তৎকালীন ভারতে একদিকে প্রাচীনপন্থিদের ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, জাতিভেদপ্রথা প্রভৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল; অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ভাবধারার নব্য শিক্ষিত উগ্রপন্থিদের বিদেশিয়ানা সমাজ জীবনে ডেকে এনেছিল বিপর্যয়। হিংসার আস্ফালন ও প্রবৃত্তির প্রাবল্যে গোটা সমাজ জীবনকে জরাগ্রস্ত ব্যাধির মতো হতাশ করে তুলেছিল।
অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও দরিদ্রতার নিষ্পেষণে জর্জরিত মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধ ভুলতে বসেছিল। ইহকাল খুইয়ে পরকাল ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে মাঝ দরিয়ার ডুবন্ত হতভাগার মতো মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। কে শোনাবে তাদের আশার বাণী। এমনি এক যুগসন্ধিক্ষণে প্রেমের ঠাকুর পতিত উদ্ধারকারী শ্রীশ্রী প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর আজ থেকে ১৪৬ বছর আগে এ ধরাধামে আবির্ভূত হন।
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ১২৭৮ সনের ১৬ বৈশাখ (১৮৭১ সালের ২৮ এপ্রিল) পবিত্র সীতা নবমী তিথিতে মুর্শিদাবাদ জেলার ডাহাপাড়া গ্রামে আবির্ভূত হন। পিতা দীননাথ ন্যায়রত্ন মুর্শিদাবাদ থেকে প্রভুকে সঙ্গে করে ফরিদপুর শহরের সনি্নকটে ব্রাহ্মণকান্দায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্রাহ্মণকান্দার অদূরেই গোয়ালচামটে অবস্থিত জগদ্বন্ধু সুন্দরের নিত্যলীলা ভূমি শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন। প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৫০ বছর। বাংলা ১৩২৮ সনের আশ্বিন মাসের ১ তারিখে তিনি ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে লীলা সংবরণ করেন।প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের দুটি দিক রয়েছে_ একটি সামাজিক; অপরটি আধ্যাত্মিক। মানবতাবাদী প্রভু সুন্দর সমাজের পিছিয়ে পড়া বুনা, বাগদি, ডোম এবং হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্ধারের জন্য বন্ধুরূপে তার প্রকাশ। তিনি ছিলেন মানবতার মূর্ত প্রতীক। ধর্মীয় পরিচয় তার ছিল বটে। তবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অধিকারবঞ্চিতদের মানুষের মর্যাদায় উন্নীত করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। তাই তিনি 'জগদ্বন্ধু'।শ্রীশ্রী প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর একাধারে তার ভক্তদের নিকট অবতার পুরুষ। অপরদিকে ছিলেন মানবতাবাদী ও মহান সমাজ সংস্কারক। প্রভু সুন্দরের আবির্ভাবের পূর্বে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এ ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে প্রেম ও ভালোবাসার বেদিমূলে মানুষকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। নিম্ন স্তরের দীনহীন অস্পৃশ্য চণ্ডালের প্রতি মহাপ্রভুর কৃপা ছিল সবচেয়ে বেশি।ফরিদপুরের উপকণ্ঠে হিন্দু নিম্ন শ্রেণীর বুনা, বাগদি, সাঁওতাল বসবাস করত। বুনা শ্রেণীর অধিকাংশ লোকই ছিল অশিক্ষিত ও কুসংস্কারপূর্ণ। আত্মকলহ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণে তাদের ব্যক্তিজীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের স্নেহের পরশে বুনা জাতির মধ্যে এক নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ছিলেন প্রচারবিমুখ। তিনি কোনো বক্তৃতার মাধ্যমে বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তার কোনো মহিমা প্রচার করেননি। অথচ তৎকালীন সময়ে ১৮৯১-৯২ খ্রিস্টাব্দে 'আবকারী' নামক পত্রিকায় প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর বুনা জাতিকে মনুষ্যত্ব পদবাচ্যে উন্নীত করেছেন মর্মে এক সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলে সারা ভারতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আজও বুনা জাতি মোহন্ত নামে পরিচিত।প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ফরিদপুরের বুনা-বাগদি, কলকাতার রামবাগানের ডোম পল্লীর অসভ্য নরনারী, সোনাগাছির বারবনিতাদের উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বুনা-বাগদিদের 'মোহন্ত' ও ডোম পল্লীবাসীদের 'ব্রজনন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমগ্র মানবগোষ্ঠী একটি জাতি। আর তার নাম নরজাতি। মানবজাতির ধর্ম মানবতা। আর মানবধর্মের মূল ভিত্তি হলো মনুষ্যত্ব লাভ। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর গোয়ালচামট শ্রীঅঙ্গনের একটি নির্জন কুটিরে মহাসত্য উদ্ঘাটনে বাংলা ১৩০৯ সন থেকে ১৩২৫ সন পর্যন্ত একাদিক্রমে দীর্ঘ ১৬ বছর ৮ মাস মহাধ্যানে গম্ভীরায় নিমগ্ন ছিলেন। জাতিভেদ, বর্ণভেদ আর ধর্মীয় হানাহানির কারণে মানুষের মধ্যে যে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হয়, তা কখনোই কোনো শুভফল বয়ে আনে না। ঠাকুর রামকৃষ্ণ জীবকে শিবজ্ঞানে সেবা করতে বলেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনন্ত লোকে ঈশ্বরকে খুঁজেছেন। আর প্রেমের ঠাকুর আধ্যাত্মিক জগতের আলোর দিশারি প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর মানুষের মাঝেই দেবত্ব প্রত্যক্ষ করেছেন।পরিশেষে এ শুভ আবির্ভাব উৎসবে আমাদের শপথ হোক_ জাতিভেদ ও বর্ণভেদ ভুলে দিয়ে ধর্মীয় সহিষুষ্ণতা বজায় রেখে আমরা সবাইকে মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তুলব। প্রভু সুন্দরের আদর্শ বাস্তবায়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নতুন পৃথিবী গড়ে তুলব। প্রভু আমাদের সহায় হোন।
Thursday, May 4, 2017
মানবকল্যাণে প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment