“ত্যক্ত্বা, সুদুস্ত্যজ-সুরেপ্সিত-রাজ্যলক্ষ্মীং,
ধর্ম্মিষ্ঠ আর্য্যবচসা যদ্গাদরন্যম।
মায়ামৃগং দয়িতয়েপ্সিতমন্বধাবদ্
বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্”।।
ভা- ১১/৫/৩৪
[রামচন্দ্র লীলাপর অর্থঃ- আপনি মানব ধর্ম্ম্ আচরণ চতুর রামাবতারে পিতার আদেশে সুরগণেরও বাঞ্ছনীয়, সুতারাং অপরের দুস্ত্যজ্য রাজ্য-সম্পদ পরিত্যাগ করিয়া বনে গিয়াছিলেন এবং পতিপ্রাণা পত্নী সীতার অভীপ্সিত মায়ামৃগের পশ্চাদ্ধাবন করেছিলেন, হে মহাপুরুষ আমি আপনার পাদপদ্ম বন্দনা করি।]
শ্রীবিশ্ববৈষ্ণব-রাজসভার পাত্র-রাজ শ্রীব্রাহ্ম-মধ্ব-শ্রীরূপানুগ-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ৈক সংরক্ষক শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যান্বায়-নবমাধস্তনান্বয়বর আচার্য্যবর্য্য জগদ্ গুরু ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস ১০৮ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর বলেন ‘রাম’ তিনজন।
(১) জানকীরমণ রাম।
(২) রেবতীরমণ রাম।
(৩) রাধিকারমণ রাম।
তন্মধ্যে জানকীরমণ রাম পরতত্ত্ব ভগবানের পরাবস্থ স্বরূপত্রয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। যথা-
নৃসিংহ-রাম কৃষ্ণেষু ষাড়্গুন্যং পরিপূরিতম্।
পরাবস্থাস্ত্ত তে তস্য দীপাদুৎপন্নদীপবৎ।।
লঘুভাগবতামৃত-৫/১৬ (পদ্মপুরাণ ধৃত শ্লোক)
অর্থাৎ ‘নৃসিংহ’, ‘রাম’ ও ‘কৃষ্ণে’ পরিপূর্ণরূপে ষড়গুণ বিদ্যমান। যেমন প্রদীপ হইতে প্রদীপান্তরের উৎপত্তি হইলেও সকল প্রদীপই সমান ধর্মাবলম্বী। তদ্রূপ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হইতে রাম ও নৃসিংহের আবির্ভাব হইলেও এই তিনজনই ষড়গুণের পরাবস্থাপন্ন। অতএব শাস্ত্রে সম্পূর্ণাবস্থাকে পরাবস্থা বলিয়া নির্ধারণ করিয়াছেন।
এই পরাবস্থা-স্বরূপস্থ দ্বিতীয় রাম রাঘবেন্দ্র (রাম), দাশরথি (রাম) নামেও জগতে বিদিত আছেন। শ্রীমদ্ভাগবতে (১/৩/২২) উক্ত আছে- “ভগবান দেবকার্য্য সাধনার্থ রামরূপে নরদেবত্ব (রাজদেহ) প্রকটন করিয়া সমুদ্রবন্ধনাদিরূপ অসাধারণ প্রভাব দেখাইয়াছিলেন। যথা-
নরদেবত্বমাপন্ন সুরকার্য্যচিকীর্ষয়া,
সমুদ্রনিগ্রহাদীনি চক্রে বীর্য্যান্যতঃ পরম্।
—রাঘবেন্দ্র নবদূর্বাদলকান্তি ধারণপূর্বক ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্নের সহিত বৈবস্বত মন্বন্তরীয় চতুর্বিংশ চতুর্যুগের ত্রেতাযুগেতে দশরথ হইতে কৌশল্যার গর্ভে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। স্কন্ধপুরাণে রামগীতায় বলিয়াছেন-
শ্রীরাম-বাসুদেব, লক্ষ্মণ-সঙ্কর্ষণ, ভরত- প্রদ্যুম্ন এবং শত্রুঘ্ন-অনিরুদ্ধরূপ চতুর্ব্যূহ। শ্রীমদ্ভাগত অনুসারে রাম অষ্টাদশতম অবতার। আর দশাবতারের গণনায় তিনি সপ্তম। তাঁহার বসতিস্থল মধ্যদেশস্থিত অযোধ্যাপুরী এবং মহাবৈকুন্ঠলোক।
ভগবান রামচন্দ্র কালের অধীন নন- তাঁহা হইতে কাল নির্গত হইয়াছে। সুতারাং শ্রীরামচন্দ্রের পার্ষদগণও কালের অধীন নহেন। তাঁহারা নিত্য স্ব-স্বরূপে বিরাজিত বলিয়া অমর। দেবতাগণের অমরত্ব আপেক্ষিক। দেবতাগণের ভূমিকা ও ভগবৎ পার্ষদগণের ভূমিকা এক নহে। মনোধর্মের বিচারে চিজ্জড় সমন্বয় অভ্যাস-আবর্ত্ত উপস্থিত হয়। এই মনোনিগ্রহের নামই সাধন। “সর্ব্বে মনোনিগ্রহলক্ষণান্তাঃ”। আমরা কর্মের দ্বারা বাহ্য শরীরমাত্র লাভ করি। কর্মফল ভোগার্থ নানা যোনিতে ভ্রমণ করি। বাসনা চরিতার্থ করবার জন্য। কেহ কেহ বলেন, বাসনা বিনাশের জন্য ‘তপস্যা’ ও ‘ভক্তি’ যাজন করিব। কিন্তু তপস্যা-অভক্তি, ভক্তির সহিত তাহার মিশ্রণ নাই। আরোহবাদ মূলে যে নাস্তিকতা, তাহা হইতেই তপস্যার পিপাসা। রাবণ, হিরণ্যকশিপু, দন্তবক্র, বিরোচন প্রভৃতি ভগবদ্ বিদ্বেষী অসুরগণেরও ‘তপস্যা’ দেখতে পাওয়া যায়। তপস্যার স্পৃহা পরিত্যাগ না করা পর্য্যন্ত ভক্তির আরম্ভ হয় না। ভক্তির দ্বারাই সাধন ও সিদ্ধি সম্পূর্ণ হয়। ভক্তি নিরপেক্ষা ও পরম সবলা। ভক্তির সহিত ‘ব্রত’, ‘তপস্যা’, ‘কর্ম’, ‘জ্ঞান’, ‘যোগ’ ইত্যাদি কোনপ্রকার অন্যাভিলাষ মিশ্রিত করিয়া ভক্তিকে সবলা করিবার দুর্বুদ্ধি ও তদ্দ্বারা আত্মাকে প্রসন্ন করিবার চেষ্টাও দুর্বুদ্ধিতা।
চরিত্রালোচনা
শ্রীরামচন্দ্র চিন্ময় শোকারতি হইতে জাত চিন্ময় করুণরস বিদ্যমান। তাঁহার লীলায় শিক্ষা ও ভক্তির তারতম্য বিচার এই যে, কৈকেয়ী মন্থরার কুমন্ত্রণায় রামের বনবাস ও ভরতের রাজ্যাভিষেক – এই দুই বর দশরথের নিকট প্রার্থনা করেন। দশরথ বাৎসল্যরসে চতুর্বূহ্যের সেবক। কৈকেয়ী অংশ-ভগবান ভরতের- চতুর্বূহ্যান্তর্গত প্রদ্যুম্ন ভগবানের বাৎসল্যরসের সেবিকা। দশরথ যে সেবাফলের অধিকারী, কৈকেয়ীর প্রার্থনায় তিনি সেই সেবাসুখ হইতে বঞ্চিত হইলেন। কৈকেয়ী অংশ-ভগবান নিজ পুত্রের পূর্ণতা বিধান করিতে গিয়া পূর্ণ ভগবান রামের সেবা হইতে বঞ্চিতা হইলেন,- আত্মসুখ-কামনানিরতা হইলেন (মন্থরার সঙ্গ ও পরামর্শহেতু )। পূর্ণ ভগবানের সেবা হইতে বিচ্যুতা হওয়াতে রামকে নির্বাসিত করিবার বুদ্ধি তাঁহাতে উদিত হইল এবং প্রদ্যুম্ন ভগাবনের সেবা হইতেও বিচ্যুতা হইলেন। ইহাতে শিক্ষা এই যে, “পূর্ণ ভগবদ্বস্তুর সেবায় অনাদরে অংশ ভগবদ্বস্তুর সেবা হইতেও বিচ্যুতি ঘটে। এইরূপ হতভাগ্যের দুঃসঙ্গ ফলে চতুর্বূহ্যের সেবাসুখ হইতেও বঞ্চিত হইতে হয়। তাই শাস্ত্রবিচার হইল-
“ততো দুঃসঙ্গমুৎসৃজ্য সৎসু সজ্জেত বুদ্ধিমান্।
সন্ত এবাস্য ছিন্দন্তি মনোব্যাসঙ্গ মুক্তিভিঃ।।
https://sanatandharmatattva.wordpress.com/
Thursday, April 20, 2017
শ্রীরামলীলা-তত্ত্ব ও শিক্ষা
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment