অধিকাংশ লোকেরই এই সন্দেহ । সন্দেহ হওয়াই উচিত । কর্ম্মশূণ্য জ্ঞান আলোচনায় যদি ইহা না হয়, তবে এই যুগাধিপতির দোষ পড়িবে । সংযম অভ্যাস না করিলে, যোগ ধারণা করিতে না পারিলে, তপস্যা না করিলে- এক কথায় তন্ময়তা, একাগ্রতা এবং চিত্তশুদ্ধি আচরণ না করিলে, দিব্যচক্ষু, জীবন্মুক্তি, অবতার, অষ্টসিদ্ধি ইত্যাদিতে বিশ্বাস স্থাপন করা অসম্ভব ।
শ্রীকৃষ্ণ অবতার কি না ? এখানে অবতার সম্বন্ধে গীতার মত যাহা, আমরা তাহাই বলিব ।
গীতার চরিত্র তিনটিঃ- (১) সঞ্জয়, (২) অর্জ্জুন, (৩) শ্রীকৃষ্ণ ।
শ্রীকৃষ্ণ সর্ব্বত্রই আপনাকে পরমাত্মা, পরমেশ্বর, ভগবান্, আত্মা ইত্যাদি নামে অভিহিত করিতেছেন, ইহা আমরা দেখিয়াছি । এখানে দেখাইতেছি সঞ্জয় ও অর্জ্জুন যে নামে শ্রীকৃষ্ণকে ডাকতেছেন, তদ্ভিন্ন অন্য কোণ নামে মানুষ ভগবানকে ডাকে না । সঞ্জয় বলিতেছেন, হৃষীকেশ(১/১৫, ২০/২৪) ২/৯,১০, মধুসুদন (২/১), ভগবান্(সর্ব্বত্র) গোবিন্দ (২৯) হরি(১১/৯;১৮/৭৪), কেশব(১১/৩৫;১৮/৭৬),কৃষ্ণ(১১/৩৫;১৮/৭৫,৭৮), মাধব(১/১৪), যোগেশ্বর(১১/৯;১৮/৭৫,৭৮), বাসুদেব(১১/৫০,১৮/৭৪), আর অর্জ্জুন ? ইনি শ্রীকৃষ্ণের সখা ; সখা হইয়াও বলিতেন,- অচ্যুত(১/২), কেশব(১/৩৩), মধুসুদন গোবিন্দ, জনার্দ্দন(১/৩৫), মাধব, বার্ষ্ণেয়, পুরুষোত্তম, পরব্রক্ষ(১১/২২), পরম্পবিত্র, শাশ্বত, পুরুষ, স্ব-প্রকাশ, আদিদেব, অজ,সর্ব্বব্যাপক, বিভু, ভগবান (১০/১৪), ভুতভাবন, ভুতেশ, দেবদেব, জগৎপতি(১০/১৫) ইত্যাদি । শ্রীভগবানের এই সমস্ত নামেই বিশ্বাস করিয়া লোকে সংসারসাগর হইতে উত্তীর্ণ হইতে চেষ্টা করে । শ্রীভগবান্ যে জ্ঞানের উপদেশ করিতেছেন, শ্রীকৃষ্ণ যে তত্ত্ব প্রকাশ করিতেছে, তাহা কোন মানুষের প্রকাশ করিবার শক্তি নাই । যে বিশ্বরুপ তিনি ভক্তকে দেখাইতেছেন, তাহা কোন মানুষেই দেখাইতে পারে না । তিনি আপন মহিমা আপনি প্রকাশ করিয়া বলিতেছেন- আমিই ভগবান । তাঁহার ভক্ত তাঁহাকে শত নামে ডাকিতেছে, শতবার পরমাত্মা, বিভু, বলিতেছে, ইহা অপেক্ষা আর অধিক প্রমাণ কি আছে, যদ্দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব প্রমাণ করা যাইবে ? যাহারা শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান্ বলিতে পারিল না, ভগবান্ তাহাদের প্রকৃতি আলোচনা করিয়াও বলিতেছেন, তাহাদের গতি কি । ইহাতেও যদি লোকের বিশ্বাস না হয়, তবে তাহাদের যাহা অভিরুচি, তাহাই করুক ; ইহাতে ভগবানেরই বা কি ক্ষতি, আর তাঁহার ভক্তেরই বা কি অনিষ্ট হইতে পারে ? অল্পবিশ্বাসী মনুষ্য এই সমস্ত সংশয়ের কথা শুনিয়া অল্প বিশ্বাস্তুকুও পরিত্যাগ-করিয়া অধঃপাতে না য়ায়, এই জন্য লোককে সাবধান করা স্বভাবসিদ্ধ । লোকে অবতার বিশ্বাস করিতে চায় না, কিন্তু আর্য্য-ঋষিগণ অবতার স্বীকার করিতেন । তাঁহারা সাধারণ মানুষের সহিত অবতারের এই পার্থক্য দেখাইতেছেন যে, অবতার আত্মজ্ঞান লইয়া অবতীর্ণ হয়েন, সাধারণ মানুষ অজ্ঞান লইয়াই জন্মে । অবতারের জন্ম ও কর্ম্ম কতক অংশে সাধারণ মনুষ্য অজ্ঞান লইয়াই জন্মে । অবতারের জন্ম ও কর্ম্ম কতক অংশে সাধারণ মনুষের মত, কতক অংশে অলৌকিক । এই অলৌকিকত্ত্ব আত্মজ্ঞানীর পক্ষে অসম্ভব নহে । সিদ্ধ পুরুষের কার্য্যকলাপেও অনেক অলৌকিকত্ব দেখা যায়, আর ভগবানের কথা ত স্বতন্ত্র । অষ্টসিদ্ধি যাঁহার করায়ত্ত, যিনি যোগেশ্বর, তিনি ইচ্ছা করিলে না দেখাইতে পারেন কি ? মনুষ্য নিয়মে বাধ্য, কিন্তু ভগবন্ কোন নিয়মে বদ্ধ নহেন । জড়ই নিয়ম লঙ্খন করিতে পারে না, কিন্তু যিনি স্বাধীন তিনি নিয়মের অধীন কিরুপে হইবেন ? তিনি আপন নিয়ম মতে জগৎ চালাইতেছেন সত্য, কিন্তু তাঁহার প্রয়োজন পড়িলে তিনিও কি আপন নিয়ম আপনি অতিক্রম করিতে পারেন না ? যিনি স্বাধীন, তাঁহার এ শক্তি থাকিবে না কেন ? নতুবা স্বাধীনতার ত কোন অর্থ নাই । অবতারের কার্য্যেও ত ইহার প্রমাণ পাওয়া যায় । অগ্নি সকলকে দগ্ধ করে, কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় ভক্ত প্রহলাদ্কে দগ্ধ করে নাই । অগ্নির দাহিকা শক্তির কার্য্য না হওয়া, প্রকৃতির নিয়মের বিপরীত । কিন্তু ভগবানের পক্ষে ইহা অসম্ভব নহে । ভগবানের স্বাধীন ইচ্ছা । তিনি সর্ব্বকালে এক্রুপ আচরণ করেন কিনা, তাহা কে বলিবে ? তিনি কখন মৎস, কখন কূর্ম্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কিরুপে অবতীর্ণ হইয়াছেন ও হইবেন- দুর্ব্বল অবিশ্বাসী অজ্ঞানান্ধ মানবের হৃদয় যাহা বিশ্বাস করিতে অসমর্থ, তাহাই যে অসম্ভব, তাহাই যে প্রক্ষিপ্ত বা কাল্পনিক, ইহা বলিবার অধিকার কাহারও নাই ।
Thursday, April 20, 2017
শ্রীকৃষ্ণ কি ভগবান? অবতার-বাদ কতদুর সম্ভব? অণিমাদি অষ্টসিদ্ধি কাহারও কি হইয়াছিল?
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment