Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Thursday, April 20, 2017

যজ্ঞ কি ও কত প্রকার ? ঋষি কাকে বলব ? যজ্ঞে কি আহুতি দিতে হয় ? অধ্যাত্মযজ্ঞে ঘিয়ের কি আদৌ প্রয়োজন আছে ?


‘যজ’ ধাতু, ‘ঞ’ প্রত্যয় করে যজ্ঞ শব্দ নিষ্পন্ন হয় এর অর্থ হল কর্ম। মানুষ যা কিছু কর্ম করে তাকে আমরা যজ্ঞ বলতে পারি।
...... ......
যজ্ঞ সাধারণত চার প্রকারেরঃ
১) ভূত যজ্ঞঃ প্রকাশমান বিশ্বের যে কোন সত্তার সেবা করার নাম ভূতযজ্ঞ । যেমন, বৃক্ষে জল সিঞ্চন করা । পশুদের সেবা করা, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা তথা জনকল্যাণমূলক কার্য মাত্রই ভূতযজ্ঞ । সংস্কৃত ভাষায় ভূত শব্দের অর্থ যার উৎপত্তি হয়েছিল।
২)নৃযজ্ঞঃ মানুষের কল্যাণমূলক সমস্ত কাজই নৃযজ্ঞ । বস্তুতঃ নৃযজ্ঞ ভূতযজ্ঞেরই একটি অংশমাত্র, কারণ মানুষও তো সৃষ্ট জীব ।
৩)পিতৃযজ্ঞঃ পূর্বপুরুষদের ও ঋষিদের স্মরণ করাকে পিতৃযজ্ঞ বলে। মানুষ যতক্ষণ দেহধারণ করে রয়েছে ততক্ষণ সে পূর্বপুরুষদের কাছে ঋণী হয়ে রয়েছে। যতক্ষণ সে ঋষিদের তপস্যালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে নিজের ও সমাজের স্বাচ্ছন্দ্যমূলক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হচ্ছে , ততক্ষণ সে ঋষিদের কাছে ঋণী হয়ে রয়েছে।
ঋষি বলি তাঁদের যাঁরা নূতন নূতন বিষয় উদ্ভাবন করে মানব সমাজকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন ও করছেন । যিনি রেলগাড়ী আবিষ্কার করেছেন , তাঁর সাধনার ফল কি তোমরা ভোগ করছো না ? যাঁর সাধনার ফল তুমি ভোগ করছো , তাঁর প্রতি কি শ্রদ্ধা রাখা উচিত নয় ? তাঁদের আবিষ্কারের উপর আমরা বাকি গবেষণা করছি । তাঁদের মনীষার ধারাবাহিকতায় বর্ত্তমানের মনীষা উদ্ধোধিত হচ্ছে, তাই নয় কি ?
৪)অধ্যাত্মযজ্ঞঃ অধ্যাত্মযজ্ঞ সম্পূর্ণভাবেই আভ্যন্তরীণ । অধ্যাত্মযজ্ঞের প্রেরণা আসে আত্মা থেকে আর ঐ প্রেরণা মানসিক স্তরে কর্মাণ্বিত হয়, (অর্থাৎ সাধনা করে মন ) আবার ঐ কর্মের অবলুপ্তিও আত্মিক স্তরেই হয়, অর্থাৎ মানস সাধনার পরিশ্রান্তি শেষ স্থিতি লাভ করে আত্মিক প্রশান্তিতে। অধ্যাত্মযজ্ঞ নিবৃত্তিমূলক সাধনা, আর বাকি তিনটে – ভূত, নৃ ও পিতৃযজ্ঞ – প্রবৃত্তি-নিবৃত্তিমূলক।
ভূত, নৃ ও পিতৃযজ্ঞে ......সেব্য নারায়ণ – এরকম একটি ভাব মেনে নিতেই হবে। যদি এই ভাবের প্রয়োগ না কর, তাহলে তার পরিণাম কী হবে ? না, যজ্ঞই তোমার ব্যর্থ হয়ে যাবে।
..........................................................................................
যজ্ঞের পূর্ণতা আহুতিতে । কর্ম আর যজ্ঞ একই জিনিস, আর এই চতুর্বিদ কর্মের পূর্ণতা প্রিয়তম বস্তুর আহুতিতে অর্থাৎ আত্মাহুতিতে।
রাম যজ্ঞের অর্থ রামেতে নিজেকে আহুতি দেওয়া – রামের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা; বিষ্ণু যজ্ঞ অর্থও ঠিক তাই। বিষ্ণু শব্দের অর্থ ব্যাপনশীল । তাই বিষ্ণু যজ্ঞের পূর্ণতা সেই বিরাট সত্তায় নিজেকে লয় করে দেওয়া । যারা যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেয় তারা ভ্রান্ত। তারা ভাবে , অগ্নিতে ঘৃতাহুতির ফলে বর্ষণ হবে; তারা আজও অন্ধ কুসংস্কারের যুগে পড়ে রয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী নিলে আমরা দেখব যে আগুনে ঘি দিলে পরে ঘি জ্বলে যায়, আর অদগ্ধ অঙ্গারকণা ধোঁয়া হয়ে উপরে উঠে যায়। সবাই জানে , ঘি জিনিসটা হচ্ছে মূলতঃ উদজান (Hydrogen) ও অঙ্গারের(Carbon) রাসায়নিক পরিণতি । ঘি জ্বালালে যেটুকু জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়, তা অতি সামান্য; তাই হাজার মণ ঘি পুড়িয়েও কতটুকু মেঘ তৈরি হতে পারে ! এটা ঘিয়ের সম্পূর্ণ অপপ্রয়োগ। ঘিয়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হলে তা দুর্বলদের খাওয়ানো দরকার , যাতে তাদের স্বাস্থ্যোদ্ধার হয় । বৃষ্টিপাত করাতে হলে ভূতযজ্ঞ করো । বৈজ্ঞানিক অনুশীলন তো ভূতযজ্ঞেরই অন্তর্গত। কৃত্রিম মেঘ তৈরি করো ও যেখানে বর্ষার প্রয়োজন, সেখানে কাজে লাগাও ।
সাধক! তুমি রাম অর্থাৎ পরমাত্মায় নিজেকে অর্থাৎ “আমি বোধ” – কে আহুতি দিয়ে সার্থক করো তোমার রামযজ্ঞ । আমিত্বের অভিমান সর্বব্যাপক পরমাত্মায় মিলিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ করো তোমার মহা বিষ্ণুযজ্ঞ । এজন্য তোমার দ্বারে দ্বারে অর্থ ভিক্ষা করার প্রয়োজন নেই । অধ্যাত্মযজ্ঞ তো ভিতরের জিনিস, এর জন্য টাকা পয়সার কি দরকার ? স্থূল বাহ্যিক বিষয়ের প্রয়োজন তো ভূত, নৃ বা পিতৃযজ্ঞেই হয়ে থাকে , অধ্যাত্মযজ্ঞে নয় ! ঈশ্বর প্রণিধানই তোমার অধ্যাত্মযজ্ঞ । (শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তি রচিত 'সুভাষিত সংগ্রহ' থেকে সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment