Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, April 20, 2017

সোমরস কি মদ? এটি এত জনপ্রিয় পানীয় হলে তা হারিয়ে গেলো কীভাবে?

সোমলতা থেকে সোমরস তৈরি হতো। দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সোমরস অগ্নিতে আহুতি দেয়া হতো। ঋগ্বেদের নবম মণ্ডলে সোম দেবতা নামে সোমের স্তুতি করা হয়েছে। বলা হয় বহুকাল আগেই সোমলতা বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু তা কতটা ঠিক। প্রশ্ন তো উঠবেই এত জনপ্রিয় পানীয় সত্যি কি হারিয়ে গেছে?
লতা অর্থে শুধু পেচিয়ে গাছে জড়ানো উদ্ভিদ নয় বরং শীর্ণ কাণ্ড বিশিষ্ট উদ্ভিদও হতে পারে। বৈদিক যুগে হয়তো তেমনটাই বোঝাত। কেননা বেদে সোমলতার যে গাঠনিক বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার সাথে কাণ্ডবিশিষ্ট উদ্ধিদের মিল পাওয়া যায়।
যেমন:
১. সোমলতার পাতা বিচিত্রকুশযুক্ত। ঋগ্বেদ, ১/২৩/১৩,১৪

২. হে সোম! তোমার যে দুটি পতো বক্রভাবে অবস্থিত ছিল তদ্বারা তোমার সর্বাপেক্ষা চমকার শোভা হয়েছিল। ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/২

৩. হে সোম তোমার চতুর্দিকে লতা অবস্থায় যে সকল পত্র বিদ্যমান ছিল তদ্বারা তুমি সকল ঋতুতে সুশোভিত ছিলে। ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/৩

৪. এ সোম শৃঙ্গ যূথপতি বৃষভের ন্যায় তীক্ষ্ম। ঋগ্বেদ, ৯/১৫/৪

উপরের বর্ণনাতে বর্তমানের ইক্ষু তথা আখ গাছের সাথে হুবহু মিলে যায়। আখের দুটি পাতা বাকা, আখ একবর্ষজীবী ৩নং মন্ত্রে তা বলা হয়েছে। আবার এর পাতা ষাড়ের শিং এর ন্যায় ৪নং এ বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইক্ষু যেভাবে কান্ডের মাধ্যমে জন্মায় সোমের ক্ষেত্রেও তাই বলা হয়েছে।

হে সোম তোমার প্রধান উৎপত্তিস্থান স্বর্গের মধ্যে বিদ্যমান আছে, সেখান থেকে গ্রহণপূর্বক পৃথিবীর উন্নত প্রদেশে তোমার অবয়বগুলি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, সে স্থানে তারা বৃক্ষরূপে জন্ম নিল। ঋগ্বেদ, ৯/৭৯/৪

আবার আখ চোলাই করে গুড় তৈরির পদ্ধতিটি বর্তমানে যেমন ঠিক একই পদ্ধতির কথা ঋগ্বেদের ১ ও ৯ মণ্ডলের যথাক্রমে ২৮ ও ৬৬ সূক্তে উল্লেখ করা হয়েছে সোমরসের ক্ষেত্রে।

অন্যদিকে সোমরসের রঙের বর্ণনা রয়েছে বেদে।

এর ধারা হরিৎবর্ণ। ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/২৬

শুভ্রবর্ণ সোমরসগুলি ক্ষরিত হতে হতে এবং নানাবিধ স্তুতিবাক্য গ্রহণ করতে করতে উৎপাদিত হলেন। ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/২৫

লেহিতবর্ণ সোমরসকে নিষ্পীড়নের দ্বারা প্রস্তুত করা হল। ঋগ্বেদ, ৯/৮২/১

ইক্ষুরস লোহিত, পিঙ্গল কিংবা রস নিষ্কাশনের পর শুভ্র বর্ণ ধারণ করে। একারণে বলা যেতে পারে সোম হয়তো আখেরই অন্য নাম। পরবর্তী সময়ে এর নেশা জাতীয় যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে আখের আড়ালে সোম নামটি চাপা পড়েছে।

কিন্তু যারা সোমকে মদ বলে মনে করেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে হিন্দুধর্মে মদ বা যেকোন নেশাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নকী রেবন্তঃ সখ্যায়া বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ।
য়দা কুয়োসি নদানু সমূহস্যাদিত পিতেব হূয়সে।। ঋগ্বেদ, ৮/২১/১৪

অনুবাদ:
তোমার নেশাকারী সঙ্গী অথবা বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যজ্য।

সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মাদ্ ব্রাহ্মণরাজন্যৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ।। মনুসংহিতা, ১১/৯৪

অনুবাদ:
সুরা হল অন্নের মলস্বরূপ, পাপরূপ তাই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যই অবশ্য বর্জনীয়।

সোমকে মদ হিসেবে ব্যাপক প্রচলনের দরুণ হয়তো আখের সমার্থক শব্দ সোম হারিয়ে গেছে। আজকের আখই হয়তো বেদের সোম জাতীয় উদ্ভিদ।

No comments:

Post a Comment