সর্বেন্দ্রিয় দ্বারা যা কিছু কর্ম কর, সকলই আমাতে অর্পণ কর। শ্রীমদ্ভাগবতেও ঠিক এই কথাই আছে-
“কায়েন বাচা মনসেন্দ্রিয়ৈর্বা বুদ্ধ্যাত্মনা বাহনুসৃতস্বভাবাৎ।
করোতি যদ্যৎ সকলং পরস্মৈ নারায়ণায়েতি সমর্পয়েত্তৎ।।
“কায়, মন, বাক্য, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি, আত্মা দ্বারা বা স্বভাববশতঃ যে কোন কর্ম করা হয়, তাহা সমস্তই পরাৎপর নারায়ণে সমর্পণ করিবে”।-ভাগবত (১১/২/৩৬)
এস্থলে কেবল পূজার্চনা, দান, তপস্যাদির কথা বলা হয় নাই, আহার-বিহারাদি সমস্ত লৌকিক কর্মও ঈশ্বরার্পণ-বুদ্ধিতে করিতে হইবে, ইহাই বলা হইতেছে। এই ঈশ্বরার্পণ-বুদ্
ধি কিরূপ?-ঈশ্বরের সঙ্গে সাধক যে ভাব স্থাপন করেন তদনুসারেই তাঁহার কর্মার্পণ-বুদ্ধিও নিয়মিত হয়।
ভক্তিমার্গের প্রথম সোপানই হইতেছে দাস্যভাব। তুমি প্রভু, আমি দাস। তুমি যন্ত্রী, আমি যন্ত্র। তুমি কর্তা, আমি নিমিত্তমাত্র। এই ভাবটি গ্রহণ করিয়া সমস্ত কর্ম করিতে পারিলেই কর্ম ঈশ্বরে অর্পিত হয়। আমি আহার-পানাদি করি, সংসার কর্ম করি, যাহা কিছু করি, তুমিই করাও, তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হউক, তোমার কর্ম সার্থক হউক, আমি আর কিছু জানি না, চাহি না- “ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি’’।
এই অবস্থায় ‘আমি তোমার’ এই দাস্যভাবটি নিত্য বিদ্যমান থাকে। ভক্তিমার্গের আর একটি উচ্চতর অবস্থা হইতেছে, ‘তুমি আমার’ এই ভাব; সুতরাং আমার যাহা কিছু কর্ম তোমার প্রীতি-সম্পাদনার্থ; এই অবস্থায় সাধকের অন্য কর্ম থাকে না। শ্রবণ- স্মরণ- কীর্তন, পূজার্চনা ইত্যাদি ভগবৎ-সেবা-বিষয়ক কর্মই তাঁহার কর্ম হইয়া উঠে। অধিকতর উচ্চাবস্থায় ভগবান্ জগৎময়, সর্বভূতে অধিষ্ঠিত, সুতরাং ভূত বা মানব সেবাই তাঁহার সেবা, এই জ্ঞান জন্মিলে নিষ্কামভাবে সাধক লোক-সেবায়ই নিযুক্ত হন।
“এই কর্মার্পণের মূলে কর্মফলের আশা ত্যাগ করিয়া কর্ম করিবার তত্ত্ব আছে। জীবনের সমস্ত কর্ম, এমন কি জীবন ধারণ পর্যন্ত এইরূপ কৃষ্ণার্পণ-বুদ্ধিতে অথবা ফলাশা ত্যাগ করিয়া করিতে পারিলে, পাপ-বাসনা কোথায় থাকিবে এবং কু-কর্মই বা কিরূপে ঘটিবে? কিংবা, “লোকোপযোগার্থ কর্ম কর”, “লোকহিতার্থ আত্মসমর্পণ কর”, এরূপ উপদেশেরও আর দরকার কেন হইবে? তখন তো ‘আমি’ ও ‘লোক’ এই দুইয়েরই সমাবেশ পরমেশ্বরে। এই দুইয়েই পরমেশ্বরের সমাবেশ হওয়ায় স্বার্থ ও পরার্থ এই দুই-ই কৃষ্ণার্পণরূপ পরমার্থের মধ্যে নিমগ্ন হইয়া যায়। কৃষ্ণার্পণ বুদ্ধিতে সমস্ত কর্ম করিলে নিজের যোগক্ষেমেও বাঁধা পড়ে না, স্বয়ং ভগবান্ই এ আশ্বাস দিয়াছেন”।
-:গীতারহস্য, লোকমান্য তিলক:-
(বিঃদ্রঃ):- ভক্তিশাস্ত্র যাহাকে শ্রীকৃষ্ণার্পণ-পূর্বক কর্ম বলেন, অধ্যাত্মতত্ত্বে জ্ঞানমার্গে উহাই ব্রহ্মার্পণপূর্বক কর্ম । ভক্তিমার্গে দ্বৈতভাব থাকে, ‘আমি’ জ্ঞান থাকে, যদিও উহা ‘পাকা’ আমি; কিন্তু জ্ঞানমার্গে ‘সমস্তই ব্রহ্ম’- এই ভাব বলবান্ থাকে, সাধক ব্রহ্মভূত হন, তাঁহার সমস্ত কর্ম ব্রহ্মকর্ম হয়।
“জয় রাধেশ্যাম”
Thursday, March 23, 2017
ঈশ্বরে কর্মার্পণ তত্ত্ব
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment