বছরের বার মাসের নাম যেমন রাখা হয়েছে নক্ষত্র মন্ডলে সূর্য্যের অবস্হান নির্নয় করে। ঠিক তেমনি সপ্তাহের দিনগুলি অর্থাৎ ০৭(সাত)টি দিনের নাম রাখা হয়েছে আমাদের সৌরমন্ডলে একমাত্র নক্ষত্রের নামে ০১দিন, পাচটি গ্রহের নামে ৫দিন ও একটি উপগ্রহের নামে ০১দিন। যেগুলি বিবরণ সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
০১) বরিবারঃ – সূর্যের অপর নাম রবি – (আমাদের সূর্য মন্ডলের গ্রহগুলো একমাত্র অধিপতি নক্ষত্র সূর্য, অর্থাৎ যার থেকে সৌর মন্ডল সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দুরা “সূর্য”কে দেবতা জ্ঞানে পূজো দিয়ে থাকেন। যে কোন মাঙ্গলিক কায্যে কিংবা যে কোন দেবতার পূজোর সময় পঞ্চদেবতার পুজো দিতে হয়। হিন্দুদের এই পঞ্চদেবতা তথা পাঁচজন দেবতার অন্যতম একজন হলো সূর্যদেব। হিন্দুধর্ম বিশ্বাস দৃঢভাবে বিশ্বাস করে আমাদের প্রিয় গ্রহ টিকে আছে সূর্যের অনুগ্রহে। অবশ্য আধুনিক বিজ্ঞানও তা অশ্বীকার করে না যে পৃথিবীর সমগ্র জ্বালানী শক্তির প্রধানতম উৎস এই সূর্য। হিন্দুধর্মাবলম্বীর ও অমুসিলম বিশ্বে বরিবারকে সপ্তাহের প্রথম দিন হিসাবে ধরা হয়।
০২) সোমবারঃ – চন্দ্রে অপর নাম সোম। সূর্য মন্ডলে পৃথিবী নামক গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ হলো চন্দ্র। পৃথিবীতে চন্দ্রের প্রভাব দৃশ্যমান। জোয়ার-ভাটাই শুধু নয়, পৃথিবী নাম গ্রহের জীব জগতের উপর চন্দ্রে প্রভাব অনেক বেশী মাত্রায় পড়ে। হিন্দু পরিবারের সন্তান জন্ম লাভের সময় ঠিকুজি প্রস্তুত করার সময় চন্দ্রে প্রভাবের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু জ্যোতিশাস্ত্র বিদ গনের মতে চন্দ্রের প্রভাব বেশী হলেও একে ক্ষতিকর হিসাবে বিবেচনা করে না।
০৩) মঙ্গলবারঃ – মঙ্গল গ্রহের নামের সপ্তাহের একটি দিন রাখা হয়েছে। মঙ্গল সৌরমন্ডলের শক্তিশালী গ্রহ, পৃথিবীর ভুমন্ডলের সাথে এর যথেষ্ট মিল রয়েছে। পৃথিবীর উপর এই গ্রহটির প্রভাব রয়েছে।
০৪) বুধবারঃ –বুধ গ্রহের নামের সপ্তাহের একটি দিনের নাম করন করা হয়েছে। বুধ গ্রহের ইংরেজী নাম Mercury বা মার্কিউরী। বুধ হচ্ছে সূর্যের নিকটতম গ্রহ। সূর্যের খুব কাছের এবং সেই সাথে সৌরজগতের সবচাইতে ক্ষুদ্রতম গ্রহ হচ্ছে এই বুধ গ্রহ। এই কারণে বুধের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও অনেক কম, পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
০৫) বৃহস্পতিবারঃ – সৌর মন্ডলের সর্বাপেক্ষা বড় গ্রহ বৃহস্পতির নামে সপ্তাহের পঞ্চম দিনের নামকরণ করা হয়েছে। এটি সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ হচ্চছ আমার বৃহস্পতি। সূর্যের সব কটি গ্রহের ভর সমস্টির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ভরই হচ্ছে বৃহস্পতির। আয়তনের কারনে বৃহস্পতিকে গ্রহরাজ বলা হয়। হিন্দু পুরানে বৃহস্পতিকে দেবগুরু তথা সকল শুভকর্মের ও শুভ ভাবনার গুরু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বৃহস্পতি গ্রহকে ইংরেজীতে বলা হয় Jupiter (জুপিটার)। রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল পৌরাণিক চরিত্র জুপিচারের নামে। জুপিটার রোমান পুরাণের প্রধান দেবতা। রোমান ভাষায় জুপিটার শব্দের অর্থ হচ্ছে “আকাশের পিতা।”
০৬) শুক্রবারঃ – ‘শুক্র গ্রহ’ (Venus) সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। কারণ সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে হিসেব করলে সূর্যের একেবারে কাছের গ্রহ হচ্ছে বুধ গ্রহ, আর এর পরই শুক্র গ্রহের অবস্থান। বুধ আর পৃথিবীর মতই এই গ্রহটিও কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি বলে একে পার্থিব গ্রহ বলা হয়। পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান, আকার আকৃতি, মুক্তি বেগ এবং অন্যান্য মহাযাগতিক আচার আচরণে অনেক মিল রয়েছে বলে শুক্রকে পৃথিবীর বোন গ্রহ বা ‘Sister Planet’ বলে। এটি এমন একটি গ্রহ যাকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন তাঁরা নামে ডাকা হয়। ভোর রাতের আকাশে শুকতারা আর সন্ধ্যার আকাশের সন্ধ্যাতারা একই বস্তু, যা সত্যিকার অর্থে একটি গ্রহ, আর এই গ্রহটিই হচ্ছে শুক্রগ্রহ। অনেক যায়গায় এই গ্রহটি যখন ভোরের আকাশে উদিত হয় তখন লুসিফার বা শয়তান নামেও ডাকা হয়ে থাকে। অন্যদিকে হিন্দু পুরানে শুক্রকে দৈতগুরু হিসাবে দেখানো হয়েছে। সুতরাং শুক্রগ্রহ তথা দৈত্যগুরুর নামে সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনের নামকরণ করা হয়েছে।
০৭) শনিবারঃ – শনি গ্রহদেবতা হিসেবে হিন্দু পুরানে ও শাস্ত্রে সবিশেষ পরিচিত। হিন্দু সম্প্রদানের নবজাতকের ঠিকুজি তৈরীর করার সময় জ্যোতিষশাস্ত্রে জন্ম ছকে এর অবস্থান বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। শনি দ্বাদশে, জন্মরাশিতে ও দ্বিতীয়ে অবস্থানকালে সাড়ে সাত বছর মানুষকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় শনি গ্রহ রূপে গুণে অসামান্য। তার কারণ, এই গ্রহকে ঘিরে থাকা চাকতিগুলি; যাকে আমরা বলি ‘শনির বলয়’। তুষারকণা, খুচরো পাথর আর ধূলিকণায় সৃষ্ট মোট নয়টি পূর্ণ ও তিনটি অর্ধবলয় শনিকে সর্বদা ঘিরে থাকে। শনি দৈত্যাকার গ্রহ; এর গড় ব্যাস পৃথিবীর তুলনায় নয় গুণ বড়। এর অভ্যন্তরভাগে আছে লোহা, নিকেল এবং সিলিকন ও অক্সিজেন মিশ্রিত পাথর। তার উপর যথাক্রমে একটি গভীর ধাতব হাইড্রোজেন স্তর, একটি তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়াম স্তর এবং সবশেষে বাইরে একটি গ্যাসীয় স্তরের আস্তরণ।শনি গ্রহের রং হালকা হলুদ। এর কারণ শনির বায়ুমণ্ডলের উচ্চবর্তী স্তরে অবস্থিত অ্যামোনিয়া ক্রিস্টাল। শনির ধাতব হাইড্রোজেন স্তরে প্রবাহিত হয় এক ধরনের বিদ্যুত প্রবাহ। এই বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকেই শনির গ্রহীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের উদ্ভব ঘটেছে।
হিন্দুদের পুরানে শনিকে দেবতা এবং একে নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ্য আছে। শনি গ্রহের নাম, এবং বিচিত্র গ্রহ। পুরানে উল্লেখ্য শনিদেবের দৃষ্টি যে দিকে পড়ে সেটি ভস্ম হয়ে যায়। সেই শনিগ্রহের নামে সপ্তাহের শেষ দিন তথা সপ্তম দিনের নামকরণ করা হয়েছে। সংকলনেঃ অরুন চন্দ্র মজুমদার।
No comments:
Post a Comment