মানবদেহের প্রতিটি চক্রে প্রধান স্নায়ুকেন্দ্রগুলি অবস্থিত। মানবদেহ পাঞ্চভৌতিক (ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম) উপাদানে নির্মিত। এই পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বসমূহ প্রাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই প্রাণকে আবার নিয়ন্ত্রণ করছে মন। অর্থাৎ মন পরোক্ষভাবে আর প্রাণ প্রত্যক্ষভাবে ভূত সমূহের নিয়ন্ত্রক। বিভিন্ন ভূতকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে মনের যে সকল দৈশিক অধিষ্ঠান আছে সেগুলাকে বলা হয় চক্র।
চক্র শব্দটি একটি সংস্কৃত শব্দ। আর প্লেক্সাস একটি ল্যাটিন শব্দ। মানব দেহের মেরুদণ্ডের শেষ কশেরুকার মধ্যবিন্দুর স্নায়ুসমষ্টির একটি কেন্দ্র। এটি মূলাধারচক্রের কেন্দ্রবিন্দু। এই চক্রটি সম্পূর্ণ মানবদেহের সাম্যবস্থা বজায় রাখে। এই চক্রে চারটি বৃত্তির অধিষ্টান-
★ধর্ম (মানস-আধ্যাত্মিক এষণা)
★অর্থ (মানসিক এষণা)
★কাম (দৈহিক বা মানসিক এষণা)
★মোক্ষ (আধ্যাত্মিক এষণা)
মেরুদণ্ডের পেছনে জনন অঙ্গের মূলদেশে স্বাধিষ্ঠান চক্রের অবস্থান। এই চক্রটি ছয়টি বৃত্তির অধিষ্ঠান কেন্দ্র-
★অবজ্ঞা (অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা)
★মূর্চ্ছা (মানসিক অসাড়তা, সাধারণ বুদ্ধির অভাব)
★প্রশ্রয় (নিজেকে সংযত না করা)
★অবিশ্বাস (বিশ্বাসের অভাব)
★সর্বনাশ (মৃত্যু নিশ্চিত বারবার এই চিন্তা)
ক্রুরতা (নৃশংসতা)
এরপর রয়েছে মণিপুর চক্র। মানবদেহের নাভিকেন্দ্রে এই চক্রের অধিষ্ঠান। এই চক্রটি দশটি বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে-
★লজ্জা
★পিশুনতা
★ঈর্ষা (পরশ্রীকাতরতা)
★সুষুপ্তি (জড়তা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা)
★বিষাদ (বিষন্নতা)
★কষায় (খিটখিটে মেজাজ)
★তৃষ্ণা ( কোনকিছু প্রাপ্তির জন্যে আকুল আকাঙ্ক্ষা)
★মোহ (বুদ্ধিচ্ছন্নতা)
★ঘৃণা
★ভয়
এর পরের চক্রটি অনাহত চক্র। অধিষ্ঠান বক্ষদেশের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই চক্রটি বারোটি বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে-
★আশা
★চিন্তা( দুশ্চিন্তা)
★চেষ্টা
★মমতা
★দম্ভ
★বিবেক
★বিকলতা (ভয়সঞ্জাত মনসিক জড়তা)
অহংকার
★লোলুপতা (লালসা)
কপটতা
★বিতর্ক( অসংযত, অতিরিক্ত তর্ক প্রবণতা)
অনুতাপ
পরের চক্রটি বিশুদ্ধ চক্র। এটির অধিষ্ঠান কণ্ঠনালিতে। এই চক্রটি ষোলটি বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে-
★ষড়জ (ময়ূরের আবাজ)
★ঋষভ (ষাড়ের আবাজ)
★গান্ধার (ছাগলের আবাজ)
★মধ্যম (হরিণের আবাজ)
★পঞ্চম (কোকিলের আবাজ)
★ধৈবত (গর্দভের আবাজ)
★নিষাদ (হাতির আবাজ)
★ওং (সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের বীজমন্ত্র)
★হুং (কুলকুণ্ডলিনী শক্তির উত্থানের বীজমন্ত্র)
★ফট (কোন তত্ত্বকে বাস্তবায়িত করা)
★বৌষট (জাগতিক জ্ঞানের অভিব্যাক্তি)
★বষট ( সূক্ষ স্তরে কল্যাণ)
★স্বাহা (মহৎ কার্য সম্পাদন করা)
★নম: (পরমপুরুষের কাছে আত্মসমর্পণ)
★বিষ (বিকর্ষণমূলক বা ঋণাত্মক মানসিকতার প্রকাশ)
★অমৃত (মধুরতার অভিপ্রকাশ)
সর্বশেষ চক্রটি আজ্ঞা চক্র। এটির অধিষ্ঠান দু'টি ভ্রুর মধ্যবিন্দুতে। এই চক্রটি দুটি বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে-
★অপরা (জাগতিক জ্ঞান)
★পরা ( আধ্যাত্মিক জ্ঞান)
এই চক্রগুলোতেই উপগ্রন্থি সমূহের (পঞ্চাশটি) উপকেন্দ্র গুলোও অবস্থিত। চক্রের সঙ্গে সংযুক্ত উপগ্রন্থিরাই মনের বৃত্তিসমূহকে ( বৃত্তির সংখ্যাও পঞ্চাশ) প্রভাবিত তথা নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিজ্ঞানটি (জৈব-মনস্তত্ত্ব) এখনও মানুষের কাছে অধরাই রয়ে গেছে।
শরীর ও মনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। মনের অভিপ্রকাশ বৃত্তির মাধ্যমে হয়, আর বৃত্তির প্রাবল্য শরীরের গ্রন্থির ওপর নির্ভর করে। প্রতিটি গ্রন্থি থেকে বিশেষ বিশেষ রস ক্ষরিত হয়। রসক্ষরণে কোন গোলযোগ থাকলে কিংবা গ্রন্থির স্থানে কোন ত্রুটি থাকলে বিশেষ বিশেষ বৃত্তির প্রাবল্য দেখা দেয়। এই কারণেই দেখা যায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে নীতিজ্ঞান মেনে চলতে পারে না। সাধনা করা উচিত বোঝে কিন্তু সাধনায় মন একাগ্র করতে পারে না। বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তার গ্রন্থির ত্রুটি দূর করতে হবে। *আসন বহুল পরিমাপে এই কাজে সাধককে সাহায্য করে। তাই আসন- সাধনার একটা বড় অঙ্গ।
-শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর প্রবচন থেকে
Thursday, March 23, 2017
আনন্দ মার্গ
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment