Hare Krishna

Hare Krishna
Welcome to ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ

Monday, August 28, 2017

শ্রীমতী রাধারাণীর জন্মলীলারহস্য


লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ
শক্তিমান পুরুষ। যেহেতু কৃষ্ণ শক্তিমান পুরুষ , তাই তাঁর
থেকে অনন্ত শক্তি প্রকাশিত হয়েছে, যেমন -
সৃষ্টিশক্তি, লীলাশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, জীবশক্তি,
মায়াশক্তি, বৈকুণ্ঠে ভূ, শ্রী যোগমায়া আদি ষোড়শ
শক্তি, তা ছাড়া অন্তরঙ্গা শক্তি ইত্যাদি। চিন্ময়
জগত গোলোকের সমস্ত কার্যকলাপ শ্রীকৃষ্ণের
অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা সম্পন্ন হয়।
এই অন্তরঙ্গা শক্তি তিন ভাগে বিভক্ত --সন্ধিনী,
সম্বিৎ ও হ্লাদিনী।
সন্ধিনী শক্তির সাহায্যে সমস্ত চিৎ-জগৎ প্রকাশিত
হয়েছে সম্বিৎ শক্তি বা জ্ঞান শক্তির দ্বারা ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে জানতে পারেন কৃষ্ণভক্তেরা এই
শক্তির সাহায্যে শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারেন। আর
হ্লাদিনী শক্তির দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ দিব্য আনন্দ আস্বাদন
করেন এবং ভক্তরা এই হ্লাদিনী শক্তির কৃপায়
কৃষ্ণপ্রেমের সমুদ্রে অবগাহন করেন। এই হ্লাদিনী
শক্তির প্রতিমূর্তি হচ্ছেন শ্রীমতি রাধা ঠাকুরানী।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শ্রীমতি
রাধারাণীর জন্মলীলা সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে--

অপ্রাকৃত বৃন্দাবন-ধামে মাধ্বীতলায় আসীন রত্ন- সিংহাসনে কৃষ্ণচন্দ্র একা বসে আছেন। তখন তিনি লীলাবিলাস করতে ইচ্ছা করায়, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বাম অঙ্গ থেকে হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানী প্রকটিত হন। শ্রীমতি রাধিকাই হচ্ছে আদি শক্তি।
তাঁর গাত্রবর্ণ তপ্তসোনার মহো এবং সমগ্র অঙ্গসৌষ্ঠব নানা রকম রত্ন অলংকারে বি ভুষিতা। তিনি নানা লীলা বিলাসের দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের সন্তোষ বিধান করেছিলেন। আরও অধিকভাবে শ্রীকৃষ্ণের আনন্দ বিধানের জন্য তিনি নিজের অঙ্গ থেকে অসংখ্য গোপিকাদের প্রকাশ করেন। এই সমস্ত ব্রজাঙ্গনারা রূপে-গুণে সর্বোত্তমা ছিলেন। সুতরাং শ্রীমতি রাধারাণী ও তাঁর কায়ব্যুহ গোপিকাদের মায়াবদ্ধ জীবদের মতো জন্মগ্রহণ করতে হয়নি। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ। তাঁরা গোলোকে শাশ্বতকাল ধরে অবস্থান করছেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে লীলা বিলাস করে কৃষ্ণপ্রেম আস্বাধন করছেন।
ব্রহ্মার দিবসের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন ভৌম বৃন্দাবনে বা এই জড় জগতের মধ্যে প্রকাশিত বৃন্দাবনে অবতরণ করেন, তখন তাঁর লীলায় অংশ গ্রহণ করবার জন্য তাঁর হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানী ও তাঁর কায়ব্যুহ সখীরা যদিও তাঁদের শাশ্বত চিন্ময় রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন, তবুও আমাদের দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই যে, তাঁরা যেন জন্মলীলা প্রকট করেছেন।
যেহেতু আমরা মায়াবদ্ধ জীব, তাই আমাদের কৃপা করবার জন্য তাঁরা আমাদের মতো জন্মলীলা পরিগ্রহ করেন।
প্রকৃতপক্ষে তাঁদের জন্ম ও কর্ম সবই দিব্য বা অপ্রাকৃত।
পদ্ম পুরাণের উত্তর খণ্ডে শিব-পার্বতী সংবাদে ভৌম বৃন্দাবনে শ্রীমতী রাধারাণীর জন্ম সম্বন্ধে আমরা জানতে পাই যে-
বৃন্দাবনে বৃষভানু রাজা নামে এক পরম ভক্ত বাস করতেন। তাঁর কীর্তিদা সুন্দরী নামে এক পতিপ্রাণা স্ত্রী ছিল। তাঁরই গর্ভে ভাদ্রমাসে শুক্লাষ্টমী তিথিতে মধ্যাহ্নে শুভক্ষণে শ্রীমতী রাধারাণী জন্মগ্রহণ করেন।
কন্যারত্ন দর্শনে সমগ্র বৃন্দাবন দিব্যানন্দে মগ্ন হলেন। কন্যার রূপে সকলে মুগ্ধ হলেও তাঁর চোখ নিমীলিত ছিল বলে সকলেই মনে করল কন্যাটি অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। রাধারাণীর চোখ মুদ্রিত হয়ে থাকার কারণ হচ্ছে- একদিন গোলোকে কৃষ্ণ রাধারাণীকে জ্ঞাপন করলেন যে, তিনি অতি শীঘ্রই পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সুতরাং রাধারাণী যেন সেখানে অবতরণ করেন, কেননা সেখানে উভয়ের মাধ্যে বিচিত্র মাধুর্য লীলা বিলাস হবে।কৃষ্ণের কথা শুনে রাধারানী বললেন যে, যদি তাঁকে পৃথিবীতে অবতরণ করতে হয়, তা হলে পর পুরুষের মুখ দর্শন করতে হবে।
কিন্তু রাধারানী শ্রীকৃষ্ণের রূপমাধুরী ছাড়া অন্য কিছুই দর্শন করেন না। তাই তাঁর পক্ষে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করা কি করে সম্ভব ? রাধারাণীর যুক্তিসংগত কথা শুনে কৃষ্ণ বললেন যে, সেই জন্য তাঁর চিন্তার কোন ও কারন নেই। রাধারানী সব সময় কৃষ্ণকেই দেখতে পাবেন।

No comments:

Post a Comment