Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Monday, August 28, 2017

শ্রীশ্রী রাধাষ্টমীর মূলকথা

"তপ্তকাঞ্চন-গোরাঙ্গীরাধে
বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষ ভানু-সুতে দেবী
প্রণামামি হরি-প্রিয়ে।।"

__________অনুবাদঃ শ্রীমতি রাধারাণী, যাঁর অঙ্গকান্তি তপ্ত কাঞ্চনের মতো এবং যিনি বৃন্দাবনের ঈশ্বরী, যিনি মহারাজ বৃষভানুর
দুহিতা এবং ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী তার চরণকমলে আমি আমার
সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই।

রাধাষ্টমীর কথাঃ-
"অনয়ারাধিতো নূনং ভগবান্ হরিরীশ্বর। যন্নোবিহায় গোবিন্দঃ প্রীতযামনয়দ্রহঃ।।"
অনুবাদ: এই বিশেষ গোপী নিশ্চয়ই
যথার্থভাবে সর্বসক্তিমান ভগবান গোবিন্দের আরাধনা করেছিলেন, তাই তাঁর প্রতি অত্যন্ত প্রীত হয়ে তিনি অবশিষ্ট
আমাদের পরিত্যাগ করে তাঁকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়েছেন।

________তাৎপর্য: শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বর্ণনা করেছেন যে, আরাধিতঃ শব্দটি শ্রীমতী রাধারাণীর সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ভাষ্য প্রদান করেছেন। “মুনিবর শুকদেব গোস্বামী রাধারাণীর নাম গোপন রাখতে সকল প্রয়াস করেছেন। কিন্তু এখন আপনা থেকেই তাঁর মুখচন্দ্র হতে তা দীপ্তিমান হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শ্রীমতী রাধারাণীর কৃপাতেই তিনি তাঁর নাম এইভাবে প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর পরম সৌভাগ্য ঘোষনা করার জন্য আরাধিতঃ

শব্দটি দুন্দুভির মতো নিনাদিত হচ্ছে।” 
শুকদেব গোস্বামী এত
ভাবাপন্ন হয়ে রাধা নাম উচ্চারন করে ভাবছেন আমি হয়তো পাঠ শেষ
করতে পারবো না। আমারতো পরীক্ষিত মহারাজের সাথে সাতদিনের প্রতিজ্ঞা আছে। কিন্তু যদি রাধা নাম বলতে গিয়ে এমনভাবে ভাবাপন্ন হয়ে
গিয়ে যদি পাঠ বন্ধ হয়ে যায়, অর্থাৎ পরীক্ষিৎ মহারাজ যদি ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েন.! সেজন্য রাধা নাম বলে এত আনন্দ পাবে পরমানন্দ বিপুল হয়ে যাবে হয়তো পাঠ বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য রাধা নাম বলতে চাননি। কিন্তু তা বলে ফেলেছেন, "আরাধিতঃ
আরাধিতঃ"। রাধা নাম সেখানে গোপন করা আছে। আরাধিতঃ কার নাম আছে? কার নাম? রাধা।
রাধা রাধা রাধা রাধা
রাধা রাধা রাধা রাধা
!! হরিবোল!! 
যদিও গোপীরা যেন শ্রীমতী রাধারাণীর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু তিনিই
শ্রীকৃষ্ণের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তা লক্ষ্য করে প্রকৃতপক্ষে তাঁরা উল্লসিত হয়েছিলেন। গোপীগন চান কৃষ্ণ যেন খুশি হোক,
কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হোক। এভাবে একজন গোপী এমনভাবে কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে, তাহলে কৃষ্ণতো
খুশি হলো তাই গোপীগণ উল্লসিত হলেন। শ্রীল রুপ গোস্বামী তাঁর
শ্রীউজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে
শ্রীমতী রাধারাণীর পদচিহ্নের যে বিশদ বিবরন প্রদান করেছেন,শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তা উদ্ধৃত করেছেন।

“শ্রীমতী রাধারাণীর বাম চরণের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মূলে একটি যব চিহ্ন রয়েছে, সেই চিহ্নের নিচে এক
চক্র, সেই চক্রের নিচে এক ছত্র, এবং সেই ছত্রের নিচে একটি বলয় রয়েছে। তাঁর চরণের মধ্যভাগ থেকে একটি উর্ধরেখা তাঁর
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর সন্ধিস্থল পর্যন্ত গিয়েছে। মধ্যমা অঙ্গুলির মূলে একটি পদ্ম, তার নিচে
পতাকাসহ ধ্বজ চিহ্ন এবং ধ্বজের নিচে পুষ্পবল্লী। তাঁর
কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূলে অঙ্কুশ চিহ্ন এবং গোড়ালীতে অর্ধচন্দ্রচিহ্ন। এইভাবে তাঁর বাম চরণে এগারটি
চিহ্ন রয়েছে। তাঁর দক্ষিণ চরণের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠমূলে একটি শঙ্খ এবং তার নিচে একটি গদা। কনিষ্ঠা
অঙ্গুলির মূলে বেদী এবং তার নীচে একটি কুণ্ডল এবং সেই কুণ্ডলের নিচে একটি গদা এছাড়া তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও
কনিষ্ঠা অঙ্গুলির নিচে পর্বত চিহ্ন এবং পর্বতের নিচে রথ চিহ্ন রয়েছে, আর গোড়ালীতে মৎস্য
চিহ্ন রয়েছে। এইভাবে শ্রীমতী রাধারাণীর চরণ-কমলের মোট উনিশটি চিহ্ন রয়েছে।”
শ্রীমতি রাধার একটি নাম হচ্ছে মাধবমোহিনী। কৃষ্ণের একটি নাম হচ্ছে মোহন। মাধব সকলকে মোহিত করেন। কিন্তু রাধারানী মাধবের
মোহিনী। কৃষ্ণ ভাবছেন আমি আমার লীলা বিস্তার করবো। তাঁর বাম পাশ থেকে রাধারানী
বিস্তার হয়ে গেলেন।
রাধারানী তাঁর বিভিন্ন সেবা আয়োজন করে ভগবানকে সন্তুষ্ট করেন। রাধারানী সেবা বিস্তার করার জন্য তার বাম পাশ থেকে অনেক গোপী বিস্তার করেন। গোপীগন রাধারাণীর মতো দেখতে। এভাবে কৃষ্ণ যখন মনস্থির করলেন যে আমি দ্বাপর যুগে ব্রজধামে অবতীর্ণ হয়ে
লীলা বিস্তার করবো। তিনি রাধারানীকে বললেন, “তুমিও
আস।” তখন রাধারানী বললেন, “আমি কী করে ধরাধামে আসবো। তোমায় ছাড়া অন্য পুরুষ দেখতে পারবো না।” 
কৃষ্ণ বললেন, “ঠিক
আছে, আমি ব্যবস্থা করছি।"
বৃষভানু মহারাজের পত্নী কীর্তিদা গর্ভবতী হলেন। অষ্টমী তিথির মধ্যাহ্নে রাধারানীর জন্ম হলো।
এই তিথীতে বর্ষানার ভক্তবৃন্দ গোপ- গোপীগণ সেখানে তারা আনন্দে নাচছে যে, বৃষভানু
মহারাজের কন্যা হলেন। উদ্ধব দাস এ সম্পর্কে একটি পদ লিখেছেন,
"বৃষভানুপুরে আজ আনন্দ বাধাই।
রত্নভানু সুভানু নাচয়ে তিন ভাই।। 
দধি ঘৃত নবনীত গোরস হলদি।
আনন্দে অঙ্গনে ঢালে নাহিক অবধি।। 
গোপ গোপী নাচে গায় গায় যায় গড়াগড়ি।
মুখরা নাচয়ে বুড়ী হাতে লৈয়া নঢ়ি।। 
বৃষভানু রাজা নাচে অন্তর
উল্লাসে।
আনন্দ বাধাই গীত গায়
চারিপাশে।। 
লক্ষ লক্ষ গাভী তখন অলংকৃত করি।
ব্রাহ্মণে করয়ে দান আপনা পাসরি।। 
গায়ক নর্তন ভাট করে উতরোল।
দেহ দেহ লেহ শুনি এই বোল।। 
কন্যার বদন দেখি কীর্তিদা জননী।
আনন্দে অবশ দেহ আপনা না জানি।
কত কত পূর্ণচন্দ্র জিনিয়া উদয়।
এ দাস উদ্ধব হেরি আনন্দ হৃদয়।।" 
এভাবে কতো আনন্দ বর্ষানায়। কিন্তু রাধারানীর পিতা–মাতার একটা হচ্ছে দুঃখ হচ্ছে যে,
রাধারাণী চোখ খুলছে না। ভাবছে আমাদের কন্যা অন্ধ। চোখ খোলে না। নারদ মুনি নন্দ
মহারাজের কাছে গেলেন। তাঁর সন্তান দেখার জন্য। তিনি
শ্রীকৃষ্ণকে হাতে নিয়ে
আশির্বাদ করেছেন। তোমার খুব ভাগ্য। এ সন্তান নারায়ণের মতো
হবে। তুমি এ সন্তানকে যত্ন করো পূজা করো, সন্তানকে যত্ন করো।
তোমার আর কোন পূজা করা লাগবে না। এভাবে বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে নন্দপুত্রকে আর্শিবাদ
দিলেন। নারদ মুনি বুঝলেন, কৃষ্ণ আবির্ভাবের পক্ষকাল পর কে আসে? কে আসে? রাধারাণী।
নারদমুনি ব্রজের আশপাশে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করছেন, তোমার কোন কন্যা সন্তান হয়েছে? সব সন্তান নিয়ে এস আমি আশির্বাদ করবো। সন্তান নিয়ে আসলে আশির্বাদ করলো। পরপর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে খোঁজা হলো। কিন্তু যাকে খুঁজছেন তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন কীর্তিদা বৃষভানু মহারাজের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখানে শ্রীদামসহ বিভিন্ন সন্তান নিয়ে এলেন। কিন্তু তিনি জীজ্ঞাসা করলেন, “আরো একটা মেয়ে সন্তান হয় নি। আমি একটু দেখি
দেখাও।” 
তখন দেখছে সুন্দর
রাধারানী নিয়ে এসছে। পনের দিন বয়স। তাঁর মুখমণ্ডল কোটিচন্দ্রের ন্যায় জ্যোতির্ময়। তাঁকে নারদ মুনির হাতে
দিয়েছে। নারদ মুনি রাধারানী, হ্লাদিনী শক্তি, আনন্দের শক্তি হাতে পেয়ে এমন আনন্দে বিভোর হয়েছেন যে, কোনো কথা বলতে
পারছেন না, নড়তে পারছেন না। আর শুধু গায়ে কাঁপছে আর চোখের
জল গঙ্গা হয়ে পড়ে যাচ্ছে। বৃষভানু মহারাজ ভাবছেন কী করবে। নারদমুনি একটু স্থির হয়েছেন। তিনি বললেন, “তুমি দুঃখ করো না।” আর ঠিক যেমন কৃষ্ণের পিতা মাতার মতো বলেছেন, “তুমি এ মেয়েকে যত্ন করো, পূজা করো। তোমার আর
কোনো পূজা করা লাগবে না।”
এভাবে নারদ মুনির ইচ্ছে ছিল রাধারানীর কিশোরী রুপ দর্শন
করবেন। তাই তিনি ব্রজবনে গিয়ে ধ্যান করে প্রার্থনা শুরু করলেন রাধারাণী দেখা দাও, দেখা দাও। তখন রাধারাণী গোপীগণের সাথে
কিশোরীরুপে দেখা দিয়েছেন। তখন গোপীগণ নারদমুনিকে বলেছেন, তুমি যে রাধারাণীর দর্শন পাচ্ছ তার অর্থ রাধারাণীর অসীম কৃপা হয়েছে। রাধারাণীর দর্শন পাওয়ার জন্য কতো যোগী কয়েক কল্পে তপস্যা করেছেন।
একটা কল্পে হাজার যুগ, ষোল মন্বন্তর। নারদ মুনি বললেন, “ভবিষ্যতে তোমার মেয়ের দৃষ্টি
আসবে। চোখ খুলবে।” 
একদিন বড় একটা উৎসব হলো। শিশু কৃষ্ণ এসে হামাগুড়ি দিয়ে শিশু
রাধারানীর কাছে গিয়েছে। আর রাধারাণী চোখ খুলে শিশু রূপে কৃষ্ণকে দেখেছেন। তিনি
অন্তরঙ্গা শক্তি। তটস্থা শক্তি আর বহিরঙ্গা শক্তি। অন্তরঙ্গা শক্তি হচ্ছে রাধারানী। আর বহিরঙ্গা
শক্তি পার্বতী বা দুর্গা। আমরা জীবশক্তি আমরা মাঝখানে পড়ি। যখন আমরা কৃষ্ণের সেবা করবো, তখন আমরা অন্তরঙ্গা শক্তি রাধারাণীর আশ্রয়ে থাকবো। যদি আমরা মায়াকে না বলি অর্থ মায়া যদি আমাদের বলেন ভোগ করো আর আমরা যদি তাকে বলি 'না’, আমরা কৃষ্ণের সেবা করবো, তাহলে আমরা অন্তরঙ্গা শক্তির অধীনে মধ্যে পড়ি। মায়া আমাদের যখন ভোগ বিলাস করার আয়োজন করে আর আমরা যদি বলি ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ আমরা ভোগ করতে চাই, তখন আমরা মহামায়ার
অধীনে থাকি এবং আমাদের কর্মফল অনুযায়ী আমাদের মায়ার অধীনের মধ্যে সুখ দুখ পেতে হবে।

ভগবদগীতায় আছে,
"মনুষ্যানাং সহস্রেষু কশ্চিৎ যততিসিদ্ধয়ে।"
অর্থাৎ কৃষ্ণের সমন্ধে খুব অল্প সংখ্যক লোক জানতে পারে।
কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেবের কৃপাতে আমরা রাধাকৃষ্ণ সমন্ধে অনেক কিছু
জানতে পারি। কিন্তু আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে। যদি আমরা মনে করি রাধাকৃষ্ণের লীলা জড়জগতের স্ত্রী পুরুষের মতো হয় তবে মহা অপরাধ। আমাদের জানতে হবে রাধারাণী হচ্ছেন কৃষ্ণ প্রেমস্বরূপিনী। তিনি কৃষ্ণের প্রেমসেবা করেন। সেটা সম্পূর্ণভাবে পারমার্থিক তত্ত্ব।

________এইভাবে যদি আমরা রাধাকৃষ্ণকে সেবা করি, তবে আমরা সেই পরমতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারবো। আসা করি এই পোস্টে রাধারাণীর যে প্রেমভক্তি তার একটা বিন্দু কমপক্ষে আস্বাদন করতে পারবে সকল ভক্ত পাঠক। এর থেকে আর বড় কোনো প্রার্থনা নেই।

“শ্রী গুরু চরণে রতি, এই সে উত্তম গতি, 
যে প্রসাদে পুরে সর্ব আশা।"
অর্থাৎ শ্রী গুরু উপদিষ্ট শ্রী কৃষ্ণতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব ও রসতত্ত্ব আদি হৃদয়ে ধরন করিয়া শ্রীগুরু পাদ পদ্মে যাঁহারা রতি বিধান করেন, তাঁহারা শ্রীগুরু চরনে অকপট ভক্তির বলেই প্রেমের
রাজ্যে যাবতীয় প্রাপ্য বস্তুস্মূহের মধ্যে পরমশ্রেষ্ঠ শ্রীরাধা প্রাণবন্ধুর শ্রীচরণ কমলের সম্বাহনাদিরূপ
প্রেমসেবা অনায়েসে লাভ করিয়া ধন্য হন। আর এই আনন্দে আমরাও গেয়ে উঠি,

"জয় রাধে রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ
গোবিন্দ গোবিন্দ বলরে ...."
পরমকরুনাময় সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর প্রিয় হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারাণীর চরণকমলে সবার মঙ্গলময়, কল্যাণময়, সুন্দরময় ও আনন্দময় জীবনের জন্য ভক্তি প্রার্থনা।"""""জয় রাধাকৃষ্ণ""""

No comments:

Post a Comment