আজকাল কিছু অপপ্রচারকারী শাস্ত্র গ্রন্থের ভুল ব্যাখ্যা করে বলছে যে কলিকালে সকল মানুষকে ধর্ম অনুশীলন করতে বলা হয়েছে এবং তাঁহারা আমাদের ধর্মগ্রন্থের ভূল ব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ছলের আশ্রয় নিয়েছে- আসুন জানি আমাদের প্রামাণিক শাস্ত্র সমূহ কি বলছে-
এই সম্পর্কে বৃহন্নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা ।।
“কলিযুগে একমাত্র ধর্ম হচ্ছে হরিনাম কীর্তন করা, হরিনাম কীর্তন করা, হরিনাম কীর্তন করা। এ ছাড়া অন্য কোনও পন্থা নেই, অন্য কোন পন্থা নেই, অন্য কোনও পন্থা নেই।” ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, মন্মনা ভব ‘আমাকে স্মরণ কর’, মামেকং শরণং ব্রজ ‘একমাত্র আমার শরণাগত হও।’ তেমনই ভক্তরূপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন-
বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, শুন কৃষ্ণনাম।
অহর্নিশ শ্রীকৃষ্ণচরণ কর’ ধ্যান ।।
(চৈঃ ভাঃ মধ্য ১/৩৩৬)
শ্রীমদ্ভাগবতে (১১/৫/৩২) সেই সম্বন্ধে বলা হয়েছে
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গস্ত্রপার্ষদম্।
যজ্ঞৈঃ সংকীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ ।।
“যে পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণ পদাংশ ধ্বনি নিরন্তর উচ্চারণ করেন, কলিযুগের বুদ্ধিমান মানুষেরা তাঁর উপাসনার নিমিত্ত সমবেতভাবে নাম-সংকীর্তন করে থাকেন। যদিও তাঁর গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ নয়, তবুও তিনিই কৃষ্ণ। তিনি সর্বদা তাঁর পার্ষদ, সেবক, সংকীর্তনরূপ অস্ত্র ও ঘনিষ্ঠ সহচর পরিবৃত থাকেন।” শ্রীকৃষ্ণ যে এই কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়ে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করে কৃষ্ণ-সংকীর্তন প্রচার করবেন, তার উল্লেখ মহাভারতে দেখতে পাওয়া যায়-
সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী।
সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তিপরায়ণঃ
তাঁর আদিলীলায় তিনি স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল বর্ণের সুন্দর দেহ ধারণ করে গৃহস্থরূপে লীলাবিলাস করেন। তাঁর সর্বাঙ্গ সুন্দর এবং তাঁর চন্দন-চর্চিত শ্রীঅঙ্গ কাঞ্চনের মতো দ্যূতিসম্পন্ন। তাঁর পরবর্তী লীলায় তিনি সন্ন্যাস-আশ্রম গ্রহণ করেন। তখন তিনি শমগুণ সম্পন্ন ও শান্ত। তিনি শান্তি ও ভক্তির পরম আশ্রয়, কেন না তিনি নির্বিশেষবাদী অভক্তদের নিবৃত্ত করেন।”
সুতরাং উপরোক্ত উপদেশগুলির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই; সর্বত্রই নাম-সংকীর্তনের মাধ্যমে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে। সেই সম্বন্ধে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃতে (আদি ৩/৪০) উল্লেখ করেছেন-
কলিযুগে যুগধর্ম-নামের প্রচার।
তথি লাগি’ পীতবর্ণ চৈতন্যাবতার ।।
“কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে ভগবানের মহিমা প্রচার। সেই উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য ভগবান পীতবর্ণ ধারণ করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে আবির্ভূত হয়েছেন।” তা ছাড়া শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃতে (৩/১৯-২০) আরও বলা হয়েছে
যুগধর্ম প্রবর্তাইমু নাম-সংকীর্তন।
চারি ভাব-ভক্তি দিয়া নাচামু ভুবন ।।
আপনি করিমু ভক্তভাব অঙ্গীকারে।
আপনি আচরি’ ভক্তি শিখাইমু সবারে ।।
“আমি স্বয়ং এই কলিযুগের নাম-সংকীর্তন বা সম্মিলিতভাবে ভগবানের মহিমা কীর্তন প্রবর্তন করব। ভগবৎ-ভক্তির চার প্রকার রস আস্বাদন করিয়ে আমি সমগ্র জগৎকে প্রেমানন্দে উদ্বেলিত করে নৃত্য করাব। ভক্তের ভূমিকা অবলম্বন করে আমি সকলকে ভক্তিযোগে ভগবানকে সেবা করার শিক্ষা দান করব।”
সাধারণ যুগধর্ম ভগবানের অংশ-কলা-যুগাবতার দ্বারাই সাধিত হয়ে থাকে। যেমন সত্যযুগের যুগাবতার শুক্লবর্ণ রূপ নিয়ে অবতীর্ণ হয়ে সত্যযুগের জন্য নির্ধারিত ধ্যানের পন্থা শিক্ষাদান করেন। ত্রেতাযুগের যুগাবতার রক্তবর্ণ রূপ নিয়ে অবতীর্ণ হয়ে ত্রেতাযুগের নির্ধারিত পন্থা যজ্ঞা আদি শিক্ষা প্রদান করেন। দ্বাপর যুগের যুগাবতার কৃষ্ণবর্ণ রূপ নিয়ে অবতীর্ণ হয়ে অর্চন শিক্ষাপদ্ধতি দান করেন। ঠিক তেমনই কলিযুগের যুগাবতার পীতবর্ণ রূপ নিয়ে অবতীর্ণ হয়ে যুগধর্ম নাম-সংকীর্তন প্রবর্তন করেন। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন লীলাবতার, শক্ত্যাবেশ অবতার, গুণাবতার, যুগাবতার, মন্বনÍর অবতার ও পুরুষাবতার আদি অনন্ত অবতারের অবতারি বা উৎস। তিনি হচ্ছেন স্বয়ং লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সুতরাং শুধুমাত্র যুগধর্ম প্রবর্তনই তাঁর অবতরণের একমাত্র কারণ নয়। তাঁর অবতরণের মুখ্য কারণ সম্বন্ধে শ্রীচৈতন্য-চরিত
ামৃতে (আদি ১/৬) প্রতিপন্ন হয়েছে, “শ্রীরাধার প্রেমের মহিমা কি রকম, ওই প্রেমের দ্বারা শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণের যে অদ্ভুত মাধুর্য আস্বাদন করেন, সেই মাধুর্যই বা কি রকম এবং শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্য আস্বাদন করে শ্রীরাধা যে সুখ অনুভব করেন, সেই সুখই বা কি রকমএই সমস্ত বিষয়ে জানবার জন্য লোভ জন্মানোর ফলে শ্রীরাধার ভাবযুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ চন্দ্র শচীগর্ভ-সিন্ধুতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তাই ভক্তবৃন্দ আমাদের অন্যের কথায় প্ররোচিত না হয়ে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য
মহাপ্রভুর নির্দেশ পালন করাই কর্তব্য । আমাদের জন্যই শাস্ত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তাই আসুন, ভক্তির সহজ পথ এই নাম সংকীর্তন করে ভগবানের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করার জন্য আমরা সকলেই সচেষ্ট হই। ইহাই হোক আমাদের সকলের একান্ত প্রত্যাশা।
পরমপুরুষ ভগবান আমাদের সকলের মঙ্গল করুন।
Sunday, March 12, 2017
কলির কুলষতায় পড়ে কু-ধর্মের অপপ্রচার
Hey visitor! I'm Satyajit Roy holding a big name of famous indian film director! but not for nothing at all ��. Trying to write something about something.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment