Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Monday, June 12, 2017

ভগবান কোথায় বাস করেন?

এই অনন্তকোটি জড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা শ্রীব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করেছেন -"এই দেবীধাম, তার উপরে মহেশধাম, তার উপরে হরিধাম বা বৈকুণ্ঠএবং সবার উপরে এই গোলোক নামক নিজধাম অর্থাৎ স্বয়ং ভগবানেরপরম ধাম। এবং এই সকল প্রকার, সেই সেই ধামে সেই সেই প্রভাব যিনি বিধান করছেন সেই পরমেশ্বর ভগবান আদিপুরুষ শ্রীগোবিন্দকে আমি ভজনা করি।"এখন, এত প্রকার ধামে কোথায় কে থাকেন যদি নির্দেশ করা যায় তাহলে ভগবানের গোলোক ধামের অবস্থানটা নির্ণয় করা যেতে পারে। দেবীধাম বলতে অনন্তকোটি জড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝায়। তা শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গা শক্তি মহামায়া দুর্গাদেবী পরিচালনা করেন। পাতাললোক থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমগ্র দেবীধামটাই জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধির চক্রে আবর্তিত হচ্ছে, অর্থাৎ তা নিত্য নয়। এই ব্রহ্মাণ্ডের সংখ্যা অগণিত, ঠিক যেন এক গাড়ি সরিষা বীজের মতো, যার মধ্যে এই ধরাধাম হল একটি ছোট্ট সরিষাদানার মতো। এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বে রয়েছে চিন্ময় আকাশ। তার মধ্যে রয়েছে মহেশধাম বা শিবলোক। তার ঊর্ধ্বে হরিধাম - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিস্তার শ্রীবিষ্ণুর বৈকুণ্ঠধাম। সবার ঊর্ধ্বে শুদ্ধ ভক্তগণের পরম আদরণীয় পরমারাধ্য দ্বিভুজ মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণের পরমধাম শ্রীগোলোক বৃন্দাবন।আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তির মাধ্যমে নিজেই এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে সেই গোলোকধামের বর্ণনা প্রদান করে গেছেন। যা তিনি বহু পূর্বে সূর্যদেবকে দান করেছিলেন। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নির্দেশ দিয়েছেন, সেই অব্যক্ত অক্ষয় চিন্তামণি ধামই সমস্ত জীবের পরম গতি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি নিষ্ঠাভক্তির মাধ্যমে কোনদিন যদি কেউ সেখানে যেতে পারেন তবে আর কখনই তিনি এই দুঃখময় জগতে ফিরে আসেন না। কারণ তিনি নিত্যধামে নিত্যানন্দময় জীবনে আসীন হন। সেই দিব্য সচ্চিদানন্দময় ধামই ভগবানের পরম ধাম। আবার সেই ভগবান যুগপৎ ব্রহ্মাণ্ডের অণু-পরমাণুতে রয়েছেন
-'অণ্ডান্তরস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং'।
তিনিই অংশাবতার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে প্রতিটি জীবের হৃদয়ে নির্বিকার সাক্ষীর মতো পরমাত্মারূপে বিরাজ করছেন।।
কিন্তু জীবাত্মার ক্ষুদ্র স্বাধীনতার অপব্যবহারের ফলে সে তা ভুলে যায়।
এই সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন -
'সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতিজ্ঞানমপোহনং চ।।
'অর্থাৎ, "আমি সবার হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমার থেকে সমস্ত জীবের স্মৃতি ও জ্ঞান উৎপন্ন হয় আবার বিলোপও হয়।" (গীতা, ১৫.১৫)
আমরা যদি ভগবদ্ অনুগত হয়ে কৃষ্ণভাবনাময় জীবনযাপন করি, তবেআমাদের স্মৃতি ও জ্ঞান জাগ্রত হবে; নতুবা যদি আমরা বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ জীবন প্রণালীতে চলি তবে আমাদের স্মৃতিশক্তি জ্ঞানবুদ্ধি বিলুপ্ত হবে। বর্তমান যুগে অর্থাৎ আধুনিক নব্য প্রণালীতে কিছু কিছু মানুষ জীবকেই ভগবান বলে মনে করে। বহু দরিদ্র পতিত মানুষকেঅন্নবস্ত্র দান করে সমাজে তারা বড় বড় সমাজসেবী বলে পরিচিতি লাভ করছে। কিন্তু দেহত্যাগের পর প্রতিটি জীবের কর্মফল অনুসারে স্বর্গ কি নরকে গিয়ে, সুখভোগ কি দুর্ভোগ করবে - তা চিন্তা করা যথার্থ পরোপকারীর কর্তব্য। দুর্লভ মানবজীবনে প্রত্যেকের ভগবদ্মুখী জীবনধারাটাই সর্বপ্রযত্নে গ্রহণ করা আবশ্যক এবং যা শুধু এই জন্মেই নয়, জন্মজন্মান্তর ধরে আমাদের প্রকৃত সুখশান্তি প্রদান করবে। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যত দেবদেবী যত জীবকুল সবাই পরমেশ্বর পরমনিয়ন্তা শ্রীকৃষ্ণের ভৃত্য। তা কেউ মানুক আর নাই মানুক। 'একেলা ঈশ্বর কৃষ্ণ, আর সব ভৃত্য।' তাতে নিজেদেরকে ভগবান বলে মনে করাটা কত বড় বিভ্রান্তি। কতবড় মূর্খতা তা বোঝা উচিত।
শ্রীপদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে -
"নাহং তিষ্ঠামি বৈকুণ্ঠে যোগীনাম্ হৃদয়েষু বা।
মদ্ভক্তাঃ যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদঃ।।
"ভগবান ভক্তশ্রেষ্ঠ শ্রীনারদকে বলছেন -"আমি বৈকুণ্ঠে থাকি না, যোগীদের হৃদয়েও নয়; হে নারদ! যেখানে আমার ভক্তরা আমার কার্যকলাপ ও আমার মহিমার কথা গুণকীর্তন করে সেইখানে আমি অবস্থান করি।
"শ্রীদুর্বাসা মুনিকে ভগবান বলেছেন - 'আমি ভক্তজনপ্রিয়, ভক্তই আমাকে চিন্তা করে, আমিও ভক্তের জন্য চিন্তা করি।' (শ্রীমদ্ভাগবত, ৯.৪.৬০)
অর্থাৎ, ভগবান সর্বত্র যুগপৎ বিরাজ করলেও বিশেষরূপে ভক্তজনপ্রিয়। তাই ভক্ত হওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত। যাঁরা সর্বাকর্ষক শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসেন তাঁরা তাঁর অপ্রাকৃত চিত্র, তাঁর মন্দির, তাঁর শ্রীবিগ্রহ, তাঁর শ্রীনাম, তাঁর কথা, তাঁর প্রসাদ, তাঁর ভক্ত - সবার প্রতি অবশ্যই আকৃষ্ট হবেন। তখন তাদের নিষ্কপট ভগবদ্ভক্তিময় চক্ষুতে ভগবান কোথায় আছেন আর কোথায় নেই- তা উপলব্ধি হবে।। হরে কৃষ্ণ।।

No comments:

Post a Comment