এবার ইষ্টনিষ্ঠা সম্বন্ধে আমাদেরকে আলোচনা করতে হইবে। যে ভক্ত হতে চায়, তাহার জানা উচিত, ‘যত মত তত পথ’—তাহার জানা উচিত, সনাতন বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় সেই একই ভগবানের মহিমার বিভিন্ন বিকাশমাত্র।
নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তি-
স্তত্রর্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্ মমাপি
দুর্দৈবমীদৃশামিহাজনি নানুরাগঃ।। —শিক্ষাষ্টকম্, শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
‘হে ভগবান্, লোকে তোমাকে কত বিভিন্ন নামে ডাকে—লোকে তোমাকে বিভিন্ন নামে যেন ভাগ করে ফেলেছে। কিন্তু প্রত্যেকটি নামেই তোমার পূর্ণশক্তি বর্তমান। যে উপাসক যে নামে উপাসনা করতে ভালবাসে, তাহার নিকট তুমি সেই নামের ভিতর দিয়েই প্রকাশিত হও। তোমার প্রতি অন্তরাত্মার ঐকান্তিক অনুরাগ থাকলে তোমাকে ডাকবার কোন নির্দিষ্ট কাল নাই। তোমার নিকট এত সহজে যাওয়া যায়, কিন্তু আমার দুর্দৈব—তোমার প্রতি অনুরাগ জন্মিল না।’
শুধু তাই নয়, ভক্ত যেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা জ্যোতির তনয়গণকে ঘৃণা না করেন; এমন কি তাঁদের সমালোচনা-বিষয়েও যেন বিশেষ সতর্ক থাকেন; তাঁদের নিন্দা শোনাও তাঁর উচিত নয়। অবশ্য এমন লোক অতি অল্পই আছেন, যাঁরা উদার, সহানুভূতিসম্পন্ন, অপরের গুণগ্রহণে সমর্থ, আবার গভীর ভগবৎ-প্রেমসম্পন্ন। সচরাচর দেখা যায়, উদারভাবাপন্ন সম্প্রদায়গুলি আধ্যাত্মিক গভীরতা হারিয়ে ফেলে। ধর্ম তাদের নিকট একপ্রকার রাজনীতিক-সামাজিক-ভাবাপন্ন সমিতির কার্যে পরিণত হয়। আবার খুব সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিগণের নিজ আদর্শের প্রতি খুব ভালবাসা আছে বটে, কিন্তু তাদের এই ভালবাসার প্রতিটি বিন্দু অপর সকল সম্প্রদায়ের—যেগুলির মতের সাথে তাদের এতটুকুও পার্থক্য আছে—সেগুলির উপর ঘৃণা হতে সংগৃহীত হয়েছে। ঈশ্বরেচ্ছায় জগৎ যদি পরম উদার অথচ গভীরপ্রেমসম্পন্ন জনগণে পূর্ণ হয়ে যেত যাই, বড় ভাল হোত! কিন্তু এরূপ মহাত্মার সংখ্যা অতি বিরল। তথাপি আমরা জানি, জগতের অনেককে এই আদর্শে শিক্ষিত করা সম্ভব; আর ইহার উপায় এই ‘ইষ্টনিষ্ঠা’।
স্বামী বিবেকানন্দের বানী থেকে নেওয়া
No comments:
Post a Comment