Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Sunday, March 5, 2017

বেদের অপব্যাখ্যা

'ন তস্য প্রতিমা অস্তি..'
আজকাল দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তি তাদের স্বার্থপর অপপ্রচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ক্যাবল টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একই ধরণের পুনরাবৃত্তি। তারা যজুর্বেদের একটা শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে এটি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, '' ভগবানের কোন আকার নেই।'' বৈদিক গ্রন্থাদিতে ভগবানের আকার আছে কি নেই সেটা পরের কথা, আগে বক্তা যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? কিছু বোকা লোক এসব উদ্ধৃতি শুনে খুব প্রভাবিত হয়, কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই মিলিয়ে দেখবেন তথ্যগুলো কতটা সত্য। যেমন ধরুন, বলা হচ্ছে যজুর্বেদ ৩২-৩ নং শ্লোক। যিনি উদ্ধৃতি দেবেন, আগে তাঁকে এটি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে তা কোন সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে। যজুর্বেদের দুটি অংশ- শুক্ল ও কৃষ্ণ। কৃষ্ণ যজুর্বেদের ৭টি খণ্ড আছে। প্রতি খণ্ডে সর্বোচ্চ আটটি করে অধ্যায় আছে। উদ্ধৃতি দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো। কোন অংশ, কোন খণ্ড বা কোন অধ্যায়ের শ্লোক তা স্পষ্টরূপে বলা। কেউ যদি গুলিয়ে ফেলে তাহলে বুঝতে হবে, তিনি মোটেই সম্পূর্ণ বেদ পাঠ করেননি বরং কারোর কাছ থেকে কিছু একটা শুনে মাথামুণ্ডহীনভাবে কথা সাজিয়ে বলেছে।
যেমন যজুর্বেদের একটা শ্লোকের মাঝখানের কিছু অংশ তুলে ধরে বলা হচ্ছে, 'ন তস্য প্রতিমা অস্তি' যার অর্থ তাঁর কোন প্রতিকৃতি নেই। মজার কথা এটাই যে আবার শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের একটি শ্লোকের একই ধরনের উদ্ধৃতি দেওয়া হচ্ছে, 'ন তস্য প্রতিমা অস্তি'। এ ক্ষেত্রে আবার অর্থ করা হচ্ছে, তাঁর সমান কেউ নেই। তাহলে দেখতে পাচ্ছি উদ্ধৃতি দাতারা একই উক্তির দুটি ভিন্ন অর্থ করেছেন। যার কোন মানেই হয় না। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এটা যে, প্রতিক্ষেত্রেই শ্লোকের একটি নগণ্য অংশ তুলে ধরা হচ্ছে। অথচ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের পুরো শ্লোকটিতে বলা হয়েছে, কেউ তাঁর আদি, অন্ত, মধ্য উপলব্ধি করতে পারে না। তিনি গ্রাহ্যাতীত বস্তু। তাঁর সমান কেউ নেই। তাঁর নাম অনন্ত মহিমা পূর্ণ। কিন্তু বক্তারা শধু মাঝের উক্তিটিই তুলে ধরেছেন। এবার দেখি শ্লোকটি কোথায় ও কীভাবে আছে।
শুক্লযজুর্বেদে ৪০টি অধ্যায় আছে। ৩২তম অধ্যায় উৎসর্গ করা হয়েছে বায়ু, সূর্য, চন্দ্র এবং অগ্নির উদ্দেশ্যে। সেখানে প্রশংসা করা হয়েছে বরুণ, বৃহঃস্পতি এবং ইন্দ্রের, সেখানে ভগবান এবং তার আকার নিয়ে কিছু বলা হয় নি।
সেখানকার ৩২/৩ শ্লোকটি দেখা যাক - ন তস্য প্রতিমা অস্তি যশ্য নাম মহদ্ যশঃ হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।
অর্থাৎ- এ পুরুষের তুলনা দেওয়ার কিছু নেই। তার মহৎ যশ আছে। 'হিরণ্যগর্ভ' ইত্যাদি, 'আমার প্রতি আসূয়া পরারণ হয়ো না', 'যা থেকে ইন্দ্র প্রভৃতি জাত, তিনি স্বরাট' ইত্যাদি বাক্যে সে পুরুষকে বলা হয়েছে।
শ্লোকটি প্রকৃত পক্ষে বলা হয়েছে দেব-দেবীর উৎস সম্পর্কে। ভগবানের সাথে(তাঁর সৃষ্ট) দেবদেবীদের কোন তুলনা দেওয়া চলে না। তিনি সৃষ্টির আদি থেকে আছেন, তার জন্ম নেই।
একজন কি করে পুরো শ্লোকটা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কিছু অংশ তুলে ধরে নিজেকে একজন ধর্মীয় শিক্ষাগুরু হিসেবে প্রচার করতে পারেন। এটা কি তার মূর্খতা, না তার চতুরতা এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের বিবেচক এবং বুদ্ধিমান পাঠকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
এখন ধরুন, যদি কোন নাস্তিক বলে যে, কোরানে বলা হয়েছে- কোন উপাস্য নেই। তখন কেউ নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবে, কোরানের কোথায় এমনটি বলা হয়েছে? সেই নাস্তিক যদি উদ্ধৃতি দেয়, সেখানে লেখা আছে, "লা ইলাহা- অর্থাৎ কোন উপাস্য নেই।" অথচ যদি সম্পূর্ণ অংশটুকু উদ্ধৃত করে, তবে পুরো অর্থ বদলে যায় এবং প্রকৃত অর্থ হয়, "আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই।" একজন ঈমানদার মুসলিম অবশ্যই এ ধরনের কদর্থের প্রতিবাদ করবেন এবং পুরো অধ্যায় ভাল করে পড়তে বলবেন।
ঠিক একইভাবে যখন কেউ নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বেদ বা উপনিষদের বিকৃত অর্থ প্রচার করে, তখন তাঁকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত নয়। বৈদিক সাহিত্যে বলা হয়েছে, ভগবান এক এবং অদ্বিতীয়। কিন্তু এটা বলা হয়নি যে, তাঁর আকার নেই। পুরাণের কথা বাদই দিলাম, বেদে আপনি অসংখ্যরূপের উদাহরণ পাবেন যে, ভগবানের রূপ আমাদের মতো চর্ম-মাংসময় নয়। কিন্তু তিনি কখনই নিরাকার নন। তাই আমরা আমাদের সত্যের পূজারী এবং বুদ্ধিমান পাঠকদের অনুরোধ করব তারা যেন ঐ সকল নিষ্পাপ বোকা লোকদেরকে এ ধরনের প্রবঞ্চনামূলক এবং বিদ্বেষ পরায়ণ উপস্থাপনা থেকে দূরে সরে আসতে সাহায্য করেন এবং সত্যকে প্রকাশিত করেন।

No comments:

Post a Comment