পারমার্থিক লাভের পথঃ
হিন্দুধর্মে পারমার্থিক লাভের বিভিন্ন পথ নির্দেশিত হয়েছে। পারমার্থিক লাভের বিভিন্ন মার্গ/পথের মধ্যে প্রধানত: তিনটি পথ/মার্গ বিশেষ ভাবে বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ যোগ্য বলে বিবেচিত। আমরা এ পারমার্থিক পথ/মার্গ গুলোর যেকোন একটি পথ অনুসরণ করে সাধন পথে অগ্রসর হলে ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ সম্ভব। এ পথ/মার্গ তিনটি হলঃ (ক) জ্ঞানমার্গ (খ) ভক্তিমার্গ এবং (গ) কর্মমার্গ
এ তিনটি মার্গ সম্পর্কে কিছুকথা নিম্নরূপঃ
(ক) জ্ঞানমার্গঃ জ্ঞানবাদীরা মনে করেন যে, জ্ঞানের পথই পরমার্থ বা মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ পথ, কর্মের পথ নয়। নামরূপাত্মক দৃশ্য প্রপঞ্চের অতীত যে নিত্য, শাশ্বত, অক্ষয়, অব্যয়, অনাদিতত্ত্ব, তাই পরমতত্ত্ব, তাই ব্রহ্ম। জ্ঞান যোগে তাকেই জানতে হবে। আত্মতত্ত্ব ও ব্রহ্মতত্ত্ব এক। জীব মায়ামুক্ত হলে এই একত্ব জ্ঞান লাভ করে। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভের তিনটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। শ্রবণ ব্রহ্মজ্ঞানের প্রথম সোপান। এর অর্থ গুরুর কাছ থেকে উপনিষদের বাণী শ্রবণ। দ্বিতীয় সোপান মনন এর অর্থ যৌক্তিক বিশ্লেষণের সাহায্যে এই উপদেশের তাৎপর্য উপলদ্ধি। তৃতীয় ও চরম সোপান নিদিধ্যাসন এর অর্থ বুদ্ধি অনুমোদিত তত্ত্বের বিরবচ্ছিন্ন ধ্যান। এরই মাধ্যমে পরমজ্ঞান লাভ হয়। এরই নাম প্রজ্ঞা। এরই মাধ্যমে তত্ত্বের প্রত্যক্ষ দর্শন ও সাক্ষাৎ উপলদ্ধি হয়।
(খ) ভক্তিমার্গঃ জ্ঞানমার্গ খুবই কঠিন। সে কারণে এই পথ সকলের জন্য নয়, সীমিত কয়েক জনের জন্য। নির্গুণ, নির্বিশেষ ব্রহ্ম, যাকে জগৎস্রষ্টা, প্রভু বা ঈশ্বর কোন ভাবেই বর্ণনা করা যায় না, তাকে ধারণা করা মানুষের পক্ষে কঠিন এবং তার সঙ্গে ভাবভক্তির সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ পরমতত্ত্বকে যতখানি হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করতে চায় ততখানি বৃদ্ধি দিয়ে অনুভব করতে চায় না। তাই এসে পড়ে সগুণ ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কল্পনা এবং ভক্তির মাধ্যমে ভক্তের ঈশ্বর এর সাক্ষাৎকারের কথা। উপাসনা ভক্তিমার্গের সাধনা, ভক্তিমার্গের প্রাণ। অনুরাগই ভক্তির স্বরূপ। ভক্তিশাস্ত্রে- নয় প্রকার ভক্তির সাধন উল্লিখিত আছে। যেমন- শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পদসেবা, অর্চনা, বন্দনা, দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন। ভগবানই একমাত্র আশ্রয়- একমাত্র অগ্রতির গতি- এই ভাব অবলম্বন করে ভগবানে আত্মসমর্পণই ভক্তিমার্গের একটি প্রধান ভাব।
(গ) কর্মমার্গঃ কর্মমার্গ পরমার্থ লাভের জন্য নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাগ, দ্বেষ ও মোহ মুক্ত হয়ে যে কর্ম সম্পাদন করা হয় তাই হল নিষ্কাম কর্ম। গীতায় নিষ্কাম কর্ম সাধনের কথা বলা হয়েছে। জীব অনাসক্তভাবে, কর্মের ফলাফলে উদাসীন হয়ে, নিঃদ্বন্দ্ব ও সমত্ববুদ্ধিযুক্ত হয়ে এবং ঈশ্বরে সর্ব-কর্মফল সমর্পণ করে যদি কর্ম করে তবে সেই কর্মে কোন বন্ধন হয় না এবং আর পুনর্জন্ম হয় না। এই নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে সাক্ষাৎ ঈশ্বর দর্শন হয়।
এই তিনটি মার্গের মধ্যে যেকোন একটি মার্গ অনুসরণ করলেই ঈশ্বর দর্শন সম্ভব এবং আমাদের মানব উদ্দেশ্যের সার্থকতা এখানেই।
Friday, May 5, 2017
হিন্দুধর্মে পারমার্থিক লাভের পথ/ মার্গ
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment