Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Tuesday, April 25, 2017

সনাতন অনুসারে কুরআন সহ অনেক গ্রন্থই ঈশ্বর প্রেরিত নয়ঃ

সনাতন এর ধর্মীয় আদর্শ অনুসারে, যে কোনও ধর্মই সত্য সে কথা বলার সুযোগ খুব বেশী থাকবে যখন কোনও ধর্মে ঈশ্বর সকল ভাষা বুঝবেন বলে বলা হবে, মানবতা কে গুরুত্ত্ব দেবেন বলে প্রমানীত হবে এবং প্রার্থনার একাধিক সরল ও প্রশস্থ পথ প্রদর্শন কিংবা সমর্থন করবে। কিন্তু সংকীর্ণ ও কেবলমাত্র ভুল হিসাব – নিকাশ সম্পন্ন কিছু ধর্ম যেমন ইসলাম, এর গ্রন্থ কুরআন এর বানী সনাতন অনুসারে কখনোই ঈশ্বরের বানী নয়। এগুলো প্রাসঙ্গিক ভাবে কিছু সমস্যা সম্মুখে আসার মাধ্যমে একজন পুরুষের মনগড়া পদ্ধতি মাত্র।
.
খুব সংক্ষেপে কিছু প্রমাণ দিতে চাই যা কোনোভাবেই ঈশ্বরের কর্ম হতে পারে না। যেমন ধরুন, কুরআনে লিখা আছে, ঈশ্বর বলছেনঃ সে দেখতে পেল, সূর্যের যখন অস্ত যায় তখন ইহা যেন একটি কর্দমাক্ত জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছে (উৎসঃ কুরআন ১৮.৮৩-৮৬, সুনান আবু দাউদ ৩৯৯১ )। এটা ঈশ্বর কিভাবে বলবেন? সূর্য ডোবেও না, আর ঈশ্বর বললে বলতেন, এটার অস্ত যায় কিন্তু এটা জায়গায় থাকে, কারন পৃথিবী ঘোরে। কুরআনে বলা আছে বীর্য হৃদপিণ্ড এবং পাজরের মধ্যবিন্দু থেকে তৈরি (উৎসঃ কুরআন ৮৬/ ৬-৭ )। যেখানে স্পষ্টতই আমরা জানি এটা টেস্টিকলস থেকে আসে এবং সীম্যান তৈরী হয় পেলভিক রিজিওনে। কুরআনের ২.২২৩ তে বলা আছে তোমাদের নারীরা পুরুষদের শস্যক্ষেত্র, যখন খুশী যেভাবে খুশী তুমি সেখানে গমন করো। সমঅধিকারের কথা বলে পুরুষদের এক ডিগ্রী উপরে রাখা হয়েছে (উৎসঃ কুরআন ২.২২৮ )। ছেলেদের সম্পত্তি অধিকার দ্বিগুন (উৎসঃ কুরআন ৪.১১), অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে দুই জন সাক্ষী লাগবে (উৎসঃ কুরআন ২.২৮২ )। মহিলা যুদ্ধবন্দীদের যৌন দাসী করা ইসলামে বৈধ (উৎসঃ কুরআন ৪.২৪ )। কুরআনে উল্লেখ আছে একজন স্বামী শাস্থি দেয়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে প্রহার করতে পারেন (উৎসঃ কুরআন ৪.৩৪ )। কুরআনে বলা আছে স্বর্গে গেলে যৌন সঙ্গী পাবে স্বর্গবাসীরা (উৎসঃ কুরআন ৫২.১৭-২০, ৪৪.৫১-৫৫)। এরকম শত শত তথ্য ওখানে আছে যা লিখলে অনেক হয়ে যাবে। এসব রীতিনীতি কেউ ফলো করলে সনাতনীরা বাধা দেবে না, তবে সনাতনী ধারনায়, বিবেক ও জ্ঞান এর মতে এগুলো ঈশ্বরের বানী কিংবা আদেশ বলে গ্রাহ্য করা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। অতএব প্রথমেই কোরআন এর মত বই গুলো সনাতনি মতে ধর্মীয় বই বা ঈশ্বরের বই হিসেবে গ্রাহ্য হওয়া নিষেধ।
.
বর্তমান সনাতনে বেদ নিষেধ!!! কিভাবে?
.
বলুন তো হিন্দুদের সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ কোনটি? সহজ উত্তর, গীতা। এখন গীতা আপনি না মানলে আর যাই করুন সব দিক থেকেই আপনি সনাতন বহির্ভূত। গীতা সর্বশেষ ঈশ্বর এর গ্রন্থ, যেখানে ঈশ্বর নিজে বলছেন, “গীতা জ্ঞানং সমাশ্রিতং ত্রিলকিং পলায়ামোহম” অর্থাৎ গীতা জ্ঞান করিয়া আমি ত্রিলোক পালন করি। আর এই গীতাতেই সনাতন শব্দটা উল্লেখ আছে।
.
যদি গীতা মানেন, তবে ওখানেই লিখা আছে, বিবেকবান, নির্লোভ যিনি এবং যিনি মোক্ষ ও ঈশ্বর পেতে চান তিনি বেদ অনুসরন করেন না, বরং ঈশ্বরে নিজেকে সমর্পণ করেন। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে কি লিখা আছে একটু দেখুনঃ
.
গীতা, দ্বিতীয় অধ্যায় , শ্লোক – ৪১ – ৪৫ পর্যন্ত। “যারা এই পথ অবলম্বন করছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরু নন্দন অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী। ৪১ বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে সর্গ সুখ ভোগ উচ্চকুলে জন্ম ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবং ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই। ৪২-৪৩ যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাৎ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না। ৪৪ বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুন সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন তুমি সেই গুন গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুনস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও। ৪৫”
.
অর্থাৎ যিনি একনিষ্ঠ নন, অস্থির চিত্ত, সকাম, বিবেক বর্জিত তারাই বেদের বাক্যে আসক্ত হয়। বেদের সম্পর্কে এখানে আর বিশেষ কিছু বলা মানে বোকামি।
.
মন্তব্যঃ ভগবান বার বার তাদের অজ্ঞ, বোকা, বিকৃত এবং লোভি বলছেন যারা দেবতাদের সকাম সাধনা করেন। পুজা করেন। হ্যাঁ গীতায় পুজা – অর্চনা – যজ্ঞ এসব করার কথা বলা আছে। কিন্তু ঈশ্বর নিজে বলছেন উনাতে দেহ মন অর্পণ করতে, মূর্খ না থাকতে। এটা স্পস্টতই দেবতাদের সকাম সাধনার বিরুদ্ধে একটা নিষেধ বানী। তবে কেউ যদি তারপর ও দেবতার পুজা করে সকাম ভাবে তবে অন্তর্যামী পরমাত্মা তার মনবাসনা পূরণ করেন। কিন্তু তার ঈশ্বর প্রাপ্তি, মোক্ষ লাভ হয় না। তার মানে আবার ভোগান্তি। অতএব এরকম ঘোষণা থাকলে ক্ষতি নেই যে, ধর্মে দেবদেবীদের সকাম সাধনা নিষেধ, তবে ঈশ্বর ক্ষমাশীল এবং দয়াবান।
.
অতএব সনাতন অনুসারে অন্য ধর্ম ভুলে ভর্তি, বেদ নিষেধ, দেবদেবীর পুজা নিষেধ। তাহলে থাকলো কি? গীতা। এখন অনেকেই গীতার ও কিছু ভুল উল্লেখ করেছেন।
ভুল কিন্তু ভুল কি?
.
গীতা, চতুর্থ অধ্যায় (১৩) “গুন এবং কর্ম অনুসারে আমি মানুষ সমাজে চারিটি বর্নবিভাগ সৃষ্টি করিয়ছি । আমিই এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে। ১৩”
-ঃব্যাখ্যাঃ- এখানে গুন এবং গুনের মাধ্যমে কর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যে চারটি ভাগ উল্লেখ করলেন ঈশ্বর তার মানে হল বাস্তবে মানুষ তার কর্ম করে গুনের মাধ্যমে আর এটাই তার ধর্ম। ধরাযাক একজন শিক্ষক-চিকিৎসক যিনি একাধারে চিকিৎসা সেবা দেন এবং মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা ও করেন। দেখা যায় উনার মাঝে ব্রাহ্মণ এবং শুদ্রের উভয় গুন রয়েছে বলেই তিনি দুটোই করতে পারছেন। এটাকে বলা যায় যৌগগুনী। এখানে উনি শিক্ষকতা বেশী পচ্ছন্দ করলে ব্রাম্মনের গুন প্রকট আর রোগী দেখতে বেশী পছন্দ করলে শুদ্রের গুন প্রকট। এই বিচার কেন আসছে? আসছে এই কারনে যে উনি যে কাজ বেশী করতে পছন্দ করেন এটা যদি উনি বাছাই করে করেন তবে উনার মানসিক শান্তি থাকবে, কাজ লিখুত হবে, মানুষের তথা সৃষ্টির মঙ্গল হবে। —– আমরা যাতে ভুল না করি তাই ঈশ্বর বলেছেন যে এক্ষেত্রে ঈশ্বর নিজে অকর্তা। তার মানে হল জন্ম থেকে কেউ তার বর্ণ নিয়ে আসে নাই। ঈশ্বর জন্মের সময় এটা দিয়ে দেন নাই। এই ক্ষেত্রে তিনি কর্তা না। মানুষ তার নিজ চেস্টায় এই গুন এবং কর্ম অর্জন করে।
অর্থাৎ স্পষ্ট ভাষায় ভগবান বলছেন চারটা পথ তোমার আছে, দেখ তুমি কোনটা পছন্দ করো, তোমার গুন অনুসারে কর্ম বাছাই করো এবং তখন থেকেই সেই কর্মই তোমার ধর্ম। উপরের লাইনগুলো এর থেকে বেশী কিছুই নির্দেশ করে না। অতএব এটা ভুল হবে কি?
আরো ভুলের মধ্যে উল্লেখ আছে বার বার যুদ্ধের দিকে প্ররোচনা দেয়া, বায়ুহীন জায়গায় প্রজ্বলিত বাতি নড়ে না এমন কিছু বলা, নারী কে পুরুষ থেকে সরিয়ে শুদ্রের সাথে রাখা প্রভৃতি। আমি যতটুকু বুঝেছি এগুলো হল মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ভুল খুঁজে বের করার চেস্টা। আসল যুদ্ধ যার কর্তব্য তাকে এটা বার বার স্মরণ করানো হচ্ছে, বায়ুহীন নয় আসলে বাতাস বিহীন বোঝানো হচ্ছে, আর নারী এবং শুদ্রকে সমাজের ছোট করার ট্রেন্ড থেকে বের করে সমান কাতারে আনার জন্য একটি লাইনে নারী এবং শুদ্রের কথা একই সাথে উল্লেখ করা হয়েছিল। এগুলো আমরা হাজারো লোকের ভিড়ে প্রমাণ করতে পারি।
যদি জোর গলায় ধর্ম নির্ভুল প্রমাণ না করা যায় তবে সেই ধর্ম একদিন না একদিন বিলিন হয়ে যায়।
.
তাহলে নিয়ম কানুন?
স্পস্টতই গীতার সাত্ত্বিকতা এবং সমদর্শন এই দুই স্তম্ভ, বাস্তব এবং আধ্যাত্ম জীবনের সকল নিয়মকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই দুই ব্যাপার মুলত কি তা জেনে এবং মেনে, কেউ যদি সাধনা করে, বস্ত্র পরিধান করে, খাবার খায়, অন্যের সাথে আচার ব্যবহার ঠিক করে, আহার ও নীদ্রা স্থির করে, পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে, অধিকার বন্টন করি, এমনকি রাষ্ট্রীয় এবং পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করে তবেই পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসা সম্ভব। আজ অনেক পশ্চিমা দেশে দেখা যায় তাদের আচার ব্যাবহার, রাষ্ট্রীয় নীতি এবং আইন, পরিবেশ রক্ষা এসবে সাত্ত্বিক এবং সমদর্শন ভাব বজায় রেখেছে নিজের মত করে। তারা গীতা পড়ে নাই। কিন্তু সভ্যতা তাদের গীতার পাশে নিয়ে গেছে। গীতা আমাদের পাশে থাকলেও, আমরা গীতা থেকে অনেক অনেক দূরে রয়ে গেছি।
.
এই লিখাটা আমার নিজের কোনও মতামত নয়। সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক আমার একটি বড় নিরীক্ষা ধর্মী লিখা থেকে ছোট করে নিলাম কেবলমাত্র সনাতন পেইজে দেবার জন্য। এই লিখার উদ্দেশ্য হল ধর্মকে সকল দিক থেকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। এটা খারাপ লাগলে পাবলিশ করার দরকার নেই, আর পাবলিশ করার পর বাজে লিখা মনে হলে ইগ্নোর করুন। এমন হাজারো বাজে লিখাই তো আমরা লিখছি। ধন্যবাদ।

লিখেছেন-Palash Kanti Bhattacharjee

No comments:

Post a Comment