।
অযোধ্যাবাসী হয়ে
যদি আপনি অযোধ্যা রাজ্য নিয়ে গবেষনা করেন দেখবেন যে, সেখানকার অধিবাসীরা অনুন্নত ছিল না । সেটি ছিল সবচেয়ে ঐশ্বর্যপূর্ণ শহর । এর মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়, কেউ রাবনের সেবক হওয়া মানে সে হেরে যাবে । বর্তমান এই সভ্যতায় সেরকম রামরাজ্যের মত ঐশ্বর্য্য পেতে হলে আমাদের নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে । নিজেদের বিবেচনা করতে হবে,
আমি নিজে কতটা অযোধ্যাবাসী হতে পেরেছি?
প্রকৃত রাম রাজ্য পেতে হলে একে অন্যকে রাম মহিমা সম্পর্কে বর্ণনা করতে হবে এবং ভগবানের একজন সেবক মনোভাব নিয়ে ভগবানের সেবা করতে হবে অযোধ্যাবাসীরা রামের জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিল । যখন তিনি বনবাসে যাচ্ছিলেন অযোধ্যাবাসীরাও সবাই তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন । তিনি তাদেরকে থামিয়েছিলেন । এর মানে এই নয় যে, তারা কিছু ঐশ্বর্য্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে রামের পূজা করেছিলেন । তারা রামের সন্তুষ্টির জন্য মুহুর্তের মধ্যে প্রয়োজন হলে সবকিছু পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন । তারা সীতাদেবী ও রামচন্দ্রের জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন । তাই যখন এ প্রকার উপলব্ধি সবাই অর্জন করবে তখন সমগ্র ঐশ্বর্য্যে পূর্ণ রাম রাজ্য আপনা-আপনিই এ বিশ্বে গড়ে উঠবে ।
Saturday, April 15, 2017
রাম নবমী
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment