Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, May 4, 2017

আপনি কি সনাতন! তাহলে জেনে রাখুনঃ প্রাত্যহিক পালনীয় কর্মপদ্ধতি

প্রাতঃকাল- সকালে ঘুম থেকে উঠবার চেষ্টা করুন। সনাতন শাস্ত্র মতে ব্রাহ্মমুহূর্ত শয্যা ত্যাগ করা উচিত,
কিন্তু এখনকার ব্যস্ততম সময়ে সেটা সম্ভব হয় না।
তাই চেষ্টা করুন সকাল ৫-৬ টার মধ্যে শয্যা ত্যাগ করতে। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে গুরুদেব ও ইষ্টদেবতাকে প্রণাম করুন। যাহাদের দীক্ষা হয়নি, তারা ইষ্টদেবতাকে প্রণাম করুন।
এরপর করজোড়ে মা বসুমতীকে প্রণাম করুন। কারণ বসুমতীর বুকে আমরা চরণ দিয়ে হাঁটা-চলা করি। তিনি সর্বংসহা - সব সহ্য করেন। বসুমতীকে প্রণাম করে পুরুষেরা ডান পা আগে ফেলুন, পরে বাম পা। মহিলারা বাম পা আগে ফেলুন, পরে ডান পা। শয্যায় বসে চা খাওয়া বর্জন করুন।
এরপর, দাঁত মাজন করে আধাঘণ্টা যোগ-ব্যায়াম করুন। যোগ করতে অসমর্থ হলে, বাড়ীর উঠোনে,
ছাদে বা নিকটে কোনো পার্ক বা মাঠে কিছুক্ষণ বেগে হাঁটুন। বাড়ীতে ছোট বাচ্চা থাকলে তাদেরকেও এই অভ্যাসে অভ্যস্ত করুন।
এরপর, বাড়ী ফিরে শৌচাদি ও স্নান করুন। স্নান সেরে
পূজো-অর্চনায় মনোনিবেশ করুন। ভারতবর্ষের দক্ষিণ ভারতের সনাতনীদের মধ্যে এই সু অভ্যাস খুব প্রকট।
তারা সকাল সকাল স্নান সেরে সকলে একসাথে মিলে ভগবানের আরতি-পূজো করে। তাই আপনিও সকাল সকাল পূজোর অভ্যাস করুন। ঘরে সকাল- সন্ধ্যে ধূপ-
ধূনো জালিয়ে আরতি করুন। ধূপের গন্ধে সকল অশুভ প্রভাব দূরীভূত হয়।
স্নান সেরে পূজো করতে না পারলেও তুলসী, বেল, বট, অশ্বত্থ, নিম বৃক্ষমূলে জল দিন। এই বৃক্ষগুলি পবিত্র, এগুলোতে সর্বদা দেবতারা বাস করেন। যারা দীক্ষিত, তারা এইসময় গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্র জপ করুন। অদীক্ষিত ভক্তগণ করতালি দিয়ে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করুন। এরপর, সূর্যদেবতাকে প্রণাম করুন ও জল অর্পণ করুন। তবে কেউ কেউ আছেন বাড়ীর কাজকর্ম সেরে দুপুরবেলায় পূজো অর্চনা করেন।
এটাও সঠিক।
যারা অফিস যাবেন তারা অফিস করেন। যারা গৃহে থাকবেন তারা দুপুর ১২-০২টার মধ্যে মধ্যাহ্ন ভোজন সমাপ্ত করুন। ভোজন গ্রহণ করার পূর্বে অন্নের থালাকে "জয় মাতা অন্নপূর্ণা" বলে নমস্কার করে তারপর ভোজন আরম্ভ করুন। কত মানুষই এই পৃথিবীতে অন্নহীন, মনে করুন আপনি যা পেয়োছেন তা মাতা অন্নপূর্ণার কৃপায়।
গোগ্রাসে আর আকণ্ঠ ভোজন গ্রহণ করবেন না। শাস্ত্রের বারণ আছে। যতটুকুতে ক্ষুধা নিবারণ হয়, ততটুকুই ভোজন করুন। ভোজনের কিছু অংশ পশু-পক্ষীদের দিবেন, যাতে তারাও অভুক্ত না থাকে।
দুপুরবেলা কোনো অতিথি আসলে তাকেও ভোজন করাবেন। দ্বিপ্রহরে সনাতন হিন্দু বাড়ী থেকে কেউ অভুক্ত অবস্থায় ফিরে গেলে গৃহের এবং গৃহীর অমঙ্গল হয় কারণ "অতিথি নারায়ণ"।
দিবানিদ্রা সনাতন ধর্মে পাপ। তাই দুপুরে না ঘুমানো চেষ্টা করুন। তবে অল্প শয়ন করা যেতে পারে।
সন্ধ্যা হলে সূর্যাস্তের পর পর আহার গ্রহণ করা সনাতন ধর্মে পাপ। এই সময় ভজন করলে সে রাক্ষস হয়। সূর্য অস্ত যাবার পর চুল আঁচড়ানো, ভোজন, শয়ন, মলিন বস্ত্র পরিধান ইত্যাদি সনাতন ধর্মে পাপ। সন্ধ্যার সময়ে মহিলারা তুলসীমঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলন করবেন। সমগ্র গৃহে এবং ঠাকুরঘরে ধূপ-ধূনো জ্বালাবেন। একত্রিত হয়ে সকলে ধর্মীর গ্রন্থাদি পাঠ, হরিনাম কীর্তন, এবং গুরুমন্ত্র জপ করবেন। গুরুবারে সন্ধ্যা কালে অবশ্যই নৈবদ্য এবং পাঁচালী পাঠ সহকারে মা লক্ষ্মীর পূজো করবেন।
বড়রা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনে সাথে সাথে বাড়ী ছোটদেরকেও ধর্মীয় শিক্ষা দেবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন, যেন অল্প বয়স থেকে তাদের মনে ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা এবং ভক্তির উন্মেষ ঘটে। ধর্মীয় শিক্ষায় অভ্যস্ত হলে কোনো সন্তানই বিপথগামী হতে পারে না।
কর্মক্ষেত্রে থেকে বাড়ী ফিরে পুরুষেরা পরিষ্কার বস্ত্র
( লুঙ্গি ব্যতীত) পরিধান করে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র জপ করুন। দীক্ষা না পেলে ভগবানের নাম কীর্তন বা গীতা পাঠ করবেন। লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় সনাতন ধর্মে ধর্মীয় কর্ম করা বারণ।
রাত্রে রুটি খাওয়ার অভ্যাস করুন। সনাতন ধর্মে দিবসে অন্ন, রাত্রে রুটি-লুচি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বল্প দুধ পান করুন রাতে খাওয়ার পর। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন নিরামিষ গ্রহণ করার ব্যবস্থা করুন। শাস্ত্র নিষিদ্ধ আহার গ্রহণ হতে বিরত থাকুন।
রাত ১০-১১ টার মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ঘুমোতে যাবার পূর্বে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তপূর্ণ প্রণাম নিবেদন করুন।
শয়নের পূর্বে যে বালিশে মাথা রাখেন, সে বালিশকে প্রণাম করুন। মাথায় দেয়া বালিশে ভগবান নারায়ণ অবস্থান করেন। সেই বালিশ কখনো কোলে বা পায়ে দেবেন না।
একাদশী, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি ব্রতপালন করুন। সেসব পবিত্র তিথিতে ফল এবং দুগ্ধ গ্রহণ করুন।
৫ বৎসরের উপরের সকলেই একাদশী ব্রত পালনযোগ্য।
বিধবা, সধবা সকল নারীই একাদশী পালন করতে পারবেন। ভগবানের সেবায় সকলে নিযুক্ত থাকার উপযুক্ত। ঈশ্বরের ইচ্ছায় মানুষের জন্ম হয়, আবার ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই মানুষের আয়ু পূর্ণ হয়। সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। যে ব্যক্তি শাস্ত্র মানতে চান বা বা শাস্ত্রকে উপেক্ষা করেন, সেই ব্যক্তির ইহলোক বা পরলোক কোথাও মুক্তি নেই। অতএব শাস্ত্র নির্দেশিত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন। সুখী হোন। অমরত্ব লাভ করুন।
জয় শ্রীকৃষ্ণ।
জয় শ্রী গীতা।
জয় শ্রী গুরুদেব।
জয় সত্য সনাতন।

No comments:

Post a Comment